সোনা পাখির ডাইরি

সোনা পাখির ডাইরি

:- ঠাসসসসসস,.. তোকে না বলছি একদম স্ত্রীর অধিকার, বা বেশি দরদ দেখাতে আসবি না,

বলেই রাফসান রুম থেকে বাহির হয়ে গেলো। আর আখি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, চোখ দিয়ে একটুও পানি ঝড়ছে না। কারন এটা তার প্রতিদিন এর রুটিন হয়ে গেছে।

রাফসান আর আখির বিয়েরর প্রায় ২ বছর হয়ে গেছে। পারিবারিক ভাবেই বিয়ে তাদের, কিন্তু মনের মিলন হয়নি আজো। কারন টা আজো আখি জানতে পারলো না। বাসর রাতেই দুজন আলাদা হয়ে গেছিল, শুধু পরিবার কে দেখানোর জন্য শুধু অভিনয় করে যাচ্ছে দুটি পুতুল।

আখি যে রাফসান কে মেনে নিয়েছে তাও না। শুধু পরিবার এর মানসম্মান বাঁচাতে এই বিয়েতে রাজি হয়েছে। রাফসান এর ও একি অবস্থা। “পরিবার”

আজ প্রায় ২ বছর কিন্তু তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর কিছুই হয়নি, দুজন দুদিকে তবুও আখি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কফি দিয়ে যায়। অফিস এ যাওয়ার আগে ড্রেস গুছিয়ে দিত কিন্তু রাফসান ও একদিনও ওই ড্রেস পড়ে অফিসে যায় না। সবসময় এভোয়েট করে চলে আখির। কিন্তু ৬ মাস থেকে রাফসান আখির গায়ে ও হাত তোলা শুরু করে সবমসময় ডিপ্রেশন এ থাকে রাফসান। কিছু একটা কথা হয়তো রাফসানকে তাড়া করছে। তাই সেটা আখির উপরে রাগ ঝাড়ে। আজ শুক্রবার তাই সকাল সকাল কফি দিতেই, উপরের ঘটনা টা হলো।

রাফসান বাহিরে চলে গেলো আর আখি নিশ্চুপ হয়ে আবার সংসার এর। রোজকার কাজ করতে করতে স্টোর রুমে চলে গেলো। স্টোর রুমের দরজা টা খুলতেই একটা কলেজ ব্যাগ আখির সামনে পড়লো। আখি একটা জিনিশ

খেয়াল করলো কেউ হয়তো এই ব্যাগটাকে স্বযত্নে রাখে দৈনিক এটাকে খোলা হয়, বাসায় রাফসান আর আখি ছাড়া তো এই বাসায় থাকে না, আর এটা তো আখি ও খুলে না তারমানে রাফসান ই এটাকে আগলে রাখে।

হয়তো এটার মধ্যে রাফসানের পুরানো কিছু স্মৃতি পেয়ে যেতে পারি। তাই আগ্রহ হয়ে আখি ব্যাগটা খুজে একটা ডাইরি পায়।

ডাইরি টা হাতে নিয়ে কেমন যেনো চেনা চেনা লাগলো আখির কিন্তু মনে করতে পারছে না আখি এটা কোথায় দেখছে।

ডাইরিটার উপরে ছোট্ট করে লেখা।

“সোনাপাখির উপহার” সোনাপাখি নামটা দেখে আখির হৃদয়ের কেনে একটু চিনচিন করে ব্যাথা অনুভব করে। তারপর অধির আগ্রহ সহকারে ডাইরি টা পড়তে শুরু করে। কিন্তু ব্যাপার হলো প্রথম পৃষ্ঠায় শুধু একটা ডট দেওয়া তারপরের ১৭ টা পৃষ্ঠা পর্যন্ত ডট দেওয়া। ১৮ তম পৃষ্টায়

“তারিখ ১৮ ই ফেব্রুয়ারি।

প্রায় ১মাস ১৩ দিন আগে প্রথম একটা মেয়ের সাথে কথা হলো, “পাখি” নাম তার…”

তারপর আর কিছু লেখা নেই। পরের পৃষ্টায়,
“আমি একটা গাধা ডাইরি তে কি লিখতে হয় সেটাও জানি না। “….
তারপর ও দুইটা পৃষ্ঠাতে কিছু লিখা নেই

” আজ আমার ছোট বোনের থেকে ডাইরি লিখা শিখতে হলো। ওই সোনাপাখি তেমায় যেদিন কাছে পাবো না সেদিন আমার এই অপমান এর প্রতিশোধ নিবো হু বলে দিলাম।”

ডাইরিটা পরে আর আখি মুচকি মুচকি হাসা শুরু করে। শুধু আখি না যে কেউ এই ডাইরি পরে হাসবে।
পড়তে পড়তে শেষ পৃষ্ঠা তে চলে আসে।

আজ তেমার সাথে প্রথম দেখা করার কথা ছিল, আমি তো চলে গেছিলাম তোমার সাথে দেখা করতে কিন্তু সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত সেই পার্কে বসে থাকি, তেমার ফোন এ ফোন দেই কিন্তু তোমার তোমার ফোন ও বন্ধ সোনাপাখি। তারপর ফেবুতে ঢুকে দেখি তোমার আইডি ও ডি-একটিভ। আমার জীবন থেকে কী পাখি হয়ে উড়ে গেলে…?

তারপর আর কিছু লেখা ছিলনা পৃষ্ঠা শেষ, ডাইরিটা পরে শেষ করে আখির দু চোখ জ্বলে ভরে গেছে, ওখানে আরো অনেক কিছু ছিলো।

সেগুলো পড়ে আখি আবার ডাইরি টা তার জায়গা মত রেখে আজ নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। আজ আর প্রতিদিন এর মত রান্না করেনি, রাফসান এর জন্য অপেক্ষা করেনি। বাহির থেকে খাবার এনে খেয়ে শুয়ে পড়ছে। তখন ঠিক রাত ১০ টা বাঝে রাফসান বাসায় এসে নিজের ল্যাপটপ & এক বোতোল মদ নিয়ে ছাদে চলে যায়।

আজও রাফসান এর বিশ্বাস পাখি আসবে আবার ফিরে আসবে।
ছাদে বসে ফেবুতে লগইন দিয়ে চেয়ে আছে কারো মেসেজ এর অপেক্ষায়, হয়তো তার অপেক্ষার প্রহর শেষ, ঠিক ১২.০১ যেই সময় সবসময় আখি নেটে আসতো। আজো সেই আইডি টা একটিভেট হয়ে একটা মেসেজ আসলো।

:- আজো কি রাত জাগো..?

মেসেজ টা দেখে তার পুরো নেশা কেটে গেলো। চোখ দিয়ে শুধু পানি ঝড়ছে। হয়তো তার জীবন ফিরে এসেছে।
হুম রাফসান আর আখির ফেসবুক প্রেম, ৬ মাসের প্রেম তাদের। আখির ইচ্ছে ছিলো যেদিন দেখা হবে সেদিন ই প্রথম দুজন দুজনার চেহারা দেখবে। তাই কেউ কাউকে ছবি দেয়নি। প্রথমে বন্ধুক্ত তারপর মাঝে মাঝে মেসেঞ্জার এ কথা, রাফসান প্রেমে পড়ে যায় পাখির কণ্ঠের, আর পাখি পড়ে রাফসানের গল্পের। ২মাস পরে রাফসান প্রপোজ করায় আখিও রাজি হয়ে যায়। তখন থেকেই তাদের রাতভর চ্যাটিং ফোনে কথা বলেই কাটিয়ে দেয়।

রাফসান একটা নাম দেয় পাখির, “সোনাপাখি” এটা ওর আসল নাম ছিল না ওর আম্মু ডাকতো পাখি বলে সেটাই বলছে, বাকি সব প্রথম দেখায় বলবে।

২৬শে মার্চ সকালে একটা পার্সেল আসে আমার কাছে পাখি পাঠিয়েছে একটা ডাইরি & এটাও জানতে পারি পাখি আমার পাশের শহরে থাকে। আমার জীবনের সবচেয়ে বেষ্ট উপহার। সেদিন আমার জন্মদিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় উপহার, যেটাকে সারারাত & সারাদিন এক নাগাড়ে দেখেই পার করে দিয়েছি। ধিরে ধিরে কেটে যায় ৬টা মাস কত স্বপ্ন বাধছে দুজনে। অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে সেদিন দেখা করার কথা ছিল দুজনার দেখা করতে গিয়ে আর হলোনা দেখা, পাখি আসলো না, রাফসানের ও কিছু করার নেই আখির সম্পর্কে কিছুই জানা নেই রাফসান এর। তাই জিন্দা লাশ হয়ে গেছিল পরিবারের কথায় বিয়ে করতে হয় রাফসান এর, তাও প্রায় ২বছর হয়ে গেলো। কিন্তু এখনো রাফসান আখির অপেক্ষায়।

আর ২ বছর পর আজ মেসেজ আসলো সোনাপাখির।

:- আজও কি রাত জাগো.? (পাখি)
:- হু কারো অপেক্ষায় তার রাফু। (রাফসান)
:- কেমন আছো.?

:-……………

:- আমার সেদিন বিয়ে ঠিক হয়ে গেছিল, পাত্র পক্ষ দখতে আসাতে বাসা দিয়ে বাহির হতে পারিনি,।
কথাটা শুনে রাফসানের বুকের মধ্যে

একটা ঝড় তুলে চলে গেলো নিজেকে সামলে

:- ওহ ভালো, তা তোমার স্বামী হয়তো আমার থেকেও তোমায় বেশি ভালবাসে।.?

:- কাল একবার দেখা করবে.? এটাই শেষবার শুধু তোমাকে দেখার ইচ্ছে ছিলো.আমি বোরকা পড়ে আসবো।
নিজের পাপ মুখ খানা তোমাকে দেখাতে পারবো না।

:- কোথায় আসতে হবে..?
:- কাল সকালে ৯.০০টায় ওই পার্কে যেখানে দেখা করার কথা ছিল।

বলেই ওই আইডিটা আবার ডি একটিভ হয়ে গেলো।

রাফসান আর বসে থাকতে পারলো না ছাদে নিচে রুমে চলে আসে। নিজেকে একটু ফ্রেশ করে ঘুমাতে যাবে তখনি।

:- শুনুন আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো.? বলতে পারি এখন.?((আখি))
:- বলেন.?(রাফসান)
:- আমি যে ডিভোর্স এর কথা বলছিলাম বাসর রাতে সেটা কি হলো.?
:- হুম কিছুদিন এর মধ্যেই পেয়ে যাবে।
:- ওহ ঠিক আছে ডিস্টার্ব করার জন্য সরি আপনি ঘুমান।
:- আপনিও ঘুমান
বলেই দুজন দু দিক।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে রাফসান তারাতারি করে নিজেকে তৈরি করে বেড়িয়ে পড়ে পাখির সাথে দেখা করতে, কত অপেক্ষার পর আজ পাখির সাথে দেখা হবে।

তাই ৯.০০ টা এর আগেই সেই পার্কের সামনে বসে আছে ৯.০০ টা বাজতেই রাফসান পার্কে ঢুকে যায়, আর নির্দিষ্ট বেঞ্চ বসে থাকি, প্রায় ২০ মিনিট পর পাখি আসে।একটা কালো বোরকা পড়ে শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে।

মনে হচ্ছে হাজার বছর ধরে আমি ওকে চিনি, ওর সাথে আছি আমি।

:- রাফসান.?(পাখি)
:- সোনাপাখি.?(রাফসান)

:- এই নামে আর কেউ ডাকে না আমায়। যাক ভালই হয়েছে তোমার সাথে দেখা হয়ে, জীবনে তো তোমার একবার হলেও দেখা পেয়েছি এটাই বড়।

:- আমি কী তোমাকে দেখতে পারবো না.?
:- হুম পাবে।
:- কখন.?
:- সময় হলেই।

তারপর নীরবতা তাদের মাঝে ছেয়ে গেছে।
সেই নীরবতা ভেঙ্গে রাফসান ই বলে উঠে।

:- তোমার স্বামী, সন্তান কেমন আছে.?

:- বিয়ে হয়েছে ঠিকি স্বামীকে মানতে পারিনি। তবে কিছুদিন এর মধ্যে মানিয়ে নিব। সন্তান এখনো নেই নি, সে আমাকে কাছেই নেয়নি, আর আমিও কাছে যাইনি।

:- ওহ ভালো.?
:- তোমার বউ কেমন আছে.? বউকে নিয়ে খুশিতেই আছো হয়তো।
:- হুম খুব খুশিতেই আছি।
:- আচ্ছা আমি এখন আসি। আমার বর বাসায় চলে আসতে পারে যেকোনো সময়।

বলেই পাখি চলে যাচ্ছে আর রাফসান অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে পাখির দিকে। একবার তার নাম টাও জানা হলো না। ভাবতে ভাবতে চোখের আড়াল হয়ে যায়, আর রাফসান ওখানে বসেই সারাটাদিন কাটিয়ে দেয় চোখের পানি ঝড়িয়ে। তারপর সন্ধা হতেই বাসায় চলে আসে।

কিন্তু আজ আখি একটুও অবাক হয়নি এত তারাতারি বাসায় আসায় রাফসান। বরং আজ আখি ই রাফসান কে রুমে রেখে নিজেই ছাদে উঠে যায়।

আবহাওয়া খারাপ হয়ে আসছে যে কোনো সময় আকাশ তার আবেগ গুলো বৃষ্টি আকাড়ে ঝড়ে ফেলবে।
৩০ মিনিট হয়ে গেলো আখি ছাদে গেলো আর রাফসান একটা মদের বোতল হাতে নিয়ে ফেবুতে লগইন করলো।, ফেবুতে ঢুকতেই চমকে যায় রাফসান।

সোনাপাখি নামের সেই চেনা আইডি থেকে ৩০ মিনিট আগে একটা মেসেজ আসছে।

” আমি জানিনা এটা আমার ভাগ্য না তোমার ভাগ্য, কিছুই মিলাতে পারছি না। তবুও দেখ দুজন কতটা কাছে থেকেও কাউকে চিনতে পারিনি। একটাবার অনুভব করতে পারিনি দুজন দুজনকে। আমি কিছু বলতে পারছিনা নিজের সুখে। আমার কথা গুলো আজ হারিয়ে গেছে সুখের মাঝে। হয়তো তোমার ও তাই হবে। জানিনা তুমি কীভাবে নিবে। আজ তোমাকে দেখে আমি তোমাকে অনুভব করতে পারলাম তোমাকে চিনতে পারলাম। কাল যখন স্টোর রুমে আমার দেওয়া সেই ডাইরি টা দেখতে পাই, তারপরে তোমাকে জিগ্যেস করবো ভাবছিলাম, তুমি ই কি আমার রাফু, কিন্তু হয়নি, দুজন দুজনার অনেক দূরে ছিলাম তখন। আজ আমার ভয়টা কেটে গেছে শিয়র হয়েছি তুমি। আজ ছাদে অপেক্ষা করছে তোমার সোনাপাখি। “আখি” নয়। আমি তোমার অপেক্ষায়…….

মেসেজটা দেখে রাফু নিজের চোখ কে বিশ্বাস করাতে পারছিল না, এক দৌড়ে ছাদে চলে গেলো রাফসান, পাগলের মত খুঁজতে থাকে সোনাপাখি কে। একসম দেখে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে সোনাপাখি। চুল গুলো বাতাসে উড়ছে।

রাফসান কিছুটা দূটে দাড়িয়ে “সোনাপাখি”
বলে একটা ডাক দেয়। আর পাখি মানে আখি পিছনে ফিরলেই রাফসান সোজা সোনাপাখিকে রাফসানের বাহুডোর এ ভরে ফেলে।

“সরি সোনাপাখি”
“আমিও সরি ”

:- উহু ভালোবাসায় কোনো সরি বলতে নাই।
:- হু এতদিন খুব কষ্টে কাটছে আমার।
:- আমার বুঝি কষ্ট হয়নি।

:- হু তা তো দেখছি ই, কতটা কষ্ট হইছে। সারারাত মদ গিলে কষ্ট করছে। হু বলেই সোনাপাখি মুখ ঘুড়িয়ে নিলো।

:- এই যা আজ সোনাপাখি এমন অভিমান করে না। এই সোনাপাখি এই কানে ধরছি আর কখনো নেশা করবো না, একটুও ছুয়ে দেখবো না।

:-হু মনে যেনো থাকে। আর এত হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরছো কেনো হু, শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।

তারপর দুজন দুজনকে খুব করে জড়িয়ে ধরে দুই ঠোঁটে ঠোঁট একাকার করে দিল। তারপর ই আকাশ তার আবেগ গুলো ঝড়ে ফেলে দিচ্ছে দুজন বৃষ্টির মধ্যে ভিজা শুরু দিয়েই তাদের জীবনের স্বপ্ন গুলো পুরনের পথে যাত্রা শুরু করলো। হু দুজন একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবে তাদের একটা স্বপ্ন।

বৃষ্টি ভিজা স্বপ্ন পুরন দিয়েই তাদের নতুন জীবন নতুন ভাবে সাজাতে শুরু করলো।

প্রায় ৩০ মিনিট বৃষ্টিতে ভিজে সোনাপাখি কে কোলে নিয়ে রাফসান।
:- বেশি ভিজলে আমার সোনাপাখির জ্বর হবে। আর আজ আমার বাসর চলো বাসর করি।
:- হুম।

এই এই আপনারা আর কি দেখেন রাফসান আর সেনাপাখির বাসর একটু পরে। আপনারা একটু আগেই ফুটেন

*******************************************সমাপ্ত**************************************

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত