ভালোবাসার কিছু কথা

ভালোবাসার কিছু কথা

পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাচ্ছে।বকেরা দল বেঁধে বাসায় ফিরছে।অপরদিকে যত সন্ধা গড়াচ্ছে ততই নদীতে ঢেওয়ের শব্দ বেশি শোনা যাচ্ছে।অদ্ভুত এক ভালোলাগা কাজ করে আমার মধ্যে এই জায়গাতে আসলে।তাইতো মাঝে মাঝে সব ব্যস্ততা ভুলে ছুটে আসি এখানে।
:-আমাদের আর কখনো কথা বা দেখা হবেনা তাইনা?(ইরা)

ও আপনাদেরতো বলা হয়নি আমার পাশে আরো একটি মেয়ে বসে আছে।মেয়েটির নাম ইরা।আমার সবথেকে কাছের ফ্রেন্ড।ক্লাস ওয়ান থেকে একসাথে আছি আমরা।বলতে পারেন টম এন্ড জেরীর মত লেগে আছি।দুজনের মাঝে প্রতিদিন ঝগড়া লেগেই থাকে কিন্তু একটু পরেই সব ঠিক।কেউ কাউকে ভুলে থাকতে পারিনা।

:-কথা হবেনা কেনো?তুই আমার সবথেকে ভালো ফ্রেন্ড।যতদিন বেঁচে আছি তোর সাথে যোগাযোগ থাকবে আমার।(আমি)

:-না থাকবেনা।আমার সাথে কথা বললে তোর বউ সেটা ভালোভাবে নিবেনা।আমি চাইনা আমার জন্য কারো সংসারে দুঃখ নেমে আসুক।

:-এখনো বিয়েই হলোনা তার সংসার।তাছাড়া তুই কি করে বুঝলি যে আমার বউ তোকে সহ্য করতে পারবেনা?
:-না কিছুনা।আমি যায় এখন।বেশি দেরী করে বাসায় ফিরলে আব্বু রাগ করবে।
:-বাব্বা এত চেন্জ।কালকেওতো আমার সাথে ঘুরাঘুরি শেষে রাত ৮টায় বাসায় ফিরলি তখন রাগ করেনি?
:-এতদিন করেনি বাট আজ থেকে করবে।
:-তাহলে আর কি করার যা আর আমার বিয়েতে তোকে কিন্তু আসতেই হবে।

ইরা আর কোন কথা বললো না।চুপচাপ আমার পাশ থেকে ওঠে চলে গেলো।মেয়েটার চোখে পানি চিকচিক করছিলো যা স্পষ্ট দেখতে পেলাম।আমাকে খুব ভালোবাসে ও বাট কোনদিন বলতে পারেনা।আমিও ভালোবাসি কিন্তু কখনো প্রকাশ করিনি।

বাসায় ফিরতে হবে।আব্বু বলেছে সকাল সকাল বাসায় ফিরতে।কাল আমার বিয়ে।তেমন কোন আয়োজন নেই।শুধু কাছের কয়েকজনকে দাওয়াত করা হয়েছে।

বসা থেকে ওঠে দাঁড়াতেই কেউ পিছন থেকে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।খুব শক্ত করে।এমনভাবে জরিয়ে ধরেছে যেনো তাকে কেউ মারতে চাইছে আর সে বাঁচার জন্য আমার কাছে আশ্রয় নিয়েছে।জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। পিছন থেকে কেউ হঠাৎ করে জরিয়ে ধরলে ভয় পাবার কথা কিন্তু আমি কোন ভয় পাইনি কারণ এই হাতের ছোয়া আমার অনেক পরিচিত।আমাকে জরিয়ে ধরে মানুষটা খুব কাঁদছে।ইরা।হ্যাঁ ইরা ফিরে এসেছে।আমি জানতাম ও আসবে।আমাকে ছাড়া ও এক মূহুর্ত থাকতে পারবেনা।আমাকে কোনদিন ভুলেও হারানোর কথা ভাবতে পারেনা।

:-হুসাইন আমি তোকে ছাড়া বাঁচবোনা।তোকে ছাড়া এক মিনিট থাকতে পারবোনা আমি।আমি তোকে খুব ভালোবাসি।প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাস না।(ইরা)
:-আগে আমাকে ছাড় তারপর বলছি যা বলার।(আমি)
:-না ছাড়বোনা।আগে বল আমাকে ভালোবাসিস কিনা?
:-না বাসিনা।
আমার কথা শুনে ইরা আমাকে ছেড়ে দিয়ে সামনে এসে দাড়ালো।ইরার চোখে ভয় দেখতে পাচ্ছি আমি।প্রিয় মানুষটাকে হারানোর ভয়।ইরার চোখ থেকে পানি পড়ছে।
:-আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল আমাকে ভালোবাসিস না?
:-চোখের দিকে তাকিয়ে বলার কি আছে।আমিতো বলেছিই ভালোবাসিনা।
:-না তুই চোখের দিকে তাকিয়ে বল।
:-পারবোনা আমি। আমি এখন বাসায় যাবো।আমার অনেক কাজ আছে।
:-সত্যিই আমাকে ভালোবাসিস না?
:-না বাসিনা।

দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম।ইরার চোখের পানি একদম সহ্য হয়না আমার।বেশিক্ষণ থাকলে ইরা বুঝে যাবে আমি মিথ্যা বলছি।ইরা এখনো দাড়িয়ে আছে এক জায়গাতে।একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।

বাসায় এসে রুমে বসে ভাবছি ইরার সাথে আজ যা করলাম তা কি ঠিক হলো?না একটু বেশি হয়ে গেছে।মেয়েটাকে এতটা কাঁদানো ঠিক হয়নি।ফোন করে সরি বলি।

ফোনটা হাতে নিয়ে ইরাকে ফোন দিতে যাবো তখনি ড্রয়িংরুম থেকে চিৎকারের আওয়াজ শুনলাম।দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখলাম ইরা এসেছে।ড্রয়িংরুমে রুমে আব্বু,আম্মুসহ অনেকে বসে আছে।সবাই সম্ভবত কিছু নিয়ে আলোচনা করছিলো।ইরা চিৎকার করে তাদের সাথে সাথে কথা বলছে।কথাগুলো ছিলো এমন
:-আপনারা যদি হুসাইনের বিয়ে অন্য জায়গাতে দেন তাহলে আমি আত্মহত্যা করবো আত্মহত্যা করার সময় লিখে যাবো আমার মৃত্যুর জন্য আপনারা সবাই দায়ী।হুসাইন শুধু আমার।ওকে আমি না পেলে কেউ পাবেনা।(ইরা)
একটা মেয়ের এতটা সাহস থাকে আজ ইরাকে দেখে বুঝলাম।মেয়েটা আমার বাসার সবার সামনে বলছে আমাকে ভালোবাসে। তাও আবার ভয় দেখিয়ে বলছে।ইরার কথা শুনে সবাই মিটমিট করে হাসছে। আমারও হাসি পাচ্ছে।ইরা সবাইকে মিটমিট করে হাসতে দেখে আরো রেগে গেলো।

:-আমার কথা শুনে আপনারা হাসছেন কেনো?আপনাদের কি মনে হয় হু?আমি ইয়ারর্কী করছি,আমি মোটেও ইয়ারর্কী করছিনা।সবগুলো যখন পুলিশের ধোলাই খাবেন তখন বুঝবেন।(ইরা)

এবার কেউ হাসি ধরে রাখতে পারলোনা।শব্দ করে হাসতে শুরু করলো সবাই।সবাইকে হাসতে দেখে ইরা সাপের মত ফুসছে।আমি একপাশে দাড়িয়ে মিটমিট করে হাসছি ইরার কান্ড দেখে।সবাইকে হাসতে দেখে ইরার আমার কাছে আসলো।ইরা আসতেই আমি হাসি থামিয়ে ফেললাম।

:-তুইতো জানিস আমি কতটা রাগী।জেদের বসে সবকিছু করতে পারি আমি।(ইরা)
:-হুসাইন তোর হবু বউতো দেখছি বড় ধরণের গুন্ডা,বিয়ের আগেই সবাইকে ভয় দেখাচ্ছে না জানি বিয়ের পরে কি করবে।(ছোট চাচি)

:-হবু বউ মানে?(ইরা)

ইরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবার দিকে।একবার বাসার সবার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আমার দিকে।ইরা ভালো রকম শক খেয়েছে বুঝতে পারলাম।

:-কে বলেছে আমার বউমা গুন্ডী,আমার বউমার মত লক্ষী মেয়ে আর একটাও নেই এই পৃথিবীতে।(আম্মু)

হঠাৎ ইরা আমার হাত ধরে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে আসলো।

:-ওই কি হচ্ছে এসব?সবাই আমাকে দেখে এভাবে হাসছে কেনো?আর বউমা কে?(ইরা)
:-হি হি হি হি হি হি
:-ওই হাসবিনা একদম।আমি কাঁদছি আর উনি হাসছে।
:-হাসবো নাতো কি করবো তাহলে?তোর মত বোকা মেয়ে আর একটাও দেখিনি।
:-আমি কি করেছি?
:-গাধী তোকে বলছিলো সবকিছু।তুই আমার হবু বউ।
:-কি?

ইরা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ওর কাছে হয়তো সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছে।

:-আমাকে একটু বলনা কি হয়েছে?(ইরা)

:-কয়েকদিন আগে আব্বু আমার বিয়ের জন্য জিঙ্গেস করেছিলো আমি কাউকে পছন্দ করি কিনা তখন আমি তোর কথা বলি।আমার বাসার সবাই জানে তুই কেমন মেয়ে তাই কেউ অমত করেনি।তবে সবাইকে বলেছিলাম তোকে বিয়ের কথাটা না জানাতে।তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু হলোনা তার আগেই আমাদের বাসায় এসে গুন্ডীগিরি শুরু করো দিলি।(আমি)

:-ওই কি বললি তুই আমি গুন্ডা?
:-গুন্ডা না গুন্ডী।
:-ওই হলো।আমাকে গুন্ডী বলা,দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি তোকে।

ইরা আমার বুকে কিল ঘুসি মারতে শুরু করে দিলো।আমিও কম কিসে ইরার চুল ধরে টান দিলাম।ইরার চুল ধরে টান দেওয়া মাএই ও ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে আমার বুকের মাঝে এসে পড়লো আর সাথে সাথে ইরার ঠোটের স্পর্শ আমার ঠোটে।দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম এমন অবস্থায়।ইরা খুব লজ্জা পেয়েছে, সাথে আমিও।লজ্জায় ইরা আমার থেকে একটু দুরে গিয়ে দাঁড়ালো।ইরার দিকে তাকাতে লজ্জা লাগছে তাই মাটির দিকে তাকিয়ে আছি।প্রথম কোন মেয়ের স্পর্শে আমার সারা শরীল সিহরিত হয়ে গেলো।

কিছুক্ষণ দুজন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।ইরা আমার দিকে তাকাচ্ছেনা আর আমি ইরার দিকে।কেমন যেনো লাগছে।চেনা মানুষটার দিকে তাকাতেও লজ্জা লাগছে।তবে মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখছি।ইরা এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ইরার দিকে তাকিয়ে সরি বলতে গেলাম ঠিক তখনি ইরাও সরি বলে ওঠলো

:-সরি–
দুজনেই একসাথে সরি বলে ওঠলাম।
:-ইটস ওকে।(আমি)
:-ইটস ওকে।(ইরা)

আমি ইরার কাছে এগিয়ে গেলাম।অচেনা দুষ্টুমি আমার উপর ভর করেছে।ইরার খুব কাছে চলে এসেছি।ইরার নিঃশাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।ইরা আমাকে এত কাছাকাছি দেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো।আমি ইরার আরো কাছে

চলে আসলাম।হঠাৎ করে ইরার গলায় চিমটি মেরে দে দৌঁড়।
ইরা পিছন থেকে বলছে কুওা দাড়া আজ তোর খবর আছে।
ভুল করেও দাঁড়ানো যাবেনা।দাঁড়ালে আমি শেষ।হুসাইন ভাগ তাড়াতাড়ি ভাগ।

*******************************************সমাপ্ত****************************************

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত