হার্টবিট

হার্টবিট

-মানুষের কি কান্ডজ্ঞান নেই?

মেইন রাস্তার পাশে বৃষ্টির মধ্যে ছাতার নিচে দাড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম.তখনই একটা মেয়ে আমার পাশ দিয়ে যেতে যেতে এই কথা বলে গেল. তাকিয়ে দেখি হন হন করে হাটতে হাটতে কিছুটা দুরে চলে গেছে.

সাধারনত আমি কোন মেয়ের চেহারা দেখার আগে তার পায়ের রং দেখি! কোথায় যেন শুনেছিলাম “মেয়েরা যতই ঘষাঘষি করুক না কেন পায়ের রং পরিবর্তন করা সম্ভব না”৷৷ তার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি কাচা দুধের মত তার পায়ের রং.বুঝলাম মেয়ের চেহারা অত্যন্ত সুন্দর.কিন্তু তার বিরক্তির কারনটা বুঝতে পারলাম না.এত বুঝে আমার কাজ নেই.আমি আবারও মনের সুখে সিগারেট টানতে লাগলাম.

বেশি কিছুদিন পর আমার ডিপার্টমেন্ট এর সামনের একটি টঙ দোকানে দাড়িয়ে বিড়ি ফুকছিলাম.কিছুক্ষন পর সুন্দরী একজন ললনা আমাকে সিগারেট টানতে দেখে বিড়বিড় করে বলল,
– কান্ডজ্ঞানহীন মানুষ!

‘কান্ডজ্ঞান’ শব্দটা শোনার সাথে সাথে আমার মনে হল এই মেয়েই সেই মেয়ে যাকে আমি সেদিন মেইন রাস্তার পাশে দেখেছিলাম.এবার আর ভুল করলাম না. মেয়েটার সামনে গিয়ে বললাম

-আপনার কথায় ভুল আছে!
-মানে?
-মানে হলো, গাছের কান্ড থাকে কিন্তু জ্ঞানের কোনো কান্ড থাকে না!
-স্টুপিড!
-কিছু বললেন!

-….

-কিছু বলছেন না যে?
-অপরিচিত দের সাথে আমি কথা বলি না!
-আমি তন্ময়, সেকেন্ড ইয়ার স্টুডেন্ট, আপনি?
-আপনাকে কেন বলবো?
-পরিচিত হবার জন্য
-সরি আমার পরিচিত হবার কোন ইচ্ছা নেই!

বলেই মেয়েটা খুব দ্রুত চলে গেল.আমি আর তাকে ডাকলাম.এমনকি তার উপর মনও খারাপ করলাম না.কারন সুন্দরী মেয়েদের কিছুটা অহংকার থাকতে হয় না হলে তাদের সৌন্দর্যের মর্যাদা থাকে না!

এই ঘটনার অনেক দিন হয়ে গেছে.আমিও মেয়েটাকে একপ্রকার ভুলেই গেছি.ক্লাস শেষ করে রাস্তা যাচ্ছিলাম তখনই শুনতে পেলাম কেউ একজন বলছে

-এই যে কান্ডজ্ঞানহীন মানুষ

আমি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটি দৌড়াতে দৌড়াতে আমার দিকেই আসছে.আমার কাছে এসে হাফাতে হাফাতে বলল

-কেমন আছেন?
বললাম, ভালো আছি! আপনি কেমন আছেন?

-ভালো, আপনাকে এই কয়টা দিন কত খুজেছি আপনার কোন আইডিয়া আছে?

আমি একটু অবাক হলাম! এই মেয়ে আমাকে খুজেছে? আমাকে? আমাকে খোজার কি কারন থাকতে পারে?
কোন কারনই খুজে পেলাম না.অগ্যতা বললাম

-নাহ! কোন আইডিয়া নেই.তা আমাকে কেন খুজেছিলেন শুনি?
-সরি বলার জন্য
-সরি বলার জন্য? কেন? কি করেছেন আপনি?
-হাটতে হাটতে কথা বলি?
-হ্যা, অবশ্যই
-আসলে সেদিন টঙ দোকানে ওভাবে আপনার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চলে আসাটা আমার উচিত হয় নি.সে জন্য

সরি!

বুঝলাম, মেয়েটাকে যতটা অহংকারী বলেছিলাম ততটা সে নয়! বিষয়টা জেনে খুব ভাল লাগল!
-আরে ঠিক আছে! আমি কিছু মনে করি নি

-আপনি সেদিন আপনার নাম আর কোন ইয়ারে পড়েন সেটা বলেছিলেন কিন্তু কোন ডিপার্টমেন্ট এ পরেন সেটা বলেন নি.এজন্যই আপনাকে খুজতে খুজতে আমার এতদিন সময় লেগে গেল!

-ওহ আচ্ছা!
-আর আমি হচ্ছি, রিয়া.১ম বর্ষের স্টুডেন্ট

বলেই ও মুচকি একটা হাসি দিল. নাহ! হাসি দিল না, আমার একটা হার্টবিট চুরি করে নিল.
গত ২০ টা বসন্ত পেরিয়ে গেছে.কেউ এই হার্টবিট চুরি করতে পারে নি.এই মেয়েটা একটা হাসি দিয়েই চুরি করে নিল.
আমার সামনের দিনগুলোতে সুনীল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি.না জানি হার্টবিট মিস করতে করতে একদিন হৃদকম্পনই থেমে যায়.তবুও! আমি এই হাসি দেখার জন্য হলেও হাজারটা হার্টবিট মিস করতে রাজি আছি!

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত