মনটা ভীষণ খারাপ। সন্ধ্যা থেকেই মনটা বেশ চাঙ্গা ছিল। আজ আমার জন্মদিন কিনা। বছরের এই দিনটাতে অন্তত মনটা খুব ফুরফুরে থাকে। খুব আশায় ছিলাম হোস্টেলে ফিরলেই বন্ধুরা সব কেক নিয়ে হাজির হবে কিন্তু রাত সাড়ে বারোটা বেজে গেল একজনও উইশ করল না।
শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম ঠিক জানি না।
হঠাৎ কিছু একটা ভাঙ্গার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। কি যেন আমার বিছানার পাশে উপর থেকে পরে ভেঙ্গে গেছে। গোটা রুমটা অন্ধকার। ভাবছিলাম বিদ্যুৎ চলে গেছে কিন্তু ফ্যান ঘুরছে, মানে বিদ্যুৎ যায়নি। মোবাইল ফোনটা খুঁজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না, চশমাটাও নেই। একে তো বিদঘুটে অন্ধকার এর উপর চশমা নেই। চশমা ছাড়া তেমন কিছুই আমি দেখতে পাই না। আমাদের রুমে আমরা দুজন থাকি সুমন আর আমি। সুমন কে ডাকলাম, কিন্তু কোন সাড়া শব্দ আসছে না, ভাবলাম ঘুমিয়ে গেছে। বিছানা থেকে উঠে সুমনের বিছানায় গিয়ে সুমনকে পেলাম না। লাইট জালবার জন্য সুইচ দিলাম কিন্তু লাইট জ্বলল না।
ব্যাপারটা কি হল বুঝে ওঠার আগেই আবার কিছু একটা ভাঙ্গার বিকট শব্দ হল। মনে হচ্ছে কি উপর থেকে কাঁচের কিছু একটা পরে ভেঙ্গে গেছে। ঘরের মাঝখানে যেয়ে মেঝেতে কি পড়ল খুঁজলাম কিন্তু কিছুই পেলাম না। হঠাৎ করেই সেকেন্ডের জন্য একটা বাতি জলে উঠল, কিছু দেখার আগেই আবার বন্ধ হয়ে গেল। কোত্থেকে যেন ভায়োলিনের শব্দ আসছে। ভায়োলিনের শব্দের সাথে ভেসে আসছে তীক্ষ্ণ নারী কণ্ঠ। ঠিক যেমনটা ইংলিশ হরর সিনেমা গুলোতে শোনা যায় খ্রিষ্টান গোরস্থানে।
বাতি টা কিছুক্ষণ পর পর সেকেন্ডের জন্য জলেই নিভে যাচ্ছে। বাতির আলো দেখে মনে একটা খটকা লাগল ঘরে সাদা লাইট ছিল কিন্তু যেটা জ্বলছে সেটা হলুদ। সুমনকে বেশ কয়েকবার চিৎকার করে ডাকলাম কিন্তু ওর কোন সাড়া-শব্দ পেলাম না। একবার লাইটটা জলতেই দেখলাম টেবিলের উপর থেকে একটা বই মেঝেতে পরে গেল।
অন্ধকারে শরীরের লোম গুলো দেখতে না পেলেও বুঝতে পারছি শরীরের সবগুলো লোম দাঁড়িয়ে গেছে।
দ্রুত দরজার কাছে গিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু দরজা খুলছে না। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে দরজার হাতল টানলাম তাও খুলল না। কি করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না এরমধ্যেই নাকে পোড়া একটা বিশ্রী গন্ধ এলো, বুঝতে আর বাকী রইল না- এসব কি ঘটছে আমার সাথে।
প্রাণপণে দরজা ধাক্কাতে শুরু করলাম, কিন্তু দরজা খুলছে না। একটু পর পর কাঁচ ভাঙ্গার শব্দ হচ্ছে। বাতিটা টা জ্বলছে আর নিভছে, ভায়োলিনের শব্দ বেড়েই যাচ্ছে আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না, এমন সময় হঠাৎ করেই দরজাটা খুলে গেল। দ্রুত ঘর থেকে বের হলাম কিন্তু একি কাণ্ড, হোস্টেলের সব বাতিগুলো বন্ধ কেন? বাতিগুলো তো সারারাত ধরে জ্বলে? এরমধ্যেই কিছু একটা উড়ে এসে মুখে লাগল। দরজার একটা পাল্লাটা বার বার লাগছে আর বন্ধ হচ্ছে, কোন বাতাস নেই তাহলে এমন হবে কেন? সাহস করে ঘরের ভেতরে তাকালাম, কোত্থেকে যেন আবছা আলো বেরুচ্ছা, পুরো ঘর ধুমাতে ভরে গেছে, ভায়োলিন আর ভয়ঙ্কর সেই নারী গলার শব্দ দ্রুত বাজতে শুরু করেছে, সেই শব্দে কে যেন হাসছে আর ফিসফিস করে বলছে হ্যাপি বার্থডে ঈশান হ্যাপি বার্থডে।
এতো ভয় পাচ্ছিলাম ঠিক কি করব বুঝতে পারছিলাম না। আশে পাশের ঘরগুলোর দরজা ধাক্কালাম কেউ খুলল না, এবার আন্দাজ করে সিঁড়ির দিকে একটা দৌড় দিলাম। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় রুমেল ভাইকে উপরে উঠতে দেখে বললাম ভাই বাঁচান, বাঁচান ভাই। রুমেল ভাই বলল কি হয়েছে? বললাম ভাই ঘরে ভূত। রুমেল ভাই আমার কাঁধে হাত রেখে বলল আর ওসব কিছু আছে নাকি? চল দেখি।
রুমেল ভাই আমাকে নিয়ে ঘরে এলো। এখনও ভায়োলিন বাজছে সেই সাথে সেই নারী কণ্ঠটাও। ঘরে ঢুকতেই দরজাটা আবার ধপাস করে বন্ধ হয়ে গেল। রুমেল ভাইকে ডাকলাম রুমেল ভাই রুমেল ভাই?
রুমেল ভায়ের কোন সাড়া নেই। হলুদ বাতিটা কিছুক্ষণ পরে জ্বলছে আর নিভছে- এর মধ্যেই দেখতে পেলাম রুমেল ভাই দেয়ালে মাথা ঠুকে যাচ্ছে, আমি আবার দৌড়ে দরজার কাছে যেয়ে দরজা খুলতে চেষ্টা করলাম, কিন্তু দরজা খুলছে না।
ভায়োলিনের শব্দ বেড়েই চলেছে, মনে হচ্ছে কয়েকশ বছরের পুরনো কোন এক গোরস্থানের মাঝখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি চারপাশের কবর গুলো থেকে একের পর এক উঠে আসছে বীভৎস সব লাশ। সবাই যেন আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে আর একটু একটু করে সামনের দিকে আসছে।
আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না, চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম।
হঠাৎ করেই দরজাটা খুলে গেল। বাইরে বেরুতেই সবাই একসাথে বলে উঠল হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। সুমন এসে চশমাটা পড়িয়ে দিয়ে বলল- নে এবার কেক কাট। আমি তখনও ঘোরের মধ্যেই আছি, বললাম কেক কাটব মানে? রুমেল ভাই বলল আজ তোর জন্মদিন না? নে নে কেক কাট।
রেগে গিয়ে বললাম তোমরা এতক্ষণ আমার সাথে এগুলা করছ? নোমান হেসে দিয়ে বলল- তোর জন্মদিনে একটু মজা না করলে চলে?
ঘরে এসে সুমনকে জিজ্ঞাসা করলাম, সবই বুঝলাম কিন্তু ঘরের মধ্যে ওরকম ভয়ংকর ভায়োলিনের আওয়াজ এলো কোত্থেকে? আর কি যেন একটা ভাঙ্গার শব্দ হচ্ছিল? ওটা কি?
ও তুই এখনও বুঝিস নাই? তোর বিছানার নিচে রানা শুয়ে ছিল স্পীকার নিয়ে, তোর মুভমেন্ট অনুযায়ী ও স্পীকার সরিয়েছে।
– কিন্তু ওই পোড়া গন্ধটা? ওটা এলো কোত্থেকে?
সুমন বলল- ও ওইটা? আমার বিছানার নিচে যেয়ে দেখ।
বিছানার নিচে যেয়ে দেখলাম- কিছু প্ল্যাস্টিক তখনও পুড়ছে।