বিয়ের তিনদিন পর শিমুর সাথে যখন আমার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হয় তখন আমি জানতে পারি আমার স্ত্রী ভার্জিন নয়। এ নিয়ে আমার মন কয়েকদিন ধরেই উদাস। ঠিকমত তার সাথে কথা বলিনা, সে কথা বলতে চাইলেও কাজের বাহানা করে চলে যাই। আমি এখনো মেনে নিতে পারছিনা আমার স্ত্রী ননভার্জিন হবে। সবাই আমাকে বলতো যে যেমন তার স্ত্রী হবে তেমন। কিন্তু আমি কখনো কোন মেয়ের সাথে কিছু করিনি তবে আমার স্ত্রী কেন নন ভার্জিন হবে। এটা আমার সাথে অন্যায় হয়েছে আর আমি এ অন্যায় মেনে নিতেও পারছিলাম না।
বাবা মা যখন আমাকে শিমুর থেকে দূরে দূরে থাকতে দেখলেন, ব্যাপার টা জানতে চাইতেন আমি কেন শিমুকে এড়িয়ে চলি। চোখ লজ্জার কারনে কাউকে কিছু বলতেও পারতাম না আর সহ্য করতেও পারতাম না। একদিন রাতে শিমু আমাকে জড়িয়ে ধরলে তাকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দেই। সে যতটা আঘাত শরীরে পেয়েছিলো তার থেকে দ্বিগুন আঘাত পেয়েছিলো হৃদয়ে। কান্নারত কন্ঠেই আমাকে বলতে লাগলো-
– আমার অপরাধ কি কেনইবা আপনি আমার সাথে এমন ব্যবহার করছেন? বিয়ের আগে তো সব কিছু ঠিক ছিলো তবে এখন কেন এমন করছেন?
— কেন আপনি জানেন না এমন কেন করছি?
– আপনি আমার সাথে কথা বললে তো আমি জানতে পারবো। আপনি যদি মনের ভিতর রেখেই আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন তবে আমি কি করে জানবো?
— হইছে নাটক করতে হবেনা আমার সাথে, সবকিছুই বুঝতেছেন আমার সাথে কাহিনী না করলেও চলবে। আর আমাকে বিয়ের আগে জানালেই পারতেন, আমি বিয়েটা ভেংগে দিতাম, বা সত্য স্বীকার করেছেন এই মনোদয় নিয়ে বিয়ে করতাম। তাহলে এই সমস্যা হতো না।
– আপনি কি বলছেন আমি বুঝতে পারছিনা?
ধীরে ধীরে শিমুর উপর রাগ উঠতে লাগলো। মনে মনে তার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে চললাম। এক পর্যায় বলেই ফেললাম,
– বিয়ের আগে কার সাথে শুয়েছিলেন জানতে পারি?
আমার কথাটি শুনে শিমুর মাথায় আকাশ ভেংগে পড়লো, সে মুখে হাত দিয়ে চোখ অন্যমুখী করে ছিঃ বলে উঠলো।
– ছিঃ বলতে হবে না, আমি তো জেনেই গেছি আপনি ভার্জিন না। আমার কাছে লুকিয়ে কোন লাভ নেই, সত্য বললেই এখন ভালো লাগবে।
— আমি ভেবেছিলাম আপনি একজন শিক্ষিত মানুষ আর মেয়েদের সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। আপনি একজন চণ্ডাল অশিক্ষিত লোক।
কথাটি শুনে বিছানা থেকে উঠে শিমুর গালে এক চড় বসিয়ে দিলাম সজোরে। মেয়েটি কোন কথা না বলে বারান্দায় চলে গেলো, আমি আমার মত শুয়ে রইলাম আবার।
২
সকাল হতেই শিমু আমার কাছে এসে বললো,
– আপনাকে একটু আমার সাথে যেতে হবে।
— আমি পারবোনা যেতে আপনার যেখানে খুশি সেখানে যান।
আমার অসস্মতি পেতেই সে আমার হাত ধরে টেনে ঘরের বাহিরে এনে দাড় করলো। সামনে বাবা মাকে দেখে আমি আর কথা বাড়ালাম না, শিমুর সাথে রওনা হলাম। সে সোজা তার বাসায় নিয়ে গেলো আমাকে। কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা তার ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপর তার আলমারি খুলে সেখান থেকে, প্রায় ২০-৩০ টা ট্রফি আমার সামনে রাখলো। আর বলতে লাগলো,
এই যে পুরষ্কার গুলো দেখছেন, দড়িলাফ, হাইজাম্প, দৌড় প্রতিযোগিতা, মোরগ লড়াই, সহ বল নিক্ষেপ খেলার জন্য পেয়েছি। প্রতিটি খেলাতেই প্রথম স্থান আমার ছিলো। আরো যে উপহার দেখছেন, স্কুল কলেজ ভার্সিটি তে প্রথম হবার জন্য পেয়েছি, গান গাওয়া, গজল গাওয়া, কবিতা আবৃত্তি সহ মঞ্চ নাটকের জন্যও পেয়েছি অনেক উপহার। এবার আমার সাথে চলুন,
সে আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার এর সাথে দেখা হতেই শিমু তাকে বলতে লাগলেন-
– ডাক্তার কোন চিকিৎসার জন্য আসা নয়, আমরা জানতে এসেছি, মেয়েদের ভার্জিনিটি কি কি কারনে নষ্ট হতে পারে।
ডাক্তার সমস্ত কারন জানালেন যার জন্য ভার্জিনিটি নষ্ট হতে পারে। দৌড়ঝাঁপ করা, উপর থেকে পড়ে যাওয়া খেলাধুলা করা সহ ফিজিক্যাল রিলেশন করার মাধ্যমেই ভার্জিনিটি নষ্ট হয়। এবার ডাক্তারকে শিমু জিজ্ঞেস করলো
– কারো অবৈধ সম্পর্ক ছাড়া অন্য কারোনে যদি ভার্জিনিটি নষ্ট হয় তবে কি সে অসতী হয়?
ডাক্তার এক উত্তরেই না বলে দিলেন। যদিও এই কারন গুলো আমারও জানা ছিলো, কিন্তু ততক্ষনাৎ শুধু মনে হয়েছিলো বর্তমান যুগের মেয়ে কিছু তো হতেই পারে, এ নিয়েই তার সাথে আমার সম্পর্কে টানাপোড়ন। আমি কিছু বলতে চেয়েছিলাম শিমু আমাকে সেই সুযোগ দিলোনা, সোজা আমাকে নিয়ে বাহিরে এসে রিক্সা নিয়ে একটি পার্কে চলে গেলো। একটি ব্যাঞ্চের উপর বসে তার হ্যান্ডিব্যাগ থেকে পকেট কোরআন শরীফ বের করে তা ধরে কসম কেটে আমাকে বিশ্বাস করাতে চাইছিলো সে সতী নারী যদিও তার ভার্জিনিটি নষ্ট হবার কারণ গুলো আমার বুঝতে আর বাকি নেই। তাই তাকে এবার কসম কাটিয়ে আমি আর অপরাধী হতে পারবোনা। হাটুগেড়ে বসে তার হাত দুটো ধরে কিছুক্ষন চুপ রইলাম।
চোখের জলকে অনেক ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারিনি। টিমটিম করে ঝরে পড়তে লাগলো, তার কাছে কান্না কন্ঠে আকুতি জানাতে লাগলাম, না বুঝে অনেক বড় ভুল করেছি। আসলে বর্তমানে যা দেখি তাই ভেবেই এসব হয়েছে আমাকে ক্ষমা করে দাও, আর আমাকে লজ্জা দিওনা শিমু আমি তোমার হাতে ধরে ক্ষমা চাচ্ছি আমাকে ক্ষমা করে দাও। এমন ভুল আর কোনদিন করবো না।
আমার সাথে সাথে শিমুও কেদে দিলো আর বলতে লাগলো, “আমাকে কারো বিছানায় শোয়াবার আগে একবার জিজ্ঞেস তো করতে পারতেন?”
“আমাকে ক্ষমা করে দেও শিমু আর কোনদিন তোমাকে কোন কষ্ট দিবো না, অনেক বড় ভুল করেছি আমি।” কথাটি বলে শিমুকে জড়িয়ে ধরলাম। সেদিন সারাদিন দুজনে ঘুরলাম সন্ধায় বাড়ি ফিরে আসলাম। বাবা মা আমাদের মুখের হাসি দেখে বুঝতে পারলেন আমাদের মধ্যকার সমস্যা দূর হয়ে গেছে।
এখন আমার দুটো সন্তান ও আছে আর আমরা অনেক সুখেই আমাদের সাংসারিক জীবন অতিবাহিত করছি।
আমি গল্পটি দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলাম, যে নন ভার্জিন মেয়েরা অসতী হয়না। অবিশ্বাস করার আগে একবার বিশ্বাস করে সত্যটা জানার চেষ্টা করুন, আপনার স্ত্রী ননভার্জিন হতেই পারে এর পিছনে শিমুর মতো অনেক কারণ ও থাকতে পারে। তাইবলে এই নয় সে অন্য কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিলো। যতটা অশান্তি আপনি তাকে সন্দেহের চোখে দেখে পাবেন, তার থেকে দ্বিগুন শান্তি পাবেন যখন আপনি সত্যটা জানতে পারবেন। আসলে সব মেয়েরাই সতী যদিও কোন মেয়ে কারো ভালোবাসার প্রলোভনে এসে নিজের দেহকে দিয়ে দেয়। তখন মেয়েটি চলে যায়না ছেলেটিই চলে যায়। তখন আবার ঐ ছেলেটির ভাগ্যেও জুটে এমনি কোন পোড়াকপালি মেয়ে যে অন্যকাউকে বিশ্বাস করে নিজের সতীত্ব হারিয়েছে। সব সময় মনে রাখবেন যেমন কর্ম তেমনি ফল ভোগ করতে হবে, এটা নিয়তির নিয়ম যা কেউ খণ্ডাতে পারবেনা। আপনি সঠিক তো সবাই সঠিক।