ছাঁদে দাড়িয়ে গোধূলীর লাল আভাটার সাথে মিশিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে,আমার “স্বপ্নঘোর(ভালোলাগার মানুষটিকে নিয়ে ভবিষ্যতের চাওয়া পাওয়া ইচ্ছেগুলো)” ।আমার মাঝেই আমিই আবছা হয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে।ভাবনায় অন্তরালে আছে কিছু ধূসর স্মৃতির স্মারক,যা শব্দ করে ঢুকতে চায় আমার নিয়মের গহ্বরে।
.
ঘন-কালো লম্বা চুল, শ্যামলা বর্ণের,স্বভাবে চঞ্চল মেয়েটিকে আমার অসম্ভব ভালো লেগে যায়।নামের জন্য আমার বদ্ধ প্রকোষ্ঠে কড়া নেড়ে বসে থাকে মেয়েটি। মেয়েটির নাম রুপন্তী।গায়ের রং ফর্সা না থাকলেও তার চেহারায় ছিল মুগ্ধতার সুখ।
.
রুপন্তী আমার ভাবনায় কেন্দ্রবিন্দুহয়ে বসে থাকে।কখনো নিমগ্ন রাতের স্রোতা,কখনো আমার আবছায়া নয়নের মায়া হয়ে।
.
রুপন্তীকে দেখার শুভাযাএার নিয়মিত দর্শক আমি।হয়ত হাজার জনের মত একজন, অতিসাধারন, অতিতুচ্ছ।
.
আমার পৃথিবীর সব স্থবির আর শান্ত করে দিয়ে রুপন্তী আমার সামনে এসে দাড়াঁয়। রুপন্তী শান্ত স্পষ্ট স্বরে জানিয়ে দেয়-আপনাকে আমি নোটিস করেছি অনেক আগেই। আপনাকে আমার অপছন্দ নয়।কিন্তু,আমি অলরেডি ইন এ রিলেশনশিপে আছি।
.
আমার চরম ব্যর্থতাকে মুখোশে ঢেকে আমি মুচকি হেসে চলে আসি। সে অবাক হয়ে দেখতে থাকে।আর হয়ত ভাবতে থাতে,না করে দেওয়ার তার চোঁখে নোনা জল টলমল করতে থাকার কথা ছিল কিন্তু সে হাসছে কেন?
.
নিজের ছায়াটাকে আজ নিরস আর ক্লান্ত মনে হয়। ধ্রুমজালে স্বপ্নঘোর গুলো ধূলি কর্ণার সাথে মিশে উড়তে থাকে আমার শহরের বুক চিড়ে।রুপন্তীকে নিয়ে আমার ভাবনা গুলো নিহাতই ছাঁই হয়ে মিশে যায় মাটির সাথে।
.
রুপন্তী খুব করে বলতে ইচ্ছা করছিল-যাকে তুমি চেয়েছ,তাকে তুমি পেয়েছ। যে তোমাকে সযন্তে,আগলে রাখতে চেয়েছে তার কথাটি একবার ভেবেছ?
ভেবে দেখই না একবার।।।
.
রুপন্তীর বয়ফেন্ডের নাম দ্বীপ। তার সম্পর্কে যতই খোঁজ খবর নিয়েছি আমার স্বপ্নঘোর গুলো ততই ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়েছে। এখন সেই স্তুপ থেকে দূর্গন্ধ বের হয়। দ্বীপ সম্পর্কে সংক্ষেপে বলতে গেলে বলতে হয় -যতটা না মায়া রুপন্তীরর মাঝে আছে,তার চেয়ে চেয়ে বেশি মায়া মনে হয় তার মধ্যে বিদ্যমান।গ্রাম থেকে আসা অত্যন্ত সহজ-সরল,চরম আকারের মেধাবী ছাত্র সে।রুপন্তী আর দ্বীপকে দেখলেই মনে এরা দুজন দুজনার জন্য পারফেক্ট।
.
আমি রুপন্তীকে ভুলতে থাকি। আসলে তার মায়াটা অস্পষ্ট করার চাষাবাদে থাকি। সদ্য জয়েন করা অফিসেই সময় কাটাই কাজেই চাপ নিয়ে।ছুটির দিনগুলো আমাকে টেনে-হিছড়ে নিয়ে যায় অস্পষ্ট মায়াটাকে স্পষ্ট করতে।
.
সময় চলে যায় ছায়া আর আবছায়ার মত করে। প্রায় ১বছর ৬মাস পর আজ বিয়ে আমার আর রুপন্তীর।কিছুটা অবাক করার বিষয় হয়ত।কিন্তু বাস্তবতার কাছে এটা সযন্তে তুলে রাখার কোন বিষয় নাহ্ বরং অতিতুচ্ছ।
.
সংগোপনে জানতে পারি…
অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করা দ্বীপ ছেলেটি একটা চাকুরী পেয়ে যায় উপসহকারী পদে। দ্বীপ ছেলেটি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল রুপন্তীর বাবার কাছে।
তার বাবা বলেছিল দ্বীপকে-রুপন্তীর সাথে এতদিন থেকেছ, তার চলাফেরা, খরচগুলো তোমাকে হয়ত বলে দিতে হবে নাহ্।তোমার কি মনে হয় তুমি তাকে সুখী রাখতে পারবে?তুমি বলবে হয়ত মনের সুখই আসল সুখ। কিন্তু তোমার জীবন থেকে হয়ত বুঝতে পেয়েছ অর্থটা কত দরকার।এরপরও যদি তুমি রুপন্তীকে বিয়ে করতে চাও তাহলে আমি না করব নাহ্।
.
শেষবার যখন রুপন্তীর সাথে দ্বীপের দেখা হয়েছিল।তখন দ্বীপ বলেছিল-ভালোবাসা তো তাই_একসাথে পথ চলা না হলেও, ভালোবাসাটার মানুষটিকে স্বপ্নঘোরে বন্ধি রেখে,দূর থেকে তার ভালো থাকাটা দেখা আর নিজে ভালো থাকা।
.
মিথ্যের মায়াজালে, বাস্তবতার অজুহাতে এমন কত স্বপ্নই ধূলো হয়ে ওঠতে থাকতে আমার-আপনার শহরে।
.
মেয়েরা এক অকল্পনীর সার্মথ্য নিয়ে আসে মনের দিক থেকে। একটু সময় লাগলেও নতুন পৃথিবীর সাথে ঠিকই মানিয়ে নেয় তারা। রুপন্তীও মানিয়ে নেয়। রুপন্তী হয়তো বুঝতে পেয়েছিল, ওই সহজ সরল ছেলেটির ভালোবাসার কাছে তার ভালোবাসা অতিসাধারণ আর অনেকটাই ক্ষ্যাতযুক্ত। দরুপন্তী মাঝরাতে বালিশ চেপে কাঁদে, কখনো বা আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি কিছু বলি নাহ্,চুপচাপ শুয়ে থাকি। মনে হয় অতল ঘুমের মোহে আচ্ছন্ন।
.
রুপন্তীর সাথে বিয়ের সময়টাতে মনে হয়েছিল আমার স্বপ্নঘোর গুলো শেষমেশ স্বাধীনতার পথে।কিন্তু পরে বুঝতে পারি, আমার ভালোবাসাটাকে আমি আগের মত খোঁজে পাই নাহ্। বারবার মনে হয়,রুপন্তীর স্বপ্নঘোর গুলো অন্য কারো প্রতিক্ষার ছিল,রাস্তার ধূলোগুলোর মতো আমি উড়ছিলাম এবং উড়ছি রুপন্তীর অক্সিজেনের সাথে মিশে। যদি বাচঁতে হয় তাহলে অক্সিজেনের সাথে আমাকেও নিতে হবে। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে তার সঙ্গে নিয়েছে।
.
খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, দ্বীপ ছেলেটি রঙিন টিনের হাফবিল্ডিং বাড়ি তুলেছে। বিয়েও করেছে পাশের গ্রামের এক রুপবান মেয়েকে। খানিকটা নিয়মের বেড়াজালে মিশে যাই আমি আর রুপন্তী।আমার দেহ দজাগলেও মন জাগে নাহ্।স্বপ্নঘোর গুলো অন্ধকার ঘরে এককোণে বোবা হয়ে কাঁদতে থাকে মুক্তি না পাওয়ার বেদনার।
.
এই যে আপনার চা?( বেলকনিতে দাড়িয়ে ছিলাম। তাকিয়ে দেখি রুপন্তী চায়ের কাপ একটি বাম হাতে নিয়ে, আরেকটি ডান হাত দিয়ে ধরে এগিয়ে দিয়ে দাড়িয়ে আছে)
.
আমি চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে বললাম-আজকের সূর্যের রক্তিম আভাটা কিছুটা গাঢ় হয়েছে, গোধূলী সময়টা অন্যদিনের থেকে আলাদা মনে হচ্ছে তাই নাহ্??
.
রুপন্তী আমার এক হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, চায়ে চুমুক দিয়ে, কাধে মাথা রেখে বলল-হুমম…।
.
রুপন্তী চুপচাপ দূরপানে তাকিয়ে থাকে, দেখতে আর উপভোগ করতে থাকে এই গোধূলী সময়টা আর চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে হয়ত তার স্বপ্নঘোরগুলো ভেবে। আমি গল্পের প্রথম স্তবকের লাইনগুলো নিজের সাথে মিলিয়ে নেই… গোধূলীর লাল আভাটার সাথে,মিশিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে,আমার স্বপ্নঘোর ।আমার মাঝেই আমিই আবছা হয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে।ভাবনায় অন্তরালে আছে কিছু ধূসর স্মৃতির স্মারক,যা শব্দ করে ঢুকতে চায় আমার নিয়মের গহ্বরে।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প