নূরী

নূরী

“হেমায়েতপুরের এক মানসিক হাসপাতালে দুজন মানসিক চিকিৎসক কথা বলছেন”

– “স্যার,রোগি নম্বর ত্রিপল ফাইভ কে সব সময় এভাবে বেঁধে রাখা হয় কেনো?”

“আর কেনই-বা সবাই ওকে এতো ভয় পায়। সব নার্সদের মুখে শুনলাম সে খুব ডেঞ্জারাস কিন্তু আমি দূর থেকে যতটুকু পর্যালোচনা করে দেখেছি আমার তো ওকে একদমই ডেঞ্জারাস বলে মনে হচ্ছেনা, খুবই শান্ত একটা মানুষ । হয়তো কোথাও কোন অন্যায় হচ্ছে ওর সাথে।”

– “আপনি এখানে নতুন এসেছেন তাই কিছু জানেন না। এই ছেলেটা সত্যিই খুব ডেঞ্জারাস । ওর সাথে আরো যে দুজন রোগীকে রেখেছিলাম তারা দুজনই এখন আর কথা বলতে পারেনা । আর ওর জন্য যে নার্স রাখা হয়েছিলো তাকে তো মেরেই ফেলেছে গলা টিপে।”

– “বলেন কি। খুবই সাংঘাতিক ব্যাপার। এতো মানসিক রোগী নয়, একজন আসামী।”

– “আসামীই তো ফাঁশির আসামী। ওকে আর এখানে রাখা যাবেনা ভাবছি কিছুদিনের মধ্যে জেলে হস্তান্তর করে দিবো।”

– “কিন্তু স্যার এটা তো অন্যায় হবে ওকে সুস্থ না করে জেলে দিলে।”

– “ওকে চিকিৎসা করার মতো সাহস কোন ডক্টর দেখাবেনা। এছাড়া নার্সরা ওর জন্য সব সময় আতঙ্কে থাকে। আমি আর এ ঝামেলাটাকে এখানে রাখতে চাইনা। আর আপনি নিজেও তো আজ বললেন, ওকে দেখতে তো একদম শান্ত মনে হয় ।”

” তো সুবেদার জেলার কেউ’ই হয়তো বুঝবেন না ও সুস্থ কি অসুস্থ। তাছাড়া এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েকদিন পড়েই ওর ফাঁসি কার্যকর হয়ে যাওয়ার কথা।”

– “স্যার আমার ব্যাপারটা ভালো লাগছেনা। আমি একবার ওর সাথে কথা বলতে চাই।”
– “মাথা খারাপ আপনার?”

– “প্লিজ স্যার। আমি শুধু জানতে চাই তার সমস্যা টা কি। আর আমার কোনো সমস্যা তো হবেনা ওর হাত পা তো বাঁধাই আছে।”

– “আচ্ছা এতো করে যখন বললেন, গিয়ে দেখুন, তবে কোন মতেই ওর হাত পায়ের বাঁধন খুলবেন না।”
” বাই দ্যা ওয়ে আপনি খুব সুন্দর ফটোগ্রাফি করেন তাই না?”
– “জ্বি স্যার এটা আমার ভালোবাসা। বাবা মা প্রেশার না দিলে হয়তো ফটোগ্রাফিকেই প্রফেশন করে নিতাম।”
– “হুম বেশ,তবে জেনে রাখুন একজন স্বনামধন্য ফটোগ্রাফারকে হত্যা করার অপরাধেই কিন্তু সে ফাঁসির আসামি।”
– “আচ্ছা স্যার আমি তাহলে যাই। কথা বলে আসি ওর সাথে।”
– “আরে কোথায় ছুটলেন থামুন। আজ অনেক রাত হয়েছে, কাল সকালে গিয়ে কথা বলেন।”
– “স্যার কিউরিসিটি নিয়ে আমার ঘুম হয়না।”
“এই ছেলেটার রহস্য আমার জানতেই হবে।”

“তারপর ডাক্তার আসিফ চলে গেলেন! ফাঁশির আসামী রোগি নম্বর ত্রিপল ফাইভের রুমে।”

” রোগির রুমে ঢুকতেই আসিফ দেখলেন একজন নার্স ও দুইজন সহযোগী তাকে কে জোর করে ঘুমের ঔষধ খাওয়াচ্ছেন। প্রতি বছরের এই দিনে তাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে সারাদিন অচেতন করে রাখা হয়।”

– “প্লিজ নার্স আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিও না আর মাত্র দুই ঘন্টা আছে। আমি ওকে শুধু উইশ করব, তুমি আমাকে একটা কেক আর মোম এনে দাওনা, প্লিজ। তোমার যা চাই আমি তোমাকে তাই দিবো।”

“এ সকল দৃশ্য দেখতে দেখতে হঠাৎ আসিফের চোখ পড়লো রোগি নম্বর ত্রিপল ফাইভের পাশে রাখা একটি ধুলোপড়া ডায়েরির দিকে। আসিফ ডায়েরিটা একটু ঝেড়ে নিয়ে, খুলে দেখতে লাগলো।”

“তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে ডায়েরি টায় শুধু দুটি পেজ অক্ষত অবস্থায় আছে। একদম প্রথমের পেজ টা আর শেষের পেজ টা আর বাকী পেজ গুলো কোনটা হয় ছেড়া না হয় দাগ কেটে নষ্ট করে দেওয়া আর না হয় কালো কালি দিয়ে সব ঢেকে দেওয়া যাতে কেউ তা পড়তে না পারে।”

“আসিফ প্রথম পেজটা পড়া শুরু করে দিলো! ”

“নূরী আমি কখনোই ভাবিনি এতো সহজে তুমি আমার ভালবাসা গ্রহণ করে নিবে। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে আমি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বাইরে গিয়ে তোমাকে ভালবাসি বলার সাহস পাইনি। তবে আজ কিভাবে যে এতো সাহস পেয়ে গেলাম তা নিজের কাছে বোধগম্য নয়। আর তুমিও যে আমাকে এতো ভালবাসো কখনো বুঝতেই পারলাম না। নূরী এতো দিন কিভাবে লুকিয়ে রেখেছিলে এ কথা গুলো। আমি আজ মনের কথা গুলো না বললে তুমি হয়তো কখনই বলতে না,তোমার মনেও যে শুধু আমিই আছি ।”

“আজ থেকে ১১মাস ২৯ দিন পর তোমার জন্ম দিন তাই তোমার আমার সকল অতীত গল্প আর এই ১১মাস ২৯ দিনের সকল গল্প এবং তোমাকে নিয়ে আমার লেখা সব কবিতা গুলো এই ডায়েরিতে লিখে রাখবো। তোমার জন্ম দিনের দিন ডায়েরিটা তোমাকে দিয়ে দিব নূরী।”

“অনেক কথাই আমি মুখে বলতে পারিনা তবে লিখে প্রকাশ করতে পারি। হয়তো ডায়েরি টা পড়ে তুমি বুঝতে পারবে আমি তোমায় কতোটা ভালবাসি।”

“এর পর পুরো ডায়েরিটা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে কাটা ছেড়া করে ও কালো কালি দিয়ে। শুধু শেষের পৃষ্ঠা টা অক্ষত আছে। আসিফ সেটা পড়া শুরু করলো।”

“আজ ২২শে জুন ২০১১”

“নূরী আর মাত্র ১০মিনিট পর তোমার জন্মদিন । কাল তোমার হাতে ডায়েরিটা দিতে পেরে যে আমার কতো ভালো লাগবে তা বুঝাতে পারবোনা । তোমায় অনেক বেশি ভালবাসি নূরী। তোমার জন্ম দিনের অনেক শুভেচ্ছা। এভাবে আমি আরো হাজার খানেক ডায়েরি লিখতে চাই তোমার নামে। আরেকটা কথা বলার ছিলো তোমাকে, তুমিতো জানো আমার অনেক রাগ, এটা আমার খুব বাজে একটা গুন। অনেক সময় না চাইতেও রাগ করে তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলি। আমাকে ক্ষমা করে দিও নূরী, আর শুনো কখনো ছেড়ে যেওনা আমাকে ।তোমাকে ছাড়া এ জীবন আমি কল্পনা করতে পারিনা। তুমি আমার জীবনে সৃষ্টিকর্তার দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।”

“আচ্ছা অনেক লিখে ফেলেছি হাতে একদমই সময় নেই। কাল তোমার জন্য অনেক প্লান করেছি।”

” এখন দেশের সবচেয়ে বড় ফটোগ্রাফার রুদ্র কে কল দিবো, আমাদের আগামী দিনটাকে ফ্রেম বন্দি করে রাখার জন্য। তোমায় অনেক ভালবাসি নূরী।

ইতি,
“তোমার কান্না বাবু অন্তিক।”

“অন্তিক নাম টা শুনে হঠাৎ কেন যেন মনে হলো কোথাও এই নাম টা শুনেছে আসিফ। আর ডায়েরিটা পড়তে পড়তে আসিফ একটু অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছে ।
তার মাথায় এখন শুধু অন্তিক আর নূরী ঘুরছে, আসলে ঘটনা টা কি, কি এমন হলো যে অন্তিক আজ একজন খুনি?

“হঠাৎ আসিফের চোখ পড়লো ফ্লোরে পড়ে থাকা এক খন্ড পত্রিকার কাগজের উপরে। ঠিক তখনি আসিফের মনে পড়লো অন্তিকের নাম, সে পত্রিকাতেই পড়েছে।”

“বুদ্ধি করে আসিফ ‘অন্তিক নূরী’ লিখে গুগলে সার্চ দিলো । আর সেখান থেকে সে জানতে পাড়ল অন্তিক বিখ্যাত একজন কবি ও কথা সাহিত্যিক যার গল্প ও কবিতার সব জায়গাতেই শুধু নূরী আর নূরী।”
“আর এর মধ্যে একটা অনলাইন পোর্টাল তার চোখে এলো।”

“২৪ শে জুন ২০১১”
” কথা সাহিত্যিক অন্তিকের “নূরী” আর অন্তকের নেই। অন্তিকের লেখা সকল কবিতা ও গল্প কে মিথ্যে প্রমাণ করে এখন সে ফটোগ্রাফার রুদ্রের সাথে লাপাতা। কেউ তাদের কোনো খোঁজ পাচ্ছেনা। এদিকে নূরী অন্য কারো সাথে লাপাতা হয়ে যাবে তা মেনে নিতে পারছেনা অন্তিক,”
“আরেক টা নিউজ পর্টাল পড়লো আসিফ।”

“২৪শে জুন ২০১৬”

“কথা সাহিত্যিক অন্তিকের হাতে ফটোগ্রাফার প্রিয়ং খুন। পুলিশ মনে করছেন মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে রুদ্র ভেবে প্রিয়ং কে খুন করেছেন সে।”

“এসব নিউজ পড়ে অন্তিক সম্পর্কে কিছুটা ধারণা আসিফের হলেও রহস্যটা থেকেই গেলো। সেটা জানতেই হবে আসিফের।”

আসিফ ভাবতে লাগলো, অন্তিকের বিভিন্ন কবিতা থেকে বুঝা যায় নূরী খুব ভদ্র একটা মেয়ে আর তাছাড়া রুদ্রর সাথে নূরীর আগে কখনো দেখা হয়নি কিন্তু সে কিভাবে একদিনের পরিচয়েই একজনেএ সাথে লাপাতা হয়ে যাবে। কোথাও কোন খটকা আছে। অন্তিকের থেকে জানতেই হবে আসল কাহিনীটা।

“নার্স তোমরা যাও আমি ওকে দেখছি।”
– “স্যার ও খুবই বিপদজনক, আপনি কি করতে চাচ্ছেন?”
– “তোমাদের যা বলা হয়েছে তাই করো।”
– “স্যার প্লিজ যাই করেন ওর বাঁধন খুলতে যাবেন না ভুলেও।”
– “হুম! ”

“তারপর আসিফ অন্তিকের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। হয়তো ভাবছে এমন একজন লেখক আর শান্তশিষ্ট মানুষের আজ এ কি দশা। সবই ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। আসিফ একটা চেয়ারে বসে ছিলো সামনেই একটা টেবিল ছিলো। আসিফ চেয়ারটা নিয়ে কিছুটা এগিয়ে এসে বসলো । অন্তিকের কাছে তারপর তাকে জিজ্ঞেস করলো”

– “এটা তোমার ডাইরি?”
– “জ্বী! ”
– “ডায়েরির এমন অবস্থা কেনো করেছো?”
– “আমি করিনি!! ”
– “তবে কে করেছে?”
– “নূরী!!”
– “নূরী? নূরীকে ডায়েরি টা দিয়েছিলে তার জন্মদিনে?”
– “নাহ।”
– “তাহলে ও কি করে ডায়েরিটা নষ্ট করলো? নূরী কি ফিরে এসেছিলো?”
– “হ্যাঁ, ফিরে আসে মাঝে মাঝে?”
– “মানে? ও কি এখনো ওই ফটোগ্রাফারের সাথেই আছে?”
– “হাহা জানিনা আমি কিচ্ছু, জানিনা!!”

– “জানিনা বললে হবেনা, তোমার সব খুলে বলতেই হবে, আমি তোমাকে সাহায্য করার জন্য এসেছি।”
– “সাহায্য করবে? তবে একটা কেক নিয়ে আসো না, আর সাথে কিছু মোম আর ছুঁড়ি । আজ,আজ ২২শে জুন কিছুক্ষণ পর আমার নূরীর ৩০তম জন্মবার্ষিকী । ওকে শুধু একটা বার উইশ করতে চাই।”

– “হুম ঠিক আছে আমি কাউকে বলে আনিয়ে দিবো । তবে তোমারও আমাকে সাহায্য করতে হবে, ডায়েরীর শুরু থেকে শেষ এবং এরপর থেকে ঘটে যাওয়া সব কিছু আমাকে বলবে। তারপর তোমাকে কেক কাঁটতে দেওয়া হবে।”
“তারপর অন্তিক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কি যেনো হিসেব করে নিলো। তারপর আসিফ কে বললো” –

“ঠিক ১২টায় নূরী আসবে এর আগেই তোমাকে সব গল্প বলতে হবে। আর মাত্র ৫৮ মিনিট আছে এর মধ্যে সব কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

“তুমি যেকোনো একটা বাছাই করো ।”
” হয়তো ডায়েরীতে লেখা সব গল্প এবং এর আগের সব গল্প আমি তোমায় বলবো না হয় ডায়েরী লেখা শেষে যা ঘটেছে সে গল্প আমি তোমায় বলবো। বলো কোনটা শুনবে?? ”

“ডায়েরিতে লেখা গল্প গুলো জানার খুব ইচ্ছে ছিলো তবে ওগুলো হয়তো সচারচর যা দেখে আসছি দুজন প্রেমিক প্রেমিকার মাঝে কি কি ঘটছে কি হলো ঝগড়া ঝাটি দেখা সাক্ষাত করা এমন কিছুই থাকবে। আমার কাছে এর পরের অংশটুকু বেশি রহস্যময় লাগছে এবং খুব জানতে ইচ্ছে করছে, আসলে নূরী কেনো এবং কিভাবে তোমাকে ছেড়ে, আরেকজনের কাছে চলে গেলো, সে এখন কোথায় এবং কেনোই বা সে ডায়েরিটা নষ্ট কিরে দিলো। তাই তুমি আমাকে পরের গল্প গুলোই বলো।”

– “ডাক্তার তুমি কি শিওর? পরের গল্প গুলো শুনে হয়তো তুমি ঠিক থাকতে পারবেনা। বলে দিলাম।”
– “হাহা। মানুষিক চিকিৎসক আমি, আর আমি সামান্য গল্প শুনে ঠিক থাকতে পারবোনা?”

– “আচ্ছা! তবে জেনে রাখো তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত তুমি নিয়ে নিয়েছো। There is no going Back after I start telling those stories and You can’t escape from here now!”

– “হাহা। I can’t escape মানে? তুমি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো? নিজের হাত পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখো তোমাকে বেঁধে রাখা হয়েছে আমাকে নয়। এতো কথা না বাড়িয়ে সোজাসুজি গল্প টা শুরু করে দাও।”
– “কিন্তু আমার কেক,মোম ছুঁড়ি? ওরা কোথায়?”
– “এইতো এখনি চলে আসবে দারোয়ান কে কল করে বলে দিচ্ছি।”
“আসিফ দারোয়ান কে কল করে একটা কেক কিছু মোম আর ছুঁড়ি নিয়ে আসতে বললো।”
“অন্তিক গল্প বলা শুরু করলো..

“রাত ১১:৫২”
“২২শে জুন ২০১৬”

– “হ্যালো!”
– ” হ্যালো.! আমি কি ফটোগ্রাফার প্রিয়ং এর সাথে কথা বলছি?”
– “জ্বী বলুন। আমি প্রিয়ং বলছি।”

– “কাল আমার নূরীর জন্মদিন, কাল যদি আপনি ফ্রি থাকেন তাহলে সারাদিন আমাদের স্থির চিত্র তুলে দিতে হবে। সময় হবে আপনার?”

– “আসলে আমি’তো খুব ব্যস্ত থাকি বড় সড় কাজ ছাড়া আমি কোথাও হাত দেইনা। ”

– “আপনি চিন্তা করবেন না কাজটা অতো বড় না হলেও আপনি যথেষ্ট রেমুনারেশন পাবেন। আপনার যত টাকা লাগে নিবেন। তবে সারাদিন আমাদের সাথে থাকতে হবে। আর বেশি গ্যাজেটের দরকার নেই শুধু ক্যামেরা টা আনলেই হবে।

” আপনার ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার দিন আমি আপাতত ১০হাজার টাকা ট্রান্সফার করে দিচ্ছি।”
– “জ্বী আচ্ছা! কিন্তু কোথায় আসতে হবে?”

– “সকাল ৮টায় রমনা পার্কে চলে আসবেন সেখান থেকে আমরা বিভিন্ন জায়গায় যাবো।”
“আসিফ তার মোবাইল টা একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখল। হয়তো সে ভিডিও করছে সব কিছু।”
” আর হঠাৎ অন্তিক কে থামিয়ে দিয়ে সে বলতে লাগলো।”

“এটা তো তুমি ২০১৬ সালের গল্প বলছো, আমি নূরী আর রুদ্রের গল্প শুনতে চাচ্ছি ২০১১ তে কি হয়েছে সেটা বলো।”
– “আপনি বেশিই কিউরিয়াস! আপনি মানুষিক চিকিৎসক হলেন কি করে? আপনি একজন মহান কথা সাহিত্যিক এর থেকে তার জীবনের গল্প শুনছেন । সে সাস্পেন্স ছাড়াই আপনাকে ধিম ধাম করে গল্প শুনিয়ে যাবে নাকি? ধৈর্য রাখুন। সবই বলবো।”

– “আচ্ছা বলুন আপনি তারপর কি হলো।”
“এমন সময় দারোয়ান কেক, মোম ও ছুঁড়ি নিয়ে হাজির। ”
– “স্যার এইগুলা কই রাখুম?”
“আসিফ বললো – টেবিলে রাখো।”

“টেবিলে কেক মোম ও ছুঁড়ি রেখে দারোয়ান চলে গেলো ।যাওয়ার পর, অন্তিক আসিফ কে বললো ১২টা বাজতে আর ৩৬মিনিট বাকি। আমাকে তাড়াতাড়ি সব বলতে হবে আপনি আর কোনো প্রশ্ন করবেন না মাঝে দিয়ে।”

– “হুম বলুন।”

“তারপর।

“২৩শে জুন ২০১৬ ।”
“রমনা পার্ক”

“সকাল সাড়ে ৮টা

– “দুঃখীত দেরি হয়ে গেলো আসতে। ক্যামেরায় চার্জ ছিলোনা খেয়াল করিনি। ফুল চার্জ দিয়ে তবেই ছুঁটে এলাম।
– “আচ্ছা সমস্যা নেই কাজ শুরু করে দিন।
– “জ্বী ঠিক আছে কিন্তু ভাবী কোথায়?
– “ভাবী কোথায় মানে?
– “মানে আপনার গার্লফ্রেন্ড নূরী ভাবী কোথায়?
– “কোথায় আবার এই যে আমার সাথেই’তো বসে আছে।
– “কি বলছেন। মাথা ঠিক আছে আপনার? আমার সাথে প্রাংক করছেন আপনি?
– “আজিব’তো আপনি আপনার কাজ করুন। আমাদের ছবি তুলুন।
– “সরি আমি কাজটা করতে পারবোনা। আমাকে ক্ষমা করুন।
– “কিসের ক্ষমা? টাকা কি কম দিয়েছি আপনাকে!?

“তারপর অনেক অনুনয় বিনয় করার পর প্রিয়ং রাজি হয়ে গেলো। রাজি হয়ে গেলো বলতে এছাড়া আর কোন উপায় ছিলোনা তার।

“প্রিয়ং অন্তিকের একের পর এক পাগলামির ছবি তুলেই যাচ্ছে। আর মনে মনে ভাবছে – ইনি হয়তো সেই লেভেলের অভিনেতা ছিলেন কখনো, তা না হলে এতো পারফেক্টলি পোজ কিভাবে দিচ্ছেন? সত্য সত্যই মনে হচ্ছে কেও তার পাশে আছে, কারো সাথে সে কথা বলছে গান গাইছে, কাওকে জড়িয়ে ধরছে, ফুল দিয়ে হাটু গেড়ে প্রপোজ করছে, কারো গায়ে জল ছিটিয়ে দিচ্ছে। কেমন যেন একটা অদ্ভুত ভেলকিবাজি ।

” আর এসব দেখে প্রিয়ং এর খুব মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। কেন যেন তার মনে হচ্ছে অন্তিকের সাথে সাথে সেও পাগল হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে সেও কারো অস্তিত্ব টের পাচ্ছে হয়তো। এসব ঘটনা নিতে পারছেনা তার ব্রেইন বা ক্যামেরা কোনটাই। তাই সন্ধ্যা হওয়ার আগেই চলে যেতে চাইলেন প্রিয়ং। কিন্তু অন্তিক তাকে যেতে দিলো না।

– “ভাই কেক টা কাটি। এটাই শেষ ছবি তারপর তুমি চলে যেও।
– “আপনি মিয়া কেমন যেন। আপনাকে আমার মোটেও সুবিধার মনে হয়না।
– “হুম আসলই। আমি সুবিধার না। তাইতো নূরী কে হারালাম।
– “ধুর যত্তসব কথা বার্তা আপনার। আমার মাথা খাবেন না প্লিজ।

” একটু আগে বললেন নূরী আপনার সাথে আবার বলেন তাকে হারিয়ে ফেলেছেন। আমি ভাই যেতে পারবোনা। প্লিজ আমাকে মুক্তি দেন। আমি আপনার সব টাকা ফেরত দিয়ে দিব।

– “নূরী ওর বাসায় গেছে ড্রেস চ্যাঞ্জ করতে।

– “বাসায় চলে গেলো? তো আপনি কেক নিয়ে ঘুরছেন কেনো এখন? তার বাসায় গিয়ে কাটবেন নাকি?
– “নাহ নাহ চলো রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবীর পাশে আমার এক বাংলো আছে সেখানে একটা বাগান ও আছে আর পুরো বাগানটা আজ নূরীর জন্য সাজিয়ে রেখেছি। ওখানে একটু পরই ও আসবে।

“প্রিয়ং অন্তিকের বাংলো তে ঢুকে বেশ অবাক হলো অসাধারণ ভাবে সাজিয়েছে অন্তিক পুরো বাগানটাকে। প্রতিটা গাছের উপর লাইটিং করা এবং পাতায় পাতায় অন্তিক নূরী দুজনের ছবি বেঁধে রাখা।

“প্রিয়ং অবাক হয়ে বলে ফেললো “অসাধারণ! আপনার তো জবাব নেই। দারুণ ভাবে সাজিয়েছেন। একজন পাগল মানুষ হলেও আপনার মাঝে শৈল্পিক একটা ব্যাপার আছে।” এই বলেই প্রিয়ং একটা গাছের নিচে দাঁড়ালো যে গাছটার নিচে শত শত গোলাপ পড়েছিলো। আর তখন প্রিয়ং এর দিকে চোখ পড়তেই হঠাৎ অন্তিক চিৎকার দিয়ে বলে

উঠলো কু*তার বাচ্চা এইখান থেকে সর না হয় এখনই মাইরা ফেলমু তোরে। আমার নূরী শুয়ে আছে এখানে, জানিস না!?

– ‘আকষ্মিক অন্তিকের এমন ব্যবহার দেখে, প্রিয়ং খুব চমকে গেলো। সে তার চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে পড়লো সে, হতাশা আর কাঁদোকাঁদো স্বরে বলতে লাগলো এ কেমন পরীক্ষা নিচ্ছেন ভাই। আমি কি দোষ করেছি বলেন? আপনার নূরী একবার হারিয়ে যায়, একবার জামা পরিবর্তন করতে যায় আবার গাছের নিচে শুয়ে থাকে। আপনি কি আমাকে পাগল বানিয়ে তবে মুক্তি দেবেন? বলুন ভাই বলুন,” কেঁদে ফেললো প্রিয়ং।

“অন্তিক তখন প্রিয়ং এর কান্না দেখে বললো ভাই তুমি কেঁদো না আমি সব খুলে বলছি তোমাকে। কিন্তু প্রমিজ করো নূরী কে তুমি এটা বলবেনা!

“নূরীর কথা শুনে এবার আর প্রিয়ং এর মেজাজ খারাপ হলোনা। কারণ এখন হয়তো সে নূরীর আসল ঘটনা জানতে পারবে।”

– “এই যে গাছ টা দেখছো না? এইখানে আমি আমার নূরীকে ছুঁড়ি মেরেছি। সে এখানেই শুয়ে আছে।
– “মানে!! কি বলেন..!! কেন ছুঁড়ি মেরেছিলেন বলুন!
– “আজ থেকে ৫বছর আগের কথা! সেদিন নূরীর জন্মদিন ছিলো আর আমি পুরো বাড়িটা ওর জন্য সাঁজিয়েছিলাম।

“ফটোগ্রাফার রুদ্র আমাদের ছবি তুলছিলো । কিন্তু রুদ্র কে আমার মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছিলো না। ছবি তোলার সময় কিভাবে যেন চেয়ে থাকতো নুরীর দিকে। আর হঠাৎ হঠাৎ করে গান গেয়ে উঠছিলো সে। আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছিলো ওর উপর কিন্তু সেদিন খুব স্পেশাল একটা দিন ছিলো আমার জন্য তাই ওকে কিছু বলিনি ।

“নূরীকে বলেছিলাম রুদ্র কথা বলতে চাইলে নূরী যেন কোন কথা না বলে। কিন্তু নূরীর নাকি রুদ্রের গানের গলা খুব ভাল লেগেছে। আর সে কি প্রশংসা নূরীর, রুদ্রের ছবি তোলার কারুকাজ নিয়ে। আমার এসব একদমই ভাল লাগছিলোনা।

“তারপর কেক কাটার সময় এলে, খেয়াল করলাম কেক কাটার ছুঁড়িটাই আনা হয়নি দোকান থেকে। তাই আমি রুদ্র কে বললাম কেকের সাথে নূরীর কিছু ছবি তুলে দিতে, আমি বাসা থেকে নরমাল একটা ছুঁড়ি নিয়ে আসি।”

“এই বলে আমি চলে গেলাম। কিন্তু ছুঁড়ি নিয়ে ফিরে এসে যা দেখলাম তা দেখার মতো কোন সিচুয়েশন আমার ছিলোনা। রক্ত গরম হয়ে উঠেছিল নিজেকে সামলাতে পারলাম না। এমনিতেও রাগ চরমে উঠলে জ্ঞান শূন্য হয়ে যাই আমি।”

– “আচ্ছা তারপর বলুন, কি দেখলেন এসে?”
– “দেখলাম নূরী আর রুদ্র ঘনিষ্ট অবস্থায়। রুদ্রের হাত নূরীর চুলে। আমি আর সহ্য করতে পারিনি। হাতে থাকা ছুঁড়িটা ছুঁড়ে মারলাম রুদ্রের হাতে।”

– “তারপর?”
-” তারপর চোখের সামনে আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমার ভালবাসা আমার কবিতা আমার গল্প আমার সবকিছু।”
– “মানে? রুদ্রর হাত কেটে গেলো?”
– “না। রুদ্রর হাত কাটেনি সেদিন কেটেছিলো আমার কপাল।”

অন্তিক কাঁদতে কাঁদতে বললো “ছুঁড়ি রুদ্রের হাতে না লেগে নূরীর ঘাড়ে গিয়ে বিঁধে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই নূরী মাটিতে পড়ে যায়। তার পড়নের সাদা গাউন টা লাল বর্ণের হয়ে যায়। আর পাশ থেকে রুদ্র বলছিলো, ‘খুন খুন খুন।'”
“রুদ্রের চেঁচামেচি সে সময়ে বিষের মতো লাগছিলো, তাই নূরীর ঘার থেকে ছুঁড়ি টান দিয়ে রুদ্র কেও সেখানে মেরে ফেলালাম ।” “তারপর খুব ভয় পেয়ে যাই কি করব বুঝতে পারছিলামনা, ভয়ে তাদের দুজন কে এই যে এই গাছের নিচে পুতে রাখি ।”

“এ গল্প শুনে প্রিয়ং এর গা শিউরে উঠলো।

তাকে সেই অবস্থা থেকে আরো কঠিন অবস্থা তে নিয়ে গেলো অন্তিকের হঠাৎ বদলে যাওয়া চেহারা। হঠাৎ অন্তিক খুব অস্থির হয়ে গেলো, যেন সে চোখের সামনে কোন ভূত দেখেছে।”

– “আপনি এখনই এখান থেকে চলেযান। আমার নূরী এসেছে।”

– “কোথায় নূরী। নূরী কে তো আপনি মেরে ফেলেছেন। ও কিভাবে আসবে। আপনি শান্ত হোন। আসলে রাগের মাথায় আপনি ভুলটা করে ফেলেছেন।”

– “আরে চুপ থাক। জ্ঞান কম দে। তুই যদি জানে বাঁচতে চাস তাহলে মুখ বন্ধ করে এখান থেকে এখনই চলে যা। আর নূরী কিছু জিজ্ঞেস করলে কোনো কথা বলবি না। যা পালা তুই। ”

– “অন্তিক আপনি শান্ত হোন প্লিজ! আমি বুঝতে পারছি আপনার কষ্ট টা। আসলে জীবন মৃত্যু সব ওনার হাতে। ”
– হ্যাঁ ঠিক বলেছিস আর তোর মৃত্যু আমার হাতে। তোকে বাঁচিয়ে রাখা যাবেনা তুই সব বলে দিবি।” “হ্যাঁ তুই সব বলে দিবি।”

– “আরে কি বলে দেবো আর কাকে বলে দিব? ”

– “তুই নূরীকে বলে দিবি আমি ওকে খুন করেছি। ও এখনো জানেনা কে ওকে খুন করেছে। এই বলেই ছুঁড়ি দিয়ে প্রিয়ংকে মেরে ফেলতে যায় অন্তিক কিন্তু সে প্রিয়ং এর ধাক্কা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় । কিন্তু হুস ফিরে সে দেখে প্রিয়ং এর ঘাড়ে ঠিকই সে ছুঁড়ি বসিয়ে দিতে পেরেছিলো। আর প্রিয়ং এর মৃত দেহের পাশ দিয়ে হেঁটে আসছে নূরীর আত্মা।”

– “অন্তিক কি হয়েছে তোমার। এই ছেলে কে? কিভাবে এমন হলো?”

– “নূরী এই ছেলেটা তোমার নামে বাজে কথা বলেছে, ও বলে তুমি নাকি রুদ্রের সাথে পালিয়ে গেছো, কত বড় মিথ্যাবাদী তোমার আমার মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি করতে এসেছিলো তাই ওকে মেরে ফেলেছি। চলো আমরা কেক কাটি”

“এইছিলো ডায়েরির পরের গল্প – অন্তিকের মুখে শুনছিলো আসিফ।”

– “সরি অন্তিক আমি কোনো ভাবেই তোমার এই বানানো কল্প কাহিনী বিশ্বাস করতে পারছি না। তুমি শুধু শুধুই আমার সময় নষ্ট করলে। তবে এটা বুঝতে পাড়লাম নূরী আর রুদ্র পালিয়ে যায়নি, তুমি ওদের মেরে ফেলেছো বাকিটা বানিয়ে বানিয়ে বললে। আসলে তুমি একজন দারুণ লেখক বলতেই হবে। নিজের প্রতিভাটা কাজে লাগাতে পারলেনা।”

যাইহোক তোমাকে পুলিশ কিভাবে ধরলো।?”

– “দেখো ডক্তার আর ৩মিনিট আছে আমার নূরী চলে আসবে ছুঁড়ি আর কেকটা আমার হাতে দিয়ে তুমি এখনি এখান থেকে চলে যাও।”

– “হা! হা! আমাকে প্রিয়ং এর গল্প শুনিয়ে ভেবেছো ভয় দেখাবে আর আমি ভয়ে চলে যাবো? বলো কিভাবে পুলিশ ধরলো তোমায়।”

-” তোমারও সময় চলে এসেছে ডাক্তার। তবে শুনো আমাকে পাগল ভেবে প্রিয়ং হয়তো আগের থেকেই পুলিশে খবর দিয়েছিলো। প্রিয়ং এর লাশ সআম্নে রেখে আমি আর নূরী কেক কাটছিলাম আর ঠিক সে সময় পুলিশ ঢুকে পড়ে আমার বাংলোতে। সেদিন থেকে আমার ঠিকানা হয় জেইলে তারপর তোমাদের এই তামাশা খানায়। ”

– “তাহলে তুমি নার্স সহ মোট চারজন কে খুন করেছো?”

– “হাহা! না! না। প্রিয়ং সহ প্রতিবছর আমি একটি করে ৫জন ফোটগ্রাফার কে খুন করেছি, সব মিলিয়ে মোট ৯টা খুন করেছি আর আজ তোমাকে খুন করে ১০টা পূরণ করবো। ”

-” আমাকে কেন খুন করবে? ”

– “তুই আমার নূরী কে সব বলে দিবি। তুই চলে যা। তুই আমার নূরী কে আমার থেকে কেড়ে নিবি, চলে যা না হয় আমি তোকে মেরে ফেলবো। তোকে খুন করে আমি কেক কাটবো”

– “হাহা। তুমি অভিনিয় শিল্পি হলে দারুণ অভিনয় করতে পারতে অন্তিক। তোমার হাত পা বাধাঁ। আর তোমার সব কথা আমি আমার মোবাইলে ভিডিও করে রাখছি। ”

আসিফের একথা শুনে খুব চটে গেল অন্তিক। সে খুব চেষ্টা করছে সব বাঁধন ছিঁড়ে ফেলতে কিন্তু পারছেনা। আর চিৎকার করে বলছে- “নূরী তুমি এসেছো! নূরী! চলে যাও নূরী তুমি চলে যাও প্লিজ, এই লোকটা ভালোনা তোমার ক্ষতি

করবে”- এসব বলতে বলতে ঘুমের ঘোরে বিছানায় পড়ে গেলো অন্তিক।
এতক্ষণে হয়তো তার উপর ঘুমের ঔষধ কাজ করেছে।

আসিফ নিজের কপালের ঘাম মুছতে মুছতে অন্তিকের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
আর ঠিক সে সময় পুরো রুমটা থমকে গেল।

হঠাৎ লাইট জ্বলে উঠার বিকট শব্দ আর ঝলসানো আলোর সাথে সাথে পুরো ঘরটা আধার আচ্ছন্ন হয়ে গেলো।
আসিফ শুনতে পাড়লো অন্তিক বিড়বিড় করে কাঁদছে তবে মেয়েলি গলার স্বরে।

আসিফ বললো- “অন্তিক অন্তিক কি হলো এমন করছো কেন?”

অন্তিকের গায়ে হাত দিয়ে দু একটা ঝাঁকুনি দিল আসিফ আর ঠিক সে সময় আসিফের হাত শক্ত করে ধরে ফেললো অন্তিক!

– ” অন্তিক কে বাঁচান ভাইয়া প্লিজ অন্তিকের কোন ক্ষতি করবেন না”
– ” অন্তিক তুমি মেয়েলি গলায়ও কথা বলতে পারো বাহ দারুণ প্রতিভা”
– “আমি নূরী”
– “নূরী!!”
– “হুম ”

– হা! হা! দারুণ তো! নতুন কি গল্প বলবে শুনি? এতক্ষণ যা বলছিলে তা কি যথেষ্ট ছিলনা? তা কি সত্য ছিলনা?

-” হুম সত্য তবে কিছুটা মিথ্যে। ভাইয়া সেদিন রুদ্র ছবি তোলার জন্য আমার চুলে হাত দিয়েছিলো। কিন্তু অন্তিক ওভার পসেসিভ ও আমার উপর আস্থা রাখতে পারেনি। টেম্পার হারিয়ে আমাকে ভুলে মেরে ফেললো। ওকে কখনো বুঝতে দেইনি যে আমি জানি, ও আমাকে খুন করেছে। ”

“সেদিন চাইলেই অন্তিক আমাকে বাঁচাতে পারতো আমি তখনও মরিনি কিন্তু ও এতোই বোকা যে, আমাকে জীবিত কবর দিয়ে দেয় রুদ্রের সাথে, আর লোক মুখে ছড়িয়ে দেয় আমি রুদ্রের সাথে লাপাতা হয়ে গিয়েছি।”

-” তো তুমি ওকে কেন বাঁচাতে চাইছো?”

– “কারণ আমি চাইনা যার লেখায় আমি এখনো হাজারো মানুষের মনে বেঁচে আছি, সেই মানুষটাকে কেউ খারাপ ভাবুক।”

” আমি চাইনা কেউ জানুক আমি একটা ভুল মানুষকে ভালবেসেছিলাম, যে আমার থেকে নিজের ক্রোধ কে বেশি ভালবেসেছিল।”

– ” আচ্ছা আমার কি করতে হবে এখন?”

– “আপনি দয়া করে কাওকে ভিডিওটা দেখাবেন না আর কাওকে বলবেন না যে ও আমায় খুন করেছে।”
– “যদি বলি?”

– “আপনি ঘটনাটা কাওকে বলার চেষ্টা করার সুযোগ একবারই পাবেন। কিন্তু তারপর যা ঘটবে তা দেখার বা বুঝার মতো সময় আর আপনার থাকবেনা।” একটু চেক করে দেখননা! ভিডিও হচ্ছে কিনা !!!।”

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত