তিতির কুকুর

তিতির কুকুর

তিতি স্কুলে যায়। কাঁটাবনের বাস্তায় দিয়ে। যাওয়ার পথে দেখে খাঁচার ভেতর বন্দি পশুপাখি। পশুপাখিগুলো বিভিন্ন রকমের শব্দ করে। পাখিগুলোর প্রতি তিতির খুব মায়া হয়। খাঁচার ভেতর কুকুর ঘেউ ঘেউ করে। তিতি ভাবে, এই কুকুরগুলো তো সঠিক সময় খাবার পাচ্ছে। পাচ্ছে যত্ন। কিন্তু রাস্তায় যে কুকুরগুলো ঘুরে বেড়ায়, তাদের কথা কি কেউ ভাবে। মনে হয় ভাবে না। রাস্তার কুকুরগুলো ক্ষুধার জন্য কত জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। এক এলাকার কুকুর আরেক এলাকায় গেলে ঘেউ ঘেউ করে তাড়িয়ে দেয় অন্য কুকুর।

তিতি মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছে। রাস্তায় একটা শুয়ে থাকা কুকুর দেখে তিতি বলল, ‘মা, আমার একটা ইচ্ছে আছে।’

‘কী ইচ্ছা তোমার?’
‘আমি কুকুর পুষব।’
‘কুকুর কেউ পোষে? ফ্ল্যাটের মানুষজন কী বলবে!’
‘যে যা বলুক, আমি কুকুর পুষব।’
‘আচ্ছা, তোমাকে একটা কুকুর কিনে দেব।’
‘না মা, আমি কেনা কুকুর পুষব না।’
‘তাহলে কোন কুকুর পুষবে।’
‘রাস্তায় যে কুকুর ঘোরাঘুরি করে, সে কুকুরগুলো ধরে এনে পুষব।’
‘পাগল মেয়ে কোথাকার। রাস্তার কুকুর পোষা যায়! কেউ পোষে?’
‘কেন পোষা যাবে না। তাদের ধরে নিয়ে এসে খাওয়াব। এই কুকুরগুলো দিয়ে খামার বানাব আমি।’
‘তোমাকে কুকুর ধরে দেবে কে?’
‘দারোয়ান চাচাকে বলব। তিনি ধরে দেবেন।’

তিতির কথা শুনে মা হাসেন। তারপর বলেন, ‘তুমি কোনো চিন্তা কোরো না। তোমার বাবাকে বলে আমি একটা পোষা কুকুর কিনে নিয়ে আসব, আর সেটা তুমি পুষবে।’

‘তাহলে পথের কুকুরগুলোর কী হবে?’
‘পথের কুকুর নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না।’
‘রাস্তার কুকুরগুলো দেখলে আমার মায়া হয়, মা।’

‘ঢাকা শহরের কিছু জায়গায় কুকুরগুলোর মতো কিছু মানুষ ঘুমায় রাতে। সে দৃশ্যগুলো তুমি দেখোনি। তোমাকে একদিন দেখাব।’

‘অবশ্যই দেখব, মা। বলো কবে দেখাবে।’
‘তোমার পরীক্ষা শেষ হোক, তারপর।’

‘আচ্ছা মা, কুকুর পুষতে কি কোনো নিয়মকানুন আছে।’

‘অবশ্যই আছে, যেমন ধরো, কুকুর পুষতে গেলে জানতে হবে কুকুরের খাদ্য তালিকা, কুকুরের গোসলের নিয়ম। কুকুরের বৈশিষ্ট্য। কুকুরের প্রশিক্ষণ, প্রজন্ম, রোগ প্রতিরোধ, কুকুরকে ওষুধ খাওয়ানোর পদ্ধতি ইত্যাদি।’

‘সব শিখে নেব। তবু আমি কুকুর পুষব।’

‘আচ্ছা, আমি তোমাকে কুকুর এনে দেব। কিন্তু শর্ত আছে। তোমাকে পড়ালেখা ঠিকমতো করতে হবে।’
‘পড়ালেখা করব। নিয়মিত।’
‘ঠিক আছে।’

তিতি স্কুলে পৌঁছে গেল।

কয়েক দিন পর তিতির বাবা কুকুর নিয়ে এসেছে। কুকুর পেয়ে তিতি মহা খুশি! কিন্তু কুকুরটা শুধু শুধু ঘেউ ঘেউ করে। খাবার নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে। যত্ন নেওয়া হচ্ছে ঠিকমতো। কিন্তু কেন যে এমন করছে কুকুরটা। ওদের ফ্ল্যাটসহ আশপাশের সবাই কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে অতিষ্ঠ।

তিতি লিফট দিয়ে নামছে। লিফটের ভেতর বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময় একজন বলল, ‘তোমার কুকুরটা ভালো না, তিতি। খালি ঘেউ ঘেউ করে। কুকুরটাকে ছেড়ে দাও। আশপাশে আমরা যারা আছি, তাদের একটু শান্তিতে থাকতে দাও।’

তিতি বলল, ‘ছেড়ে দেব কেন? ও ধীরে ধীরে পোষ মেনে যাবে।’
একজন বলল, ‘তিতিদের তো এত দিন কেউ ভালো করে চিনত না। কুকুরে জন্য এখন অনেকেই চেনে।’

তিতি কথা শুনে হেসে ফেলল।
অন্য একজন বলল, ‘পশুপাখি পোষা ভালো।’

লিফট নিচে এল। সবাই নামল। তিতি দৌড়ে দোকানে গেল। দোকান থেকে কুকুরের জন্য পাউরুটি নিয়ে এল। কুকুরকে দিল। কিন্তু কুকুর খায় না। কুকুর শুধু মাথা নাড়ে। তিতি বলল, ‘রাগ করেছ? খেতে দিতে দেরি হয়েছে, তাই পাউরুটি খাবে না?’

কুকুর আবার মাথা নাড়ায়। তিতি এবার বলল, ‘ও বুঝেছি। রাস্তায় তোমার যত বন্ধু আছে, তাদের পাউরুটি খেতে দিতে হবে।’

তিতির কথা শুনে কুকুরটা মাথা ওপর-নিচে করে। তিতি বুঝতে পারে, কুকুরের মনের কথা বলেছে সে। তিতি মুচকি হেসে বলল, কাল থেকে আমার স্কুলব্যাগে পাউরুটি রাখব। আর এই পাউরুটি রাস্তায় তোমার বন্ধুদের খাওয়াব।’

এ কথা শুনে খুশিতে লাফাতে থাকে তিতির কুকুর।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত