আমি এতো টা ভালো ছাত্র না। আবার এতো টা গাধা ছাত্র না। তবে যেটাকে বলে মোটামুটি ভালো ছাত্র। আমাদের ক্লাসের সব থেকে একটা মেয়ে খুব ভালো ছাত্রী। সব কিছু খুব সহজে বুঝে যায়। আমি তার সামনে একটু কম যাই। তার সামনে যেতে খুব ভয় করে। একদিন আমি বারান্দা দিয়ে ক্লাস রুমে ঢুকতে ছিলাম। এমন সময় দেখি সে আমার বিপরীত পাশ দিয়ে ক্লাস রুমে ঢুকছে। আমি লজ্জা পেয়ে লুকিয়ে গেলাম। সে আমাকে লুকাতে দেখল। এবার একটা মুচকি হাসি দিয়ে ক্লাস রুমে ঢুকে গেল। আমি ক্লাস রুমে গেলাম। সে আমাকে দেখে মিনমিন করে তার পাশের সীটে বসে থাকা মিমি কে কি বলল আমি কিছু শুনতে পাই নি। আমি একটু তার দিকে তাকাচ্ছি। আমাদের ক্লাস রুমে প্রায় ৬ টা ফ্যান ছিল। এদের বাতাসে সুস্মিতার চুল গুলো উড়ছে। কি ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে বৈশাখ মাসে ধান খেতে যেমন করে সোনালি ধান গুলো এদিকওদিক যায় ঠিক তেমন করে। হিহিহি। আমি ক্লাস করে ক্যান্টিনে বসলাম। এমন সময় দেখি সুস্মিতার কাছে সবাই যাচ্ছে তাও আবার খাতা নিয়ে। আমি আমার একটা বন্ধু কে জিজ্ঞাস করলাম কেস কি?
সে আমাকে বলল সবাই আমরা তার কাছে ক্লাস করব। আমি তো পরলাম মহা ঝামেলায় এমনিতেই তার কাছে যেতেই আমি লজ্জা পাই তার উপর তার ক্লাস করব। কিন্তু কি আর করার আছে সবাই যেমন করছে আমিও করব। আমিও খাতা কলম নিয়ে তার কাছে গেলাম। সে আমাকে দেখল কিন্তু কিছু বলল না শুধু একটা মুচকি হাসি দিল। আমিও তার ইশারা না পেয়ে বসে পরলাম। সে যেহেতু আমাদের ক্লাসের ভালো ছাত্রী সে হিসাবে সবাই কে একটা হিসাববিজ্ঞান অংক করতে দিল। আমার এক বন্ধু নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ল। সে একটু শাসন মূলক ভাব নিয়ে বলল নকল কর না নকল করলে সারাজীবন নকল করতে মন চাইবে যেটাকে বলে অভ্যাস হয়ে যাবে। আমি দাঁড়িয়ে বললাম আমি একটা কথা বলি সুস্মিতা আবার একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল বলো। আমি বললাম ” ক্লাস ওয়ান থেকে নকল করে আসছি কিন্তু অভ্যাস হয় নি। সে এবার অনেক বড় করে একটা হাসি দিল। ক্লাসের সবাই আসল।
আমি নিচের দিকে চেয়ে বসে রইলাম। সুস্মিতা এবার বুঝতে পারছে তার হাসি টা আমার জন্য লজ্জার।
আমি দেখতে পেলাম একটা গাছের মধ্যে দুই টা পাখি বসে বসে ঝগড়া করছে। একটাই অভিমান করছে আবার আরেকটায় বকা দিচ্ছে। কি মজা। এদের ভালবাসা টা আমি বসে বসে উপভোগ করছি। এমন সময় দেখি সুস্মিতা সহ আরও দুই টা মেয়ে আমি যে দিকে তাকিয়ে আছি তারাও সেদিকে তাকাচ্ছে কিন্তু কিছু ওই দেখতে পারছে না। আমাকে সুস্মিতা জিজ্ঞাস করল ” কি দেখছ এমন করে? আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ” প্রেম দেখছি। ”
— কোথায় প্রেম?
—- তুমি দেখতে পারছ না। দেখবে কি করে চোখের মধ্যে তো আমার মাথা থেকে অনেক বড় চশমা পড়ে আছ।
—- বাহ রে। আমি শুধু চশমা পড়ছি। আর তুমি কি চশমা পড় নি? তুমি ওত চশমা পড়। আমাকে একটা কথা বলবে?
— কি কথা বলব?
— আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকো কেন? আমার কি লজ্জা করে না।
— আমি তোমার দিকে থাকিয়ে থাকি না। তোমার চশমার দিকে থাকিয়ে থাকি।
— মিথ্যুক।
আমাদের কলেজে সবাই বসে ক্রিকেট খেলা দেখতাছে। আমিও দেখছি। ক্রিকেট খেলা দেখতে আমার অনেক ভালো লাগে। বলতে গেলে একজন ক্রিকেট প্রেমী। ব্যাটসম্যান চার ছক্কা মারতে রানের পাহাড় করে দিচ্ছে। এমন সময় একটা বল এসে সুস্মিতা উপরে পড়ল। সুস্মিতা তো মেয়ে তাই শক্তি নাই। নইলে বল টা তো হাত দিয়ে ধরতে পারত। একেবারে নিঃশক্তি। আমি সুস্মিতার কাছে গিয়ে ইচ্ছা মতো বকা দিলাম। সুস্মিতা চোখ বড় বড় করে আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি তো আমার মুখ টা একেবারে থামিয়ে দিলাম। সেখান থেকে চলে আসতে যাব তখন সুস্মিতার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ ভিতরে ঢুকিয়ে আমাকে বলে ” মুখ সেলাই করে দিব। আমাকে বকা দেওয়ার সাহস হয় কি করে? ”
… সেলাই দেওয়ার আগেই হাতে ধরে হাত ভেঙে দিব।
.. ইশ! বললেই হলো। আমাকে ট্রিটমেন্ট করার জন্য ডাক্তারের ধারে নিয়ে যাও। আমি হাতে ব্যথা পাইছি।
… আমি পারব না।
… কেন পারবে না?
…আমি কেন করে দিব? তুমি আমার কে?
… লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে যে দেখো সেটার শাস্তি হলো আমাকে ট্রিটমেন্ট করাতে নিয়ে যাবে এখন। যদি না করো তাইলে সবাইকে বলে দিব তোমাকে আমি চিনি না তুমি আমাকে অন্য কিছু বলছ।
… আমি ভয় পাই না। আমি চলে গেলাম। তোমার যা ইচ্ছা তা করো।
সুস্মিতা মুখ টা আ করে বসে আছে। সে খুব অবাক হলো আমার এ আচরণ দেখে কিন্তু দশ হাত দূরে গিয়ে ওই আমি আবার সুস্মিতার কাছে চলে আসলাম। সুস্মিতার হাতে ধরে দাঁড় করিয়ে এক পা দুই পা করে চলে আসলাম। আমার চারদিকে সুখের হাওয়া বইছে। সুস্মিতা মুচকি হাসি দিয়ে বলে ” এখন থেকে আমার সব দায়িত্ব তোমার। ”
আমি এক মিনিটের জন্য অজ্ঞান হয়ে গেলাম। কিছু ওই বলতে পারি নি।