কিছু কান্না সুখের

কিছু কান্না সুখের

বিয়ের প্রথম সপ্তাহটা জেরিনের শান্ত শিষ্ট স্বভাব দেখে রবিন মনে মনে খুব খুশি। যাক বাবা নরম সরম একটা বউ পেলাম,ঠিক যেমনটা চেয়েছিলাম। কিন্তু বিয়ের পরের সপ্তাহে পা দিতে না দিতেই হঠাৎ জেরিন ভয়ংকর রুপ ধারণ করে।শান্ত শিষ্ট জেরিন হঠাৎ করেই রবিনের শার্টের কলার চেপে ধরে বলতে থাকে এমন গেয়ো স্বভাবের হলে চলবে না। একটু বদলাতে হবে নিজেকে,চুল দাড়ি এরকম এলোমেলো থাকলে ঘরে ঢোকা বন্ধ করে দিবো।

হঠাৎ করে বউয়ের এমন আচরণে অবাক না হয়ে পারে না রবিন। মনে মনে ভাবতে থাকে কি দজ্জাল বউ রে বাবা।যা মনে করছিলাম তার পুরো উল্টো টা দেখছি।
জেরিন শার্টের কলার চেপে ধরা,অবস্থায় বলতে থাকে আধাঘন্টা সময় দিলাম চুল দাড়ি কেটে আমার সামনে আসবে।

রবিনও বলে উঠে আচ্ছা বাবা যাচ্ছি, শার্টের কলারটা তো এখন ছাড়বে নাকি?মানুষজন যদি দেখে নতুন বউ স্বামীর শার্টের কলার চেপে ধরেছে তাহলে কি ভাববে বলো?

মানুষ কি ভাবলো আর না ভাবলো সেটা দেখার সময় নেই আমার, বলে উঠলো জেরিন। আমি আমার স্বামীকে যা মন চাইবে তাই করবো এতে অন্যর দেখা না দেখা যায় আসেনা। এখন তাড়াতাড়ি করে চুল দাড়ি কেটে আসো।

বউয়ের কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে সেলুনে গেলো রবিন।এরপর চুল দাড়ি কেটে বাসায় আসলো।বাসায় ফিরলে জেরিন নিজে গোসলখানায় গিয়ে গা ঘষে ঘষে ধুয়ে দিলো। তারপর বিভিন্ন ক্রিম মুখে মাখিয়ে চুলের সিঁথি করে আয়নার সামনে নিয়ে দাড় করালো রবিনকে।

রবিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে একটু অবাক হলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো কিছুক্ষণ আগেও আমি যেন কেমন ছিলাম। মেয়েটাতো ঠিকি বলছে।

দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়া শেষে দুজন একটু ঘুমিয়ে নেয়। তারপর বিকাল বেলা বিশাল একটা বাজার খরচের তালিকা হাতে ধরিয়ে দেয় রবিনের। রবিন বাজার তালিকাটা হাতে হ্যা করে তাকিয়ে থাকে।কারণ এর আগে কখনো এতগুলো বাজার একসাথে করা হয়নি।

রবিনের বাবা মা অনেক আগে মারা যায়।তখন থেকে রবিন একা একা আছে। বিয়ের আগে রবিন সবসময় হোটেলে খাওয়া দাওয়া করতো।
রবিন বাজারের তালিকাটা নিয়ে বাজার করতে চলে যায়।

এদিকে জেরিন অগোছালো বাড়িটা গুছাইতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যে বাড়িটা কয়েকটা বছর ঠিকমতো ঝাড়ু দেয়া হয়নি বলে উড়ানের চারদিকে কেমন জানি শেওলা আর আগাছা দিয়ে ভরে গেছে। সেই বাড়িটা জেরিন দুঘণ্টা ধরে পরিষ্কার করে ঝকঝক চকচক করে ফেলে।ঘর দুয়ার সব পরিষ্কার করে রাখে।বাড়িটা এখন যেই মানুষটা দেখবে সেই চিনতে পারবে না, কারণ এই বাড়িটা গতকালো অপরিষ্কার আর ময়লা দিয়ে ভরা ছিলো।

রবিন বাজার থেকে ফিরে এসে বাড়ির চেহারা দেখে অবাক হয়। মনে মনে ভাবতে থাকে আসলে কি এটা আমার বাড়ি নাকি ভুল করে কারো বাড়িতে ঢুকে পড়লাম। এটা ভেবে চিমটি খায় নিজের শরীরে। না ঠিকিতো আছে,খরচের ব্যাগটা হাত থেকে বারান্দায় রেখে জেরিনকে ডাক দেয়। জেরিন কাছে আসলে বুকের মাঝে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে আমার লক্ষী। আমি কতদিন পর এই বাড়িটা এমন দেখছি জানো জেরিন?

অনেক দিনপর,যেদিন আমার মা মারা যায় সেদিনের পর বাড়িটাতে আলো ঠিকমতো দেয়া হয়নি। বলতে বলতে চোখে জল চলে আসে রবিনের। স্বামীর চোখে জল দেখে জেরিনের চোখেও জল চলে আসে।

জেরিন বলতে থাকে কাঁদছো কেন?এখন থেকে এই বাড়িটাতে প্রতিদিন আলো জ্বলবে। বাড়িটা একটা উজ্জ্বল নক্ষএ এর মতো করে জ্বলবে প্রতিদিন। আমি সবসময় বাড়িটা সুন্দর রাখার চেষ্টা করবো ঠিক তোমার মা যেমনটা রাখতো।

দুজেন চোখের জলে একটা আবেগময় পরিবেশ তৈরি হয়।দুজন চোখেরজল মুছে কিছুক্ষণ পর রুমে ভিতরে প্রবেশ করে। রবিন বাজার থেকে নিয়ে আসা জিনিসগুলো দুজন মিলে সাজাতে থাকে।তারপর একসাথে রাতের খাবার রান্না করে। খাওয়া দাওয়া শেষে এক বালিশে মাথা রেখে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে দুজন।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত