কপিমাস্টার

কপিমাস্টার

২০০৯ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি। দুদিন আগেই ঘটে গেছে পৃথিবীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ। বিডিআর ইতিহাস কালিমায় ভরে গেছে। সেনাবাহিনীর ভেতর থেকে চলে গেলো অমূল্য রত্নগুলো। কিন্তু এমন কেউ কি বেচে ছিলো যার কারণে হত্যাকারীদের এই হত্যাযজ্ঞ বুমেরাং হয়ে ফিরে যাচ্ছে তাদের কাছে? আজো অনেক খুনির খোজ পাওয়া যাচ্ছে না। কেনো যাচ্ছে না, কেউ জানে না।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করেই রাঙ্গামাটির সেনা ঘাটিতে একটা কল আসে। মেজর আফনান নামে একজন বেচে পালিয়েছেন পিলখানা থেকে। হইচই বেধে গেলো। কি হলো কি হলো? জানা গেলো সেদিন তিনি ল্যাবে বসে ছিলেন একটা কাজে। ওয়েভ ওভার দ্যা এয়ার প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়েছিলেন পিলখানায়। পরে অজ্ঞাত সেই হত্যাকারীদের গুলির আঘাতে প্রজেক্টের রেডিয়েশন কিউব ফেটে যাওয়ায় নিউক্লিয়ার হিট এসে পড়ে তার গায়ে। আফনানের মৃত্যু হয়েছে ভেবে হত্যাকারীরা আর এগোয়নি ল্যাবের দিকে।

কিন্তু এমন কিছু কি হয়েছিলো যে আফনান অন্যরকম চুপচাপ হয়ে যায়? বেচে ফেরার পর থেকে আজ পর্যন্ত সে মাথায় ইয়া বড়ো হুড ও ক্যাপ পড়ে বেরোয়। এমনকি প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটুও কথা বলে না। না সাব অর্ডিন্যান্স ডিভিশন এর কেউ ভয়ে তার কাছে আসে না, না উর্ধ্বতন কেউ তাকে রুমে ডাকে।

-আফনান হত্যাকান্ডের পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন মেডিকেল টেস্ট দেননি।
-তো?
-আপনাকে টেস্ট দিতে হবে কিছু। কোনো ধরণের হিস্টিরিয়া, ট্রমা থাকলে সেটা কিউর করানোর চেষ্টা চালানো হবে।
-আই আ্যাম ওকে। নো নিড টু টেস্টিফাই।

আজ ২০১৩ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি। রাত বারোটার কাটা পেরুবার সাথে সাথেই আফনান বেরিয়ে পড়লো ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে। ছুটি নিয়ে বাসায় যাচ্ছে সে। সিভিল এরিয়াতে ঢোকার সাথে সাথে সে খেয়াল করলো যে ফেউ লেগেছে। সোজা মিরপুরের দিকে একটা রিকশা নিলো। ২ নম্বর রোড আসতেই হুট করে নেমে গেলো। অন্ধকার একটা গলিতে ঢুকে আড়াল নিলো।

-আরে কই গেলো?
-দেখ এইটারে আজকে না মারলে মিশন শেষ হবে না। তিন বছর ধরে ঘুরছি। আর প্ল্যান তোমার তুমি জানো।
আরে তোমরা থামবা? আমি শেয়ালটাকে খুজছি। আর এরা আর্গুমেন্ট এ জড়িয়ে যাচ্ছে।

কথাগুলো শুনে আফনান মুচকি হাসলো। হাত গুটিয়ে প্রশস্ত করলো। তারপর…

-এইতো আমি এখানে। আমাকে খুজছিলে?
-আরে ঘুঘু দেখি এখানে।
-শুধু কি ঘুঘু একটা?
-মানে?

“এইযে”…

এরপর যা দেখা গেলো তা বর্ণনাতীত। আফনান একটা নয়, দুটো নয়। দশে দশে, শতে শতে বেরিয়ে এলো।

-ক্কে কে তুই?

-আমি কপিমাস্টার….

২০০৯ সালের বিডিআর পিলখানা হত্যাকান্ডে বেচে যাওয়া একজন ছিলো আফনান। এবং কাকতালীয় ভাবে ২০১৩ এর যুদ্ধাপরাধ এর বিচারে উত্তাল দিনগুলির এক রাতে তার আসল পরিচয় প্রকাশ পায় খুনি গোষ্ঠীর কাছে।

আফনানের ভেতর নিউক্লিয়ার শকওয়েভ ট্রান্সমিশন হওয়ায় আফনান মুহুর্তের ভেতর তার লাইভ রেপ্লিকা বের করতে পারে। ভাগ্যক্রমে সেদদিন তাকে খুন করতে আসা তিনজনের একজনের ওয়ারলেস ট্রান্সমিশন অন থাকায় ফেস টু ফেস সব কথা অন্য পাশে চলে যায়।
-মাই গড হোয়াট দ্যা হেল ওয়াজ দিস?
-ইউনিট টু, ইউনিট টু… গেট রেডি ফর প্ল্যান বি। ইউনিট ওয়ান হ্যাজ বিন ডেস্ট্রয়েড বাই দ্য টার্গেট।

ডি টাওয়ার।

মেটাহিউম্যান আ্যন্ড কমান্ডো আ্যালায়েন্স প্রজেক্ট(macap) কাজ শুরু করেছে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অতিমানবদের একত্র করতে। যন্ত্রমানবকে প্রধান করা হয়েছে মেটাহিউম্যান ইউনিটে। সাথে আ্যাসিস্টেন্ট করা হয়েছে দ্যা নার্ভ কন্ট্রোলার জাহিন।

বিপ বিপ বিপ। মেটাহিউম্যান ডিটেক্টর একটানা আওয়াজ করে চলেছে।
-কোথায় এটা?
-জিপিএস বলছে মিরপুর ২ এ।

কপিমাস্টার আফনান ততোক্ষণে আড়াল নিয়ে চলে গেছে নিজের বাসায়। কিন্তু জানেনা, ছোট্ট একটা পিন ট্র‍্যাকার শরীরে ঢুকিয়ে দিয়েই মৃত্যুর। কোলে ঢলে পড়েছে খুনিদের ইউনিট-১ এর সর্বশেষ ব্যাক্তিটি।

-কই? নার্ভ কন্ট্রোলার জাহিন বললো।
-উহহুউ… শুকে শুকে সামনের দিকে এগোলেন শামীম। মেটাহিউম্যান সেন্সর বসানো হয়েছে প্রতিটা মহল্লায়।

-তিনজনের গলার দাগ দেখে বোঝা যাচ্ছে একই সময়ে খুন হয়েছে আ্যন্ড দিস ইজ ভেরি ইম্পসিবল।
-দিস ইজ অলসো ভেরি উইয়ারড। বাজে কিছু একটা হতে যাচ্ছে কাল। নার্ভ কন্ট্রোলার জাহিন চিন্তিত হয়ে বললো।

আফনান ঘরে ঢুকে জামা কাপড় ছেড়ে শুয়ে পড়লো। গত তিনটা বছর নিজের বাসায় ঘুমাতে পারেনি। সিভিল এরিয়ায় তার স্টে করা বিপদজনক ভেবে আ্যডমিনিস্ট্রেশন তাকে ছুটি দেয় নি। আজ কতদিন পর… আর মায়ের হাতের রান্না আর বোনের বানানো শীতের পিঠা!
কিন্তু তখনো সে জানতো না যে আজ মধ্যরাতে এক ভয়ংকর দু:স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে!

আজ বুধবার।

একটা প্রশান্তির ছায়া লেগে আছে আফনানের চেহারায়। ঘুমিয়ে আছে সে বিছানায়। কিন্তু জানে না আজ ভয়ংকর একটা কান্ড ঘটতে যাচ্ছে তার বাসায়। ২০০৯ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর হত্যাকান্ড তার জীবনে যে বিভীষিকা নিয়ে এসেছিলো ঠিক একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে তার খুন করার জন্য ওত পেতে থাকা খুনিদের জন্য।

ওদিকে সূত্র ধরে ঠিকই আফনানের বাসার সামনে হাজির দ্য নার্ভ কন্ট্রোলার জাহিন, যন্ত্রমানব ও গোয়েন্দা শামীম।
-গেট কাভার। কেউ আসছে। শামীম বললেন।

যন্ত্রমানব ও জাহিন আলাদা হয়ে পড়লেন। দশ জনের একটা দল চুপি চুপি আফনানদের বিল্ডিং এর ভেতর ঢুকে পড়লো। সামনাসামনি একটা বিল্ডিং থেকে তাদের লুকিয়ে দেখছে শামীমরা।
-উজি সাব মেশিন? পাগল নাকি?
-ব্যাকআপ হিসেবে রাখার চিন্তা বোধহয়।
-জিম্মি টিম্মি করার ইচ্ছা নাকি আফনানকে? আমার তো তাই মনে হচ্ছে।
-হতে পারে।

ক্লিক!
দরোজাটা খুলে গেলো এক নিমেষে। লকটা খুলে ফ্রণ্টের লোকটা সামনে বাড়লো। লিভিং রুমের পাশেই আফনানের মা-বাবার বেডরুম। তার পাশেই আফনানেরটা। নবে হালকা মোচড় দিয়েই দরোজা খুলে ফেললেন সামনের দুজন। মেশিনগান তাক করে রাখলো ঘুমন্ত ভয়ংকর আফনানের দিকে। পাশের রুমে তিনজন ঢুকে তাক করলো তার মা বাবার দিকে। জেগে উঠেই ভিরমি খেয়ে উঠলেন আফনানের বাবা।

চোখ মেলে আফনান দেখতে পেলো তার রুমে দুজন বন্দুকধারী। শিউরে উঠলো সে। চোখ বন্ধ করে ভাবলো, না। তার নাম কপিমাস্টার। মুহুর্তেই দশজনে ভাগ হয়ে গেলো। দুজন মার্শাল আর্টস ট্রেনিং প্রাপ্ত মানুষের সামনে নিরীহ দশজন মানুষ কিছুই না। কিন্তু দশজন কমান্ডো ট্রেনিং প্রাপ্ত মানুষ মানে অনেক ভয়াবহ ব্যাপার।

সাই সাই করে চারটা আফনানের কপি হয়ে গেলো। এখন চৌদ্দটা আফনানের ভেতর আরো চৌদ্দটা আফনান যোগ হলো। ধুপ করে একটা শাওলিন কিক ঝেড়ে দিলো আফনানের প্রথম কপিটা সামনের লোকটাকে। উব্বুয়া করে আওয়াজ হলো। ঠং করে লোকটা বাড়ি খেয়ে থাই আ্যালুমিনিয়াম এর গ্রিলে বাড়ি খেলো। পরেরজনের ও একই দশা হলো। অপরদিকে আফনানের বাকি কপিগুলো ফাইট শুরু করে দিয়েছে। লোকগুলো বুঝতে পেরেছে যে তারা ভয়ানক এক ফাদে পড়েছে। ২০০৯ সালের প্রতিশোধ আজই যে নেয়া হয়ে যাচ্ছে তা হাড়ে হাড়ে টের পেলো কুচক্রীরা। বিডিআর পিলখানায় তারা যেভাবে খুন করেছিলো সামরিক অফিসারদের, তার চেয়েও ভয়াবহভাবে নৃশংস অবস্থায় তাদের খুন হতে হচ্ছে।

দড়াম করে পাখার সাথে বাড়ি খেলো শেষ লোকটা। পিলখানার প্রতিশোধ নিয়ে নিলো আফনান। লাশ গুলো সরাতে তার সব ক্লোন একযোগে নেমে পড়লো। রাস্তায় ফেলে দিয়ে সব আফনানের ক্লোন আসল আফনানের ভেতর মিশে গেলো। দরোজা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় যন্ত্রমানব বাধা দিলো।
-দাঁড়ান। আমরা মেটাহিউম্যান আ্যান্ড কমান্ডো আ্যালায়েন্স প্রজেক্ট থেকে এসেছি।
-তো? আমি কি করতে পারি?

দ্যা নার্ভ রিডার জাহিন হঠাৎ সামনে এসে চুপ হয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তার সেই চোখে কি ভাষা ছিলো তা শুধু আফনানই বুঝে নিয়েছে।

-ওকে আই আ্যাম ইন।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত