মনের ক্লান্তি

মনের ক্লান্তি

আমি আসিফ সবে মাত্র ” এস এস সি ” পরিক্ষা শেষ হলো। মাথা থেকে যেন অনেক বড় একটা টেনশন অনেক দুরে চলে গেলো। এই তিন মাস একটানা টিউশন স্কুল পড়াশুনা করতে করতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম। মনের মাঝে ভয় ছিলো জিবনের বড় একটা ধাপের পরিক্ষা পার হতে পারব তো। পরিক্ষা দিতে পারব তো? অনেক ভয়ের মাঝেই পরিক্ষাটা দিয়েই দিলাম।। জানিনা রেজাল্ট কি হবে? তবে মনে একটাই বিশ্বাস ছিলো ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু করব। আজ পরিক্ষা শেষ হবার দুইদিন হলো। মনে মনে ভাবতে লাগলাম সেই কতদিন থেকে পড়াশুনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি এবার একটু কোথাও বেরিয়ে এসে শরিলের ক্লান্তি গুলো দুর করি। কোথায় যাব সেটা ভাবা হয়নি, আর এ দিকে কোথাও একা গেলে কোন মজা হবেই না। তাই ঠিক করলাম, যাদের সাথে প্রায় সবসমায় চলা ফেরা করি তাদের সাথে বেরাতে গেলে অনেক মজা হবে। তাই পারভেজকে ফোন দিয়ে বললাম পরিক্ষা তো শেষ হলো এবার সবাই মিলে কোথাও ঘুড়ে আসি। ও বললো কাল বিকাল বেলা রেল-লাইনের পাড়ে আসিস সবাই মিলে ঠিক করব কোথায় যাব। যথারীতি সবাই রেল-লাইনের পাড়ে দেখা করলাম। সবাইকে ব্যাপারটা জানালাম,, কেউ বললো এখানে যাব কেউ বললো ওখানে যাব। তারপর আমি বললাম নাহয় কুরীগ্রাম যাই সেখানে তো দেখার অনেক কিছুই আছে। আর ওখানে আমাদের আত্নীয়ের বাসা ওদের বাড়িতে দুই চারদিন থাকতেও পারব আবার ভালো করে দেখতেও পারব। আমার কথাটা শুনে যেন আমার বন্ধরা মানে সাকিব, রায়হান এবং সুরুজ আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো কাম নাই তো যত বুদ্ধি মাথায় আসে। তবে পারভেজ আমার সাথে একমত হলো সে বললো আমি যাব। গেলে খুব মজা হবে ওদের বললো চলো সবাই মিলে ঘুড়ে আসি। ওর কথা শুনে আমি একটু গাঢ় নিশ্বাস ফেলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আর ভাবতে লাগলাম যাই হোক একজন তো আমার কথা শুনেছে। পরে সুরুজ, সাকিব,ও রায়হান বললো তোরা যা আমরা যাব না। তখন আমি আর পারভেজ সিদ্ধান্ত নিলাম যে দুজনেই ঘুড়ে আসব। সমায় ঠিক করলাম পরশুদিন সকাল ৯টায়। তারপর বাড়িতে এসে মাকে বললাম, মা বললো কে কে যাবি বললাম পারভেজ আর আমি তখন বললো আচ্ছা তোর বাবাকে বলিস আগে। আর এদিকে পারভেজকে বলেছি তোর বাড়িতে বলিস। ও ওর মাকে বলছে ওর মা সাথে সাথে আমায় ফোন দিয়ে বললো কোথায় যাবেন কার বাড়ি আরো কত কি? সবকিছু বললাম তখন ওর মা রাজী হয়ে বললো ঠিক আছে যান। আর এদিকে তো আমার বাড়ি থেকে এখনো যাওয়ার আদেশ পাইনি মা রাতে বাবাকে বলেছে বাবা প্রথমে না বলেছিলো কিছুক্ষন পর যেতে বলছে। তখন আমি আমার আত্নীয়ের বাসায় ফোন করলাম তাকে বললাম।আমি ও আমার বন্ধু কাল তোদের বাড়ি যাব। বললো আসার সমায় ফোন দিস আমি তোদের বাজার কাঁঠাল বাড়ি থেকে নিয়ে আসব।। তারপর আমি আর পারভেজ রেল-লাইনে বসে ভাবলাম ট্রেনে গেলে কেমন হবে। তবে সৈয়দপুর থেকে কুরীগ্রামের কোন ট্রেন নেই। পার্বতীপুর থেকে তিস্তা পর্যুন্ত ট্রেন আছে। তখন দুজনে ঠিক করলাম সকাল ৯টায় সৈয়দপুর থেকে পার্বতীপুর যাব ট্রেনে তারপর ওখান থেকে তিস্তা যাব তারপার বাকিটা বাসে যাব। পরের দিন সকালে দুজনে রেডি হলাম ওকে বললাম তুই ঘুন্টি আয় আমিও গেলাম দুজনে ভ্যানে সৈয়দপুর স্টেশন গিয়ে পার্বতীপুরেরর ট্রেনে চরলাম। দুজনের একসাথে ট্রেনে ওটা ছিলো প্রথম ভ্রমন ২০ মিনিটের পথ বেশ মজা করলাম তারপর ১০ টায় গিয়ে পার্বতীপুরে পৌছালাম। ওখানে নেমে আগে স্টেশনটা ভালো করে দুজনে ঘুড়ে দেখলাম দুই চারটা ছবি ও তুললাম। তারপর স্টেশন মাস্টারকে বললাম তিস্তা যাওয়ার ট্রেন কখন আসবে তিনি বললেন এখনো ৩ঘন্টা মানে ১টার সমায়। তখন পারভেজকে বললাম কিরে এত সমায় এখানে কি করবি তার চেয়ে চল বাসেই যাব ও বললো চল। ওখান থেকে ভ্যানে বাস স্টেশন গিয়ে বাসে চলে রংপুরের উদ্দেশ্যে রহনা হলাম।প্রায় ৪০ মিনিট পর রংপুর পৌছালাম। তারপর ওখান থেকে অটোতে চরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনের মোরে গেলাম ওখান চা নাস্তা করে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিছুক্ষন পর বাস আসলো তারপর কুরীগ্রামের উদ্দেশ্যে রহনা দিলাম। পথটা ছিলো অনেক দুরের বাসে বাদাম নিয়ে খেলাম আর বাসের জানালা দিয়ে রাস্তার পাশের সবকিছুই দুজনে দেখতেছি। অনেকগুলো বাজার বড় বড় দোলা পার দেখলাম। আর বসে থাকতে ভালো লাগতেছেনা তখনে ফোনে গান শুনতে লাগলাম। পথ যেন শেষ হয়েই না। দেখতে দেখতে তিস্তা নদীর কাছে আসলাম পারভেজকে বললাম দেখ তিস্তা নদী জানালা দিয়ে দেখতে লাগলাম বিশাল বড় নদী তবে নদীর এক পার্শে দিয়ে পানি যাইতেছে আর গোটা নদী যেন সাদা বালিতে চকচক করতেছে কেউ কেউ নদীর চরগুলোতে কুমড়া, বাদাম নানা ধরনের ফসল রোপন করেছে। ফোনটা বের করে ভিডিও করলাম প্রায় অনেক্ষন লাগলো ব্রীজটা পর হতে। তারপর কিছুক্ষন পর বড় বাড়ি নামের একটা জায়গায় বাস থামলো। সেদিন ছিলো ওই বাজারের হাট মানুষে মানুষ সবাই তাদের নিত্য প্রয়জনের জিনিষ পত্র নিতে হাটে ভির জমিয়েছি। কিছুক্ষন থাকার পর আবার বাসি কুরীগ্রামের উদ্দেশ্য রহনা হলো। আর ঠিক তখনি আত্নীয়ের ফোন তোরা কই বললাম আমরা বড়বাড়ি পার হইছি বললো কুরীগ্রামের আগে কাঁঠাল বাড়ি বাজার আছে সেখানে নামবি। কারন আমি প্রায় ৮বছর আগে গিয়েছিলাম ওদের বাসা। অনেক্ষন পর বাস কাঁঠাল বাড়িতে পৌছালো বাট আমরা টের পাইনি জানালা দিয়ে দেখলাম দোকানে সাইনবোর্ডে কাঁঠাল বাড়ি লেখা আছে। বাসের কন্টাক্টরকে বলতে বলতে বাস কাঠাল বাড়ি ছেড়ে অনেক দুরে গেলো। তারপর সামনের আর একটা বাজারে আমাদের নামিয়ে দিলো। ওখান থেকে আবার কাঠাল বাড়ি অটোতে আসলাম তারপর আত্নিয়ের সাথে ওদের বাড়ি গেলাম। আর এদিকে যাদের বাড়ি গিয়েছি তার নাতি অসুস্থ তার স্ত্রী আর মেয়ে কুরীগ্রাম সদর হাসপিটালে শুনে একটু খারাপ লাগলো। আত্নীয় টা আমার ভাই হয়। ভাইটার একটা ছেলে তার সাথে আমার অনেক মিল। ও বললো সমাস্যা নাই নিজে নিজে রান্না করে খাব। ভাবলাম ঘুড়তে এসে নিজে রান্না করে খাব যাই হোক ভালোই হবে। তারপর রাতে খেয়ে তিনজনে ঘুমালাম। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে চারদিকে হেটে আসলাম তারপর তাদের বাজারে গিয়ে আড্ডা দিলাম দুপর হয়ে গেলো বাজার থেকে এসে তাদের বাড়ির পাশের নদীতে গোসল করে রান্না করে খেয়ে একটু রেস নিয়ে তিনজনে অটোতে কুরীগ্রাম শহরে গেলাম সেখানে ঘুড়ে দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেলো বাড়ি এসে খাওয়া করে ঘুমালাম। তারপরের দিন সকালে খাওয়া করে তাদের বাড়ির পাশে হিন্দুপাড়া আর সেখানে একটা বড় তেতুল গাছ সবাই তেতুল খাইতেছে সেটা দেখে আমি আর পারভেজ গেলাম গিয়ে ডিল মেরে কয়েকটা পেরে খেলাম যার গাছ সে আসল একটু ভয় লেগেছিলো বাট তিনি কিছু বললেন না আমার বাড়ি কোথায় কার বাড়ি এসেছি ইত্যাদি ইত্যাদি জানলেন। তারপর বললেন বাবারা গাছে চরে পেরে খেলেই হয়। অামরা বললাম আমরা যেদিন বাড়ি যাব এসে পাড়াবো বাড়িতে নিয়ে যাব তো বললো ঠিক আছে।তখন আমরা বাজারে গিয়ে নাস্তা করে হেটে হেটে চারদিকটা দেখলাম অনেক ভালো লাগলো। তারপরের দিন সকালে আবার তেতুল আনতে গেলাম আর আমি গাছে চরে তিন ব্যাগ কাচা পাকা তেতুল পাড়ালাম যার গাছ তাদের এক ব্যাগ দিয়ে আমরা দুই ব্যাগ নিলাম।পরে বাড়িতে এসে গোসল করে ধরলা নদী দেখতে গেলাম অনেক বড় একটা নদী। নদীতে নৌকা দিয়ে এপারের মানুষ ওপারে যায়। আমরা অনেক ছবি তুললাম মাছ মারা দেখলাম।। তার বাড়ি আসলাম। তারপর বাড়ি এসে খাওয়া করে টিভি দেখলাম রাত হলো খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম পরের দিন পারভেজ আমি ধরলার একটা শাখা নদী বাড়ির পাশেই আছে সেটা দেখতে গেলাম। সেটার নাম কাউয়াহাগা নদী। নদীতে পানি নেই তবে যেখানে গভিরতা রয়েছে সেখানে পানি। দেখলাম কয়েকটা নৌকা জেলেরা মাছ মারতেছে আমি আর ও একটা নৌকায় চরলাম আমি বইঠা দিয়ে নৌকা চালাইতেছি ও বসে আছে। অনেক ছবি তুললাম আর বেশ আনন্দ ও করলাম। তারপর নদীর চারদিকে ঘুড়ে ছবি তুলে বাড়ি এসে খাওয়া করে ঘুমিয়ে পরলাম পরের দিন বাড়ি আসার পালা সকাল বেলায় সবকিছু রেডি করে খাওয়া করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রহনা দিলাম।১১টায় গাড়িতে চরে ঠিক ৪টায় বাড়িতে এসে পৌছালাম সেখানে দুজনে অনেক মজা করেছি। ঘুড়ে দেখেছি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত