ছোট ছেলেটি

ছোট ছেলেটি

— মা আমাকে টাকা দাও। আমি কলেজে যাব। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।
— আজ তো টাকা নেই বাবা।
— আমি বললেই টাকা নেই। বড় ভাইয়া বললে টাকা আছে। আমাকে তুমি একটুও মায়া কর না। তুমি শুধু তোমার বড় ছেলে কে মায়া করো।

হিমু পরিবারের সব চেয়ে ছোট সন্তান। তার পরিবারে আছে একটা বড় বোন আর একটা বড় ভাই। তার মা-বাবা শুধু তাদের বড় সন্তান দের ভালবাসেন। হিমু কে একটুও ভালবাসেন না। হিমু একটু ফাজিল। সব সময় বেশি ফাজলামি করে।

— তুই বাসা থেকে বের হবি নাকি আমি তোর বাবা কে ফোন দিব।

এ কথা বলে হিমুর মা মোবাইল টা হাতে নিলেন। হিমু দৌড় দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসল। রাস্তার পাশের বাসার মিথিলা কে দেখতে পেল। মিথিলা কলেজে যাওয়ার জন্য রিক্সা খুঁজতে লাগল। মিথিলা হিমু কে একদম সহ্য করতে পারে না। হিমু আর মিথিলার সাপ আর নেউলের মতো সম্পর্ক। মিথিলা হিমু কে দেখেই বলতে লাগল।
— বাসায়ও জায়গা হয় না রাস্তায়ও জায়গা হয় না। তাইলে বাতরুমে বসে থাকলে ওই তো হয়। কেউ ডিস্টার্ব করবে না।

হিমু এই কথা শুনার পর বলতে লাগল।
— ছিঃ ছিঃ। কি গন্ধ? গায়ে কি দিয়ে এসেছে। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে।
— এই শুনো। আমি গায়ে পারফিউম দিয়ে এসেছি। তোমার মতো এতো খবিশ না ।
— আমি তো জানি। ছেলেদের পাগল করার জন্য পারফিউম দেও।
— মুখ টা সেলাই করে দিব। বাদরের মতো এতো বকবক কর কেন?
— ইশ! মুখ টা দেখলেই। রাগের মাত্রা বেড়ে যায়। আমার সামনে আসো কেন?
— তোমাকে কেউ কি কিনে রেখেছে? বাদর কোথাকার।
মেয়ে দেখলেই ঝগড়া করতে মন চায়।
— যে পথ দিয়ে এসেছ। সে পথ দিয়ে চলে গিয়ে পানিতে পড়ে ডুব দেও।

তারপর মিথিলা চলে গেল। কি মেয়েরে বাবা। দেখলেই শুধু ঝগড়া করে। আমি কত ভালো ছেলে। আমাকে মিথিলা বলতে পারে না। আমি কেমন আছি। আমি আজ কি দিয়ে খাইলাম। এসব কিছু সহ আর কত কিছু আমাকে বলতে পারে। না। আমাকে দেখলেই শুধু ঝগড়া করে। এসব কিছু হিমু একটা গাছের নিচে বসে ভাবতে লাগল।

হিমু মিথিলা কে মনে মনে অনেক ভালবাসে। হিমুর ভালবাসা টা সত্য। হিমু মিথিলা কে দেখার জন্য নিশি রাতে মিথিলাদের বাসায় গেল। চারদিকে খুব অন্ধকার। জোনাকিপোকা শুধু ডাকাডাকি করছে। হিমুর খুব ভালো লাগছে। হিমু মিথিলার বাসার সামনে গিয়ে দেখতে পেল। মিথিলার জানালা টা খুলা। হিমু লুকিয়ে লুকিয়ে মিথিলা কে দেখতে লাগল। মিথিলা পা নাচিয়ে নাচিয়ে আয়না দেখে দেখে সাজতে লাগল। হিমু মিথিলা কে দেখে একদম পাগল হয়ে গেল। ইচ্ছা করছে। মিথিলা কে ছুঁয়ে দিতে। মিথিলা আয়না দিয়ে হিমু কে দেখতে পেল। মিথিলা হিমুর বাচ্চা বলে একটা ডাক দিল।

হিমু ভয় পেয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
— তোমার সাহস হলো কি করে? তুমি আমাদের বাসায় আসতে।
— তুমি খুব সুন্দর। তুমি চাঁদপুরি।
— কি বললে?
— তুমি চাদপুরি।
— ও সেটা সবাই বলে। অন্য কিছু বলো।
— আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
— কিন্তু আমি তোমাকে ভালবাসি না।
— তুমি আমাকে ভালবাসতে হবে না। আমি তোমাকে ভালবেসে সেটা পূরণ করে দিব।

যেই এই কথা টা হিমু বলল। মিথিলা তার বাবা কে ডাক দিতে বেশি দেরি করে নি। হিমু একটা দৌড় দিয়ে বাসায় যেতে লাগল। দৌড় দিতে গিয়ে পায়ে একটা আঘাত পেল। মনে মনে বলতে লাগল তবুও তোমাকে ভালবাসি মিথিলা।

হিমু একটা রাস্তায় বসে বসে আইসক্রিম খেতে লাগল। আইসক্রিম টা খেতে খেতে প্রায় শেষ করে ফেলল। এই মুহূর্তে মিথিলা কলেজে যেতে লাগল। মিথিলা কে হিমু একটা ডাক দিল। ডাক দিয়ে অর্ধেক আইসক্রিম টা মিথিলা কে দিল। মিথিলা রাগের কারণে মুখ দিয়ে কথা বের করতে পারে নি। হাত দিয়ে বুঝিয়ে দিল। হিমুকে কি করতে তার মন চাচ্ছে।
— রাগ করছ কেন? আমি তো তোমাকে ভালবেসে আইসক্রিম টা দিলাম। নইলে দু’জনের মধ্যে ভালবাসা থাকবে কি করে।
— আমি তোমাকে আইসক্রিম দিতে বলছি? পথের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকো কেন ? আমাকে দেখার জন্য ?
— সত্য কথা বলব ?
— হ্যা। সত্য কথা বলো।
— আমি তোমাকে ভালবাসি।
— আমি তোমাকে ভালবাসি না। তোমাকে আমি দুই চোখে সহ্য করতে পারি না।
— তুমি আমাকে দেখতে হবে না। আমি তোমাকে শুধু দেখব। দুই চোখ দিয়ে নয়ন ভরে দেখব। তোমাকে খুব ভালবাসাব।
— তোমার ভালবাসা আমার কোনো দরকার নাই। ইশ! আমাকে আর জ্বালাতে এসো নাতো।

এই কথা টা বলে মিথিলা চলে যেতে লাগল। হিমু মিথিলার চলে যাওয়া দেখতে লাগল। হিমুর খুব কষ্ট হতে লাগল। হিমু রাগের কারণে আইসক্রিম টা মাটিতে পেলে দিল।

মিথিলার একটা বড় ভাই আছে। মিথিলা তার বড় ভাই কে সব বলে দিল।
হিমু কলেজে গেল। মিথিলা ভাই দুই তিন টা পোলাপান নিয়ে কলেজে গিয়ে হিমু কে মারতে লাগল। হিমু অনেক কান্না করল। হিমু কে মেরে মেরে রক্তাক্ত করে কলেজে পেলে দিয়ে চলে আসেন মিথিলার ভাইয়েরা। হিমু কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হিমু প্রায় সুস্থ হতে ১ বছর লেগে যায়।

এ দিকে মিথিলার একটা বিয়ে হয়। খুব সুখের সংসার করতে শুরু করে মিথিলা। কিন্তু এই সুখ বেশি দিন থাকে নি। মিথিলার স্বামী আরেক টা বিয়ে করে বউ নিয়ে বাসায় নিয়ে আসে। মিথিলার উপর খুব অত্যাচার করে মিথিলার স্বামী। মিথিলা কান্না করে বাসায় চলে আসে। তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে যায়।

মিথিলার বাবা- মা মিথিলা কে আরেক টা বিয়ে দেন। বিয়ে দেওয়ার পর মিথিলার স্বামী মিথিলা কে যৌতুক হিসাবে ২০ লাখ টাকা আনতে বলে। মিথিলার বাবা- মা এতো টাকা না দিতে পারায় মিথিলা কে ডিভোর্স দিয়ে দেয় মিথিলার স্বামী। মিথিলার মা- বাবা মিথিলা কে নিয়ে খুব সমস্যায় পড়ে যান। মিথিলা সারাদিন মন মরা হয়ে থাকে কিছু মুখে দেয় না । আগ থেকে অনেক শুখিয়ে গেছে। হিমুর কথা খুব মনে পড়ছে। হিমুর জন্য মিথিলা খুব কান্না করতে থাকল।
মিথিলার মা – বাবা মিথিলা কে আরেক টা বিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলে দেখেন। ছেলে টা খুব ভালো ব্যাংকে চাকরি করে। বিয়ে হওয়ার পর মিথিলা মাত্র ১ দিন সংসার করে ছিল। মিথিলার স্বামী মারা যায়। মিথিলা একা হয়ে যায়। মিথিলা তার বাবার বাসায় গেলে মিথিলা কে তার ভাই বিদায় করে দেয়। মিথিলা রাস্তায় নেমে আসে। অনেক রাত হয়ে গেছে। একটা ছেলে সিগারেট খেতে খেতে রাস্তায় হাঁটতে লাগল। ছেলে আর কেউ না। সেই ছেলেটা হিমু। মিথিলা কে দেখা মাত্রই শার্ট দিয়ে মুখ টা পরিষ্কার করল। একটা মুচকি হাসি দিল। মুচকি হাসি দিয়ে বলে মিথিলা তুমি। আমি ভাবতে পারে নি তোমার সাথে আমার দেখা হবে। তুমি কেমন আছো? আমি ভাবতে পারে নি। তোমার মুখ টা আমি আবার দেখতে পারব। এখানে কেন এসেছ? তোমার স্বামী সাথে ঘুরতে নাকি?

মিথিলা কান্না করছে। খুব কান্না করছে। কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছে না । হিমু মিথিলার কাছে বসল। মিথিলা তার দিকে চেয়ে চেয়ে সব বলল। হিমু মিথিলার দিকে চেয়ে রইল। মিথিলা হিমু কাছে মাফ চাইল। হিমু শুধু কান্না করছে। মিথিলা চলে যেতে লাগল। হিমু মিথিলার হাত টা ধরল। হাত ধরে কপালে মাথা টা লাগাল। মিথিলা দুই হাত দিয়ে গাল টা হাতিয়ে দিল। হিমু মুচকি হাসি দিয়ে হাত টা ধরে হাঁটতে লাগল।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত