যক্ষের ধন

যক্ষের ধন

রিফাত অনেক দিন পর তার ইমেইল বক্সে ইমেইল চেক করতে গেল। পরীক্ষার জন্য ব্যস্ত থাকায় মেইল চেক করা হয়নি । কিছু ফ্রেন্ড ফাজলামি করে মেইল পাঠিয়েছে.. অথচ তারা পাশেই বসে আছে । পরীক্ষার পর সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে রিফাত এর বাসায়। হঠাৎ একটা মেইল আসল unknown address থেকে । মেইল টা বুঝতে অনেকক্ষণ সময় লাগলো । আসলে এইটা একটা নকশা। একটা জায়গার নাম দেয়া আর সাথে নকশা। মেইল টা রিফাত তার দুই বন্ধু.. বাপ্পি আর শামীম কে দেখাল। বাপ্পি জায়গা টা দেখে বলল.. আরে দোস্ত !! এইটা ত আমাদের

গ্রামের বাড়ির পুরুনো শ্মশান ঘাট এর নকশা । সবাই বলতো এইখানে যক্ষের ধন আছে । কিন্তু কোথায় আছে এইটা কেউ জানতো না..কিন্তু এই নকশাতে ত সেই গোপন ধনের সন্ধান দেওয়া । শুনে ত তিন বন্ধু কি খুশি.. তারা গোপন গুপ্তধনের সন্ধান পেয়ে গেল !! সেই দিন ই সন্ধ্যায় তারা বাপ্পিদের গ্রামের বাড়ি চলে গেল। সেইখান এ বাপ্পির চাচাতো ভাই রাকিব এর কাছে এই কথা বলল। রাকিব আবার কিছু ক্ষমতা ছিল..সে আত্মা দের উপস্থিতি টের পেত…তাদেরকে বশেও আনতে পারত..সে সব শুনে বলল..

বুঝলাম তোদের কথা.. কিন্তু তোরা কি একটুকু জানার চেষ্টা করিস নাই.. এইটা পাঠালো কে?
এমন ও ত হতে পারে এইটা ভুল করে এসে গেসে। রিফাত বলল. .যাই হয়সে ভাই.. আমরা ওই গুপ্তধন চাই। আর কিছু জানি না । রাকিব বলল.. তবে শোন..যেহেতু ওই নকশা শ্মশান এর দিকে নির্দেশ করেছে তাহলে ওইটা যক্ষের ধন । বাপ্পি, রিফাত আর শামীম একসাথে বলে উঠলো. যক্ষের ধন ! এইটা আবার কি ?? রাকিব বলল.. আগে জমিদার তাদের সম্পদ আগলে রাখার জন্য.. ৬/৭ বছর এর ছেলে খুঁজত…যেই ছেলের জন্মের পর তার বাবা মারা

গেসে.. আর তার কোন ভাই বোন নেই. .সেই রকম ছেলে আনত। সেই ছেলেকে দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে.. পেট ভরে খাবার খাইয়ে নতুন ধুতি পরিয়ে একটা পূজা করানো হত।। পূজা শেষ করে.. মাটির নিচে গোপন ঘরে যেখানে জমিদার রা তাদের গুপ্ত ধন লুকিয়ে রাখত সেখানে ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়া হত।। তারপর বড় মাটির প্রদীপ এ ঘি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে.. কিছু খাবার রেখে…ছেলেটিকে ওই ঘরে আটকে রেখে দিত।। ওই ছেলেটি কয়েকদিন পর মারা যেত.. আর ওদের আত্মা ওই গুপ্তধন কে পাহারা দিত।। ওদের কে বলে যক্ষের ধন। ওই সম্পদ যদি জমিদার এর কোন বংশধর হাত লাগায় তাহলে যক্ষ কিছু করবে না । কিন্তু বাহিরের কেউ হাত লাগালে..বা ওই ধন আনতে গেলে তাদের নৃশংস ভাবে মেরে ফেলে । এখন বল তুমরা কি চাও ?? বাপ্পি বলে…ভাইয়া তুমি থাকতে ভয় কি বল !! তুমি ত এরকম প্রেতাত্মা দের বশে আনতে পার. .তুমি আমাদের সাহায্য করবে প্লিজ !! রাকিব বলল.. যক্ষদের ক্ষমতা

অনেক বেশি। ওরা দায়িত্ববান.. তাদের কে ঠকানো খুব কঠিন। তাছাড়া তুমরা যা করতে যাচ্ছ তা ত ঠিক হচ্ছে না। আরেকজন এর সম্পদ তুমরা কেন নিচ্ছ !! সবাই এসে রাকিব এর পা ধরে টানাটানি শুরু করল। রাকিব বলল…ঠিকাছে। দেখি নকশা টা আন আমার কাছে। রাকিব খুব মনোযোগ দিয়ে নকশাটা দেখল…শ্মশান ওর পূর্ব দিকে একটা পুরুনো কালি মন্দিরা এর পিছে একটা জঙ্গল আছে। বলি দেওয়ার পর পশুর কাটা মাথা টা ওইখানে রেখে আসা হয়। ওইটার পিছে একদম সোজা যেতে হবে তখন একটা পুরুনো তেতুল গাছ পাবে ওই গাছের নিচে একটা বড় সিন্ধুক এ গুপ্তধন। প্ল্যান করা হল কাল রাত ১২:০০ টার পর যাওয়া হবে। সারাদিন ভাবল রাকিব…তার ভাল লাগতেসে না. .এদের কথায় রাজি হওয়াটা বোধহয় ঠিক হয়নি। শামীম এইটা খেয়াল করল…সে বলল ভাইয়া কি হল আপনার ? আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি কিছু বলতে চাইছেন.. রাকিব বলল…তুমরা কি করবে এইটা নিয়ে ?

– ভাইয়া ওদের কোন দোষ নেই। আমার ছোট টা বোনের ক্যান্সার। বয়স ৫ আমার বাবা মারা গেসে তখন আমি ক্লাস ৭ এ পড়ি। আমার বোন তখন একদম ছোট । প্রচুর টাকার দরকার আমার। তাই বাপ্পি আর রিফাত এইটা নিতে চাইছে আমাকে দিবে বলে । রাকিব তখন বলল..দেখ ভাই…আমি জানি না তুমাদের কতটুকু রক্ষা করতে পারবো…কিন্তু আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব । বাপ্পি ত এতিম মা বাবা কেউ নেই.. তাই তার অনুরোধ ফেলতে পারি না। সময় হয়ে এল.. তারা রওনা দিচ্ছে ১১:৩০ টায় রাস্তায় তাদের সব বুঝিয়ে দিচ্ছে রাকিব । বাপ্পি তোকে খুব রিস্কের কাজ টা দিচ্ছি..আমি আযান এর সময় খুব দ্রুত ওইখানে গিয়ে যক্ষের মাথার খুলি নিয়ে এসেছি. .সূরা তাবিজ দিয়ে লাল

পুটলি তে নিয়ে এসেছি । তর কাছে এইটা থাকবে । এইটা তর কাছ থেকে বার বার নিতে চাইবে.. বিভিন্ন রূপ ধরে.. কিন্তু দিবি না কাজ না হওয়া পর্যন্ত । আর তুমরা তিনজন একজন আরেকজন এর হাত ধরে আমার শিখানো সূরা পরে ওই পর্যন্ত যাবে…সাবধান হাত ছেড়ো না কিন্তু !!! অবশেষে তারা মন্দির এর সামনে এসে পৌছল । ঘুটঘুটে অন্ধকার. .রাস্তায় এত অন্ধকার ছিল না । কেমন অস্বাভাবিক লাগছে জায়গা টাকে …আর কি নিরব পরিবেশ। তাদের শ্বাস ফেলার আওয়াজ টাও শুনা যাচ্ছে । রাকিব একটা জায়গায় চাদর বিছিয়ে বসে পড়ল..আর বাপ্পি একহাতে পুটলি টা ধরে আরেক হাতে শামীম এর হাত ধরল..শামীম ধরল রিফাত এর হাত । রিফাত এর আরেক হাতে টর্চ লাইট । তিন জনে খুব সাবধানে দ্রুত পা ফেলে মন্দির পার করলো। শামীম র কাধে ব্যাগ. .মাটি খোড়ার জিনিসপত্র। সে একটু পিছে…জঙ্গলে ঢুকতেই খস খস আওয়াজ পেল। রিফাত এর পাশের ছোট ছোট গাছ গুলা নড়তেসে.. এইদিকে

আলো ফেলতেই দেখল.. বলি দেওয়া একটা ছাগলের মাথা.. গাছগুলা খাচ্ছে আর মাথার কাটা অংশ থেকে রক্ত পড়ছে। টর্চ টা ফেলতেই ছাগলের মাথা টা মানুষ এর মত হাসি দিয়ে বলল. .যাস না,,খুব্বি খারাপ হবে রে! এইটা দেখে তাদের তিন জনের শরীর এ শীতল একটা বাতাস বয়ে গেল. .তারা এই দৃশ্য দেখে খুব ঘাবড়ে গেসে । একজন আরেক জন এর দিকে তাকিয়ে রইল..সূরা পরে আবার দ্রুত হাটা ধরল..কিছুদূর যেতেই শামীম শুনতে পেলো তার ছোট বোন তাকে ডাকছে. .এই ভাইয়া ! পেছনে দেখ !! ওই লাল পুটলি টা আমাকে দিয়ে যা । দে না ভাই ! আমি ত মরেই যাব.. আমার ইচ্ছা পূরণ করবি না । শামীম যেই পেছন ফিরতে গেল. .বাপ্পি আর রিফাত হ্যাচকা টান দিল শামীম এর হাতে। শামীম খুব কষ্টে পিছে ফিরার ইচ্ছা দমন করলো । এখন তারা সেই তেতুল গাছ এর নিচে দাঁড়ালো । তারা দেখতে পেল. .তাদের দিকে অসংখ্য সাপ আসতেছে. .তিনজন ভয়ে চোখ বুজে জোরে জোরে সূরা পড়তে লাগলো । কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখে কিছু নেই । শামীম আর রিফাত মাটি খুড়া শুরু করলো. .আর শুরু হল মাটি

থেকে রক্ত বের হওয়া। তারা হতবাক হয়ে গেল এত্ত রক্ত..তাদের হাত পা ভিজে যাচ্ছে রক্তে । বাপ্পি ইশারা দিল মাটি খুড়ে যেতে । অবশেষে তারা পেয়ে গেল বাক্স । আর বাক্সের পাশে খুলিহীন একটি ৬/৭ বছরের বাচ্চার কঙ্কাল। এই সেই যক্ষ । তারা ভয়ে ভয়ে বাক্স তুলে রওনা দিল। হঠাৎ বাপ্পি দেখতে পেল.. একটা অদৃশ্য ছোট ছায়া তার ভাই রাকিব এর মাথা টেনে ধরে বলতেছে…খুলি ফেরত দে ! নয়ত এর মাথা টেনে ছিড়ে ফেলবো । বাপ্পি সূরা পড়া বন্ধ করে দৌড়ে খুলি ছায়ার দিকে ঢিল দিল । তখনি রাকিব না বলে চিৎকার করে দৌড়ে আসতে লাগলো আর বাপ্পির ঘোর কাটল। রাকিব চিৎকার দেওয়ায়. .ওর জিভ খসে পড়ে গেল.. আর বাপ্পির মাথা কেটে ফেলে দিল যক্ষ। শামীম আর রিফাত সূরা পড়তে দৌড়ে বাড়ির সামনে চলে গেল .. পিছে এক দানবিক আওয়াজ এ আর্তনাদ শুনা গেল । ওরাও বাড়ির সামনে বেহুঁশ হয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে বাপ্পিকে গ্রামের বাড়িতেই কবর দিল. .রাকিব ত কথা বলতে পারে না.. শামীম আর রিফাতকে বাক্স সহ ট্রেন এ তুলে দিল..

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত