অভিমানী ছেলের বাড়ি ফেরা

অভিমানী ছেলের বাড়ি ফেরা

প্রায় চারটা বছর কেটে গেলো নিজের উপর অভিমান আর এক বুক কষ্ট নিয়ে ছেলেটা বাড়ি থেকে হয়ে আসে। এই চার বছর একটা দিন পরিবারের কারো সাথে দেখা করাতো দূরের কথা পর্যন্ত হয় নি। পরিবারের লোকজন অনেক চেষ্টা করেও কোন ভাবে দেখা করতে পারে নি।দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছে পরিবারের মানুষজন কিন্তু তাদের সব রকম চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বাড়ি থেকে বের হয়ে ছেলেটা প্রতিঙ্গা করে নেয় যদি কখনো ভালো মানুষ হতে পারে তবেই পরিবারে ফিরবে।

গল্পটা অনেকটা লিখে ফেললাম কিন্তু ছেলেটার নামটা বলা হলো না। তাই নামটা বলে নেওয়া দরকার। ছেলেটার নাম রাফি।

রাফি যেদিন বাসা থেকে বের হয় সেদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ছিলো।পকেটে ছিলো মাএ একশো টাকা।এক কাপড় পরে বাসা থেকে সেদিন বের হয়েছিলো রাফি।
বাসা থেকে বের হওয়ার একটা কারণ ছিলো রাফির। কারণটা পাঠকদের জানানো দরকার। না গলে লেখাটা পরিপূর্ণ একটা রুপ পাবেনা।

রাফি খুব অল্প বয়সে একটা মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। ক্লাস নাইনে পড়া অবস্থায় মিতু নামের একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক শুরু হয়। দুজনের সম্পর্কটা বেশ ভালোই চলতে থাকে।অল্প বয়সের প্রেম বুঝতেই পারছেন, এই বয়সে কতটা আবেগ হয় ছেলেমেয়েরা। দুজনেই দুজনার প্রতি অনেক আবেগী। কেউ কাউকে ছাড়া এক মুহূর্ত চলতে পারে না। দুজন দুজনার খুব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করে। এভাবে স্কুলের জীবনের সম্পর্ক পার করে কলেজ জীবনে পা দেয় দুজন। কলেজেও দুজনের সম্পর্ক বেশ ভালোয় চলতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই একটা কালো মেঘ ঝড় হয়ে এসে লন্ডভন্ড করে দেয় হাসিখুশি মুখগুলো।

মিতুকে হঠাৎ করেই বিয়ে দিয়ে দেয় পরিবার।মিতু নিজেও জানেনা তার বিয়ের খবর।মিতুকে তার নানার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দিয়ে দেয়।পরিবারে চাপে মিতুও বিয়ে করতে বাধ্য হয়।ভালো ও যোগ্যতা সম্পূর্ণ পাএ পাওয়ায় এ বিয়েটা দেয় পরিবার।

মিতুর বিয়ের এমন খবর হঠাৎ করে পেয়ে রাফি এলোমেলো হয়ে যায়। স্বাভাবিক জীবন এলোমেলো হয়ে উঠে। পড়াশোনা সব কিছুতেই কেমন জানি অনীহা চলে আসে। স্বাভাবিক জীবন ছেড়ে পা দেয় অন্ধকার এক জীবনে।নেশাগ্রস্ত হয়ে যায়,মাদকদ্রব্য হয় জীবনের সঙ্গী। বুঝতেই পারছেন এ বয়সে একটা ছেলের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া অনেক কঠিন। এ বয়সটায় মানুষ কতটা আবেগী হয় সেটা যে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে সেই অনুভব করতে পারবে।

প্রতিদিন নেশার টাকার জন্য বাবা মার সাথে ঝগড়া, চিৎকার চেঁচামিচি করতে থাকে।পড়াশোনা ছেড়ে বাউন্ডালি হয়ে উঠে। বাবা মার অনেক চেষ্টার মাধ্যমে কোনরকম ভাবে এইচ, এস, সি পরীক্ষায়টা দেয়।পরীক্ষার পর রাফির হাতে কোন কাজ না থাকায় নেশার পরিমাণ টা বেড়ে যায়।বাবা মা চোখে চোখে রাখার পরও সামলাতে পারেনা। এভাবে বাবা মা সহ্য করতে করতে অসহ্য হয়ে উঠে। রাফির গায়ে হাত তুলে একদিন। ঠিক সেদিনে রাফি বাসা থেকে বের হয়ে আসে।

পকেটে মাএ ১০০ শত টাকা নিয়ে,এক কাপড়ে। সারাদিন না খাওয়া অবস্থায় কেটে দেয়।একশো টাকা দিয়ে কি হয়।একবার খেলেই টাকা শেষ। তাই পকেটের টাকা পকেটে রেখেই না খেয়ে একটা মসজিদে ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের আজানের সময় মসজিদের ইমাম সাহেব হঠাৎ করে অপরিচিত একটা ছেলেকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়।কাছে গিয়ে ডাক দেয় রাফিকে। রাফি তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠে। নামাজ শেষে ইমাম সাহেব রাফিকে কাছে বসে সব কথা শুনতে থাকে। বাসা কোথায়, কি করে, কেন বাসা থেকে চলে আসছে বিভিন্ন কথা জানতে চায়। রাফি সব কথা খুলে বলে ইমাম সাহেব কে। রাফির কথা শুনে ইমান সাহেব রাফিকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন কথা বোঝাতে থাকে,নেশা ছাড়তে বলে। রাফিকে সকালের খাবার খাওয়ায় ইমাম সাহেব। রাফিকে প্রতিঙ্গা করাই ইমাম সাহেব কোন খারাপ কাজ করা যাবেনা। এর বিনিময় তিনি একটা কাজের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

ইমাম সাহেব তার প্রতিশ্রুতি রাখে,কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। খুব ভালো একটা কাজের ব্যবস্থা করে দেয়। রাফিকে তার প্রতিঙ্গা পূরণে সাহায্য করে।

ইমাম সাহেব রাফির বাবা মার সাথে কথা বলে চিন্তিত হতে নিষেধ করে। রাফি ভালো যায়গায় ভালো কাজ পেয়েছে।সময় হলে রাফিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিবে। রাফিও ইমাম সাহেব কে দেওয়া কথা রাখে । সব রকম নেশা ছেড়ে দেয়।স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে রাফি।

পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে রাফি।তারপর ভালো একটা বিষয় নিয়ে অনার্সে ভর্তি হয় আর নিজের প্রতিজ্ঞা পালনে চেষ্টা করতে থাকে।

রাফি নিজের মত করে একটা সংসার চালাতে যা যা প্রয়োজন সব জিনিষ করে। একটা ছোট্ট সংসার একাই গড়।যার পরিবার সদস্য সংখ্যা সে একাই। নিজ একাউন্টেও অনেক টাকা জমিয়ে ফেলে রাফি। সাথে নিজের পড়াশোনা তো আছেই। এভাবে পরিবারের কারো সাথে দেখা না করে প্রায় চারটা বছর পার করছে রাফি।

আজকেও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে,রাফি ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ করেই রাফির মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে একটা কল আসে। কলটা রিসিভ করা মা এই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ। কান্না শুনে রাফি এক সেকেন্ড দেরী না করে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চলে যায়।গিয়ে শুনতে পায় বাবাকে মাএ কয়েকটা টাকার জন্য কেউ একজন গায়ে হাত তুলতে চেয়েছে। বাবাকে আটকে রেখেছে। রাফি দৌড়ে গিয়ে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে মুখের উপর টাকা ছুড়ে মেরে বাবাকে বাসায় নিয়ে আসে। ছেলের এমন টা দেখে বাবা মা খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়।চার বছর পর ছেলেকে কাছে পেয়ে বাবা মা গালে মুখে চুমু খেতে থাকে। অস্বাভাবিক জীবন থেকে রাফির এ পরিবর্তনে বাবা মা খুশিতে আত্মহারা। পুরো আশেপাশের মানুষ বাড়ি ভর্তি হয়ে যায়। বিপদে ছেলেকে পাশে পেয়ে গর্ব হয় বাবা মার। অভিমানী ছেলের ফেরায় কষ্ট গুলোর কথা মন থেকে মুছে ফেলে সবাই। রাফি সবসময় বাবা মার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। অভিমান কিংবা রাগ সব মাঠি চাপা দিয়ে বাবা মাকে বুকে জড়িয়ে ধরে। আবারো সেই ছোট্ট রাফি হয়ে তাদের সাথে বাঁচতে চায়।গড়তে চায় নতুন জীবন।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত