যেখান থেকে শুরু

যেখান থেকে শুরু

বাড়িটা খুব রুচিশীল ভাবে সাজানো। অন্তরীপ বসে বসে তাই দেখছিল। স্নিগ্ধতা ঘিরে আছে যেন চারপাশে। বইয়ের তাকের বই গুলোও বেশ ইন্টারেস্টিং! গীতবিতান থেকে টেনিদা সবই সাজানো। বই গুলোর মালকিন উনিই হলে জমে যাবে ব্যাপারটা। বসে বসে এসবই ভাবছিল সে!

অন্তরীপ সেনগুপ্ত। একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তে চাকরি করে। গল্পের বইয়ের প্রচন্ড নেশা। দেখতে বেশ মিষ্টি। আজ আসা হয়েছে অন্তরীপের পাত্রী দেখতে। ওর বাবা মা অভিরুপ সেনগুপ্ত অদিতি সেনগুপ্ত দুজনেই যথেষ্ঠ লিবারেল। ওনারা বারবার অন্তরীপ কে জিজ্ঞেস করেছিলেন ওর কাউকে পছন্দ কিনা। অন্তরীপের অফিস সামলে আর উইকএন্ড গুলো গল্পের বই ছেড়ে কাউকে পছন্দ করার সময় হয়ে ওঠে নি। তাই আজ আসা।

এতক্ষণে তিনি এলেন। অন্তরীপ ভেবেছিল খুব লাজুক কেউ শাড়ি পরে মাথা নিচু করে ঢুকবে। কিন্তু যিনি এলেন তার পড়নে সালওয়ার। হাতে একটা ঘড়ি। চুলটা কাঁধ অবধি। মুখটা অদ্ভুত মিষ্টি। নাম টাও!
দীঘি.. দীঘি মিত্র!

কথাবার্তা কিছুক্ষণ চলার পর বড়রাই বললেন ওদের দুজনকে আলাদা কথা বলতে!
সেখানেও অন্তরীপ ভুল। ভেবেছিল দীঘি চুপ করে থাকবে। ওকেই বকতে হবে। মানে আর পাঁচ জনের পাত্রী দেখার গল্প শুনে ওর এমন ধারণাই জন্মেছিল। বরং দীঘি প্রথম বললো, “গল্পের বই পড়েন বুঝি খুব?”
-” হ্যাঁ, ওই আর কি। আপনি জানলেন কি করে?”
-“আমার বইগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলেন অনেক্ষণ.. দেখেছি।
-“বাবা! আর কি কি দেখলেন ভেতর থেকে?”

-“দেখলাম… আপনি সিঙ্গারা রসগোল্লা চমচম ছাড়াও আরো কিছু expect করেছিলেন। প্লেটটার দিকে করুন মুখ করে তাকিয়ে ছিলেন। চায়ের সাথে চারটে বিস্কুট নিচ্ছিলেন। আপনার মা চোখ পাকানোয় দুটো নিয়েছেন। মিষ্টি খাওয়ার পর আমাদের কিচেনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন আমার মা আর কিছু আনছে কিনা দেখতে!”
-“সর্বনাশ! আপনি গোয়েন্দা হলে নাম করতেন কিন্তু। আসলে সিঙ্গারা আরেকটা চাইতাম বুঝলেন। মা বারণ করলো। আপনাদের মোড়ের দোকানটা থেকে আনা? যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো। ”
-” শুধু সিঙ্গারা নিয়েই বলবেন? আমার ব্যাপারে কিছু জানার নেই?”
-“জানি তো। আপনি দীঘি মিত্র। বি.এ এম.এ সব কিছু করে ফেলেছেন। এখন একটা স্কুলে দিদিমণি। সুন্দর গান করেন। সুন্দর রান্নাও করেন। আমার মত গল্পের বইয়ের পোকা।”
-“আরো কিছু জানার থাকতে পারে তো!”
-“আপনি জানাতে চাইলে নিশ্চয়ই শুনব।”
-“আমরা একবার আলাদা কোথাও দেখা করতে পারি? আমার আপনাকে কিছু বলার আছে। আমি এখানে বলতে চাই না।”

-“বাইরে দেখা করে বিয়ে ক্যান্সেল না করলে আমি রাজি। আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে বেশ। তারপর আপনার বইয়ের collection, আপনাদের পাড়ার সিঙ্গারা.. সব মিলিয়েই আর কি। এটা ক্লিক করে গেলে ………..”
-” দাঁড়ান দাঁড়ান, এত ভেবে ফেললেন! আমি আপনাকে যা বলবো তারপর আপনি নিজেও বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিতে পারেন।”
অন্তরীপ একবার হেসে বললো,” আচ্ছা, দেখা যাক। আপনি বলবেন কবে কখন কোথায়… আমি পৌঁছে যাবো। শুধু উইকএন্ড হলে এট্টু সুবিধে হয় আর কি।”
-” পরশু তো রবিবার। কলেজ স্কোয়ার? বিকেল ৫টা?
“ডান!”

১০মিনিট হল অন্তরীপ পৌঁছেছে কলেজ স্কোয়ারে। চারপাশটা দেখছিল সে। সেই কলেজে পড়াকালীন আড্ডা মারতে আসত। কতদিন আসা হয়নি। এখানের বিকেলটা আজও একরকম আছে। মেয়েটার জন্য আজ এতদিন পর আসা হল। মনে মনে নিজেই হেসে উঠলো সে।

সেদিন রাতে বাড়ি গিয়ে মনে হয়েছিল এমন কি কথা দীঘির, যা বাড়িতে বলল না! মেয়েটাকে সত্যি খুব ভালো লেগেছে রীপের। সোজাসাপ্টা। ভালো বন্ধু হতে পারে এমন মানুষ। ওর জীবনে ভালোবাসার অভিজ্ঞতা খুব কম। কলেজে উঠে একটি আধখানা প্রেম হয়েছিল। বন্ধুদের চাপে বলেও দিয়েছিল তাকে, মেয়েটি শুনে এমন হেসেছিল ওর নিজেকে প্লুটোর মানুষ মনে হয়েছিল। তারপর আর ওই ধার মাড়ায় নি। এসব আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতেই পেছন থেকে শুনলো ….”অনেক্ষণ?”
“বাহ্” মনে মনে এটাই প্রথম বললো রীপ। হলুদ কুর্তিতে ভারী সুন্দর লাগছে দীঘি কে!
-“হ্যাঁ, তা কিছুক্ষণ! সিঙ্গারা আনতে গিয়ে দেরি করছেন ভাবলাম বুঝি। হাত তো খালি। আনেন নি?”
-“পুটিরামের কচুরি এনেছি”
– ” আপনি তো আলাদাই দেখছি। বিয়ে করবেন আমায়? আমার পুরো টিনটিন সিরিজ আপনাকে দিয়ে দেবো। মাইরি বলছি!”
-“যেই কথাটা বলতে এসছি বলে নি আগে?”
-” ওহ হ্যাঁ, বলুন!”
“এই কথাটা আমার বাবা মা আপনাকে বা আপনার পরিবারের কাউকে জানাতে বারণ করেছিলেন। আপনার আগেও আমার তিনটে সম্মন্ধ এসছে। তারা সবটা জেনেই পিছিয়েছে।

আমি যখন ক্লাস ফাইভ, আমার এক মামা.. মায়ের দূরসম্পর্কের ভাই, বেড়াতে আসে আমাদের বাড়ি। একমাস মত ছিল। মা বাবা ভালই ভেবেছিল ওকে। কিন্তু সেই ওই একদিন মা বাবা না থাকার সুযোগে….
আমি তখন অতটা বুঝতাম না জানেন। শুধু মনে আছে বাবার ওকে মারতে মারতে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া আর মায়ের আমাকে বলা এসব কথা যেন কাউকে কখনো না বলি।”
-“তবে আমায় বললেন কেন?”
-“মনে হলো, বলা দরকার। বলা উচিত। এবার আপনি ভাবুন বরং!”
-” বেশ, উঠি তবে?”
-” জানালেন না কিছু?”
-” আপনি কিসে ফিরবেন? উবের হলে বুক করে দিতে পারি!”
-” না থাক, আমি পারবো!”
-” বেশ, আসি!”

*অন্তরীপ কলিং*
-” বলুন! আমি মা বাবাকে একটু পরেই জানাতাম আপনি না করেছেন। একটু আগেই পৌঁছলাম আসলে।”
-” মানেটা কি?” আমি কখন না করেছি?”
-” মানে? তখন তো কিছু না বলেই চলে গেলেন। আমি তাই ভাবলাম…”
-” আপনি বড্ড ভাবেন। এবার কম ভাবুন। আর কবে কি হয়েছে তাই নিয়েও কম ভাবুন।”
-” কিন্তু…”
-“বিয়ে করছেন তো আমায়?”
-“ভেবে দেখুন একবার আপনি।”
“ভেবে ফেলেছি। বিয়ের পর সপ্তাহে একদিন করে কাকিমার চা আর ওই সিঙ্গারাটা খেতে যাব। আর আপনার বইগুলো….!”
-“টিনটিন সিরিজ?”
“বিয়ের পর!”

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত