কাল্পনিক অনুভূতি

কাল্পনিক অনুভূতি

আমার বাবাকে আমি সেদিন কাঁদতে দেখে ছিলাম! যেদিন আমার সামনে দিয়ে আমার বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো। আর আমি বাবার কাছে যাবো বলে বার বার হাত বাড়াচ্ছিলাম। তখনই পুলিশের সাথে বসে থাকা আমার বাবার চোখ দিয়ে প্রথম জল ঝরতে দেখেছিলাম। একজন সন্তানের সামনে বাবাকে ধরে নিয়ে যাওয়া কতটা কষ্টকর, তা শুধু একজন বাবাই জানে।

আমার বাবা কোন নামিদামি লোক ছিল না। আমার বাবা ছিলেন একজন সাধারণ ঝালমুড়ি বিক্রেতা। ঝালমুড়ি বিক্রি করেই আমাদের সংসার টা চালাতো। সংসারে আমি ” মা” বাবা” আর বোন থাকাতেই ঐ ঝালমুড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে বেশ ভালো ভাবেই চলতো। কিন্তু এক কালবৈশাখী ঝড় এসে আমাদের সেই সুখের সংসার টা এক নিমিষেই তছনছ করে দিয়ে গেল।

সেদিন সকালে বাবা বলল বাজান তুমি কেঁদো না, আমি অনেক রাত্রে বাসায় আসছিলাম বলে তোমার মিষ্টি টা আর আনা হয়নি। দুপুরে ফেরার সময় অনেক মিষ্টি নিয়ে আনবো তোমার জন্য। তুমি একদম কেঁদো না। আজকে একটা বড় সমাবেশ আছে, ঐখানে বেচাকেনা করতে পারলে অনেক টাকা হবে। তখন তোমার জন্য দেখো অনেক কিছু কিনে আনবো। এই বলে বাবা বাহির হলেন।

দুপুর হওয়ার আগেই বাবা দৌড়াতে দৌড়াতে বাসায় এলেন। এসেই আম্মার কাছে এক গ্লাস পানি চাইলেন। কিন্তু সেই পানি আর পান করতে পারলো না। তার আগেই পুলিশ এসে বাবার জামার ক্লোয়ার ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল তাঁদের গাড়িতে। পরবর্তীতে বাবার সাথে জেলে দেখা করতে গিয়ে সব বিস্তারিত শুনলাম। সেদিনের সমাবেশে দূর্বিত্তরা এসে বাবার ঝালমুড়ির সামনে থেকে বোমা মারছিল। একটা বোমা মারার পর বাবা সেখানে তাঁদের কে বাঁধা দিতে গিয়েই বিপদে পড়ছিল। সবাইকে বোঝানো হয়ছিল ঝালমুড়ি বিক্রেতা সেজেই এই কাজ করছে। এর পিছনে অবশ্যই বড় বড় লোকের হাত আছে। এরপর সব জনগণকে উত্তেজিত করে দিয়েছিল দূর্বিত্তারা। যার কারণে বাবা সাথে সাথে স্থান ত্যাগ করছিল।

মামা “খালু না থাকাতেই এবং আর্থিক সংকটের কারণে বাবাকে ১৪ বছর জেলে খাঁটতে হয়ছিল। এই ১৪ বছরে আমাদের যে কত কষ্ট হয়ছে সেটা শুধু আল্লাহ জানে। আমার লেখাপড়া টা আর হয়নি, তবে বাবা বিহীন সংসার যে কতটা কষ্টকর তা আমি দেখেছি। আর আমার মায়ের স্বামী বিহীন ১৪ টা বছরের কান্নার হু হু আওয়াজ আমি লুকিয়ে লুকিয়ে শুনেছি। আমি চাইনা আমার বাবার মত আর কারও বাবা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হোক। সবাই সবার বাবাকে নিয়ে সুখে থাকুক এই কামনায় করি।

আর হ্যাঁ আজ ১৪ বছর পর বাবার মুক্তি হয়েছে। বাবা বাড়িতে এসেছে তবে খালি হাতে নয়। অনেক গুলো মিষ্টি নিয়ে আমাকে বাজান ডাকতে ডাকতে ঘরে ঢুকলো। বাবা আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো, বাবার বুকে বুক রেখে বুঝলাম ১৪ বছর আগের ভালোবাসা এখনো এক চিলতে ও কমে নাই।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত