ভেতর দৃষ্টি

ভেতর দৃষ্টি

গভীর রাত,একটা রুম, এক চিলতে আলো,আর এক জোড়া ক্লান্ত চোখ,

ডাইরির সাদা বুক,খস্ খস্ শব্দ তুলে এগিয়ে চলছে একটি কলম,

গায়ে হলুদ এতক্ষণে শেষ, বিয়ে টা কাল। আর কাল ঠিক এই সময় এ হয়তো বাসর ঘরে।বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে রিপ্তি। ফর্সা মুখ,নির্লিপ্তভাবে চেয়ে থাকা দুটি মায়াবী চোখ যে কাওকে আকর্ষন করতে সময়ের ব্যাপার মাত্র।বিত্তশালী হওয়ার পর ও নেই কোন অহংকার,আছে শুধু কৃত্রিম রাগ আর চাপা অভিমান।যা কেও বুঝে তো কে বুঝে না,যে বুঝে সেই তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করে নিজের অজান্তে যেমন টা ছিলাম আমি।ওর সাথেই পড়তাম,পড়ালেখায় ভালো হলে ও ছিলাম বড্ড আগোছালো।নিজের খেয়াল খুশি মতো চলতাম বাবা মায়ের বড় ছেলে বলে।অনেক আগে হুমায়ন আহমেদ স্যার এর একটা লেখায় পড়েছিলাম” মেয়েরা গোছালো মানুষের চাইতে আগোছালো মানুষ গুলোকেই বেশি পছন্দ করে।তার এই বিখ্যাত উক্তি টা আমার আর রিপ্তির সম্পর্কের মাঝে এসে সত্যতা প্রকাশ করেছিলো।দৃশ্যপটে ভেসে উঠে সেই প্রথম দিন…

:কিরে রেসান কি করিস এখানে (সুমিত)
:দেখতেই তো পাচ্ছিস(আমি)
:আচ্ছা তুই কি বাচ্চা নাকি,ভার্সিটি পড়ুয়া কেও এভাবে মাটিতে বসে কাগজ নিয়ে খেলা করে?(সুমিত)
:হয়তো..দেখ প্লেন টা খুব সুন্দর হইচে তাই না..
(সামনের দিকে উড়িয়ে দিয়ে আবার আগের কাজে মনযোগ)
সুমিত আমার দিকে তাকিয়ে আর কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে
:এই ছেলে, এভাবে সবার সামনে কাগজ মেরে ইভটিজিং করতে লজ্জা করে না।আমি যদি এখন তোমাকে কয় টা থাপ্পড় দিই
:প্লেন টা খুব সুন্দর হইচে তাই না(উপরের দিকে না তাকিয়েই আমি)
:উফফফ,,দেখতে তো লাগে খচ্চর এর মতো বদমাইশ একটা।
:thank you.you may go now বলে যেই উপরে তাকালাম, অমনি চমকে উঠলাম।
মেয়েটি চলে গেলো।
:হলো তো…এবার তো চল(সুমিত)
:দোস্ত মেয়েটা কে?(আমি)
:রিপ্তি আমাদের সাথেই তো পড়ে কেন দেখস নাই!! অহ দেখবি কেমনে থাকস তো সারাদিন বাঁদরামি তে।

আবার খস্ খস্ শব্দ তুলে এগিয়ে চললো কলম টা:

সেদিন এভাবেই শুরু হয়েছিলো আমাদের পরিচয়।আস্তে আস্তে ফ্রেন্ড হওয়া,প্রতিদিন কথা বলা।সুমিত আমি আর সে একসাথে বসে আড্ডা দেওয়া, ক্যান্টিনে আর ক্যাফেতে কিছু মুহূর্ত কাটানো।এভাবেই যেতে লাগলো দিন।ক্রমেই দুরুত্ব ঘুচতে শুরু করলো। আগোছালো থাকার কারনে সব সময় একটু আধটু শাসন করতো।এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিতো আর মাঝে মাঝে লাগিয়ে দিতো শার্টের উপরের বোতাম টা।এগুলোর কারেই তার প্রেমে পাড়ে যেতে সময় লাগলো না।তবে বাংলা সিনেমার আট-দশ টা নায়ক এর মতো হাবুডুবু খাওয়ার আগেই সুমিত ছোট্ট একটা নৌকা বানিয়ে তাতে তুলে দিয়েছিলো আমাদের দুজন কে,ভালোবাসার নৌকা

তার পর থেকেই বাড়তে লাগলো কেয়ারিং আর
শেয়ারিং এর ব্যাপার টা।দুজনেই দুজন কে খুব
ভালোবাসতাম।খুব হ্যাপি ও ছিলাম। কিছু মানুষের
কপালে সুখ বেশি দিন থাকে না জানতাম কিন্তু সেই
কিথাটি যে আমার জিবনে অ প্রতিফলিত হবে কে
জানতো চোখের সামনে ঝাপ্সা ভাবে ভেসে
উঠলো সেই দিন টা….

:রেসান আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে(রিপ্তি)
:ফাজলামো বন্ধ করো, চলো ফুস্কা খাবো
(আমি)
: রেসান আমি ফাজলামো করছি না।সত্যিই আমার
বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
: please explain..
:ছেলের নাম আবির,আব্বুর কলিগের ছেলে
এয়ারলাইন্স এ জব করে।সেদিন দেখতে
এসেছিলো দুই ফ্যামিলিরি মত আছে আমার কিচ্ছু
করার নাই।
:ওহহহ….কি আর করার আমি তো জব ও করি না যে
তোমায় নিয়ে রাখবো।
:আমাকে ক্ষমা করে দিও প্লিজ….একটু জড়িয়ে ধরবে।
তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে আলতো করে একটা
চুমু দিয়ে শুধু বললাম ভালো থেকো।
:খুব ভালোবাসি তোমায় ক্ষমা করে দিও।

চোখ টা ঝাপ্সা হয়ে এলো।সেদিন তার চোখে আমি কান্না দেখেছি, আমি জানি তার ভালবাসায় কোন খাদ নেই।পুরোটা দিয়েই ভালোবাসে আমাকে কিন্তু সে আজ অনন্যোপায়।স্লিপিং পিল গুলো আজ খুব কাজ দেবে।

খস্ খস্ শব্দ তুলে এগিয়ে চলা কলম টা থেমে গেলো।
ডোরবেল টা বেজে উঠলো,সেই সাথে দরজার মৃদু ঠক ঠক শব্দ।
ডাইরি টা বন্ধ করে উঠে গেলাম দরজা দরজা খুলে দেখলাম সুমিত আর রফি ভাই দাড়ানো।সুমিত ঘরের ভিতরে এসে দাঁড়ালো আর রফি ভাইর পিছন থেকে সরে আসলো রিপ্তি।গায়ে মুখে এখনো হলুদ লাগানো।কিছু না বলেই আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো। আমি হতবিহব্বল।
রফি ভাই আর সুমিত আমার হাতে কিছু টাকা আর একটা খাম দিলো।

:খামে তোর জয়েনিং লেটার আছে তোরা এখান থেকে ফরিদপুর চলে জাবি,খামের সাথে দেওয়া ঠিকানায়।আমি আর সুমিত আগামী পরশু যাবো তখন তোদের বিয়ে হবে।

দেখলাম সুমিত একটা ব্যাগ নিয়ে এলো আমার রুম থেকে।

:এখানে তোর জামা কাপড় সব নেওয়া আছে। তোরা যা আমরা শিগ্রই আসবো।(সুমিত)
রফি ভাই আর সুমিত কে জড়িয়ে ধরলাম।
:যা তারাতড়ি যা।(রফি ভাই)
:ঠিক মতো যাইস।আর রিপ্তির দিকে খেয়াল রাখিস।(সুমিত)

অতঃপর রিপ্তির হাত ধরে অন্ধকারেই রওনা দিলাম।নতুন উদ্দেশ্যে,নতুন জীবনের লক্ষ্যে,নতুন ভোরের আসায়।
★কিছু বড়ভাই আর কিছু ফ্রেন্ড মাঝে মাঝে এমন সব উপকার করে যা জীবন কে সম্পুর্ন পরিবর্তন করে দেয়।

********************************************সমাপ্ত***************************************

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত