নিরিবিলি এক্সপ্রেস

নিরিবিলি এক্সপ্রেস

কমলাপুর যাইতে হইবে শ্রাবণের। তাহার খালাম্মা সংবাদ দিয়াছিল। নিরিবিলি এক্সপ্রেস। জয়জয়কারের ন্যায় ট্রেনে উঠিয়া বসিল শ্রাবণ। প্রচণ্ড রোদ বিলিয়াইয়াছে সূর্য্যি। যেই দণ্ডে মানুষের গরমও মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়া চলিয়াছে। শ্রাবণের খালার কন্যার বিবাহের আমন্ত্রণ পরিয়াছে। সেই ন্যায় সঙ্গে করিয়া কাপড়চোপড় সহ প্রয়োজনীয়

জিনিষপত্র লইয়া রাখিয়াছে। কিছুমুহুর্ত গত হইবার পরে একটি বালিকা আসিয়া শ্রাবণের সামনে বসিয়া পরিল। শ্রাবণের ব্যাগটি বালিকার সিটে অবস্থান করিতেছিল। বালিকা আসিয়া ব্যাগটি হস্তে লইয়া বলিল ‘ আপনার ব্যাগ না? অন্যের সিটে রাখিলেন কেন? বাস্তবজ্ঞান মাথায় নেই নাকি? ‘ বলিয়া শ্রাবণের হস্তে ধরাইয়া দিয়াছে। শ্রাবণ কিছুই বলিলনা। তাহার কিছুই বোধগম্য হইয়া উঠিতেছিলনা। বালিকার কাপড়চোপড় দেখিয়া যে কেহই বলিতে পারিবে যে কিয়ৎক্ষণ পার বিবাহ পলায়ন করিয়াছে। প্রচণ্ড গরমে বালিকা তৃষ্ণার্ত রইয়াছিল। কাছাকাছি কোথাও পানি পাইবেনা সেইটা বালিকাও জানে। শ্রাবণ ব্যাগ হইতে পানির বোতল বাহির করিয়া বালিকার সামনে ধরিয়া বলিল ‘ নিন পানি ‘ বালিকা অগ্নিমূর্তি হইয়া বলিল ‘ আমি কি বলিয়াছি আমার পানি লাগিবে? ‘ এই কথা শুনিয়া শ্রাবণ নিজ হস্তে আবারো ব্যাগের ভিতরে পানির বোতল রাখিয়া দিয়াছে। স্বল্পসময় পার হইবার পর বালিকা বলিল ‘ পানি কি ঠান্ডা না গরম? ‘

শ্রাবণ কোন কথা না বলিয়া ব্যাগ হইতে পানির বোতল বাহির করিয়া বালিকার হস্তে পৌঁছাইয়া দিয়াছে। বালিকা একশ্বাসে বোতলের সম্পূর্ণ পানি পান করিয়া নিয়াছে। বালিকা ইতস্তত হইয়া তাকাইয়া বলিল ‘ ধন্যবাদ ‘ শ্রাবণ কিছুই বলিলনা। শ্রাবণ প্রকৃতপক্ষে গম্ভীর স্বভাবের নয়। তবুও চুপ করিয়া রইল। ট্রেনের শব্দে বাহিরের পক্ষীসমাজের শব্দ শুনা যাইতেছেনা। শ্রাবণের অতি ভাল লাগে পক্ষীসমাজের শব্দ শুনিতে। শ্রাবণ হঠাৎ করিয়া বলিল ‘ কোথায় যাওয়া হইবে আপনার? ‘ বালিকা প্রথমে বলিতে চাহিলনা। অল্পসময় চুপ থাকিয়া বলিল ‘ জানিনা। বাবা ছোট রইবার কালেই মারা গিয়াছিলেন আর মা তো জন্ম দিয়াই পরপারে গিয়াছিলেন। সৎ মা জোর করিয়া এক বৃদ্ধ লোকের সহিত বিবাহ ঠিক করিয়াছিলেন আমি পলায়ন করিয়া আসিয়াছি। প্রয়োজন পরিলে আত্মহত্যা করিব তবুও ঐ লোকের সহিত বিবাহ বসিবনা। জানেন ঐ লোকের না চার-চারটে গৃহিণী আছে ‘ শ্রাবণ বুঝিতে পারিল বালিকার জীবনরচনা।

শ্রাবণ আবারো জিজ্ঞেস করিল ‘ আপনার ভয়ভীতি করিতেছেনা? একলা কন্যামানুষ কোথায় যাইবেন কি করিবেন? ‘ বালিকা ভেংচিসহ বলিল ‘ তো কি হইয়াছে? কোন কর্ম যোগার করিয়া লইব। শুনিয়াছি শহরে নাকি লোকেরা কর্ম করিতে আসে। ‘ শ্রাবণ ভাবিতে লাগিল বালিকার বাহিরের জগতের সমন্ধে চিনি পরিমাণ ধারণা নাই। বালিকার হয়ত মদীয়ের জন্য চিন্তা হইতেছেনা কিন্তু শ্রাবনের হইতেছে। শ্রাবণ বলিল ‘ নাম কি আপনার? ‘ বালিকা চোখসূর্য্যী করিয়া বলিল ‘ এত কিছু জানিয়া আপনি করিবেন কি? ‘ শ্রাবন তাহার পকেট হইতে কার্ড বাহির করিয়া বলিল ‘ আমার কার্ড

দেখিয়া আপনি কি বুঝিবেন যে আমি আপনাকে চাকুরী দিবার পারি? ‘ বালিকা ইতস্তত হইয়া বলিল ‘ রোদেলা ‘ শ্রাবণ হাসিয়া বলিল ‘ অতিব চমৎকার নাম আপনার ‘ বালিকা ঠোঁটমুখ বাঁকা করিয়া বলিল ‘ প্রসংসা করিলেন না কৌতুক লইয়াছেন বুঝিতে পারিলাম না। ‘ শ্রাবণ চুপ থাকিল। দুজনের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্যে স্থির হইয়াছে রোদেলা শ্রাবণের সহিত বিবাহের অনুষ্টানে যাইবে তারপর রোদেলার চাকুরীটা বুঝাইয়া দিবে। শ্রাবণের খালার বাড়িতে স্থান করিবার পর সবাই রোদেলাকে শ্রাবণের সহধর্মিণী হিসাবে ধরিয়া লইয়াছে। এই ভাবনার মূল সুত্র হইল রোদেলার বধূ সাজিয়া থাকা। আশ্চর্যের বিষয়মালা হইতেছে শ্রাবণের খালাও বধূ ধরিয়া বরণ করিয়াছেন। রোদেলা চুপ করিয়া থাকিবার অপেক্ষা আর কিছুই করিবার নাই তাহার কর্তৃক। কারণ তাহার যাইবার কোন জায়গা নাই। তিনদিন ধরিয়া বিবাহের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত রইয়াছিল দুজন। স্বর্ণ সময় পার করিয়াছে দুজন পাশাপাশি থাকিয়া। বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হইবার পর তাহারা ফিরিবার বায়না ধরিল । এরই মধ্যে শ্রাবণ রোদেলার জন্যে একটি চাকুরীর ব্যাবস্থা করিয়া

ফেলিয়াছে। রোদেলাকে বলিয়াছে শ্রাবণ। চাকুরীর কথা শুনিয়া যতটা না খুশী হইয়াছিল রোদেলা তারচেয়ে বেশী মুখটা কালো হইয়া গিয়াছিল সেই মুহুর্তে। কারণটা খুঁজিয়া পাইতেছেনা শ্রাবণ। রোদেলার চাকুরী হইয়াছে মিরপুরে। রোদেলাকে মিরপুরে নামাইয়া গাজিপূরে চলিয়া আসিবে শ্রাবণ। বাসে উঠিল। রোদেলা জানালার পিঠে বসিয়াছে। বাতাসে তাহার চোখে ঘুম আসিতেছে। আধ-সজাগ আধ-ঘুমে রইয়াছে রোদেলা। কিয়ৎক্ষণ পরে বাসের সহকারী চালক আসিয়া ভাড়া চাইল। রোদেলার ভাড়া চাইতে শ্রাবণ বলিল ‘ মদীয় হইতে নিন ‘ বাসের সহকারী চালক বলিল ‘ আপনি আপার ভাড়া দিবার যাইবেন কেন? আপনার কি হয়? ‘ শ্রাবণ আস্তে করিয়া বলিল ‘ আমার স্ত্রী হয় বুঝিয়াছেন? কোন সমস্যা রইয়াছে আপনার তাহাতে? ‘ সহকারী চালক আর কিছু না বলিয়া চলিয়া গিয়েছেন। রোদেলা গম্ভীর হইয়া বলিল ‘ আপনি আমাকে আপনার স্ত্রী বলিলেন কেন? ‘ শ্রাবণ স্বর করিয়া বলিল ‘ তো কি বলিব? আপনার সহিত আমার ট্রেনে পরিচয় হইয়াছিল? আপনি বিয়ের আসর হইতে পলায়ন করিয়াছেন? ‘ রোদেলা আর কিছু বলিলনা। ভয়ে চুপ করিয়া রইল।

মিরপুর আসিয়া পৌঁছাইয়াছে বাস। দুজনে বাস হইতে নামিয়া কিছুক্ষণ হাঁটিল। অফিসের সামনে আসিয়া পরিয়াছে দুজনে। শ্রাবণ গেটের সামনে দাঁড়াইয়া রইল। দারোয়ান দাঁড়াইয়া আছেন রোদেলাকে ভিতরে নিয়া যাইবার জন্যে। রোদেলা গেইটের ভিতরে গিয়া কিছুসময় দাঁড়াইয়া আবারো দৌড়াইয়া আসিয়া শ্রাবণের বুকে মাথা রাখিয়া কাঁদিতে লাগিল। শ্রাবণের চোখ হইতেও নিজের অজান্তে পানি পরিতেছে। রোদেলা বলিল ‘ আমি আপনাকে ছাড়িয়া আমি থাকিতে পারিবনা। এই শহরে আমার আপন বলিতে কেহই নাই। আপনাকেই আমার আপন মনে হইয়াছে। দয়া করিয়া আমাকে একা ফেলিয়া যাবেন না। ‘ শ্রাবণ বলিল ‘ একা ফেলিয়া যাইতেছি কোথায়? অনেক ভাল চাকুরী ইহা।

আপনি এখানে অতিব ভাল থাকিবেন। ‘ রোদেলা চোখের পানি মুছিতে মুছিতে বলিল ‘ মিথ্যে বলিবেন না। আমাকে এখানে ছাড়িয়া যাইতে আপনার কষ্ট হইতেছেনা? ‘ শ্রাবণ বলিল ‘ সত্য বলিতে কষ্ট তো একটু হইতেছেই। কিন্তু কি আর করার ‘ রোদেলা শ্রাবণকে ছাড়িয়া গেইটের ভিতরে চলিয়া যাইল। গেটের ভিতরে দাঁড়াইয়া রোদেলা কাঁদিতেছে। শ্রাবণ বুঝিতে পারিতেছে আল্লাহ নিজ হস্তে শ্রাবণের জন্যে ভালবাসা পাঠাইয়াছেন। এখন যদি তাহা ফেলিয়া চলিয়া যায় তাহলে মস্ত বড় ভুল করিয়া বসিবে। শ্রাবণ দৌড়াইয়া গেটের ভিতরে যাইয়া রোদেলার হস্তদুটি ধরিয়া বলিল ‘ আমাকে পছন্দ হইয়াছে তোমার? যাইবে আমার সঙ্গে? বিবাহ করিবে আমায়? আমারো মা নেই দুনিয়ায়। বাবা রইয়াছেন। উনি অনেক ভাল মানুষ। তোমাকে অতিব পছন্দ করিবে। ‘ রোদেলা চোখের পানি মুছিয়া শ্রাবণের বুকে মাথা রাখিয়া বলিল ‘ হুম যাইব তো ‘|

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত