ছোট বেলা থেকে একটা শখ ছিলো। শখ বললে ভুল হবে। জীবনের প্রথম এবং শেষ ইচ্ছা। অনাথ কোনো মেয়েকে বিয়ে করবো। ঝগড়া হলেই যেন বাপের বাড়ি যেতে না পারে। অনেক অনেক লক্ষ্মী থাকবে। বিরিয়ানি রান্না করতে জানবে, খিচুড়ি রান্না করতে জানবে।
দেখতে সুন্দরী হওয়া চাই না। শেষ বিকেলের সূর্যের আলোর মতো হলেই হবে। সুন্দরী মেয়েদের সাজগোজ করলে ভালো লাগে না। তাঁকে মাঝেমাঝে নিজের হাতে সাজিয়ে দিবো। চুলগুলো থাকবে কোমর পর্যন্ত লম্বা।
চোখদুটো যেন যুদ্ধ শেষে বিজয়ের উল্লাস বয়ে আনছে। চোখদুটো দেখলেই সব দুঃখ বিলীন হয়ে যাবে। চোখের উপর ভ্রু দুটো থাকবে মেঘলা আকাশের আড়ালে চাঁদের ছায়া। ডান কানের নীচে একটা নিভু নিভু তিল থাকবে। তিল টা সচারচর দেখা যাবে না। খুব কাছে গেলে চোখে পড়বে।
আমার নিঃশ্বাসের অত্যাচার তিলটার উপরে অনুভূতি ছড়ালে সে আমার বুকের বাম পাশে মাথা রাখবে। আমার হৃদয়ের কম্পন শুনতে পাবে। নাক টা রং এর পেন্সিলের মতো হবে। আমার নাক যেন তাঁর নাকের সাথে ঘষা লাগলে আটকে না যায়।
নিস্পাপ চাহনির সাথে চেহারার মধ্যে বাচ্চা বাচ্চা একটা ছাপ থাকবে। দেখলেই যেন আদর করার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে! সবার সাথে কথা বলার সময় স্বল্পভাষী আর আমার সাথে যেন বেজায় হরেন। থামছেই না তো থামছেই না। আমি মুগ্ধ হয়ে তাঁর কথাকলির নদীতে সাঁতার কাটবো।
ওপারে যেতে যেন আমার প্রাচীন অবরোধ। বেশি কথা বলা মেয়েদের মন স্বচ্ছ হয়। মনে যা আছে এবং আসে তা ই মুখ দিয়ে গড়গড় করে বলে দেয়। সে হাসলে মনে হবে বর্ষাকালে তারার মেলা। আর কাঁদলে যেন অন্য কোনো পৃথিবীতে আমি হারিয়ে যাচ্ছি।
ঘুমালে যে রাজ্যের সব বসন্তের বাতাস ওর শ্বাস উঠানামার সাথে সাথে হাওয়া বদল করছে। হেঁটে গেলে সেই বৈশাখ মাসে কবির টিপটিপ মৃদু কাব্য। একটু বকাঝকা করলেই কান্না করে দিবে। বাচ্চাদের খুব ভালোবাসবে।
আষ্টেপৃষ্ঠে লজ্জা থাকবে যার। অন্ধকারে ও যেন দেখতে পাই তাঁর গালদুটো লাল হয়ে আছে! বাসর রাতে আমার চোখে তাকাতেই পারবে না। সঙ্গে সঙ্গে চোখ মারার একটা বাজে অভ্যাস থাকবে। তবে ওটা শুধু আমার জন্য।
নখ বড় রাখার কুৎসিত অভ্যাস টা থাকবে না। নানা রকমের পিঠা বানাতে থাকবে পারদর্শিতা। কমপক্ষে মাছের পিঠা বানাতে জানবেই। মাথা থেকে ওড়না পড়বে না কখনো। হিজাব, সেলোয়ার কামিজ আর শাড়িতেই তাঁর জীবন মোড়ানো থাকবে। পাঁচ তারকা হোটেলে যাওয়ার জন্য সে আবদার করবে না। ফুচকা খেতে যাওয়ার জন্য বায়না ধরবে।
হবু স্ত্রীকে নিয়ে আমার এই ভাবনাগুলো আমি ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। একটা অনাথ মেয়েকে বিয়ে করবো বলে বাবাকে আমি আগেই জানিয়ে রেখেছি। যেন পরে মেনে নিবে না, এমন কিছু না বলতে পারে। বাবা ও রাজি হয়েছিলো। সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমি এরকম একটা মেয়ে খুঁজে আসছি। কোথাও পাচ্ছি না। পেলে ও চুল লম্বা না।
ডান কানের নীচে তিল নেই। ডান কানের নীচে তিল আছে তো খিচুড়ি রান্না করতে জানে না। খিচুড়ি রান্না করতে জানে তো বাচ্চাদের ভালোবাসে না।
এমন একটা মেয়েকেই বিয়ে করবো বলে কোনো মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ায়নি। কতো মেয়ে ইশারা দিয়ে কাছে ডাকে, আমি চোখ নীচু করে চলে আসি। কয়েকজন প্রেমপত্র দিয়েছিলো। আমি উত্তরে লিখে দিয়েছিলাম ” আমি বিবাহিত। ”
কিছু মেয়ে তো সারাক্ষণ ফোন দিয়ে বিরক্ত করতো। সেজন্য যে কতো সিম বদলাতে হলো। বাবার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। কখনো অবাধ্য হইনি। আর আমার মনের মতো অনাথ মেয়ে খুঁজেছি।
একদিন আমি বাস দিয়ে যাচ্ছিলাম। পাশের সিটে একজন ভদ্রলোক বসেছিলেন। হঠাৎ পানির পিপাসা পেলে তাঁকে আমি বললাম— ভাই আপনার কাছে পানি হবে? একটু গলা টা ভিজাতাম?
ভদ্রলোকের কাছে পানি ছিলো না। পিছনের সিটের কোনো এক মেয়ের কাছ থেকে নিয়ে আমাকে দিলেন। আমি পানিটুকু পান করার পরে মেয়েটাকে ধন্যবাদ দিলাম। সে মুচকি হাসলো। যদিও আমার একটু ইতস্ততবোধ হয়েছিলো তবুও তো সাহায্য করেছিলো।
সামনের স্টেশনে নামলাম। দেখলাম সেই মেয়ে টা ও নেমেছে! গরমে ঘামছিলো তাই নেমেই আমার কাছে টিস্যু চাইলো— আপনার কাছে টিস্যু হবে?
আমি ভদ্রতার হাসি হেসে বললাম— আপনার ঋণ মনে হয় শোধ করতে পারলাম না। আমার কাছে টিস্যু নেই।
— আমি মানুষকে ঋণী রাখতে পছন্দ করি তাই হয়তো! আচ্ছা বাদ দেন, কোথায় যাবেন?
— কোনোদিন সুযোগ পেলে শোধ করে দিবো ইনশাআল্লাহ। সামনেই মামার বাড়ি যাবো। আপনি কোথায় যাবেন?
— মামার বাড়িতে গিয়ে অনেক মজা করেন না?
— তা তো অবশ্যই। বললেন না যে কোথায় যাবেন?
— এইতো সামনে, অনাথালয়ে।
অনাথালয়ে কথা টা বলেই মেয়ে টা চোখ ঘুরিয়ে নিলো! সাথে সাথে আমার বুকে চিন চিন একটু ব্যথা অনুভূত হলো! বললাম— অনাথালয়ে কেনো? সাহায্য করতে? আচ্ছা আপনি মামার বাড়ি যান না?
মেয়ে টা দুঃখ গ্রাস করা এক লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো— আমার বাড়িই তো ওটা। আর মামার বাড়ি? আমি তো আমার বাবার বাড়িই চিনি না, জানি না।
আমি আর এক মুহূর্ত ও দেরি না করে সরাসরি বলে ফেললাম— আপনার নাম্বার টা দেয়া যাবে?
মেয়ে টা অবাক হয়ে বললো— কেনো?
— পানির ঋণ শোধ করে দেবার জন্য।
— তাহলে দেয়া যাবে না।
আমি চুপসে গেলাম। মেয়ে টা কেমন একটা রহস্যময় হাসি হেসে আবার বললো— যখন তখন ফোন দেয়া যাবে না।
বলে নাম্বার টা মুখে বলতে শুরু করলো।
সেদিন ছিলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম খুশির দিন। নাম্বার বলার সময় খেয়াল করেছিলাম, মেয়েটার ঠাঁই ডান কানের নীচে নিভু নিভু একটা তিল!
রাতেই মেয়েটাকে ফোন দেই। নাম অনা। মুখে বলিনি যে ভালোবাসি, তোমাকে আমার দরকার। তবে কাজকর্মে, ইশারা ইঙ্গিতে, ভিবিন্ন উপহার দিয়ে বুঝিয়েছি। হঠাৎ একদিন মেয়ে টা বললো— এসব আপনার দয়া মিশ্রিত এক আবেগ। বিয়ের পরে আপনার মনে হবে একটা শালিকা থাকলে কতোই না ভালো হতো। শ্বাশুড়ি আমাকে কতোই না জামাই আদর করতো! তারপর আরো কতো কিছু।
আমি মেয়েটাকে বুঝিয়ে পারিনি। তারপর তাঁকে বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। বাবা এক ঘণ্টায় কীভাবে যেন মেয়েটাকে রাজি করিয়ে ফেললো!
তার মাত্র সাত দিন পরেই বিয়ে হয়। কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হয়েছিলো। বাসর রাতে অনা সত্যিই আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না! চোখের কোণে মিঠিমিঠি জল ছিলো। তাই আর তিলের দিকে নজর দেইনি।
আমি যতটা না চাইতাম অনা ছিলো তারচেয়েও বেশি কিছু। চুল এতো লম্বা যে আমি অনার চুল দিয়ে বালিশ বানিয়ে ঘুমাই। অনার হাতের মাছের পিঠা খেলে যেন জিহ্বা থেকে স্বাদই যায় না। চোখে কাজল দিলে আমার নেশা ধরে যায়৷
শাড়ি পড়লে মনে হয় আমি অনার শাড়ির কুঁচি হয়ে যাই। এতো সুন্দর করে ফুচকা খায়, ইচ্ছে হয় অনাকে তিন বেলা ফুচকা খাওয়াই।
বিয়ের পনেরো দিন পরে আমরা ঠিক করলাম কুয়াকাটায় মধুচন্দ্রিমায় যাবো।
ভোরে আমার ঘুম ভেঙে যায়। এমনিতে অনা আগে উঠে আমাকে নামাজের জন্য তাড়া করে। আজকে আমার কেনো যেন আগেই ঘুম ভাঙলো। পাশে অনা নেই। উঠে বারান্দায় গিয়ে দেখলাম অনা কার সাথে যেন কথা বলছে।
আমি শুনলাম অনা মাত্র বললো— জানো আম্মা, তোমাদের না খুব দেখতে ইচ্ছে করছে!
আমি মায়ের রুমের দিকে তাকিয়ে দেখি দরজা বন্ধ! তাহলে অনা আম্মা বললো কাকে?
আমি সরাসরি অনাকে জিজ্ঞেস করলাম— কার সাথে কথা বলছিলে?
অনার ঠোঁট কাঁপছে! — আম্মার সাথে! আপনি কখন উঠলেন?
— আমার চোখের দিকে তাকাও অনা। আমি বলছি কার সাথে কথা বলছিলে? আমার মা তো ঘুমাচ্ছে, তাহলে কোন মায়ের সাথে তুমি কথা বলছিলে?
অনা অনেকক্ষণ চুপ থেকে কান্না করে দিয়ে বললো— আমারই মায়ের সাথে। আর আমি অনাথ না। আমার মা বাবা পরিবার সবই আছে।
আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো! রেগে বললাম— আমার সাথে কেনো বেইমানী করলি তুই? আমার কী অপরাধ?
অনা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো— বেইমানী করেনি! আপনার বাবার সাথে আমার তেরো বছর আগে পরিচয় হয়। তখন আমার বয়স মাত্র ছয়। এরপর থেকে আপনার বাবা আমাদের বাড়িতে অনেকবার গিয়েছেন। আমাকে আপনার কথা বলতেন। মেট্রিক দেয়ার পরে আপনার বাবা সরাসরি বলেই দিয়েছিলেন যে ” তোমাকে আমি আমার ছেলের বৌ করতে চাই মা। কিন্তু একটা সমস্যা আছে এবং সেটার সমাধান ও তোমাকে করতে হবে! ” আমি সেদিন থমকে যাই। কিন্তু আপনার বাবার প্রেমে পড়ে গিয়েছাম। এই মানুষ টা যদি এতো ভালো হয় তাহলে তার সন্তান কেমন ভালো হবে? আমাকে আপনার ডায়েরি টা দিয়ে বলেছিলেন ” বাকী টা তোমার হাতে। ” আপনার ডায়েরি পড়ে আমি আপনাকে পছন্দ করতে শুরু করি। ভালো লাগতো আপনার কথা ভেবে। সারাক্ষণ মশগুল থাকতাম আপনাতে। ততদিন আপনাকে আমি দেখিওনি! সেই বাসেই আপনার পেছনের সিটে আমাকে বসিয়েছিলেন আপনার বাবা। তারপর থেকে তো আপনি জানেনই। দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না।
শরীরে যেন শক্তি পানি হয়ে গিয়েছে আমার! শক্ত গলায় জবাব দিলাম— এটাকে ভালোবাসা বলে না অনা। কারো অনুভূতি নিয়ে খেলা বলে। তুমি আর আমার বাবা, দুজন মিলে আমার অনুভূতিটাকে নিয়ে খেলেছো। আমার
ভালোবাসাকে ধোকা দিয়েছো। ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে থাপ্পড় দেই একটা। কিন্তু তুমি তো আমার অনা না! তুমি আমার বাবার পছন্দের একটা মেয়ে। বলছি না তুমি খারাপ। কিন্তু আমার তো তোমাকে বিয়ে করার কথা না! আমি এই বিয়ে আর এক মুহূর্ত গড়াতে দিবো না।
বলেই বাবাকে ডাকতে শুরু করলাম। বাবা অনার কান্না দেখে সব বুঝে ফেলেছে। বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম— কোনোদিন তোমার অবাধ্য হইনি বাবা৷ সবসময় মাথা নীচু করে যা বলেছো সব মেনেছি। তোমার কাছে আমি আগেই আমার চাওয়া বা ইচ্ছার কথা বলেছিলাম। যেন পরে কষ্ট না পাও। তুমিও তো মেনে নিয়েছিলে বাবা, তাহলে কেনো এই নাটক টা সাজালে? হ্যাঁ অনা মেয়ে টা ভালো। কিন্তু আমার অনুভূতি তো মিথ্যে ছিলো না! আমি তো মা বাবা নেই অনাথ একটা মেয়েকে বিয়ে করেছি। অনাকে নিয়ে কীভাবে থাকবো এখন? আজকে তোমার কথার অবাধ্য হচ্ছি। আমি এই মুহূর্তে বিয়ের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে চাই।
অনা আর দাঁড়িয়ে থাকেনি! বাবার মুখে কোনো কথা নেই। বাবা অনার হাত ধরে কিছু বলতে চাইলে ও পারলো না। নিজ হাতে সিএনজিতে তুলে দিয়েছে অনাকে।
আমি বাবার প্রতি রাগ নিয়ে রুমে ফিরে দরজা বন্ধ করে দেই। টানা দুই দিন দরজা খুলিনি। বাবা অনেক ডেকেছে, আমি খুলিইনি। তিন দিনের মাথায় দরজা না খুলে পারলাম না। বাবা হাতদুটো ধরে বললো— আমার মা তোর দাদু ছিলো একটু অন্য রকমের মহিলা। যার চোখে তাকালেই মনে হতো আমি হয়তো জান্নাতের কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করছি। সে চাহনির চোখ আমি অনার চোখেই দেখেছিলাম। মাকে তো ছোট থাকতেই হারিয়েছি। তারপর অনাকে দেখেছিলাম, মায়ের ছায়া দেখেছিলাম ওর মাঝে। তাই মা বানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মস্ত বড় ভুল যে করে ফেলেছি, তুই তো বিনা অপরাধে শাস্তি পাচ্ছিস। মাফ করে দিস বাবা। অনা আর কোনোদিন এই বাড়িতে পা রাখবে না৷
বাবার কথা শুনে এখন মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট সন্তান। নিজের কাছে বাবাকে ছোট করেছি। বাবার বুকে পড়ে কিছুক্ষণ কান্না করলাম। তারপর মনে হলো আমার স্বপ্নে দেখা মেয়ে টা আমার ভালোবাসা ছিলো। আর অনা আমার ভালোবাসা হয়ে গিয়েছে! অধিকার করে নিয়েছে অনা। এ যুগে যে আমাকে না দেখেই ভালোবেসেছিলো তাঁকে কীভাবে আমি কষ্ট দেই?
যে এতো কিছু পারতো না শুধু আমার স্বপ্নের রাণী হওয়ার জন্য শিখেছে। আমি কীভাবে তাঁর স্বপ্ন ভাঙি?
আল্লাহ্ সহ্য করবে না তাহলে! অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে৷ আমাকে অনার কাছে যাওয়া দরকার, এক্ষুণি!
বাবার কাছ থেকে শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা নিয়ে রওনা দিলাম। আমাকে দেখে সবাই যেন নিঃশ্বাস ফিরে পেয়ে বললো— অনা একেবারে কোণার রুমে!
আমিও সবার আগে অনার কাছে যাই। অনার চোখগুলো আমাকে দেখে খুশিতে ভরে উঠলো কিন্তু তাৎক্ষণিক সরিয়ে নিলো। ওর কাছে গিয়ে বললাম— কান্না করছো কেনো?
অনা কোনো কথা বলছে না। আমি আবারো বললাম— তোমাকে মাফ করছি না অতি সহজে।
অনা ভারি কণ্ঠে বললো— মারবেন? মারেন না। আমি যা করেছি তা কী ক্ষমার যোগ্য? কারো অনুভূতি খুন করেছি!
— ভালোবাসি অনা। অনেক ভালোবাসি তোমাকে। আমার সাথে ফিরে চলো। তবে তোমার প্রতি রাগ কমেনি।
বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে পেটাবো। এখন আমার সাথে চলো।
অনা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কেমন একটা হাসি দিয়ে বললো— ভয় করে তো! তবে আপনার হাতে মরতে অসুবিধে নেই।
— তুমি মরলে এবার আমি অনাথ হয়ে যাবো।
— এহ, তাহলে এতক্ষণ পর্যন্ত যে কাঁদছি তা কারো চোখে পড়ছে? বুকে ও টেনে নিলো না!
নীচের দিকে তাকিয়ে অনা কথাগুলো বললো। আমি দু কদম পিছুপা হলাম। তারপর বললাম— এইযে কিছু না হতেই বাপের বাড়ি চলে আসা। এটা আমি একদমই পছন্দ করি না।
— আর আসবো না। এবার আমার ঋণ পরিশোধ করেন।
— কীসের ঋণ?
— ঐদিন বাসে পানি দিয়ে যে আপনার পিপাসা মিঠিয়েছিলাম?
— তো এখন আমাকে কী করতে হবে?
— এই রুমে আমি থাকি না। শুধু কুলে করে পাশের রুমে নিয়ে যাবেন এখান থেকে।
আমি ঋণ পরিশোধ করতে নয়। ভালোবেসেই অনাকে কুলে নিয়ে বললাম— মরে গেলাম, এতো মোটা হয়েছো তুমি! কম খেতে পারো না?
— এখনি মোটা হয়ে গিয়েছি? বাচ্চাকাচ্চা হলে তো কাছেই আসবেন না।
ওর চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম তাই সামনে কী ছিলো দেখিনি। একটা চেয়ারের সাথে ধাক্কা খেয়ে বারান্দায় আমার কুল থেকে অনা মাটিতে পড়ে গেলো! অবশ্য ব্যাথ পায়নি! এ কী? সবাই দেখি আমাদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে! আমি কী ইচ্ছে করেছি না কী?
এদিকে অনা লজ্জায় আমার শার্টের তরে মাথা লুকাচ্ছে! আমারো তো লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে অবস্থা! দিনদুপুরে অঘটন ঘটে গেলো! আমি কোথায় মাথা লুকাবো?