মেঘপাহাড়

মেঘপাহাড়

পর্ব-১
বাড়ি যাচ্ছি…
সাথে ছোটমামা।একসময় মামা জিজ্ঞাসা করলো বাকিটা পথ একাই যেতে পারবো কিনা।সম্মতি জানালাম।একটা ট্যাক্সি ডেকে সেটাতে উঠে বসলাম।ট্যাক্সিতে আমি আর ড্রাইভার ছাড়াও আরও একজন ভদ্রলোক। কেমন যেন চেনাচেনা মনে হচ্ছে লোকটাকে।হঠাৎ হর্ণের শব্দ।সামনে তাকিয়ে দেখলাম আরেকটা গাড়ি আর একসময় সেটা হুট করে আমাদের সামনে এসে থেমে গেলো।ব্যাপারটা বুঝতে পারলামনা।গাড়ি থেকে তিনজনেই নামলাম।রাস্তাটা বেশ নির্জন।জনমানব নেই বললেই চলে।দুপাশে গহীন বন।একটু সামনে এগিয়ে যেতেই যা দেখলাম তাতে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো।একটা লোক মাথায় হাত দিয়ে টলতে টলতে সামনে এগিয়ে আসছে আর মাথা থেকে ঝরছে রক্তের ধারা।সবাই বেশ ঘাবড়ে গেলাম। লোকটা কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই ধপাস করে পরে গেলো মাটিতে।বুঝলাম পরিস্থিতি ভভয়াবহ । যতোটা ভয়াবহ ভেবেছিলাম এখন দেখি তারচেয়েও ভয়াবহ।কয়েকটা লোক হাতে অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসছে আমাদের দিকে।কিছু না ভেবেই উলটো দিকে দৌড়াতে লাগলাম।যে করেই হোক,বাঁচতে হবে লোকগুলোর হাত থেকে…..

পর্ব-২
হঠাৎ রিংটোন বেজে উঠলো।ধড়মড় করে উঠে বসলাম।তারমানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম।উফফফ,কি ভয়ানকই না ছিলো স্বপ্নটা।যাক বাবা..বাঁচা গেলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি মিহাদ কল করেছে।কিছুক্ষণ কথা হলো।কথা শেষে সময় দেখতে গেলাম….। আর যা দেখলাম তাতে চক্ষু চড়কগাছ। সাড়ে সাতটা বেজে গেছে।আর আমাকে আটটায় কলেজ যেতে হবে।নয়টা থেকে ক্লাশ শুরু।কোনোমতে রেডি হয়ে না খেয়েই কলেজের দিকে রওনা হলাম।সাড়ে আটটা বেজে গেছে। অটোতে উঠে বসলাম। বারবার সময় দেখছিলাম।নাহ্ঃআজকে দেরি হবেই কলেজ যেতে।জ্যামে আটকে গেলাম।ধুরর…ভাল্লাগেনা। এই ছোটখাটো রাস্তায় জ্যাম।হঠাৎ করে পাশের রেস্টুরেন্টের দিকে চোখ গেলো।একটা সাত থেকে আট বছরের ছেলে কাজ করছে সেখানে।দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম।ইচ্ছে হচ্ছিলো গিয়ে একটু আদর করে আসি।আবার চলতে শুরু করলো অটো।তবে, এখন আর আমার তাড়া নেই।দুচোখ ভেঙে কান্না পাচ্ছে।অই ছোট ছেলেটার যেখানে আজ মায়ের হাতে খেয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিলো সেখানে দুমুঠো অন্ন যোগাবার জন্য সে রেস্টুরেন্টে কাজ করছে।এরকম কতো শতশত ছেলেমেয়ে দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হিসেব নেই।যারা ঠিকমতো খেতে পায়না।এমনকি যাদের ঘুমানোর জায়গা পর্যন্ত নেই।ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকে।শীতে পরিধানের জন্য কাপড় নেই।কতশত বাচ্চা ছেলেমেয়ে মারা যাচ্ছে।অথচ বিত্তবানদের মাঝে অনেকেই যাদের উচিৎ তাদেরকে সাহায্য করা, তা না করে তারা উলটো তাদের সাথে রূঢ় ব্যবহার করে।মনুষ্যত্ব বলতে কি কিছু নেই তাদের মাঝে! শুধুই আছে পশুত্ব। যাদের মনে এতোটুকু মায়া নেই এদের জন্য তারা পশুর অধম।

পর্ব-৩

কলেজ পৌঁছালাম ঠিক সময় মতোই।সেকেন্ড ইয়ারের এক্সাম উউপলক্ষ্যে আজ একটু আগেই ছুটি হয়েছে।কারিমা এসে বলল,’ চলো ক্যান্টিনে যাই।কিছু খেয়ে আসি।’
সকালে খেয়ে আসিনি।খিদেও পেয়েছে বেশ।বললাম,’চলো।’
ক্যান্টিনে গিয়ে চটপটির অর্ডার দিলাম।কিন্তু কি আশ্চর্য! খাবার গলা দিয়ে নামছেনা।বারবার মনে হচ্ছে সেই ছেলেটা আর তারমতো অজস্র ছেলেমেয়ের কথা।আমরা প্রতিদিন ফাস্টফুড খাবার জন্য কতো টাকাই নষ্ট করি।অথচ এই খাবারটা যদি বাড়ি গিয়ে খাই তাহলে টাকাটা বেঁচে যাবে।আর টাকাটা যদি অইরকম একটা অসহায় শিশুকে দেই তাহলে হয়তো বেশিরভাগ পথচারী শিশুকে আর না খেয়ে দিন কাটাতে হবেনা।
#তাই আসুন,আমরা সবাই একটু একটু করে যে যেমনটা পারি সাহায্য করি এদেরকে।তাহলে হয়তো তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
#রূঢ় ব্যবহার না করে সহানুভূতি সম্পন্ন আচরণ করি এদের সাথে।
#ভেবে দেখুন, অই ছেলে বা মেয়েটার জায়গায় আপনি।তাহলেই তাদের কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারবেন।

আর তাতে কিছুটা হলেও দূরীভূত হবে এই অসহায় মানুষগুলোর কষ্টের মেঘপাহাড়।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত