হাসিব্বা

হাসিব্বা

-যাবার সময় নক করিস একসাথে যাবো
-যা ভাগ!আমি তোর সাথে যাবো না!তুই রেস্পেক্ট বলে কিছুই জানিস না!ভুলে যাবি না আমি তোর দুই বছরের সিনিয়র!
-আহ রিক্তা তুই এভাবে কথা বলছিস কেনো?এই হাসিব তুমি কিছু মনে করো না তুমি বরং আমাকেই আপু না বলে তুই করে বলতে পারো!
-কি যে বলো আপু!তুমিতো অপরিচিতা!আর রিক্তার সাথে সেই ছোটবেলা থেকে একসাথে চলছি ওকে আমি শুধু চাচাতো বোন না বেস্ট ফ্রেন্ডও ভাবি!
-অপরিচিতা হলে কি প্রব্লেম!আচ্ছা আমরাও বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যাই!তুই করে না বলতে পারলে তুমি করে বলো!তোমার লেখা গল্পগুলা না আমার হেব্বি লাগে!যখন দেখি গল্পের নায়কের নাম হাসিব তখন অদ্ভুত ভালোলাগা বিরাজ করে!মনে হয় নিজে গল্পের নায়িকা হয়ে যাই!কিন্তু তুমি শুধু তোমাকে অবহেলা করা তোমার ওই পেত্নী মার্কা চাচাতো বোনটাকে নিয়ে লিখো!এই আমাকে নিয়ে গল্প লিখবে হাসিব?
-আচ্ছা চেষ্টা করবো!আমি এখন যাই আপু!
-আবার আপু!আচ্ছা যাও!ক্লাস শেষে দেখা হবে।

-ওই ও আমার চাচাতো ভাই তুই আদিক্ষেতা করলি কেনো?তুই ওর সিনিয়র তোকে কেনো ও তুই করে বলবে?আর আমি পেত্নী? কলেজের সেরা সুন্দরি প্রতিযোগিতা করে দেখ কে হয় সেরা সুন্দরি!তুই আমার বন্ধুত্বের অমর্যাদা করলি!
-কি করবো বল!এমন একটা ছেলে সামনে আসলে নিজের আবেগটাই কন্ট্রোল থাকে না!আর ও আমাকে তুই বা তুমি করে বললে তোর কি ক্ষতি?প্রেস্টিজে তো আমার লাগবে,তোর না!আর ওকে না আমার লাগে!
-মানে!কি লাগে?
-হেব্বি লাগে!
-হেব্বি লাগে মানে!ও আমার চাচাতো ভাই ওকে আমি তোর কাছে আসতেই দিবো না!প্রয়োজনে কড়া শাসনে রাখবো!
-আচ্ছা আচ্ছা দেখা যাবে।
-হুম দেখে নিস!

এবার পরিচয় পর্বটা হয়ে যাক!আমি হাসিব এবার অনার্স ফাস্ট!আর এতোক্ষন কথা বলেছিলাম আমার চাচাতো বোন রিক্তা আর ওর বন্ধু পাপড়ির সাথে।ওরা এবার অনার্স থার্ড ইয়ার!ছোট বেলা থেকেই রিক্তার সাথে চলি বলতে গেলে সবচাইতে কাছের বন্ধুর মতো কিন্তু তুই করে বলি বলে ও একটু মাইন্ড খায় তবে সেটা শুধু ওর ফ্রেন্ডসদের সামনে বাসায় কিংবা একা কোথাও তুই বললে রাগ করে না!রিক্তা আমার বাবাকে ছোট বেলা থেকেই কাকা না বলে ছোট আব্বুই বলে!আচ্ছা যাই হোক এবার আবার মূল কথায় আসি!

-ছোট আব্বু,ও ছোট আব্বু!
-কি হয়েছে শিম্পাঞ্জীর মতো চেঁচাচ্ছিস কেনো?বাবা ঘরে নেই।কি হয়েছে আমায় বল!
-তোর নামে নালিশ কি তোকেই বলবো নাকিরে হাসিব্বা!
-যাহ বাবা আমি আবার কি করলাম!
-কিছুই করিস নি শুধু একটু পিনিক লাগাবো!
-মানে তুই আমার নামে বাবার কাছে বানিয়ে মিথ্যা বলবি!
-হুম বলবোই তো!
-কাকি মনি,ও কাকি মনি!
-মা এসে,কি হয়েছে মা?
-কি হয়নি বলো!তোমার এই বজ্জাত ছেলেটা কলেজে যাইয়া শুধু শুধু সিনিয়র মেয়েদের পিছু নেয়!আর আমি কিছু বললে আমাকে উল্টো অপমান করে!
-সেকি হাসিব!রিক্তা যা বলছে সত্যি?
-না মা,একদমই না,কথাগুলো সম্পুর্ন বানোয়াট!
-চুপ!তুই কি বলছিস রিক্তা মিথ্যা বলছে?
-হুম মিথ্যাই তো!
-চুপ!রিক্তা তোর সাথে সেই ছেলেবেলা থেকে আছে ও হঠাৎ তোর বিষয়ে মিথ্যা বলবে কেনো?
-ওটাই তো বুঝতেছি না মা!কেনো বলবে!
-ব্যাস আর কোনো কথা নয়!এবার থেকে রিক্তা তোকে চোখে চোখে রাখবে।কি মা পারবে তো?
-হুম খুব পারবো!
-যাক চিন্তামুক্ত হলাম!

-এই তুই আমার নামে এই মিথ্যাগুলি বললি কেনো? -বলেছি বেশ করেছি!
-তুই যাই বলিস আমি সিনিয়র আপুদের সাথে কথা বলবই!আপুদের মুখ থেকে নিজের প্রশংসা যা ভালো লাগে না!
-লাগাচ্ছি তোর ভালো!আপুদের ভূত তোর মাথা থেকে যদি না নামিয়েছি তাহলে আমার নাম রিক্তা নয়!
-আচ্ছা ঠিকাছে দেখা যাবে!
.
-এই যে পাপড়ি আপু শুনছেন!
-কি হয়েছে হাসিব?
-ওই তুই এখানে কেনো?ফাইজলামি করছিস?
-না আমিতো পাপড়ি আপুর সাথে কথা বলতে এসেছি!
-বলাচ্ছি তোর কথা!এই ভাইয়া শুনেন!এই বখাটে ছেলেটা আমাকে আমাকে টিজ করছে!
-ওই কি হয়েছে রে?সুন্দরি মেয়ে দেখলেই চুলকায় না?তুই জানিস ওরা তোর কয় বছরের সিনিয়র?
-হুম দুই বছরের!
-জেনেও আবার টিজ করছিস?
-ভাইয়া বিশ্বাস করেন আমি একটুও টিজ করি নাই!আমিতো কথা বলতে আসছিলাম আপনিই বলুন জুনিয়র বলে সিনিয়র কাউকে ভালোবাসা যাবে না?বয়সটাই কি ভালোবাসার বাধা?তাইতো আমি ভালোবাসার কথাটা বলতে এসেছিলাম!
-ওহ তাই বল,না বয়স কখনোই বাধা নয়।জোরার্ড পিকের চেয়ে তার স্ত্রী শাকিরা দশ বছরের বড় তবুও একে অপরের প্রতি কতো বেশি ভালোবাসা!তো কাকে ভালোবাসিস?
-এই যাহ পড়লামতো মহা ঝামেলায়,এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি!আমিতো পাপড়ি আপুর সাথে শুধু দুষ্টামি করি!ভালোতো কাউকেই বাসি না!কোনো উপায়ান্তর না দেখে রিক্তা আপুকেই দেখিয়ে বললাম ওনাকে!আমার প্রতি পাপড়ি আপুর যে এটিচিউড বলাতো যায় না যদি আবার রিয়েলি ভেবে বসে!তাই এমনটা করতেই হলো না হলে সিনিয়র ভাইদের মার একটাও মনে হয় মাটিতে পরতো না!
-ও আচ্ছা,যা ছেড়ে দিলাম!আর যদি শুনছি বা প্রমাণ পেয়েছি যে তুই টিজ করছিলি তাহলে মিথ্যা বলার জন্য তোর দাত একটাও সাথে থাকবে না!
-আচ্ছা ভাইয়া!

-দেখলি ও আমাকে ভালোবাসে এবার হয়েছে?ওর কাছে তুই আর আসবি না!
-পাগল নাকি!আমিতো কাউকে ভালোবাসি না!জাস্ট ওদের হাতের মার থেকে বাচার জন্য ওটা বলেছিলাম!
-সত্যিই তুই আমাকে ভালোবাসিস না?সে ছোট বেলা থেকে একটুও ফিলিংস হয়নি?
-আমি কেনো ভালোবাসতে যাবো!তুই তো আমার অনেকটা সিনিয়র আর সত্যি বলতে তোকে ছোট বেলা থেকে আমি বেস্ট ফ্রেন্ডই ভেবে এসেছি।
-ও তাহলে ছেলেগুলারে আবার ডাক দেই?তাহলে আবার ভালোবাসি শুনতে পারবো!
-ডাক!তোর যদি ইচ্ছে হয় আমাকে মার খাওয়ানোর তাহলে ডাক!
-সত্যিই যদি না ভালোবাসিস তাহলে তোর গল্পে আমার নাম দিস কেনো?
-তোর নামটা রোমান্টিক লাগে আর প্রিয় বন্ধু হিসেবে তোর নাম দেয়াটা কি অপরাধের কিছু?
-আচ্ছা তাহলে ভালোবাসিস না?
-বললাম তো না!
-আচ্ছা পৃথিবীতে তো অনেক হাসবেন্ড থেকে সিনিয়র ওয়াইফ আছে এরকম অনেক কাপল আছে স্বামীর থেকে স্ত্রী প্রায় বিশ-পঁচিশ বছরেও বড়ো!আর তুই দুই বছরের সিনিয়র কাউকে মেনে নিতে পারছিস না?
-না!সিনিয়র আপুদের উপর ক্রাশ থাকলেও আমি লাইফ পার্টানার হিসেবে আমার চেয়ে জুনিয়র কাউকেই এক্সেপ্ট করি!
-তোকে ভালোবাসতেই হবে!
-বাসবো না!
-দেখবো!
-আচ্ছা দেখিস!

-ছোট আব্বু,ও ছোট আব্বু?
-কি হয়েছে মা?
-তোমার এই বজ্জাত ছেলেটা!
-কি করেছে?
-আমাকে ভালোবাসে না!
-মানে তো কিছুই বুঝলাম না!
-মানে হচ্ছে আমি তোমার এই বজ্জাত ছেলেটাকে ভালোবাসি আর ও আমাকে…
-ইগনোর করে!
-হুম।
-আচ্ছা তুই যা আমি দেখছি।তোর বাবার সাথে আমি পাকা কথা বলে আসছি।ছেলের বউ হিসেবে আমিতো তোর মতোই লক্ষ্মী একটা মেয়ে ছেয়েছিলাম!
-থ্যাংকু ছোট আব্বু।
-হাসিব এদিকে আয় তো বাবা!
-কি হয়েছে বাবা?
-তোর বিয়ে ঠিক করেছি।পাত্রীও রেডি!
-রেডি মানে!আমার তো এখনো বিয়ের বয়স হয়নি!
-চুপ!আমি তোর বাপ নাকি তুই আমার বাপ!
-তুমি!

-তাহলে আমি জানি নাকি তুই জানিস বয়স হইছে কি না!
-না মানে!
-আমি কোনো মানে শুনতে চাই না!
.
-ওই হাসিব্বা থুক্কু হবু স্বামীকে তো নাম ধরে ডাকতে নেই!
-মানে সব কিছুর মূলে তুই?
-ক্রেডিট আছে বস!
-হুট হুরর,তুই আমার রুমে ঢুকেছিস কার অনুমতি নিয়ে!
-যাহ বাবা দুদিন পর এই রুম আমারও হবে নিজের রুমে ঢুকতে অনুমতি লাগে?
-আমি তোকে বিয়ে করবো না,ঠাসসসসস।আগে আমার ক্যারিয়ার তারপর বিয়ে।
-তুই আমাকে মারলি!মনে রাখিস আমাকেই তোর বিয়ে করতে হবে।তোর না হলে আমি আর কারোর বউ হবো না!
-আচ্ছা এখন থেকে আমি তোকে আপু বলবো তবুও তোর বর হবো না!
-আমিই তোর বউ হবো দেখিস।

[কিছুক্ষণ পর]
একটু ফ্রেন্ডসক্লাবে গিয়েছিলাম বন্ধুদের ইনভাইট করতে।বাসায় এসে দেখি কেউ নেই!
কি ব্যাপার সবাই কোথায়!একি রিক্তাদের বাসায়ও তো কেউ নেই।সবাই কোথায় গেলো!যাক মা কে একটা ফোন দিয়ে দেখি।
-হ্যালো!মা,তোমরা কোথায়?
-জেলা হসপিটালে!তুই চলে আয়।
[কিছুক্ষনের মধ্যেই হসপিটালে চলে আসলাম]
-ঠাসসসসস!
-বাবা তুমি আমাকে মারলে!
-মারবো না আদর করবো?তোর জন্য আমার ঘরের লক্ষ্মীটা মরতে বসেছিলো।
-মানে!
-যেয়ে দেখ।306 no. বেডে মেয়েটাকে!তুই কি এমন বলেছিস যে তোর রুম হতে বের হয়েই মেয়েটাকে ইঁদুর মারার ঔষধ (বিষ) খেতে হলো!

-কিরে তুই বিষ খাইলি কিসের জন্য?
-তুই আমাকে বিয়ে করবি না কেনো?
-কে বলেছে বিয়ে করবো না?
-তুইতো বললি তোর ক্যারিয়ার আগে!
-আরে যার জন্য ক্যারিয়ার গড়বো সেই যদি না থাকে তাহলে এই ক্যারিয়ার দিয়ে কি হবে!তুই কি বুঝিস না দুটো ছেলে-মেয়ে একসাথে ছোটবেলা থেকে চললে সম্পর্কটা কি বন্ধুত্বেই আবদ্ধ থাকে?আরো বেশি চাওয়া-পাওয়া থাকে সেই সম্পর্কে!তোকে নিয়ে এতো গল্প কবিতা কিসের জন্য লিখেছি?
-হুম।আমিও সেই ফিলিংসটা অনুভব করেছি বলেই কেনো বা কি কারনে একটা জুনিয়র ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও জানিনা!সত্যিই তোকে অনেক ভালোবাসি রে!আচ্ছা যখন ভালোই বাসিস তখন বিয়ের কথা বলাতে চড় মারলি কেনো!
-সিনিয়র কাউকে কি সরাসরি বিয়ে আর বউ বানানোর কথা বলা যায় পাগলি!
-হুম আর পাপড়ির সাথে ঢপ মারলি কেনো!
-তোকে সরাসরি ভালোবাসি বলতে পারিনা বলেই তো ওর সাথে মাঞ্জা নিলাম তোকে দেখিয়ে দেখিয়ে!
-ওহ তাই বল।হাসিব্বার বাচ্চা একবার বলেই দেখতি ভালোবাসি!
-হাসিব্বার বাচ্চা না তোর শশুরের বাচ্চা!
-ওহ সরি!
-ওরে আমার সিনিয়র বউরে!
-ওরে আমার জুনিয়র বরটারে!
-আচ্ছা তাহলে আপু!
-আপু মানে!আগে কখনো আপু বলিস নি এখন বিয়ে হতে যাওয়া বউকে আপু বলা!
-আরে এটা আপু না আপগ্রেড ভার্সন সরাসরি কি আর ভালোবাসি বলতে পারি!
-মানে?
-মানে আই লাভ ইউ থেকে আপগ্রেড হয়ে আই ল্যাবু তার থেকে আলাপু আরো আপগ্রেড হয়ে…
-আপু!
-ওরে বউটা কি ইন্টেলিজেন্ড!না বলতেই…
-বুঝে গেছি!
-হুম,এই জন্যইতো এতো ভালোবাসি।
-হুম!আমিও!
-কি?
-ভালোবাসি!
-কাকে?
-আমার হাসিব্বারে থুক্কু দুষ্টু মিস্টি হবু বরটারে!
-আমরা একটু ডিস্টার্ব করলাম,আসতে পারি?
-হুম বাবা আসো।
-আর শুন এখন থেকে হবু বর বা বউ না শুধুই বর-বউ!
-বাবা তোমরাও না!
-তোদের খুশিটাই চাই!
-বাবা তোমাদের সবাইকে স্বাক্ষী রেখে কথা দিতে হবে যে হাসিব কখনো অন্য কোনো সিনিয়র মেয়ের উপর ক্রাশ খাইতে পারবো না!
-পাগল নাকি!ঘরে এতো সুন্দর সিনিয়র বউ থাকতে কেউ বাহিরের সিনিয়র আপুদের উপর ক্রাশ খায়।
-হুম।এই কথাটা সারা জীবনেই মনে থাকে!
-তারপর সবাই মিলে একটা হাসির রোল করে ফেললো!
হ্যাপি এন্ডিং

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত