বাজেট খুব একটা বেশী না থাকলেও এবারের ঈদ মার্কেট খুব একটা খারাপও হয়নি অনিকের। বরংচো বরাবরের চেয়ে মোটানোটি ভালোই হয়েছে। কম দামের মধ্যেই পাঁচটা টি-শার্ট কেনা হয়েছে এতেই সে খুশি। সবচেয়ে বড় কথা হলো টি-শার্ট সব গুলাই তার মনের মত হয়েছে এবং পড়তেও বেশ আরামদায়ক। যা অন্যান্য বারের কেনা দামী শার্ট বা পাঞ্জাবির চেয়ে অনেক গুণে ভাল। সবাই হয়তো গরু ছাগল কেনা নিয়েই ব্যস্ত তাই হয়তো এবার পোষাকের উপর চাপ কম পড়েছে। যাগগে সেইসব কথা বাজেটের মধ্যে পছন্দের পোষাক কিনতে পেরেছে এটাই যথেষ্ট। অত কারণ বিশ্লেষণ করে লাভ নাই। অনিক বাসায় এসে সোজা আলমারিতে রেখে দিলো টি-শার্ট গুলা। কি মনে করে যেন হঠাৎ করেই পরের দিন একটা টি-শার্ট পড়তে চাইলো সে। যেই ভাবনা সেই কাজ। সবকিছু স্বাভবিক ভাবেই চলছিলো কিন্তু ব্যাঘাত ঘটলো তখনই যখন সে আয়নাতে তার টি-শার্টের পিছনে বিশাল একটা ছিদ্র দেখতে পেলো। আশ্চার্যের বিষয়
হলো ছিদ্রটা একদম নিখুঁত ভাবে গোল করে কাটা। মনে হচ্ছে কেউ সযত্নে কাচি দিয়ে কেটেছে কারণ ইঁদুর বা পোকা মাকড়ের পক্ষে এত বিশাল বা নিখুঁত ভাবে গোল করে কাটা কখনোই সম্ভব না। আরো আশ্চার্যের বিষয় হলো পিছনের ছিদ্রটা শুধু আয়নাতেই দেখা যাচ্ছে। বাস্তবে দেখাও যাচ্ছে না এবং হাত দিয়ে সেটা বোঝাও যাচ্ছে না। অনিক প্রথমে হয়তো চোঁখের ভুল ভেবে তা উড়িয়ে দিলো কিন্তু একটু পর ভালো ভাবে তাকাতেই আবার আগের মতোই ছিদ্র দেখতে পেলো। মনের সন্দেহ দূর করার জন্য বাকী টি-শার্ট গুলাও বের করে দেখতে লাগলো সে। স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে টি-শার্ট গুলা স্বাভাবিক আছে কিন্তু আয়নার সামনে ধরতেই সেগুলার পিছনেও প্রথমটার মত বিশাল আকারের গোল ছিদ্র দেখা যাচ্ছে।
অনেকটা ঘাবড়ে যেয়েই বন্ধু তাসিনকে ফোন দিলো অনিক। কারণ তাসিনের সাথে যেয়েই সে এই টি-শার্ট গুলা কিনেছিলো। তাসিনকে ফোন দেয়ার পর সবকিছু খুলে বলার আগেই তাসিন অনিককে আরো চাঞ্চল্যকর ঘটনা বললো। কারণ তাসিনও সেইদিন তার ছোট বোনের জন্য জামা কিনেছিলো। আর সেই জামাই তাদের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জামাটা পড়েই নাকি তার বোন আজ সকালে গলায় দড়ি দিয়েছে এবং মারা যাওয়ার পর তার চেহারা বিভৎস হয়ে আছে। মা বাবাকে ঈদ মার্কেটের যে প্যাকেট গুলা দিয়েছিলো সেগুলা নিয়ে সেই যে তারা রুমে ঢুকেছে এখনো রুম থেকে বের হয়নি। আরো কি যেন বলতে চেয়েছিলো সে কিন্তু তার আগেই তাসিনের বিশাল একটা চিৎকারে ফোন বন্ধ হয়ে গেলো।
তাসিনের সাথে কথা বলার পর ভয়ে অনিকের হা-পা কাঁপতে শুরু করলো। তার বার বার মনে হতে লাগলো দেশে কয়েক বছরে বিভিন্ন পোষাক শিল্প কারখানায় দুর্ঘটনার ফলে অনেক শ্রমিক মারা গেছে। হয়তো এইসব পোষাক তাদের হাতেই তৈরী করা অথবা এগুলা তৈরীর সময়ই তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাই হয়তো তাদের আত্মা আজও এইসব পোষাকের মাঝে ঘুরে বেড়ায়। আর এই জন্যই বুঝি দোকানদার এত কম দামে এগুলা ছেড়ে দিয়েছে। আগে থেকেই হয়তো তারা এইসব কিছু জানতো অথবা ঐসব দুর্ঘটনা প্রবণ কারখানার সাথে তাদের যোগাযোগ আছে। সবকিছু বোঝার পর অনিক যেই চিৎকার করে তার মা বাবাকে ডাকবে ঠিক তখনি খেয়াল করলো পিছনের গোল করে কাটা
ছিদ্র থেকে কারো একটা বিভৎস মাথা বের হচ্ছে। অনিক হাজার চেষ্টা করেও টি-শার্টটা শরীর থেকে খুলতে পারছে না বরংচো সে যত চেষ্টা করছে টি-শার্টটা ততোই তাকে আঁকড়ে ধরছে। আরও ভয়ানক ব্যাপার হলো তার কন্ঠস্বর থেকে কোনো আওয়াজই বের হচ্ছে না। আস্তে আস্তে পুরা টি-শার্টটা রক্তে ভরে উঠতে লাগলো। অনিক ডান দিকে তাকাতেই দেখলো বিভৎস মাথাটা তার দিকে চোঁখ বড় করে তাকিয়ে আছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই তার শরীর থেকে মাথাটা আলাদা হয়ে গেলো। মেঝেতে পড়ে থাকা মাথা এবং দেহের অন্যান্য অংশ থেকে বের হওয়া রক্তে পুরা মেঝে ভেসে যেতে লাগলো। এবং সেই সাথে বিভৎস মুখটা বলতে লাগলো এর পরের বার তোর পালা।