নীলিমা আর আমার বিয়ে হয়েছে চার বছর প্রায়।
আমরা তখন মাত্র ইন্টারমিডিয়েটের ২য় বর্ষে পড়ি। কলেজে কেমন করে যেন একজন আরেকজন কে ভালবেসে ফেলি। আবেগের সংসারে দুজন মানুষ খুব শান্তিতে বসবাস করা শুরু করি। ইন্টার ফাইনাল এক্সামের আগে আমি হুট করে নিলি কে নিয়ে কাজি অফিসে চলে যাই।
আমি মেট্রিক পরীক্ষায় পরপর দুইবার ফেল করি, যার কারণে বয়স নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি। শান্তিপূর্ণ ভাবে বিয়ে করে আমি কাজি অফিসের বারান্দায় হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছি।
নিলি যখন জিজ্ঞেস করলো,
” আমরা এখন কি করব? “
আমি রোবটের মত বললাম ;
” চলো, তোমাকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে আসি।”
নিলি অনেক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো ;
” বিয়ে করার দরকার ছিল কি? ”
আমি আগের মত করে বললাম ;
” বিয়ে করার দরকার ছিল! তাই বিয়ে করেছি, সুতরাং আর কথা না! ”
আমি নিজেই ভাবছি, আসলে হুট করে কেন বিয়ে করে বসলাম? বিয়ে করার কোনো দরকার ছিল কি?
নিলি কে নিয়ে রিকশা করে বাড়ি ফিরছিলাম। রিকশায় বসে মনে হলো, আমি এখন নিলি’র স্বামী। রিকশায় বসে খুব শক্ত করে নিলি কে জড়িয়ে ধরে রাখলাম। নিলি আমার মুখের দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছে। তার চাহনিতে, একটা শান্তির ছায়া আছে।
অদ্ভুত ব্যাপার জানেন কি? আমাদের বিয়ের চারবছর হয়ে গেছে কিন্তু বাড়িতে কেউ জানেনা।
শুধু বিয়েতে সাক্ষী ছিল যে ক’জন তারা ছাড়া। সেদিন নিলি অনেকটা চিন্তিত হয়ে, আমাকে কল করে বললো –
” এই শুনো, ভাইয়া তো বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছে।”
আমি তখন ভ্যাবলার মত বললাম ;
” আমার বউ কে আবার কে বিয়ে করবে? ”
নিলিমা বিরক্ত হয়ে বললো ;
” এবার তোমার বউ কে অন্যকেউ’ই বিয়ে করবে! তুমি এসে বিয়ে খেয়ে যেয়ো।”
আমি খুশি হয়ে বললাম ;
” বিয়ে কবে গো? অনেক দিন বিয়ে খাই না! ”
নিলি প্রচন্ড রেগে গিয়ে বললো ;
” তোর দাঁত ফেলে দিব! সরম করে না নিজের বউয়ের বিয়ে খাওয়ার কথা বলিস? ”
নীলিমা রেগে গেলে আমাকে তুই করে বলে! আমি হো হো করে হেসে দিয়ে বললাম ;
” আমি বোধহয় প্রথম জামাই, যে নিজের বউয়ের বিয়ে খাবে! ”
নিলি প্রচন্ড রেগে গিয়ে, কল কেটে দিল। কিন্তু আমি তো আসল রহস্য জানি। বাবা সেদিন আমাকে একটা ছবি দিয়ে বললেন ;
” তোমার মা, এই মেয়েটা কে পছন্দ করেছে। তোমার মতামত আমাকে রাতের মধ্যে জানিয়ে দিও! ”
আমি তো টাস্কি খেয়ে বাবার দিকে, ভ্যাবলার মত তাকিয়ে রইলাম। শেষে ছবিতে চোখ দেওয়ার পরে আমার চোখ আকাশের চাঁন্দে চলে গেল। ছবিতে নীলিমা কে দেখে, আমি খুশিতে কয়টা লাফ দিয়ে বাপের কোলে উঠে পরার জন্য এগিয়ে গেলাম। কিন্তু তার আগে বাপ নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর এলো নিলি ম্যাডামের কল, একটু ফাজলামি করে নিলাম তার সাথে। পরের কাহিনী খুব সোজাসাপ্টা। মেয়ে দেখতে গেলাম আমরা। মেয়ে দেখা শেষে বিয়ের তারিখ ফাইনাল। আগামী মাসে নিলি আর আমার অফিসিয়াল বিয়ে। আপনাদের সব কিছু ডিটেইলে বলতে হয় কেন? শেষটা নিজে নিজে বুঝে নিতে পারেন না?