প্লেন ল্যান্ড করতে আর কিছুক্ষণ বাকি। অংশুমান ল্যাপটপ গুছিয়ে নেয়। রিকি মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে।
পাশের সিটের বিদেশী ভদ্রলোক হঠাৎ ধপ করে পড়ে গেলেন। হৈচৈ বেঁঁধে গেল। একজন ডাক্তার এসে বললেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। বিস্তর জলঘোলা, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ সামলে বাড়ি ফিরতে রাত হল।
সকালে উঠতে দেরি হল অংশুমানের। চায়ের কাপ হাতে বসার ঘরে গিয়েই তার মাথা গরম হয়ে গেল। রিকি ল্যাপটপে গেম খেলছিল নির্ঘাৎ। অংশুমান চেঁচিয়ে রিকিকে ডাকে। শ্রী ঘরে ঢুকে বলে,
“রিকি তো স্কুলে। কী হয়েছে?”
“স্কুলে যাওয়ার আগে গেম খেলছিল! আমার প্রোজেক্ট যদি নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে…”
“কী বলছ কী! ওতো ভোরবেলা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে রেডি হলো। কোলে করে পুল কারে তুলে দিয়ে এলাম। তখন তো এখানে ল্যাপটপ দেখিনি…!” অংশুমানকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে শ্রী। দুজনেই বিস্মিত হয়।
মালতী মাসির সাথে রিকি দুপুরবেলা স্কুল থেকে ফিরে দেখে তার খেলনা রাখার জায়গা অগোছালো। আবার সুন্দর করে গুছিয়ে রেখে মালতী মাসির কাছে স্নান খাওয়া সেরে নেয় সে।
দুপুরে কী একটা শব্দে রিকির ঘুম ভেঙে যায়। বইয়ের তাকের পাশে প্লেনের সেই বিদেশী দাদু! যিনি পাশের সিটে বসে ওর চকোলেটে লোভ দিচ্ছিলেন, তিনি ওর বইয়ের তাকে বই ঘাঁটছেন।
“একি কী করছ তুমি!” ইংরেজিতে প্রশ্ন করে রিকি ।
“তোমার গল্পের বইগুলো দেখছি। ছোটবেলায় পড়তাম তো।” বললেন সাহেব।
“ কিন্তু তুমি তো স্বর্গে চলে গেছ!”
“দূর। অন্য দেশে মরলে এখন স্বর্গে যাওয়া যায়না। যমদূত নিল না। বললো তুমি বিদেশী।” বলেন দুঃখী সাহেব ভূত।
“তুমি আমাদের বাড়ি এলে কিভাবে!”
“মরার পর দেখি তোমার ব্যাগের চেন খোলা। ভিতরে হ্যারি পটারের বই। খুব ভালোবাসি কিনা। তাই পড়তে পড়তে চলে এসেছি।” বলেন ভূতদাদু।
বিছানায় উঠে বসে স্কুলের নানদের কাছে শেখা যীশুর গান গাইতে শুরু করে রিকি। তাকে চমকে দিয়ে সাহেব ক্রস এঁকে গাইতে শুরু করে গানটা।
“একি! তুমি যীশুকে ভয় পাও না?” বলে রিকি।
“দূর! মানুষরা ভূতেদের সম্বন্ধে আবোলতাবোল রটিয়ে রেখেছে। আমরাও ধর্মপ্রাণ। আমরাও ঈশ্বরের সৃষ্টি। হ্যাঁ, কিছু দুষ্টু আত্মা ঈশ্বরকে মানে না। সৃষ্টি ধ্বংস করতে চায়। আমি বাবা ভীষণ ভক্ত।” বলে আবার হেঁড়ে গলায় গান গাইতে থাকে সাহেবভূত।
এতো আচ্ছা বিপদে পড়া গেল ভাবে রিকি। এরকম গান বেশিক্ষণ শুনলে তো সেই অজ্ঞান হয়ে যাবে।
হটাৎ দেওয়ালে টানানো ছবির মালা পরা দাদু দু’হাতে কান ঢেকে চিৎকার করেন,
“এই এই মর্কট! থাম থাম। বেরো দূর হ পোড়াকপালে”… লাফ মেরে ছবি থেকে নেমে আসেন দাদু। ভড়কে গিয়ে সাহেবভূত জানালা দিয়ে লাফিয়ে বাগানে পড়ে। পিছনে দাদু লাফান। দৌড়ে সোফার উপরে উঠে রিকি দেখে বাগানে দুই ভূতের ছুটোছুটি। হাততালি দিয়ে দাদুকে উৎসাহ দিতে থাকে রিকি। দৌড়াদৌড়ি চলতে থাকে…