রাতুলের আম্মু

রাতুলের আম্মু

“রাইসার বিয়ে হয়েছে প্রায় ৫ বছর।এ ৫ বছরের রাইসার কোলে কোনো সন্তান আসে নাই। ডাক্তারে পরীক্ষা মোতাবেক রাইসার স্বামী রিহানের কোনো সমস্যা নাই,কিন্তু রাইসার সমস্যা। তারপরেও ডাক্তার রাইসাকে অাশা দিয়েছে হয়তো আপনি মা ডাক শুনতে পারবেন কোনো একদিন। এ আশা নিয়ে আজকে ৫ বছর রিহানের সাথে সংসার করতেছে রাইসা।

“রাইসা সে প্রথম থেকে তার যদি বাবু দুনিয়াতে আসে ছেলে হলে নাম রাখবে রাতুল, আর মেয়ে হলে নাম রাখবে রাত্রি। কারণ রিহান, রাইসা, রাতুল, রাত্রি প্রায় মিল।মনে আশা করে ঠিকে রাখছে কিন্তু নিয়তির খেলা আজও সে মা ডাক শুনতে পারলো না।রাইসার রিহানের ৫ম বিবাহবার্ষিকী আজ।রিহান প্রতিবারের মতো রাইসাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য রাতে বাজার থেকে গোলাপ ফুল নিয়ে আসছে।রিহান যখন রাইসাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ফুলটা তার হাতে দিয়েছে রাইসা তখন রিহানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।কান্না করতে করতে রাইসা রিহানকে বলে-
__আপনি আরেকটা বিয়ে করেন(রাইসা)
__হঠাৎ এ কথা কেন?(রিহান)
__আমি যে আপনাকে আব্বু ডাক’টা শুনাতে পারবো না তাই।
__আরে রাইসা কান্না করো না,ইনশাঅাল্লাহ তুমি মা হবে একদিন।
__আর কখন আজ ৫ বছর হয়ে গেছে।
__ধৈর্য ধরো,ধৈর্যশীল মহান আল্লাহ পছন্দ করেন।তুমি আর কখনো আমাকে বিয়ে করতে বলবা না,আমি তোমাকে বিয়ে করছি তোমার হাত ধরে মৃত্যুর অাগ পর্যন্ত থাকতে চাই।
__তাই বলে এভাবে আর কতদিন।
__যতদিন আমরা বেঁচে থাকি,হইছে আর কাঁদতে হবে না চলো ডিনার করবো।
__হুম চলেন।

“অনেক অপেক্ষার পরেও রাইসা মা ডাক শুনতে আর পারলো না।রিহান এবার রাইসাকে নিয়ে গেলো শহরের নামীদামী ক্লিনিক এ সেখানে রাইসাকে চিকিৎসাহ করাবে।রওনা দিলো ব্যস্ত শহরে।রাইসা মনে মনে অনেক খুশি হয়তো এবার ভালো ডাক্তারে দেখানোর ফলে মহান অাল্লাহর রহমতে সে মা হতে পারবেন।
রাইসাকে নিয়ে গেলো ডাক্তারে কাছে সব পরীক্ষা করে ডাক্তার রাইসাকে ফাইনালি বলে-
রাইসা আপনি জীবনেও মা ডাক শুনতে পারবেন না(ডাক্তার)

রাইসা ডাক্তারে কথা শুনে সেখানে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলেন।রিহান রাইসাকে ধরে বাসস্ট্যান্ড এর সামনে নিয়ে আসলেন।
গ্রামের দিকে রওনা দিবেন টিকিট নিয়ে বাসে উঠে রাইসা এক দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছেন।রাইসা যখন বাহিরের তাকিয়ে আছেন হঠাৎ ৬বছরের একটা পথশিশু বলে-
__মা ১০টা টাকা দিবেন,আজকে সারাদিন কিছু খাইয় নাই(পথশিশু)
__কি বলছো তুমি?(রাইসা)
__মা আপনাকে ১০টা টাকা দিতে বলছি, আচ্ছা মা ৫ টাকা দিলে হবে।

রাইসা যখন মা ডাক শুনে তাড়াতাড়ি বাস থেকে নেমে পড়ে আর পথশিশুর হাত ধরে নিয়ে গেছে ডাক্তারে কাছে।ডাক্তারে কাছে নিয়ে গিয়ে রাইসা বলে-
__আপনি ডাক্তার মিথ্যুক, আপনি বলছেন আমি জীবনেও মা ডাক শুনতে পারবো না এ দেখেন এ ছেলেটা আমাকে ৩ বার মা বলে ডাক দিয়েছে।

ডাক্তার মশাই রাইসার কান্ড দেখে পুরাই অবাক হয়ে গেছেন অজান্তে চোখ থেকে দুই’ফোঁটা জল এসে গেছে রাইসার জন্য।
রাইসা,রিহান পথশিশুকে নিয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট এ সেখানে নিজের হাতে রাইসা পথশিশুকে লোকমা করে করে খাইয়ে দিয়েছে।আবার রাইসা রিহান চলে আসছে বাসস্ট্যান্ড এ।সেখানে এসে রাইসা পথশিশুকে বলে-
__তোমার নাম কি বাবু?(রাইসা)
__আমার নাম’তো জানি না,তবে আমার দাদু মানিক বলে ডাকতো(পথশিশু)
__তোমার বাবা,মা কোথায়?
__আমার মা আমি দুনিয়াতে আসার সময় মারা গেছে,আর বাবা আমাকে রেখে আরেকটা বিয়ে করছে।
__তোমার দাদু কোথায়?
__দুই’দিন হলো দাদু মারা গেছে।
__তাহলে তুমি এখন কোথায় থাকো?
__এ রাস্তায় থাকি।

রাইসা পথশিশুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো।কান্না করতে করতে বলে-
→কে বলছে তোর মা মারা গেছে এইতো আমি তোর মা।আর কে বলছে তোর নাম নাই,তোর নাম হচ্ছে রাতুল।তুই আমার সাথে চল গ্রামে আমার সন্তান হয়ে বড় হবি। কি যাবি নাকি?
__হ্যাঁ মা যাবো,কারণ আমাকে কেউ জড়িয়ে ধরে এমন করে কেউ অাদর করে নাই।
__তাহলে আর দেরি কেন মায়ের কোলে আয় আর বসে বসে নিজের বাড়িতে যাইবি।

রিহান অনেক খুশি রাইসা যে মা ডাক শুনছে।নিজ গ্রামে এসে রাইসা শাশুড়ি মাকে চিৎকার দিয়ে দূর থেকে বলে-
__আম্মা আম্মা আপনার নাতী রাতুল আসছে দেখে যান।শাশুড়ি আম্মা এসে দেখে কি সুন্দর ফুঁটফুঁটে বাচ্ছা।যখন মানিক নামের রাতুল কে দেখে মা মরিয়ম কোলে না নিয়ে পারলেন না।

রিহান রাইসা এখন অনেক হ্যাপি তাদের রাতুল কে নিয়ে।রিহানের মা মারিয়ম বিবিও অনেক খুশি নাতি রাতুলকে নিয়ে। মা মরিয়ম এখন একজন খেলার সঙ্গী পেয়েছে তার এখন সময় নাতী রাতুলকে দিয়ে চলে যায়।

রাইসাকে এখন পাড়া মহল্লার মহিলারা রাইসা বলে ডাকে না।রাইসাকে এখন রাতুলের আম্মু ডাকে আর সে ডাক শুনে পৃথিবীর একমাত্র কেউ যদি খুশি থাকে রাতুলের আম্মু রাইসা আছে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত