— কেমন আছো হাসিব?
 এইতো সেই চেনা কন্ঠ!ঠিক বোরকার মুখোশের ভিতরের মুখ না দেখলেও কন্ঠটাকে যে আমি চিনি!খুব চিনি!
 –কেমন আছি সেটা জানাটাই কি সব?জেনে রাখো বেঁচে আছি!
 -এটাকে কি বেঁচে থাকা বলে?এতোটা অগুছালো!
 –কি করবো!আমি যে এখন এক জীবন্ত লাশ!
 –তোমার হৃদয়টা যদি আবার কারো স্পর্শে সতেজ হয়ে উঠে?
 –হবে না!হৃদয়টা যে তিন বছর আগেই মরে গেছে!
 –তিনবছর কি একটিবারের জন্যও মনে পড়েছে?
 –মনে পড়ার ওয়ে নেই কারন মনটাই আমার ভিতরে নেই আজো পুরোনো স্মৃতিগুলার এলবামে বন্দি হয়ে আছে!
 –তুমি এতোটা অগুছালো হয়ে গেলে কেনো?
 –গুছিয়ে দেয়ার মানুষটাই যে চলে গেছে!
 –যদি আবারো ফিরে আসে?
 –এসে কি হবে!কেউ হৃদয়-মন হীনা শুধু মানুষরূপী জীবন্ত লাশের ভালোবাসা কি পেতে পারবে!
 –তুমি না বলতে আমি তোমার অক্সিজেন?তাহলে এই অক্সিজেনের স্পর্শে কি আগের সেই হাসিবের চঞ্চলতা ফিরে আসবে না?
 –কি করে আসবে?প্রানীদেহে অক্সিজেনের প্রয়োজন কিন্তু আমিতো এখন নির্বাক উদ্ভিদ,প্রতিরোধ করতে না পারা এক বট বৃক্ষের তুলনায়!আর বৃক্ষের অক্সিজেন নয়,কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রয়োজন!
 –সেটা কি আছে?
 –হুম!
 –কি?
 –
 –আমার নিত্যদিনের সঙ্গী এই নিকোটিন!
 –এভাবে জলন্ত সিগারেটের আর কতো জ্বালাবে নিজেকে?
 –যতদিন দেহটা জিন্দা আছে!
 –হাসিব!
 –এই নামটা ধরে ডাকার অধিকার সেই তিন বছর আগেই মাটি চাপা দিয়ে চলে গিয়েছিলে!
 –তক্ষন বুঝতে পারি নি!ভাবছিলাম ক্যারিয়ারটাই সব!বুঝতে পারি নি ক্যারিয়ার নয়, বেঁচে থাকতে তোমার ভালোবাসা প্রয়োজন!
 –তো যাও এখন!ক্যারিয়ারে মন দাও!আমার জীবনে আসলে তোমার জীবনটাও নষ্ট হয়ে যাবে!
 –কেনো?
 –যার সারাটি কোষ ও রক্তকনিকায় ক্যান্সার সে আর কদিন বাঁচে!
 –না!বাঁচতে হবে!আবার আমার জন্য তোমাকে বাঁচতে হবে!
 –সেই ইচ্ছেটাও তো মরে গেছে!
 –কিন্তু আমি তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই!
 –না!চলে যাও!আমি কারো জীবন আর ক্যারিয়ার নষ্ট করতে চাই না!
 –কিন্তু আমি সেই হাসিবের মাঝে ফিরে আসতে চাই!
 –না!হাসিব থাকলে ফিরে আসতে পারতে!আমিতো মরে গিয়েও শুধু দেহ নিয়ে কোনোরকম বেঁচে আছি!নামটা যে কি করে বেঁচে আছে সেটাই ভাবার বিষয়!
 –তুমি অনেক বদলে গেছো হাসিব!
 –কিন্তু সেই তুমি আগের মতোই আছি।
 –এই জীবন্ত লাশটা আজো তোমাতে তুমিময়!
 –এই কি হাসিব তোমার নাক দিয়ে রক্ত যাচ্ছে কেনো?ডাক্তার দেখাও।
 –ডাক্তারে আর কিছু করতে পারবে না কোনো একজনের ভাবনায় এই রোগ অনেক বেশিই তীব্রতায় রূপ নিছে!আর জানোই তো টেনশন থেকেই রোগের বৃদ্ধি!সেই হাসি-খুশি হাসিব বেঁচে থাকলে অকালে নিঃশেষ হয়ে যেতো না আরো একটি প্রাণ!ভালো থেকো রিক্তা!ভালোথেকো!তুমি তোমার মতো করে ভালো থেকো!
 –
 রিক্তা অপলক এক অশ্রুসিক্ত নয়নে চেয়ে আছে হাসিবের চলে যাওয়ার দিকে!আজো যেনো রিক্তা চিৎকার করে বলতে চায় ভুলটা আমারই ছিলো!ফিরে এসো তুমি!ফিরে এসো!আজো সেই বকুল তলায় বসে,হাতে মালা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনে!আমি তোমাকেই চাই।আবারো আমার জীবনে ফিরে এসো।বাঁচানোর জন্য নয় বাঁচার জন্য তোমাকে চাই।সেই তুমি একটিবারের জন্য ফিরে এসো নাহয় একটি মূহুর্তের জন্য এসো!ফিরে এসো আবার আমার জীবনে!
  










