গালটুসি

গালটুসি

“রুমের ভেতরের নারী অবয়বটাকে
নিশির মত লাগলেও ঠিক নিশ্চিত হতে পারলাম না৷
আমি আরেকটু কাছে গিয়ে মাথাটা নিচু করে দেখতে গিয়েই নিশির সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল৷
কিছু বলতে যাবো, ঠিক তখনই নিশি আমার নাকটা টিপে ধরেছে শক্ত ভাবে৷
নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছিলো৷
নিশির সাথে চোখাচোখি হলো একবার৷
মুখে শয়তানি হাসি!
আমি চোখের ঈশারায় বোঝালাম নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছে৷
নিশি তারপরও ছাড়লোনা৷
কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিশফিশিয়ে বলল,
-চিৎকার দিবি না ৷ ঠিক আছে?
আমি মাথা নাড়ালাম৷’

নাক ছাড়তেই লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম৷ নিশি একবার মুচকি হাসলো৷ এই মেয়েটার হাসিতে জাদু আছে৷ যত রাগ অভিমান সবকিছু গায়েব করে দেয় সে জাদু৷ জাদুকরি হাসিটার প্রেমে পরেছি অনেক আগেই৷
আমি শোয়া থেকে উঠে বসতেই নিশি টুপ করে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেল৷ একটু উকি দিয়ে দেখলাম, রান্না ঘরের দিকেই যাচ্ছে৷

সকালে নাস্তার টেবিলে মা যখন বলল,
– বান্ধবী আসবে বাসায়৷
আমি উত্তর না দিয়ে চুপচাপ খেয়ে উঠে পরেছিলাম৷
ছোটবোন বুশরার বান্ধবী আসলে আমি সবসময় আমার রুমটা বন্ধ করে যায় সবসময়৷

বদ মেয়েগুলো আমার রুমটাকে জাদুঘর ভাবে৷ আমার রুমের সাজানো গোছানো জিনিসগুলো তাদের ধরে দেখতেই হবে৷

গত কয়েকদিন ধরে মনটা ভীষন রকমের খারাপ আছে৷ চোখে ঘুম নেই, খেতে গেলে গলায় আটকে যাচ্ছে৷ আর সবচেয়ে বেশি মিস করছিলাম নিশিকে৷ মেয়েটার গালগুলো টানার অনুভুতিটাকে মিস করছিলাম৷
আবার পরক্ষণেই অভিমান হয় আমার৷ এই গালটানাা নিয়েইতৈ ঝগরা হলো৷
না টানলাম তার গাল৷

এসব ভাবতে ভাবতেই সকালে বেরিয়ে পড়েছিলাম৷ আম্মার কথাটা মনেই ছিল না৷”
আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম নিশি আসুক৷ প্রত্যেকবার আমি কেন যাবো? এর আগে যতবারই রাগারাগি হয়েছে৷ প্রত্যেকবারই আমিই ভাঙিয়েছি সব৷ সেটা আমার দোষ হোক বা নাহোক৷ কিন্তু এবার আর যাইনি৷

দিন কয়েক আগে রাগারাগি হয়েছিল নিশির সাথে৷ নিশির সামনে যাওয়া মাত্রই তার গালটানা টা আমার অভ্যাস হয়ে উঠেছে দিনদিন৷ নিশি ও প্রশ্র্রয় দিয়ে গিয়েছে৷

নিশির সাথে বন্ধুত্বের শুরুটাও হয়েছিল এই গালটানা দিয়েই৷

নাকটা অল্প করে বোচা, আর গালগুলা একদম গোলগাল৷ চোখে গোল ফ্রেমের চশমা দিয়ে ভার্সিটি আসতো মেয়েটা৷ পড়াশৌনায় ভীষন রকমের সিরিয়াস৷ আমার ইচ্ছে ছিল, একবার গিয়ে কথা বলার৷

হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বলার ইচ্ছে ছিল”এই গুলুগূলু মেয়ে! বন্ধু হবে!”
সেই ইচ্ছেটা অবশ্য কিছূদিনের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেল৷

পড়ালেখায় ভালো আর সুন্দরী হওয়ায় ততদিনে ক্লাসের স্মার্ট, হাফ স্মার্ট ট্যালেন্টেড ছেলেগুলোর লাইন লেগে গেল নিশির পেছনে৷

সাথে বড় ভাইগুলোতো ছিলই৷

এতগুলোর ভীড়ে আমার আশা করাটাই বোকামি৷
তাই দমে গেলাম ঐ ইচ্ছা থেকে৷
তবে মেয়েটাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা ছাড়তে পারিনি৷
তারপরও আমার মনের ভেতর সুপ্ত একটা ইচ্ছে ছিল, গালটুসি মেয়েটার গাল টানবোই৷ একবার হলেও টানবো৷

সেদিন ঝুম বৃষ্টি ছিল৷ বর্ষার মধ্যদুপুর৷ ক্লাসে তেমন কেউ নেই বললেই চলে৷ এইরকম অলস দিনে কেউ বিছানা ছেড়ে উঠতে না চাওয়াই স্বাভাবিক৷

তারপরও নিশি চলে এসেছিল৷

আমিও গিয়েছিলাম৷ সবকিছুতে অনিয়ম হলেও, গোলগাল চেহারার মেয়েটাকে দেখার মধ্যে কোনো অনিয়ম ছিল না আমার৷

নিশি সামনের টেবিলটাতে বসে কি যেন লিখছিলো৷ গভীর মনযোগ দিয়ে লিখছিলো৷ আমি ব্যাগটা কাঁধে না নিয়ে হাতে নিলাম৷

নিশির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় টুপ করে গালটা টেনে দিয়েছিলাম৷ টেনে আর পেছন ফিরে তাকাইনি৷ বৃষ্টির মাঝেই সোজা দৌঁড়ে চলে এসেছিলাম৷ যদিও বাসায় এসে শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসেছিল৷ ভয়ংকর চেহারার অধিকারি বড় ভাইদের পিটুনি অপেক্ষা জ্বরটাই বেটার মনে হয়েছে৷ সপ্তাহখানেক আর ভার্সিটিমুখো হইনি৷ জ্বর আর ভয় মিলিয়ে কি একটা অবস্থা হয়েছিল৷

সপ্তাহখানেক পর যখন ভার্সিটি যাওয়ার পর মুখ লুকিয়ে চলছিলাম কিছুটা৷ কিন্তু নিশি ঠিক ঠিক আমাকে ধরে ফেললো৷ ক্যান্টিনে বসে সিঙ্গারা খাচ্ছিলাম৷ নিশি আমার সামনের চেয়ারটা টেনে বসলো৷ আমি অর্ধেক খাওয়া সিঙ্গারাটি প্লেটে রেখে নিশির দিকে তাকালাম৷ নিশির নাকটা ফুলছে আবার সরু হচ্ছে৷ ঝড়ের পূর্বাবাস ভেবে আবারও পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম৷ তার আগেই নিশি ফিক করে হেসে বলল,

-কিরে চোখরা! গাল টেনে কেউ পালাই এভাবে?
আমি কিছূ বললাম না৷
নিশির দিকে তাকিয়ে রইলাম৷
আমার বিশ্বাস হচ্ছিলো না এখনো৷
নিশি আবার বলল,
-কিরে হাবা? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তুই আজ থেকে আমার বন্ধু ওকে! ছেলেপুলেরা খুব ডিস্টার্ব করছে৷ তুই আমাকে অলটাইম পাহারা দিবি ওকে! পারবিতো?”
-পারবো!
নিশির কথার জবাবে আসতে করে বললাম৷
নিশি আবারও হাসে৷ হাসতে হাসতে বলল,
-তুই নিজেইতো ভীতু! আসছে আমার পাহারাদার৷ নে গাল টান৷

এরপর থেকে আর কখনোই নিশির পারমিশন নিইনি৷ মাঝে মাঝে খুব জোরে টেনে ধরতাম৷ গালগূলো লাল হয়ে যেত৷
রাগ করতো৷ সেই রাগটা অবশ্য ফুচকার দোকান পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতো৷ সকালে রাগ করলে বিকেলে সব ঠিকঠাক৷
গত সপ্তাহে নিশিকে গম্ভীর দেখাচ্ছিলো৷ আমি কাছে যেতেই গালগুলো টেনে দিলাম৷ রেগেমেগে কয়েকটা কথা শুনিয়ে হনহন করে চলে গেল৷ অন্যবার হলে, কথাশুনিয়ে একটু দূরে গিয়ে বসে পড়তো৷ যাতে আমি গিয়ে রাগ ভাঙায়৷
এরপর আমিও আর যাইনি৷

বিরিয়ানীর মুহুমূহু সুগন্ধে চোখ দু’টৈ খুললাম৷ এই মেয়ে বিরিয়ানী রেঁধেছে নিশ্চিত৷ এর আগে যতবার আমি রাগ ভাঙিয়েছি৷ এরপর নিশির হাতে রান্না করা বিরিয়ানী খেয়েছি৷

দরজার পাশে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে উকি দিতে যাচ্ছিলাম অমনিই নিশির সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল৷
আমি টুপ করে রুমে ঢুকে পড়ি৷

একটু পরেই নিশি এসে হাজির৷
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
-খেতে আয়!
-যাবো না!
নিশির দিকে না তাকিয়েই বললাম৷
নিশি একটু এগিয়ে এসে দু’হাত দিয়ে আমার মুখটা তুলে ধরলো৷
আমি ভালো করে তাকালাম নিশির দিকে৷
আমার হাত দু’টো নিয়ে তার গালে চেপে ধরে বলল,
-রাগ করেছিস বুঝি?
-আমার আবার রাগ আছে নাকি?
-সেদিন রাগ দেখিয়েছি বলে আমাকে ভুলে যাবি?
-এমন বলেছি কখনো?
-তাইলে খবর নিলিনা কেন হু? তোকে মিস করতে করতে আমার গালগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে৷ তখন গাল টানবি কিভাবে?
-রাগ দেখালি কেন তাইলৈ? আমার খারাপ লাগেনা বুঝি?
কথা শুনে নিশি হাসলো একটু৷ মুচকি হেসে বলল,
-বাবার সাথে ঝগরা করে এসেছিলাম তাই রাগ দেখিয়েছি৷
-কেন ?
-বিয়ে দিতে চাচ্ছে!
-করে ফেলতি৷
-করার জন্যইতো এসেছি!
-মানে?
-তোর আব্বা-আম্মাকে বলেছি সব!
-কি বলেছিস?
বলেছি,
-আপনাদের হাবাগোবা ছেলেটা আমার গালটানতে টানতে মুটকু বানিয়ে ফেলেছে৷ কেউ বিয়ে করছেনা৷ এখন

আপনাদের ছেলের সাথেই আমার বিয়ে দিবেন!
কথাটা বলেই নিশি হেসে উঠলো খিলখিল করে৷ মুক্তাঝরানো হাসি৷
একরাশ ভালোলাগা গ্রাস করে আমাকে৷
নিশির ঠোটদু’টো আঙুল দিয়ে টিপে ধরে নিশির হাসি থামিয়ে দিই৷
নিশি ভ্রু কুচকে তাকালো৷
এই সুযোগে গালগুলো আরেকবার টেনে দিলাম৷

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত