জাপানের এক প্রত্যন্ত গ্রামে হানাহিটো নাম একজন দরিদ্র কৃষকের বাস। একদিন সে পরিবারের সকলের সঙ্গে আলোচনা করছিল, “আমি ফসল ফলাবার জন্য এত কঠোর পরিশ্রম করি তবুও আমরা পেট পুরে খেতে পাই না।”
তার বউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “তোমার আর কী দোষ বল? এ সবই হচ্ছে সর্বনাশা জঘন্য পঙ্গপালদের জন্য।”
হঠাৎ তার মেয়ের বাইরের দিকে নজর পড়ল। সে বলে উঠল “ওরা কারা মা?”
মা প্রত্যুত্তরে জানাল, “পর্দার সামনে তুমি পঙ্গপালদেরই কাউকে দেখে থাকবে।”
একরাশ ঘৃণা আর বিরক্তি মিশিয়ে ছেলে চিৎকার করে উঠল, “উঃ!”
হানাহিটো বললো, “এই শয়তান গুলোই তো আমাদের সব শস্য নষ্ট করে দেয়।”
তার বউ বলল, “ওরা সহজেই ওদের আকার পরিবর্তন করে যেখানে খুশি লুকিয়ে পড়তে পারে।”
গভীর দুঃখে, হতাশায় চিন্তামগ্ন হানাহিটো তার বেহালাটা তুলে নিয়ে তাতে সুর তুলল।
“বাবা! দেখো, দেখো, পঙ্গপালেরা সব তাদের লুকানো জায়গা থেকে একে একে বেরিয়ে আসছে।”
“মনে হচ্ছে তারা আমাদের বাজনার সুর উপভোগ করছে। সুরের তালে তালে তারা নাচতেও শুরু করেছে।”
এই দৃশ্য দেখে হানাহিটোর মাথায় একটা মতলব এসে গেল। সে পঙ্গপালদের জিজ্ঞেস করল, “আমার ধারনা তোমরা নাচতে জান?”
“অবশ্যই! আমরা যেখানে খুশি নাচতে পারি” একটা পঙ্গপালের সহাস্য জবাব।
“আচ্ছা তোমরা কী এই বোতলের মধ্যে নাচতে পারবে?”
“নিশ্চ্য়ই! কেন নয়?” বলতে বলতেই পঙ্গপালেরা সেই খোলা ছোট্ট বোতলের মধ্যে নাচ দেখাতে ঢুকে গেল। আর হানহিটোও সঙ্গে সঙ্গে সেই বোতলের ছিপিটা শক্ত করে বন্ধ করে দিল।
“কী মজা! আমরা পঙ্গপালদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেয়ে গেলাম। যাই, এই বোতলটাকে পরিত্যক্ত কারখানার মধ্যে ফেলে দিয়ে আসি।”
হানাহিটোর ভাগ্য তো ফিরে গেল। এদিকে তার পড়শী ঈর্ষাপরায়ণ জোভিহো আশ্চর্য হয়ে গেল। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল-
“ গতকাল পর্যন্ত তো হানাহিটো ছিল কপর্দকশূন্য নিঃস্ব এক মানুষ। কিন্তু আজ তার গোলা উপছে পড়ছে, ব্যাপারটা কী জানতে হবে।”
“কেন না আজ তাদের বাড়ি পঙ্গপালের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে।” জনৈক প্রতিবেশী উত্তর দিল।
“ওহো! তাই ভাবি! হুঁ হুঁ, ব্যাপারটা আমাকে নিজেকেই পরখ করতে হবে।”
জোভিহো পরিত্যক্ত কারখানার দিকে রওনা হল। হঠাৎ বোতলটা নজরে পড়ায় বলল, “ওহে নগণ্য পতঙ্গের দল, এস আমি তোমাদের এখনই মুক্ত করে দিচ্ছি।”
বোতলের মধ্য থেকে পঙ্গপালেরা সমস্বরে বলে উঠল, “আহা! কী চমৎকার দেবতুল্য মানুষ। এখানে আবদ্ধ থাকতে থাকতে আমাদের মাংসপেশীতে খিল ধরে গিয়েছিল। আমরা শ্রান্তিতে, আতঙ্কে ভুগছিলাম।”
হিহি করে হাসতে হাসতে জোভিহো বলল, “তোমাদের মুক্তি দিলাম। তোমরা এখন হানাহিটোর কাছে ফিরে যেতে পার।”
“না না কক্ষনো না- এ ভুল আমরা আর করব না। সে খুব নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ। আমরা বরং তোমরা সঙ্গেই আনন্দের সঙ্গে থেকে যাব।”
জোভিহোর গোলা ঘরে পঙ্গপালেরা অনেক বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করল। তারা সেখান আরামে কালাতিপাত করতে লাগল।
কিছুদিন পর গোলাজাত ফসল বার করতে গিয়ে জোভিহোর তো চক্ষু চড়কগাছ। পঙ্গপালের দল সব শস্য খেয়ে শুধু খোসাগুলো ফেলে রেখেছে।
এখন জোভিহো আক্ষেপ করে বলতে লাগল, “হায়, হায়! আমি কী ভুল করলাম! পরের সুখ সইতে না পেরে আমি নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলাম। আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম।”