অর্ধেক জীবন

অর্ধেক জীবন

“আমি তার সাথে হাঁটছি। এমন মনে হচ্ছে আমরা দুজন সহস্র বছর ধরে হাঁটছি। তার চেহারায় নেই কোনো ক্লান্তি আর আমার চেহারায় নেই কোনো বিষাদ। আমরা যেন যুগযুগান্তরের সঙ্গী। আমার পড়নে সাদা একটা শাড়ী আর তার পড়নে কালো শার্ট। আর আমরা খালি পায়ে, আমাদের পায়ের নিচে পিষে যাচ্ছে রাস্তায় ঝরে পড়া কৃষ্ণচূড়া!

-এরপর?
নাদিয়া জিজ্ঞেস করলো, আমি বললাম,
-আর মনে নেই!
-তুই ঐ ছেলের চেহারা দেখেছিস?
-না তো! কিন্তু তার চেহারার একপাশ দেখেছি। মুখটা একটু লম্বা আর মুখে চাপা দাঁড়ি আর চুলগুলো ঘন পাতলা। পড়নে শুধু কালো শার্ট
-আর কিছু মনে নেই?
-না!
-আচ্ছা! অনেক হয়েছে এবার ঘুমাতো?
-তুই বিরক্ত হচ্ছিস?
-রাতের বাজে ২ টা! এমন সময় তুই না ঘুমিয়ে তোর স্বপ্নের কথা বলছিস তাহলে রাগ উঠবে না। মাত্র তোর বয়স পচিশ আর স্বপ্ন দেখলি হাজার বছর ধরে হাঁটছিস! এমন অযৌক্তিক স্বপ্ন কেউ দেখে? যাহ! এবার ঘুমোতে যা আর আমায় রেহায় দে!
-আচ্ছা।

প্রায় রাতের ৩:০০ বাজে। একঘণ্টা হয়ে গেছে ঘুম আসে না! বিছানার এপাশওপাশ করছি। কি মনে করে যেন বারান্দায় গেলাম। এসময়টা সত্যিই খুব সুন্দর। সারা শহর ঘুমে ব্যস্ত! হয়তো কিছু লাভবার্ডস তাদের প্রেমালাপে ব্যস্ত আর কিছু পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী পড়াশোনায় ব্যস্ত আর আমার মতো নিশাচরেরা এই রাত তিনটার নিরব পরিবেশে সৌন্দর্য খুঁজে বেড়াচ্ছে, খুঁজছে কেউ কারো আপনজনের স্মৃতি অথবা মিথ্যে ভালোবাসার অভিনয়ে ফেঁসে কেউ বালিশ ভেজাচ্ছে কিন্তু আমি রাতের অন্ধকারের সৌন্দর্য্য খুঁজছি আর ভাবছি কে এই ছেলে যে রাতে আমার স্বপ্নে আসে। হঠাৎ আমার দৃষ্টি রাস্তায় যায় সেখানে আমি আরেকজন নিশাচরীকে দেখতে পাই, এই নিশাচারী হয়তো রাতের বেলা হাঁটতে ভালোবাসে কিন্তু সে যখন আমার কাছাকাছি এলো আমার শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে গেলো, মনে হচ্ছে এখনো স্বপ্নে আছি। যাকে আমি স্বপ্ন দেখি ঠিক তার মতো শারীরিক অবকাঠামো, সেই লম্বা চওড়া দেহ, শুধু অন্ধকারের জন্য তার চেহারা বোঝা যাচ্ছে না আর সে আমার থেকে অনেকটা দূরে, আমি শুধু চাচ্ছি সে রাস্তার নিয়ন লাইটের নিচে আসুক তাহলে চেহারা দেখতে পাবো। হঠাৎ দেখি সে হাঁটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে তাহলে কি সে আমায় দেখে ফেলেছে? আর আমার বারান্দায় লাইট অন আবার রাস্তার নিয়নবাতিও আছে আর থাকিও দোতালায় আমার চেহারা বোঝা না গেলেও কিছুটা আন্দাজ করা যায়। তাড়াতাড়ি নিজের রুমের ভেতর চলে গেলাম আর দরজার আড়াল থেকে দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু দেখা যাচ্ছে না তাই আবার বারান্দাতে গেলাম,ছেলেটা চলে যাচ্ছে সোজা রাস্তাটা দিয়ে এরপর কোনদিকে গেলো বলতে পারি নি আবছা কুয়াশার কাররণে।

পড়াশোনা শেষ করে একট স্কুলে শিক্ষকতা করছি পাশাপাশি দুইটা টিউশনি করাই। সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য যখন বের হলাম তখন কেন জানি ঐ ছেলেটা যেই রাস্তা দিয়ে হেঁটৈ যাচ্ছিল সেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি বরং আমার স্কুলে যাওয়ার রাস্তাটা আমার হোস্টেলের বিপরীতে। কতক্ষণ হাঁটার পর রাস্তায় দুটো মোড় আসে। আমার মন কেন জানি ডানে মোড় নিতে চাইছে। ডানে মোড় দিতেই আমি আবারো ঐ ছেলেটিকে দেখলাম। এবারেও সে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল আর ছেলেটা দেখতে আমার স্বপ্নে দেখা ছেলেটির মতো ! মুখে চাপা দাঁড়ি, মুখটা কিছুটা লম্বা, ফর্সা রং, লম্বা চওড়া দেহ আর ঘনপাতলা চুল শুধু পড়নে ফরমাল ড্রেস হয়তো জব প্লেইসে যাচ্ছে! যখন বুঝতে পারলাম ছেলেটি বুঝতে পেরেছে কেউ তারর দিকে তাকিয়ে আছে আর সে আমার দিকে ফিরতে যাবে আমি উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করলাম আর রিকশা নিয়ে সরে আসলাম ঐ গলি থেকে। সারাদিন কোনোকাজে মনোযোগ দিতে পাররি নি। শুধু ভাবছিলাম যে স্বপ্ন আর বাস্তবতা কখনো কি এত মিল হয়? নাকি আমার চোখের দেখার ভুল!
যখন হোস্টেলে এসে নাদিয়াকে জানালাম, সে শুধু এতটুকু,

-বুঝলাম এখন যদি তোর বিয়ে না হয় তোর মাথা ঠিক থাকবেনা! পরে ঢাকা থেকে তোকে পাবনা শিফট করাতে হবে!
-ইশ! শুধু আজেবাজে কথা বলিস! বাদ দে!
-তুই বাদ দে এসব স্বপ্ন দেখা! নিজের পছন্দে তোর ফ্যামিলি কখনো তোকে বিয়ে দিবেনা সুতরাং বাদ দে!
-আমি বিষয়টা বাদ দিতে চাইলেও পারছিনা! বিষয়টা কোনো না কোনোভাবে আমার মাথায় ঢুকে যাচ্ছে!
-আচ্ছা এক কাজ কর! তুই ঘুমা!
-এই সন্ধ্যাবেলা কেউ ঘুমায়?
-হ্যা তুই ঘুমা! তাও তুই এই স্বপ্ন বাদ দে নাহলে তুই পাগল হয়ে যাবি!

আমি কথা না বাড়িয়ে নাদিয়ার কথায় সায় দিলাম! কিন্তু আবারো সেই স্বপ্ন কিন্তু এবার ভিন্ন রকম। এবারে আমি আর ছেলেটি মুখোমুখি দাঁড়ানো কিন্তু আমাদের মাঝে একটি সাদা পর্দা আর কোথা থেকে যেন কৃষ্ণচূড়া ফুল ঝরে পড়ছে। এই প্রথম আমি কিছুটা হলেও ছেলেটির চোখ দেখতে পেরেছি। এতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টির চোখ। এই পর্দারর কারণে তার চেহারা বোঝা যাচ্ছিল না আর যখন পর্দা সরাতে যাবো ঠিক তখনই ঘুম টা ভেঙে গেলো। দেখি রাত তিনটা বাজে। গতকাল ঠিক এসময় তাকে দেখেছিলাম । আজো এমন এমন একটি আশায় বারান্দায় দাঁড়ালাম কতক্ষণ অপেক্ষার পরও যখন কেউ এলোনা তখনি দেখি কেউ রাস্তার অন্ধকারটায় দাঁড়িয়ে আছে। আমিও স্তব্ধ হয়ে তাকে দেখছি আর সেই অবয়বটাও আমার পাণে চেয়ে আছে। এমন মনে হচ্ছে সহস্র বছরের অপেক্ষা এবার শেষ হওয়ার পালা। তারপর কেন জানি সে উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করলো আরর আমিও আমার রুমের দিকে।তাও আবার পিছনে ফিরে তাকালাম দেখি সেও তাকিয়ে আছে। সে কে? কি তারর পরিচয়? সে কি আমার অপেক্ষা, ভালোবাসা নাকি

অন্যকিছু? জানি না কিন্তু আমি মায়ায় পড়ে যাচ্ছি! আজ বহুদিন পর কারো ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করছে, কারো ভালোবাসার মাধ্যমে নিজের তৃষ্ণা মেটাতে ইচ্ছে করছে!

এরপরদিন সন্ধ্যায় টিউশনি করে ফিরছি তখন আবারো ঐ রাস্তা, ঐ মোড়াটাতে যাওয়ার ইচ্ছে করছে। যখন মোড়ের কাছাকাছি গেলাম, দেখি ঐ ছেলেটি আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমিও এগিয়ে আসছি ঠিক তখনই একটা বাসার বারান্দা থেকে ওড়না এসে ছেলেটির মুখের উপর পড়ে যায় আর বাতাসের দোলা লেগে কৃষ্ণচূড়া ফুল ঝরছে ঠিক ঐ স্বপ্নের মতো। কিন্তু আমি কেন জানি দৌড় দিলাম, আর সেও আমার পিছনে দৌড়াচ্ছে আর ডাকছে,

-এ মেয়ে দাঁড়ান।

কণ্ঠ এত গম্ভীর আর মার্জিত যে যেকোনো মেয়ে এই কণ্ঠে সাড়া দিতে রাজী কিন্তু আমি এই কণ্ঠে সাড়া দিতে চাই না। এমনেও আমি তার চোখের মায়ায় পড়ে গেছি। হোস্টেলে এসেই একটা নাদিয়ার কাছ থেকে একটা স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমোতে গেলাম। সেদিন একক ঘুমেই রাত কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু এভাবে ঘুমের ওষুধ খেলে আমার স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হবে তা নিশ্চিত। একদিন নাদিয়াকে ছেলেটার আর স্বপ্নের বর্ণনা দিলাম, সে বললো,

-তুই ছেলেটার সাথে কথা বলতে পারলি না গাধী, তোকেকে ডাকছিলো তাহলে তুই একটু দাঁড়াতি!
-আমি অলরেডি তার চোখের মায়ায় পড়ে আছি আর এখন তার কণ্ঠও?

-তুই যেই বর্ণনা দিলি এমন ছেলে এই গলিতে আর পাশের গলিতে অনেকেই আছে। আর তুই দেখেছিস পাশের গলিতে! খোঁজখবর নিয়ে দেখবো কি?

-আরে থাক না!
-তুই সত্যি বলছিস তো?
-হুম ভাবছি কয়েকদিনের জন্য গ্রামের বাড়ি চলে যাবো!
-তাই ঠিক হবে!

আমার কথা শুনে এখন আর নাদিয়াও মজা করে না! বরং জিনিসটা তাকেও ভাবায় যে একজন মানুষের কল্পনা আর বাস্তবতা এক হয় কিভাবে?

স্কুল থেকে ছুটি নিয়েছি। মেডিকেল লিভ, বেশিদিন না মাত্র এক সপ্তাহের ছুটি দিয়েছে। তাও ছুটি তো পেলাম, নাহলে এসব প্রাইভেট স্কুল কখনো এত ছুটি দেয়না! বাসে উঠার পর কোনো সিট পেলাম না দাঁড়িয়ে যেতে হবে পুরোটা রাস্তা। আমার সামনে কয়েকজন ভার্সিটির ছেলেমেয়ে দাঁড়ানো, হঠাৎ পিছন থেকে কেউ যেন আমার শরীরে হাত দিচ্ছে, আমি যে একটু সরে দাঁড়াবো তারও সুযোগ নেই! হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন বললো,

-এক্সকিউজ মি! আপনি আমার সিটে বসুন।

কণ্ঠ টা খুবই চেনাশোনা লাগছে। পিছনে ফিরে দেখি লোকটা ঐ লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে যে লোকটা আমার গায়ে হাত দিচ্ছিল, আবারো এই অবয়ব, যখন আমি সিটে বসলাম তার একপাশ দেখে আমি অবাক হয়ে আছি, এইটা তো ঐ ছেলেটাই, সে ঐ লোকটাতে বলছে,

-আপনি যদি আপনার বাসার বাহিরের আশেপাশের কোনো মেয়ে নারীকে সম্মান দিতে না পারেন তাহলে আপনার বাসার মহিলাদের কিভাবে সম্মান করেন? মেয়েরা খুব সম্মানের জাতি, তাদের সম্মানহানি হয় এমন কোনো কাজ করবেননা!

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে আছি বরং এটা একটা সুযোগ ছিল তাকে দেখার কিন্তু কেন জানি তারদিকে তাকাতে পারিনি, ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো ধন্যবাদ দেওয়ার আশায় এমনকি বাসের অনেকেই তাকিয়ে আছে, একজন তো বলেই ফেললো,

-আপু একটা ধন্যবাদ তো দিন ভাইয়াকে।

আমি বাস ড্রাইভারকে বাস থামাতে বললাম, বাস থেকে নামার সময় ওনাকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিলাম। হোস্টেলে আসতেই নাদিয়া বললো,

-মৃদুল
-কি মৃদুল?
-ছেলেটার নাম মৃদুল, তুই যে বর্ণনা দিলি তারসাথে ঐ মৃদুলের টা বেশি মিলে।
-বাট তুই তো বললি এমন ছেলে অনেকেই আছে তাহলে সে হবে এটা তুই শিওর কিভাবে?
-কারণ সবাই তো আর রাত তিনটার সময় হাঁটে না। আর মৃদুল ছেলেটাও একটা কথা বলেছে যা শুনে আমি নিশ্চিত হলাম এটাই ঐ ছেলেটা!
-তোর ঐ ছেলের সাথে কথা হয়েছিল?

– না আমার পরিচিত একজন বলেছে যে রাতের তিনটার দিকে মৃদুল ভাইয়া হাঁটতে বের হয় আর মৃদুল ভাইয়া দেখেন রাতের বেলা আমাদের হোস্টেলে একটা মেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে আর সেই মেয়েটা অন্যকেউনা বরং তুই। এবার আর কোনো সন্দেহ আছে?

-তুই দেখেছিস?
-হ্যা কয়েকবার দেখেছি। তিনি নতুন এই এলাকাতে।
-আচ্ছা আজ আবার তাকে বাসে দেখেছি কিন্তু তার চেহারা দেখতে পারিনি।
-বাসে একইসাথে থেকেও তুই তার চেহারা দেখিস নি? আসলে তুই একটা গাধী।
-আচ্ছা বাদ দে আমি প্যাকিং করবো।কাল বাড়িতে যাচ্ছি!
-আচ্ছা!

রাতে আজ তাকে স্বপ্নে দেখলাম এবং আমাদের মাঝখানে একটি সাদা পর্দা। আমি যখন দৌড় দিতে যাব সে আমার একটা হাত ধরে আমায় থামিয়ে দিল আর নিজ থেকে আমাদের মাঝখান থেকে পর্দাটা সরালোলো আর আমি তার সম্পূর্ণ চেহারা দেখলাম! মুখে চাপা দাঁড়ি, তীক্ষ্ণ চোখ, বাদামি ঠোট, ঘন পাতলা চুল, কালো শার্ট আর লম্বা চওড়া দেহ! ঘুম থেকে উঠে দেখি অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যাওয়ার আগে পাশের গলিতে গিয়েছিলাম একটাবার তাকে বাস্তবে দেখতে কিন্তু দেখা পাই নি!

বাড়িতে এসেছি দুইদিন কিন্তু একটুও শান্তিতে থাকতে পারিনি। এরই মধ্যে আমার মা আমাকে বলে গিয়েছেন আমাকে নাকি ছেলে দেখতে আসবে! আমি কি করে বলি মাকে যে আমি একটা অচেনা ছেলেকে ভালোবেসেছি যেই ছেলের কাছে আমি অপরিচিতা ছাড়া আর কিছুই না। ঐ ছেলেটা তো জানেওনা যে কেউ তাকে ভালবাসে। আর আমার কি করার? আমি তো এখন আমার পরিবারের পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবো এছাড়া তো আর কোনো রাস্তা নেই বরং কেউ যদি জানে আমি রোজ একটা আমার কল্পনায় দেখা ছেলেকে ভালোবাসি তাহলে আমাকে পাগল ছাড়া কিছু বলবেনা!

যেদিন আমাকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে সেদিন আমি আমার বাড়ির সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে তাকিয়ে কান্না করছিলাম। মৃদুল যেই গলিতে থাকে সেখানেও তো একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে আর আমার স্বপ্নে কৃষ্ণচূড়া যেন সাক্ষী হয়ে থাকতো!

নিজের অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও আমাকে ছেলেটির সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে হচ্ছে তবে একদিকে ভালোই হয়েছে। আমি ছেলেটিকে বলতে পারবো যে আমি তাকে বিয়ে করতে পারবোনা, আমি অন্যকাউকে ভালোবাসি। আর ঢাকা গিয়ে মৃদুলকে জানিয়ে দিবো। এমন সময় পিছন থেকে ছেলেটি বলে উঠলো,

-আচ্ছা তুমি কি রাতে ঘুমাও না? হোস্টেলের বারান্দায় এমন বাদুড় ঝোলা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকো কেন? আর আমাকে দেখলেখলে পালিয়ে যাও কেন?

এই পরিচিত কণ্ঠ তো মৃদুলের, আর এই ছেলে কি করে জানলো আমি রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকি আর আমি তাকে দেখলে পালিয়ে যাই মান? আমি পিছনে ফিরে দেখি ছেলেটির মুখে আমার সাদা ওড়নাটা পড়ে আছে আর সে যখন ওড়নাটা সরালো তখন দেখি মৃদুল দাঁড়িয়ে আছে।
-কি হলো মিস আমার প্রশ্নের উত্তর কই?

আমি শুধু দেখছি আমার সামনে মৃদুল বাস্তবে দাঁড়িয়ে আছে, আমার চোখ দুটো ভিজে আসছে, আমি দেখলাম মৃদুলের চোখের কোণেও পানি জমছে। এমন পবিত্র মিলন তো তখনই ঘটে যখন সৃষ্টিকর্তা নিজের হাতে জোড়া বানিয়ে পৃথিবীতে পাঠান। আমরা কেউ কিছু বলতে পারছিনা। শুধু গভীর দৃষ্টিতে আমি আর মৃদুল একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি। আর বাতাসের কারণে কৃষ্ণচূড়া ফুল ঝরে পড়ছে।

এতদিন যাকে স্বপ্নে দেখি আজ সে আমার সামনে। আজ যেন আমাদের সহস্র বছরের অপেক্ষা শেষ হলো, মনে হচ্ছে হাজার বছরের অপেক্ষারত মিলনের সমাপ্তি ঘটেছে। আজ দুটো তৃষ্ণার্ত আত্মার-মনের মিলন ঘটেছে। আর এই মিলনের সাক্ষী হয়েছে আকাশের চাঁদ, আবছা কুয়াশা আর কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত