টিভিতে ব্রেকিংনিউজ দেখাচ্ছে টাঙ্গাইল থেকে ঘাটাইলগামী একটা বাস রাস্তার পাশে গভীর খাদে পড়ে গিয়েছে।গতকাল রাতে ঘটেছে ঘটনা।বাসে কোনো যাত্রী ছিল না।শুধু ড্রাইভার,হেল্পার আর কন্ট্রাক্টরের লাশ পাওয়া গিয়েছে।ধারণা করা হচ্ছে ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে।রুমা টিভির সামনে বসে খবরটা দেখছে আর গতরাতের কথা ভাবছে।এরকম অস্বাভাবিক ও ভয়ানক একটা ঘটনার মাধ্যমে সে এত বড় একটা বিপদ থেকে কিভাবে যে রক্ষা পেয়েছে সেটা ভাবতেই ওর গাঁ শিউরে উঠলো।
গতরাতের ঘটনা…
নিঝুম রাত চারদিকে শুধু বৃষ্টির ঝুম ঝুম আওয়াজ।রাস্তাঘাটে মানুষজন খুব কম।টাঙ্গাইল নতুন বাস স্ট্যান্ড থেকে রাত ৮ টায় ঘাটাইলের উদ্দেশ্যে একটা লোকাল বাস রওনা হল।বাসে যাত্রী মাত্র কয়েকজন।বৃষ্টির মধ্যে বাস ছুটে চলছে দ্রুত গতিতে।বাসের ড্রাইভারের বয়স ৫০ এর কাছাকাছি।দরজার পাশে দাঁড়ানো হেল্পারের বয়স ২৬ আর কন্ট্রাক্টর ছেলেটার বয়স ১৭।রাস্তায় যাত্রী নামছে আবার উঠছে।এভাবে বাস এলেঙ্গা পর্যন্ত চলে এসেছে।এখানে এসে বাস একদম খালি হয়ে গিয়েছে।এখান থেকে খুব অল্প সংখ্যক যাত্রী নিয়েই বাস চলতে শুরু করল।এলেঙ্গা বাইপাস থেকে কালিহাতির রাস্তায় প্রবেশ করেই বাসের গতি আবার বেড়ে গেল।
বাগুটিয়া বাজারে এসে বাস থামল।এখান থেকে বাসে একটি মেয়ে উঠলো।মেয়েটি বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল কলেজের ছাত্রী।মেয়েটির নাম রুমা।কোনো বিপদে পড়ে হয়তো এরকম বৃষ্টির রাতে কোথাও যাচ্ছে।রুমা বাসে ওঠার পর থেকেই সবাই ওর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে ও একদম ভিজে গিয়েছে।জামা ভিজে শরীরের সাথে একদম লেপ্টে আছে।সাদা রঙ এর জামা হওয়ায় ভেতরে যে কালো রঙ এর অন্তর্বাস পড়েছে সেটাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
যাত্রীরা অনেকেই নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে,কেমন মেয়ে এটা।এরকম রাতের বেলায় একা একা কোথায় যাচ্ছে।আবার জামা কাপড়ের কি অবস্থা।শরীরের সব কিছু দেখাই যাচ্ছে।ভালো মেয়েরা কখনোই এত রাতে একা একা এভাবে বের হয় না।
_হেল্পারঃদেখছা কি,মালডা পুরাই অস্থির।একবারে খাসা মাল।এত রাইতে যায় কনে?
_কন্ট্রাক্টরঃভাই,ভাড়া তো দিল ঘাটাইলের।
_হেল্পারঃওহ!মেয়াডারে ভালো মতো দেখছা কি।সাদা জামা পড়ছে আবার বৃষ্টিতে ভিজা গেছে।জামার নিচের ব্রা দেখাই যাইতাছে।মেয়াডা দেখতেও সেই রকম।একবার যদি পাইতাম কি যে করতাম।কালিহাতি বাজার পার হইয়া নেই দেখ কি করি।
কালিহাতি বাজারে এসে যাত্রীরা অধিকাংশই নেমে গিয়েছে।কিন্তু নতুন কোনো যাত্রী উঠেনি।বাস চলতে শুরু করেছে।বাসে মাত্র ৩ জন যাত্রী।হামিদপুর বাজারে এসে অন্য ২ জন যাত্রী নেমে গেল শুধু রুমা ছাড়া।রুমার চেহারায় স্পষ্ট দুশ্চিন্তার ছাপ।বাসে কি হচ্ছে এই ব্যাপারে ওর কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।ও শুধু বার বার ফোন দেখছে আর কাকে যেন কল করছে।
বাসের হেল্পার ড্রাইভারের সাথে কি যেন কথা বলে বাসের পেছনে গেল।একটু পরই সে ধীরে ধীরে বাসের সব জানালা বন্ধ করে দিল।রুমা হঠাত সেটা খেয়াল করে জিজ্ঞেস করায় হেল্পার বললো,বাস একটু পরেই চলে আসবে ঘাটাইলে।বাইরে তো বৃষ্টি হচ্ছে তাই জানালা লাগিয়ে দিচ্ছি।জানালার পরে দরজা লাগিয়েই হেল্পার আর কন্ট্রাক্টর দুজনেই বাসের পেছনে চলে গেল।কিছুক্ষণ পর বাসের পেছন থেকে কেমন উদ্ভট গন্ধ ভেসে এল রুমার নাকে।পরক্ষনেই ও বুঝতে পারল এটা গাজার গন্ধ।এরপরই ওর মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক করতে লাগলো।
এতক্ষণে রুমা বাসের ভেতরের পরিবেশ বুঝতে পারল।বুঝতে পারল ও এখন বাসে একা একটা মেয়ে,বাসের দরজা জানাল সব বন্ধ,বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে,বাসের পেছনে দুইটা ছেলে গাজা নামক এক মাদকদ্রব্য সেবন করছে।এখন এখানে কী ঘটতে পারে সেটা ভাবতেই ওর হাত পা ভয়ে জমতে শুরু করছে।ও সিট থেকে উঠেই বাসের সামনে এসে ড্রাইভারকে বললো,
_রুমাঃচাচা,বাস থামান আমি নামবো।
_ড্রাইভারঃবাস থামবো না।পেছনে গিয়া চুপ কইরা বয়।আজকে তোরে নিয়া মজা করুম।যা মাগী সর এইখান থিকা।
_রুমাঃচাচা,কি বলেন এসব।আমি আপনার মেয়ের বয়সী।আমার এত বড় সর্বনাশ করবেন না।আমাকে যেতে দেন।
_ড্রাইভারঃকিসের মেয়ে।আইজকা যহন তোরে পাইছি তাইলে তো মজা করুমি।যদি তুই ভালো মতো থাকোস তাইলে তুইও মজা পাবি।নয়তো জোর কইরাই যা করার করুম।আর চিল্লাচিল্লি কইরাও লাব নাই।রাস্তাঘাটে লোকজন নাই।কেউ তোরে বাচাইতে আসবো না।ওই তোরা কনে গেলিরে মেয়াডারে ধইরা সাইজ কর।আমি বাস থামাইয়া আইতাছি।আমিই কিন্তু আগে করুম।
_হেল্পারঃআইচ্ছা ওস্তাদ।আফনেই আগে কইরেন।আমগো পরে দিলেও চলব।
দুজন পেছন থেকে এসে রুমাকে ঠেলে নিচে ফেলে দিল।ড্রাইভার বাস থামিয়ে চলে এসেছে এদিকে।রুমা খুব জোড়ে হাত পা নাড়াচ্ছে আর চিৎকার করছে।এজন্য ওরা দুজন রুমার হাত চেপে ধরেছে আর বুক থেকে ওড়না নিয়ে মুখে গুজে দিয়েছে।ড্রাইভার নিচে বসে রুমার জামা উপরে উঠিয়ে পায়জামার ফিতায় হাত দিয়েছে।ঠিক তখনই বাসের ছাদে কেমন শব্দ শোনা গেল।একটু পর অদৃশ্য একটা শক্তি যেন বলে উঠলো,মেয়েটাকে ছেড়ে দিতে।কিন্তু ওরা কেউ সেদিকে কান না দিয়ে ওদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।তখনই আকস্মিকভাবে ড্রাইভার উল্টো দিকে পড়ে গেল।হেল্পার আর কন্ট্রাক্টরও একইভাবে পড়ে গেল।তখনই অদৃশ্য একটা মেয়ে কণ্ঠ বললো,তুমি পেছনে না তাকিয়ে সোজা চলে যাও।ভালোভাবেই বাড়িতে পৌঁছাতে পারবে।রুমা কিছু বোঝার চেষ্টা না করেই বাস থেকে নেমে চলে গেল।
বাসায় ফিরে ওর দাদাকে দেখেই নিজের রুমে গিয়ে ও ঘুমিয়ে পড়ে।ওর দাদা অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পেয়েই রুমা কলেজ থেকে রাত করেই বাড়ি ফিরছিল।সকালে ঘুম থেকে উঠেই টিভিতে এই খবরটা দেখতে পায়।সবাই দেখছে এটা একটা এক্সিডেন্ট।শুধু রুমাই জানে আসলে কি হয়েছিল গতরাতে।কিন্তু ও এই রাতটা একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যেতে চায়।
এটা একটা কাল্পনিক গল্প এজন্য শেষটা এরকম।কিন্তু বাস্তবে কখনো এরকম হয় না।বাস্তবে এর পরিণতি হয় খুবই ভয়াবহ।তাই মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।আশেপাশের পরিবেশ বুঝে চলাফেরা করুন এবং নিজেদের রক্ষার ব্যবস্থা করুন নিজেরাই।