নওরীন কে বিরক্ত করার জন্য আমি আবার দ্রুত গতিতে ওর নাম্বারে ফোন দেই,আমি যে নওরীন এর উপড় দূবর্ল, এবং তাকে যে মারাত্নক রকমের ভালবাসি সেটা বোঝানোর জন্য ফোন দেই।রিং হওয়া মাত্রই নওরীন ফোন রিসিভ করে।আমার কেন জানি মনে হয় নওরীন ও আমাকে ভালবাসে অনেকটা না হলেও হয়তো কিছুটা।জানিনা ভালবাসার কোন মাপ দন্ড আছে কিনা,কিন্তু তারপরেও আমার কেন জানি মনে হয় নওরীন আমাকে অনেকটা ভালবাসেনা,ভালবাসে তবে অল্প একটুক।আমি নওরীন এর সেই অল্প একটুক ভালবাসার পাওয়ার জন্য,দু হাত পেতে বসে থাকি।জীবনে ভাল ভাবে বেচে থাকতে,ওই অতটুকু ভালবাসাই আমার জন্য যথেষ্ট।যথেষ্ট বললে ভুল হবে,অনেক বেশিই।
নওরীন ফোন রিসিভ করেই, কিছুটক মৃদু স্বরে বলে
__কিরে আবার ফোন দিলি কেন?
আমি মিথ্যার আশ্রয় নেই,একবার নয় বার বার।মিথ্যা দিয়ে মিথ্যার পাহাড় বানাই।তবু নওরীনের সাথে ইনিয়ে বিনিয়ে,কথার খই ফোটাই।
,তবে আমার কেন জানি মনে হয় নওরীন আমার সেই মিথ্যা টুকু খুব অল্প সহজেই বুঝে ফেলে।
আমি কাশি দিয়ে বলি,”
আরেকটা জিনিস বুঝি নাই!
নওরীন কিছুটা রাগি স্বরে বলে,
_আচ্ছা ক্লাসে তোর মনোযোগ কই থাকে?
স্যার এতো সুন্দর করে লেকচার দেয় আর
তুই কিছুই বুঝিস না।
আমি নওরীন কে বোঝাতে চেষ্টা করি তোর কথায় আমি আহত হয়েছি।অভিমান করেছি এক সাগর,আমার অভিমানটা ভাংগাবিনা।
নওরীন কে বলি,
তুই বিরক্ত হচ্ছিস। থাক
তাহলে রাখি।
নওরীন খুব সুন্দর করে ফোন রেখে দেয়।
নওরীন এর ফোন রেখে দেয়ায়,আমার কষ্ট লাগার কথা।কিন্তু না,এমন কোন অনুভুতি আসেনা।যেটা আসে সেটা হলো প্রশান্তি,আমি ধর পর করে পড়তে বসে যাই।পড়তেই থাকি,স্যারের সকল থিওরীর ষষ্ঠি পিন্ডি করে দিয়ে তার পর পড়া থেকে উঠি।পড়া শেষ হওয়া মাত্রই নওরীন আমাকে একটা মিস কল দেয়।আমার বিরক্ত হওয়া উচিত।এই যুগে এসেও মিস কল,কিংবা মেয়েরা সাধারনত মিস কল ছাড়া কল দেয়না এরকম ভাবনা ভাবা উচিৎ।কিন্তু সেরকম কোন ধারনাই আমার মাথায় আসেনা,নওরীন মিস কল দিয়েছে এটাই আমার কাছে রাজ্য পরিমান খুশি।আমি তাড়া তাড়ি নওরীন কে ফোন ব্যাক করি,”নওরীন হাই তুলতে তুলতে বলে,অনেক পড়েছিস এখন ঘুমা।এত পড়ে কি করবি।
আমিও চুপটি করে,হু শব্দ করে ফোন রেখে দেই।শোয়ার সময় কোন দিন নওরীন আমাকে গুড নাইট,কিংবা সকালে গুড মর্নিং বলে নাই।আর কোন কারনে কেন জানি আমারো বলা হয় নাই।
গত তিন দিন ধরে আমি নওরীন কে নিয়ে উদ্ভট উদ্ভট সব কল্পনা করতেছি।ঘুমাতে গেলেই বিপদ,মাথায় শুধু নওরীন আর নওরীন।শুধু শুধু বেডে এপাশ আর ওপাশ করি।ঘুম আর সহজে আসেনা।মাঝরাতে তখন আমি আমার সেমফনির টি ৪৮ মডেলের দেড় ইন্চি ডিসপ্লেতে জসিম আর শাবানার রোমান্টিক গান এই চানাচুর,গানটা শুনি।কল্পানায় তখন আমি চানাচুর বিক্রেতা,আর নওরীন চানাচুর ক্রেতা।
মনের সাথে যুদ্ধ করে স্বিদ্ধান্ত নিলাম,নওরীন কে আমার ভালবাসার কথাটা জানানো দরকার।
রাত জেগে একরকম পরিকল্পনা করে,ভার্সিটিতে যাই।গিয়ে সারা ভার্সিটি হন্য হয়ে খুজেও যখন নওরীন কে পেলাম না,তখন আমি সোজা নওরীনের বাসায় গিয়ে উপস্হিত।ওদের বাসাটা খুবেই ছোট,তিন রুমের বাসাটায় ওরা তিন বোন একটা ছোট ভাই আর বাবা মার বাস।ওদের বাসাটা আমার কাছে কবর কবর লাগে।ভিতরে ঢুকতেই দম বন্ধ হয়ে আসে আমার।
দড়জায় কড়া নাড়তেই নওরীনের ছোট বোন দড়জা খুলে দেয়।আমি ওকে প্রশ্ন করি,নওরীন এর কি কিছু হয়েছে,আজ ভার্সিটি গেলোনা যে।নওরীনের ছোট বোন টুম্পা,অনেকটা হাসি মুখে উত্তর দেয়,আপনি জানেনা আজকে আপুকে দেখতে আসছিলো,তাদের পছন্দ হওয়ায় সামনের মাসেই আপুর বিয়ে।
আমি টুম্পার গাল চিমটি দিয়ে বলি,দুলা ভাইকে পছন্দ হইছে তোমার।
টুম্পা হাসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে,হু খুব।যাওয়ার সময় আমার হাতে এতগুলা টাকা দিছে।
আমি টুম্পাকে বলি,তোমার আপুর কাছে আসছিলাম,ও কই।
টুম্পা মাথা নেড়ে বলে”আপু ঘড়েই আছে,আপুর কেন জানি মন খুব খারাপ আমার সাথে যাতা ব্যবহার করছে।
আমি আবারো টুম্পার গালে চিমটি দিয়ে বলি,”আপুর কথায় কিছু মনে করোনা কেমন।টুম্পা তার ফোকলা দাতের হাসি দিয়ে বলে,”কিছু মনে করবোনা,আপু চলে গেলে আমি তখন একটা খাটে পুরোটাই ঘুমাতে পারবো।আপুর সব কিছু আমার হবে তখন।
আমি মাথে নেড়ে বলি, “হু,
টুম্পা হাতে থাকা চকলেটাতে আরেকটা কামড় দিয়ে বলে,এই টা দুলা ভাই নিয়ে আসছে।চলো তোমাকে আপুর কাছে নিয়ে যাই।
আমার সামনে নওরীন,অনেকটা আটো সাটো হয়ে বসে আছে।ওর চোখে কাজল, মুখে ক্রীম।
আমার সামনে কোন কথায় বলছেনা ও,আমি ওকে বলি,”কিরে এমন সেজে গুজে আছিস কেন, মডেল টডেল হবি নাকি।
নওরীন আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে,বলতে পারেনা কিছুই।তবে ওর চোখ আমার সাথে কথা বলে,আমি তার চোখের ভাষা টুকু টুপ করে পড়ে নেই।ওর চোখে তখন রাজ্যের হতাশা,অনেক বিশাল একটা কিছু হারানোর ভয়।মনে মনে কল্পনা করি,সেই অনেক বিশাল কিছুটাই কি আমি।
নওরীন মুখ ঘুড়িয়ে নেয়,আচল দিয়ে চোখ মুছে চোখের কাজল মুখে লেগে একাকার।নওরীনের সামনে এমন পরিস্হিতিতে,ওকে কি বলবো বুঝতে পারলাম না
শুধু ওর হাতে হাত রেখে বললাম,”যেখানেই থাকিস ভাল থাকিস,তুই খুব লক্ষি একটা মেয়ে।দেখবি একদিন তোর সব হতাশা না পাওয়া সব পুরন হবে।তোর স্বামি তোর জন্য সুখ কিনে আনবে চাদের দেশ থেকে।
আমি হুট করেই দৌড় দিয়ে নওরীন দের বাসা থেকে বের হয়ে যাই।আমার বাসা নামক সেই খুপড়ি ঘরে,আম্মু তখন বসে বসে আমার ছেড়া শার্টে সেলাই করছেন।দড়জার সামনে দাড়িয়ে আমি আম্মুর সেই সুনিপুন সেলাই দেখি।আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে
বলেন,”এতো তাড়া তাড়ি ভার্সিটি থেকে আসলি যে।
আমি চুপটি করে আম্মুর পাশে বসি,আম্মুর কোলে মাথা রেখে বলি,”আম্মু শার্টের ছেড়া অংশ তো সুই সুতা দিয়ে খুব সুন্দর করে জোড়া দেয়া যায়,কিন্তু হৃদয়ট ছিড়ে দু টোকরা হলে সেটা কেন জোড়া লাগেনা আম্মু কেন কেন?