এমনই এক রাজ্যের কথা। সেই রাজ্যের রাজা খুব ভালো মানুষ। শাসক হিসেবেও খুব ভালো। প্রজারাও তাকে খুব মান্য-গন্য করে। কিন্তু সেই রাজার মনে একটুও আনন্দ নেই। রাজার খুব মন খারাপ। কারণ, রাজপুত্র, মানে তার ছেলে, যে আর ক’দিন পরেই রাজা হবে; সে ভয়ানক রাগী। কাউকে মানে না। সবার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এমনকি রাজাকে পর্যন্ত মান্য করে না। রাজা চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছেন। রাজপুত্র যখন রাজা হবে, কী হবে তখন এই রাজ্যের?
এভাবে রাজা প্রতিদিন মন খারাপ করে রাজদরবারে যান, আবার মন খারাপ করেই ঘরে ফিরেন। অনেক ডাক্তার-বদ্যি দেখানো হয়েছে, রাজপুত্রের রাগ কমেনি একরত্তি। একদিন রাজা এভাবেই মন খারাপ করে বসে আছেন রাজদরবারে। হঠাৎ এক দরবেশ এলেন তার কাছে। এসে বললেন, ‘কী হয়েছে মহারাজ? আপনাকে এমন বিমর্ষ লাগছে কেন?’
মহারাজ বললেন, ‘আমার পুত্রকে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি বাবা। ও কারও কথা শোনে না, খুব বদমেজাজি, জেদি আর একগুঁয়ে। ও এমনকি আমাকে পর্যন্ত মানে না। ও রাজা হলে কী যে হবে, এই নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।’
দরবেশ তখন বললেন, ‘ঠিক আছে, ওকে আমার কাছে নিয়ে আসুন। দেখি চেষ্টা করে ওর জন্য ভালো কিছু করতে পারি কিনা।’
একথা শোনামাত্র রাজা মশাই, রাজপুত্রকে ডেকে পাঠালেন। তারপর দরবেশের হাতে ছেড়ে দিয়ে আবার চিন্তামগ্ন হয়ে পড়লেন। আর ওদিকে দরবেশ করলেন কি, রাজপুত্রকে সঙ্গে নিয়ে রাজপ্রাসাদের বাগানে হাঁটতে লাগলেন। হঠাৎ তার চোখে পড়ল একটা ছোট্ট নিম গাছের চারা। দরবেশ তখন রাজপুত্রকে ওই নিম গাছের চারা থেকে একটা পাতা ছিড়ে মুখে দিয়ে চিবুতে বললেন। রাজপুত্র তাই করল।
কিন্তু পাতা মুখে দেওয়ামাত্র তার মুখ বিকৃত হয়ে গেল। কারণ তো জানোই, নিমপাতা হচ্ছে দারুন তিতা। রাজপুত্র মহা ক্ষেপে গিয়ে বলল, ‘এইটুকু গাছ আর এইটুকু পাতা; এতেই এত তিতা! বড় হলে না জানি আরও কত তিতা হবে! এই গাছকে আর বাড়তে দেওয়া যাবে না।’ এই কথা বলে রাজপুত্র করল কি, ওই চারাগাছটাকে একটানে উপড়ে ফেলে, ছিড়ে কুটি কুটি করে ফেলল।
‘দেশের মানুষও তোমাকে এভাবেই টুকরো টুকরো করে ফেলবে বৎস। কারণ, তুমি এখনও রাজা হওনি, তাতেই তোমার এত তেজ? রাজা হলে না জানি আরও কত তেজ হবে।’ রাজপুত্রের গাছ টুকরো করা শেষ হতেই বললেন দরবেশ।
একথা শুনে রাজপুত্র কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। এরপর দরবেশের দিকে ফিরে বলল, ‘আপনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন বাবা। আমি আর কখনও রাগ করব না।’
রাজপুত্র কিন্তু তার কথা রেখেছিল। বড় হয়ে সে একজন ন্যায় পরায়ণ রাজা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল।