সমাজের কিছু মানুষ

সমাজের কিছু মানুষ

কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের চারিত্রিক গুণের কোন ত্রুটি নেই। সত্যিই আছে! এমন কিছু কিছু মানুষ আছে। নূর! হ্যা নূর তেমনি একজন মানুষ।

তার উপর থেকে নজর সরানোর কোন উপায় নেই। তার মৃদু হাসি, দীপ্ত হৃদয়, পুষ্পরস আঁখি, সত্যি অনন্যসলুভ তার গ্রথন।

তার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে এক বছর হতে চললো। দুই পরিবার দেখেশুনে আমাদের বিয়ে দিয়েছেন।আমি অঢেল খুশি ছিলেম নূরের সঙ্গে বিয়ে হওয়াতে। স্কুল জীবনে পড়াশুনার ফাঁকে কখনো প্রেম করে হয়ে উঠা হয়নি, কলেজ জীবন শুরু হতে না হতেই বিয়ে হয়েছে, তাই মনে ইচ্ছে জেগেছিলো বিয়ের পর বরের সঙ্গে প্রেম করার।

বাগিচায় ফুল মধু নিয়ে বসে আছে তবুও যেন ভ্রমরের কোন সন্ধান নেই! এমনি হলো গত এক বছরে। তবে কি নূর আমায় বিয়ে করে সুখি হয়নি? নূরকে বারবার প্রশ্ন করতে চেয়েও পারিনি কারন তার সম্মুখীন হলে আমার জবান বন্ধ হয়ে যায়! কি ভীরু চেহারা তার। কি করে তাকে এই প্রশ্ন করবো যে ‘সে আমাকে পেয়ে সুখি কি না!’
বিয়ের তিন মাস পরের কথা, সন্ধ্যায় নূরের জন্য চা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে তার পাশে বসলাম।

নূর বই রেখে চশমার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে বলে “কিছু বলবে?” নিজের মনকে আঁটসাঁট করে জিজ্ঞেস করলাম “আমি তোমার বিয়ে করা স্ত্রী, আমার উপর কি তোমার কোন দায়িত্ব নেই?” নূর আলোক ঝলকানির মত হেসে বলে “তোমায় কেউ কিছু বলেছে? অসন্মান করেছে কেউ?” চোখের কোণে রাগান্বিত ভাব নিয়ে বললাম “অন্য কেউ কিছু বলেনি! স্বামীর অবহেলিত স্ত্রী আমি!” বলেই উঠে নিজের রুমে চলে আসলাম।

বারান্দা থেকে কোন শব্দ আসছে না, নয়তো নূর নিজের মত করে চা খাচ্ছে। মানুষটা এমন কেন? সব বুঝে শুধু এটা বুঝে না আমি কি বুঝাতে চাই!

আচ্ছা সত্যি কি সে বুঝে না? নাকি না বুঝার বান করে থাকে!! মানুষটা বেশ আবেগপ্রবণ। এইতো সে দিনের কথা, বাসায় কেউ ছিলো না এবং আমিও না। বাবা অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম, সন্ধ্যায় শ্বশুড় বাড়ি ফিরে এসেছিলাম কারন নূর বাড়িতে একা ছিলো।

কি করবে! কি খাবে একা! তাই ফিরে এসেছিলাম। বাসায় প্রবেশ করতেই দেখি সারা ঘরে মমতা উড়ে বেড়াচ্ছে। নূর খাবার টেবিলে বসে আছে। সামনে ঢেকে রাখা খাবার। দরজার কাছে এসে নূর আমার চোখ চেপে ধরে খাবারের উপর থেকে ঢাকনা সরিয়ে চোখ ছেড়ে দেয়, বিস্মিত চোখে আমি চেয়ে রইলাম, এসব তো আমার পছন্দের খাবার, নূরকে জিজ্ঞেস করলাম “এগুলো কে রেঁধে দিয়েছে?” নূর ভ্রু কুচকে বলে “তোমার কি মনে হয়! আমি রাঁধতে পারি না?” আমি হেসে বললাম “আমার জানা ছিলো না” নূর কুচকানো ভ্রু সরল করে বললো “সবে তো বিয়ের ৪ মাস হলো, আস্তে আস্তে সব জানতে পারবে”। সেদিনটা অন্যতম ছিলো। নূরের রান্না করা বিরিয়ানিতে লবণ কম হলেও খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছিলাম। আমার মনে সব সময় একটাই কথা জেগে উঠতো ‘মানুষটা সর্বদিক দিয়ে পুরিপূর্ণ তবে কেন কখনো শরীরগত স্পর্শে মিশতে চায়নি? বিয়ে হচ্ছে পবিত্র সম্পর্ক এবং স্বামী-স্ত্রীর মিলনও আল্লাহ পবিত্র করেছেন তাহলে সে কেন উপেক্ষা করে?

তার মুগ্ধকরণ চালচলনে পূর্ণ হতে চললো আমাদের সম্পর্কের এক বছর।
খাবার টেবিলে বসে শাশুড়ি মা বলছেন “বৌমা ৭ দিন পর তোমাদের বিবাহবার্ষিকী, প্রায় এক বছর হতে চললো এবার নাতী-নাতনীর মুখ দেখতে পাবো তো” মায়ের কথা শুনে লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে রইলাম, শশুড়-শ্বাশড়ী এবং এক মাত্র দেবরের হাসির শব্দ শুনতে পেলাম শুধু এক জনের ছাড়া। বিষাদ মনে এক চিলতে হাসি নিয়ে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি নূর খাবার রেখে নিজের রুমে চলে যাচ্ছে। নূরের পিছন পিছন আমিও রুমে এসে তার সামনে দাড়ালাম।

নূর কাঁদছে! নূরের নয়ন ভিজে অবাধ পানি ঝরছে। নূরের বিবশ মুখ ছুঁয়ে বললাম “আমায় কি বলা যায় না এই অবাধ পানি ঝরার কারন?”

সাত দিন পর আমাদের বিবাহবার্ষিকীর দিনটি চলে এলো,সেদিন সবার আসার কথা ছিলো তবে বিবাহবার্ষিকীতে না, আদালতে আসার কথা হয়েছিলো। আজ হয়তো বিচারক প্রধান আমার ফাঁসির রায় শুনাবেন কারন এক সপ্তাহ আগে আমি একজন কে সবার সামনে খুন করেছি।
শুধু একজন না! শতাধিক মানুষ তা দেখেছে।

“ছোট বেলায় বাসার দারোয়ান রহিম চাচার সাথে সকাল-বিকাল খেলতো নূর, কখনো ফুলবল,কখনো ক্রিকেট, শহরে চার দেওয়ালের মাঝে আর কিইবা করা যায়! বাবা-মা সকাল সকাল অফিসে চলে যেতেন, ফিরতেন রাতে।
সারাদিন নূর তার কাছেই থাকতো, স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরও রহিম চাচা ছিলো তার ছায়া বিনিময় মাস শেষে মোটা অঙ্কের বেতনও পেতেন তিনি, বয়স বাড়ার সঙ্গে ধীরে ধীরে যখন নূর বুঝতে পেরেছিলো রহিম চাচা ওর উপর এত বছর যৌনাচার করেছিলেন তখন থেকে মানসিক প্রেরণায় ডুবে যায় নূর। কখনো কাউকে কিছু বলে উঠতে পারেনি, লজ্জায় কখনো কাউকে বুঝাতেও পারেনি তার মনের অপূর্ণ এই অধ্যায়ের কথা”।
নূরের চোখে অবাধ পানি ঝরার কারন শুনে

নিজেকে স্থীর রাখতে পারলাম না, দ্রুত পায়ে নিচে নেমে দেখি রহিম চাচা চা খেতে দোকানে গিয়েছেন, অস্থিরতার সঙ্গে দোকানের সামনে গিয়ে ফল কাটা চাকু দিয়ে রহিম চাচার বুক লক্ষ্যভেদ করেছিলাম, আমার করা আঘাতে প্রাণ হারায় সে।

আদালতে সবাই উপস্থিত হয়েছেন।
নূরের বিবশ মুখে চেয়ে মৃদুমন্দ হেসে বললাম “তোমার সুদৃশ্য কমল হৃদয়ে যে নোংরা দাগ দিয়েছে তাকে আমি পৃথীবি থেকে বিদায় করে দিয়েছি”। ওদিকে বিচারক প্রধান আমার ফাঁসির রায় শুনিয়ে দিলেন।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত