অনেক দিন পর রাস্তা দিয়ে হাটছি; এখন তো আর বাইরে বলতে গেলে বের হওয়াই হয় না। জীবনটা একেবারে ছকে বাধা হয়ে গেছে। তাই ভাবলাম আজ একটু না হয় ব্যাতিক্রম কিছু করে ফেলি।
প্রায় সাড়ে চারটার সময় অফিস থেকে বের হয়েছি; ড্রাইভারকেউ ছুটি দিয়ে দিয়েছি। সেই সাড়ে চারটা থেকেই শহরের অলিগলি ঘুরছি; কখনো রিক্সা করে আবার কখনো বা হেটে। ভালই লাগছে।
নিউমার্কেট এলাকা দিয়ে হাটছি; হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন ডাকলো। পিছনে তাকিয়েই হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে গেলাম; সেই চিরচেনা মুখ, যা আমি কখনোই ভুলতে পারি না।
সেই যে নিজের শহর ছেড়েছি আর ফিরে যায়নি ; তাই আর কখনো দেখা হয়নি। তার কথায় ঘোর ভাংলো-
– এই, তুমি রিয়াদ তো?
:জি; আমি রিয়াদ
– ওহ; অনেক বছর পর। তারপর কেমন আছো।
: হু; ভালই আছি। আপনি কেমন আছেন?
– তুমি মনে হয় আমায় চিনতে পারো নাই!!
: না চিনেছি তো; আপনি দিয়া।
-চিনেছ তাহলে।
: দাড়িয়ে কথা না বলে চলুন কোথাও বসে কথা বলি
– বসতে পারি; কিন্তু আগে যেমন তুমি করে বলতে তেমনি তুমি করে বলতে হবে।
: ওকে, চলো।
একটা রেষ্টুরেন্টে বসে আছি; মনের ভেতর স্মৃতিগুচ্ছ নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড রকম ভালবাসতাম এই মানুষটাকে। কখনো তার ভালবাসা পাওয়ার আসা করতামই না।
চাইতাম হোক না শুধু বন্ধুহয়ে পাশে থাকুক; কিন্তু এটাও চাইতাম সে অামার কাছে কিছু লুকাবে না বা আমার সাথে কখনো অভিনয় করবে না।
হঠাৎ যখন জানতে পারলাম সে কারো সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্কে জড়ানো; মেনে নিতে পারিনি।
আবার এটাও চাইতাম সে সুখী হোক। তার যদি আমার জন্য কোন সমস্যা হয়; আর সে যেহেতু আমায় কখনো জানায়নি তখন হয়তো সে চাইছে ও না।
সরে আসলাম তার জীবন থেকে হুটকরেই। কখনো আর যোগাযোগ করা হয়নি ; সেও হয়তো চাইনি। তবে অনেক রাতেই মনে হতো তার কল আসবে।
– কি, চুপচাপ কেনো? ( তার কথায় নিজেকে সামলিয়ে নিলাম)
: তারপর, তুমি কি এখানেই থাকো?
– না, মেয়ের বাসায় এসেছিলাম। ভাবলাম একটু আসপাশ ঘুরে দেখি। আর দেখো তোমার সাথে এত বছর পর দেখা হয়ে গেল।
: হুম। তা কয় ছেলেমেয়ে তোমার?
– এইতো একটায় মেয়ে। তোমার কয়টা?
: একটাও না।
– ছেলেমেয়ে নাও নাই।
: না; বিয়েই করিনি।
– আশ্চর্য, কেন?
: আসলে চারিপাশের চিন্তায় বিয়ের চিন্তা করাই হয়নি; আর তাছাড়া বিশ্বাসযোগ্য কাউকে পায়নি।
– তোমার কিন্তু খুব বেশি পরিবর্তন অাসে নাই, শুধু মাথায় চুলটাই গেছে; চাইলে এখনো বিয়ের পিড়িতে বসতে পারো।
: না থাক, এই বয়সে আর কি দরকার।
-আরে লাগে!!!
: আসলে আমি একটু ব্যাস্ত আছি আজ, আমায় উঠতে হবে।
-ও! তুমি তো খুব ব্যাস্ত। ঠিক আছে। তুমি তো এখানেই থাকো?
: হুম!
-আবার হয়তো দেখা হবে।
: হয়তো বা হবে না; শুধুশুধু কেনই বা মায়া বাড়াবে!!
কথাটা বলে ওখানে এক সেকেন্ডও দাড়ালাম না। হয়তো আবারও বিশ্বাস জন্মে যেতে পারে; বাড়তে পারে মায়া। জানি না আজ খুব বেশি কান্না পাচ্ছে। ছেলেদের তো কাদতে নেই। হাটতে এখন আর ভাল লাগছে না। হয়তো আর একা হাটা হবে না এই ব্যাস্ত শহরে; ফেরা হবেনা নিজের শহরেও।