“মামা, ওগুলো কী গো!”
সবেমাত্র শিয়ালের ফোল্ডারটা খুলেছিলাম কম্পিউটারে। ফেসবুকে শিয়াল নিয়ে একটা লেখা লিখব। আমার শহুরে বন্ধুদের শিয়াল নিয়ে খুব আগ্রহ। তারা লাইক আর শেয়ার করে দিনদুয়েকের জন্য আমার হোমপেজে একটা হুল্লোড় তুলবে। ভাল লাগবে বেশ। লেখার আগে নিজের তোলা শিয়ালের ভিডিও আর ছবিগুলো একবার দেখে নিচ্ছিলাম। তখনই ভাগ্নের আগমন।
গলা পেয়েই চটপট ফোল্ডারটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভাগ্নে ঠেকানো সহজ কাজ নয়। অমন দুর্দান্ত কংসরাজাও পারেনি। আমি তো কোন ছাড়! কম্পিউটার টেবিলের কাছে এসে প্রথমেই তার কৈফিয়ৎ দাবি, “বন্ধ করলে কেন?”
কী উত্তর দিই? চুপ করে রইলাম। কিন্তু চটপট ফোল্ডারটা খুলে দিলাম। ছবিগুলো খুলতেই তিনি বিজাতীয় শব্দ করে অবাক হলেন, “ওয়াও! অ্যানিমাল প্ল্যানেট নাকি মামা! গিধর তো এগুলো।”
ভাগ্নেবাবু প্রবাসী বাঙালি। বাবার চাকরির সূত্রে তিনি মুম্বইবাসী। ফলে তাঁর বাংলায় নানা ভাষার মিশেল। জামাইবাবু কম আসে। কিন্তু স্কুলের পরীক্ষা শেষ হলে দিদি প্রতি বছর চলে আসে ছেলেকে নিয়ে। ভাগ্নেও মামার বাড়ি আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। থাকবে না কেন? মামার বাড়িতে যে খোলামেলা পরিবেশ। বাগান ঘেরা বাড়ি। অনেকটা উঠোন। কাছেই বড় খেলার মাঠ। সব মিলিয়ে দুরন্ত দুদ্দাড়। তাছাড়া এখানে এলে যে মামাকে গুগল সার্চ ইঞ্জিন ভেবে যত খুশি টাইপ আর এন্টার করা যায়। মুম্বইয়ে বন্ধ ফ্ল্যাটে তো শুধু মা। সেখানে সার্চ অপশন ব্লক করা। কাজের সময় বেশি প্রশ্ন করলে দিদি দেয় এক ধমক। আর মামার সার্চ ইঞ্জিন? বিরক্তি-রাগে সেটা যতক্ষণ না “৪০৪ সার্ভার নট ফাউন্ড” দেখাচ্ছে ততক্ষণ ভাগ্নের সার্চ চলতে থাকে।
এখন যেমন শুরু হল। আমি যেই বললাম, “হ্যাঁ, শিয়াল।” মুহূর্তে পরের প্রশ্ন ধেয়ে এল, “ওহ্! আই অ্যাম রাইট। কিন্তু মামা, ওগুলো ফক্স না জ্যাকেল?”
এই রে! ফক্স-জ্যাকেলের রহস্য তো আমি বড় হয়েও উদ্ধার করতে পারিনি। একেই বলে ইতিহাসের ফিরে ফিরে আসা। কিংবা “নরানাং মাতুল ক্রম”…মানুষ মামাদের মতো হয়। ছোটবেলায় আমিও এরকম প্রশ্নের গাড়ি ঠেলে দিতাম মামা-মাসিদের দিকে। গরমের ছুটি মানেই সোজা মামার বাড়ি, নবদ্বীপ। দুপুরে আমবাগানে গাছের নীচে মাদুর বিছিয়ে শুয়ে শুয়ে মামা-মাসিদের জ্বালানো। এবং আমারও আগ্রহ ছিল ফক্স আর জ্যাকেলের পার্থক্যে। মামার বাড়ির পিছন দিকে বিশাল মাঠ আর তার সীমানায় জঙ্গল। মাঠ দিয়ে শিয়াল ছুটে জঙ্গলে গিয়ে ঢুকত। সঙ্গে সঙ্গে আমারও প্রশ্ন, ওগুলো ফক্স না জ্যাকেল? মামা বা মাসিদের কেউ একটা আমার মুখ বন্ধ করতে বলেছিল, যেগুলো খ্যাঁক খ্যাঁক করে ডাকে সেগুলো ফক্স। আর যেগুলো হুক্কা হুয়া করে ডাকে সেগুলো জ্যাকেল। সেটাই বলব? না, থাক। আবার জেরা শুরু হবে। তাছাড়া বাচ্চাদের ভুল শেখানো ঠিক হবে না।
“ঠিক জানি না রে, বাবা।” বললাম আমি। “ডোন্ট নো? অল রাইট। বায়োলজির টিচারকে জিজ্ঞাসা করে নেব। কিন্তু মামা, তুমি কী করে ভিডিও করলে শিয়ালগুলোর? তুমি কি অ্যানিমাল প্ল্যানেটের অস্টিন স্টিভেন্স, নাইজেল মারভেন?” এবার রাগ চড়ছে। লেখার সময়ে বিরক্ত করলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আগের বারে প্রশ্নবাণ সামলাতে না পেরে হাত চালিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর দিদি আর মা মিলে আমায় যা হেনস্থা করেছিল! রাগ সামলে প্রসঙ্গ ঘোরানোর চেষ্টা করলাম। বললাম, “দিদা আজ টিফিনে কী করছে দেখে আয় তো।”
বিচ্ছুটা বেরোলেই আমি দরজা বন্ধ করে দেব এই ছিল মনে। কিন্তু ভাগ্নেবাবু জানালেন, “দেখে এসেছি। লুচি আর কিমা দিয়ে ঘুঘনি। ও মামা, বলো না, কী করে তুললে? তোমাকে বাইট করেনি তো?”
মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছিল। ওর নয়, নিজেরই। পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি, বিভূতিভূষণের বালক অপু আমার সামনে বসে। আর সে রেললাইনের বদলে শিয়াল নিয়ে পড়েছে। কী করে এর মুখ বন্ধ করি রে বাবা! হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গিয়ে ঘর থেকে বের করে দেব? কিন্তু তারপর মা আর দিদি মিলে আমার যা হাল করবে! ভেবেই শিউরে উঠলাম। তাহলে উপায়? একটা যা গল্প হোক গল্প বলে চুপ করিয়ে দিই? গল্প শেষে বলব, এবার কেটে পড়। আমার কাজ আছে।… তাই করি।
আমি শুরু করি, “শোন, পুরো ঘটনাটা তোকে বলছি। চুপ করে শুনবি। মাঝে কোনও প্রশ্ন করবি না। আমাদের বাড়ি আসার রাস্তাটা দেখেছিস তো? (ভাগ্নে মাথা নাড়ল) পাকা রাস্তা থেকে নামলেই ফাঁকা মাঠ। তার মাঝখানে মোটা আলপথ। ওই রাস্তা দিয়েই আমি রোজ রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফিরি। পাত্রপাড়ার কুকুরগুলো আগে রোজ তাড়া করত। এখন বোধহয় চিনে গিয়েছে। দু’একবার ঘেউ ঘেউ করেই চুপ করে যায়। বুঝলি, তখন বর্ষাকাল। মাঠঘাট সব জলে ভরা। একদিন ছপ ছপ করে আওয়াজ কানে এল। ভেবেছিলাম, কোনও কুকুর হয়তো জল ভেঙে যাচ্ছে। দ্বিতীয় দিনেও ওই একই রকম আওয়াজ, ছপ…ছপ…ছপ।”
ভাগ্নে আমার একটু কাছে সরে এল। ভয় পেল নাকি! উফ! ভয় পেয়ে বেশ মাঝপথে ঘর ছেড়ে পালায়…কী আনন্দ! ভয় বাড়াতে রহস্যময় গলায় আবার শুরু করি, “বুঝলি, প্রথম দু”দিন পাত্তা দিইনি। তখন তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরার তাড়া। খিদে পায়। তোর দিদা অত রাত পর্যন্ত না খেয়ে আমার জন্য বসে থাকে। দাদু তো আগেই ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু পরপর তিনদিন একই ঘটনা ঘটল। চতুর্থদিনে আমি টর্চের আলো ফেললাম।”
“তুমি মশাল জ্বেলে বাড়ি ফেরো?”
“মশাল কোথা থেকে পেলি?”
“ওই যে বললে, টর্চের আলো ফেললাম। টর্চ আমি দেখেছি। অলিম্পিক টর্চ। গেমস শুরুর আগে ওটা নিয়ে রান করে।”
ভাগ্নের সমস্যাটা বুঝতে পারলাম। মুম্বইয়ে অত আলোয় টর্চের কোনও চল নেই। তাই বুঝতে পারছে না। টর্চলাইটকে মশালের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। আমি অফিসের ব্যাগ থেকে টর্চ বের করে দেখালাম। উনি হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সুইচ টিপে দেখে আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর বললেন, “এবার বলো।”
নির্দেশ মতো আবার শুরু করলাম, “টর্চের আলোয় দেখি, মাঠের জল ভেঙে দৌড়ে আসছিল একটা শিয়াল। আলো পড়তেই শিয়ালটা থমকে দাঁড়ায়। আমি হাঁটতে শুরু করি। এবার আলপথের উল্টোদিক থেকেও ছপ…ছপ শব্দ। আবার আলো ফেলি। আরও দুটো! টর্চের আলো আর আলোর পিছনে মানুষ দেখে প্রথমে শিয়ালগুলো ভড়কে যায়। থামে। তারপর পিছন ফিরে ছুট লাগায়। কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে তাকায়। এখনকার টর্চগুলো নানা কায়দার। সুইচ সামনে-পিছনে করে তেড়িয়া বা নিভু নিভু আলো করা যায়। আমিও আলো একবার জোর করি আরেকবার মৃদু।”
আমার হাতে ধরা টর্চের দিকে আঙুল দিয়ে দেখায় ভাগ্নে। তারপর নির্দেশ দেয়, “দেখাও।” কী দেখাব? নির্দেশ আসে, “তেড়িয়া আর নিভু নিভু আলো।”
খাটের নীচেটা একটু অন্ধকার। সেখানে আলো ফেলে ভাগ্নেঠাকুরের নির্দেশ মতো আলোর কম-বেশি খেলা দেখাই। সন্তুষ্ট হয়ে উনি গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। আবার শুরু হয় আমার কথকতা, “বুঝলি, কম-বেশি সেই আলোর খেলায় ওরা আরও ভয় পেয়ে যায়। তারপর প্রাণপণে ছুট লাগায়। গভীর রাতে সারা মাঠ জুড়ে শোনা যায় ওদের পালানোর ছপ ছপ শব্দে। বুঝলি, বাড়ি ফেরার পথে রোজই তিনটে শিয়ালের আওয়াজ পেতে লাগলাম।”
ভাগ্নে প্রশ্ন করে, “ওই তিনটে শিয়ালই তোমাকে রোজ দেখা দিত?”
মোক্ষম প্রশ্ন! এর কী উত্তর হয়? শিয়াল চেনা কি খুব সোজা কাজ! একটা শিয়ালের থেকে আরেকটার পার্থক্য করাই তো মুশকিল।
ভাগ্নেকে বোঝালাম, “টর্চের আলোয় ঠিক চিনতে পারি না। তুই মুখটা কি বন্ধ রাখবি? না হলে কিন্তু আমি মুখ বন্ধ করে রাখব!”
উনি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ থাকার প্রতিশ্রুতি দিলেন। এই সব ইশারা সিনেমা-সিরিয়ালের ফল। তবে একটা জিনিস বুঝতে পারছি, শিয়াল নিয়ে শহুরে লোকের আগ্রহ আছে। সহকর্মীরাও আমাদের গ্রামে শিয়াল আছে শুনলে অবাক হয়ে যায়। কেউ বলে, “ওমা তাই! কী মিষ্টি।”
শিয়াল মিষ্টি শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। কেউ আবার শিয়াল দেখতে আমাদের বাড়ি আসতে চায়। শিয়াল যেন ভিনগ্রহ থেকে এসেছে বা মিশরের শিয়াল দেবতা আনুবিস! আমাদের গ্রামে ঘুরে বেড়ান!
“মামা, চুপ করে গেলে কেন? আর কথা বলব না প্রমিস করলাম তো।” আমার ভাবনার মাঝে ওর অসহিষ্ণু আবদার।
আবার শুরু করতে হল, “বুঝলি রোজই যখন দেখা হয় তখন ভাবলাম ক্যামেরাটা সঙ্গে রাখি। একদিন ফিরছি, টর্চের আলোয় দেখি, একটা শিয়াল আলপথের উপরে। মুখ নিচু করে কী যেন খাচ্ছে। আলো নিভিয়ে ক্যামেরাটা বের করলাম। ছবি উঠল। কিন্তু আলোর ঝলকানিতে শিয়ালটা ভয় পেয়ে দৌড় দিল। কাছে গিয়ে দেখি, ট্যাংরা মাছ। বর্ষার জলে ভেসে এসেছে। এই মাছ বেশি পাওয়া যায় না।”
ভাগ্নে ট্যাংরা মাছ কীরকম দেখতে জানতে চাইল। আমি প্রথমে ভয় দেখালাম, বেশি প্রশ্ন করলে গল্প বলব না। তারপর বললাম, “এ কাইন্ড অফ ক্যাট ফিশ। তবে ছোট ছোট।”
ভাগ্নের সংক্ষিপ্ত স্বর, “ওকে।” তারপর হাতের ইশারা, এগোও।…
“একদিন সেই কাণ্ডটা ঘটল, বুঝলি? সেদিন ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গিয়েছিল। কোনও ছপছপ আওয়াজ পেলাম না। ভাবলাম, হয়তো আগেই চলে গিয়েছে শিয়ালগুলো। কিছুটা এগোতে দেখি, রাস্তায় কী একটা নড়ছে। আলপথের দুটো এখনও যায়নি? আলো ফেললাম। দুটো নয়, একটা। তবে অন্যদিনের মতো সেটা দৌড় লাগাল না। বরং মুখ তুলে আলোর দিকে তাকাল। অবাক হলাম। তারপর মনে হল, এরা রোজ রোজ আমাকে দেখে তো! তাই বোধহয় সাহস বেড়েছে। শিয়াল এমনিতে নিরীহ। কিন্তু গভীর রাতে আলপথের উপরে একটা শিয়াল আলো দেখে ভয় না পেয়ে তাকিয়ে আছে দেখে গা ছমছম করছিল। শুনেছি, শিয়াল পাগলা হয়। আর পাগলা শিয়াল কামড়ালে জলাতঙ্ক হওয়ার ভয় থাকে। শিয়ালটাকে ভয় দেখাতে আলোর কমবেশি খেলা শুরু করলাম। কিন্তু কাজ হল না। বরং এগিয়ে এল খানিকটা।
তখনই ওর লেজটা চোখে পড়ল। শিয়ালের তুলনায় একটু বেশি লম্বাটে। লেজের লোম খসে গিয়েছে! এখন লোকজন বেড়েছে গ্রামে। বাইরে থেকেও লোকজন ঢুকছে বড়গাছিয়া, পাতিহালে। তারা চাষের জমিতে বাড়িঘর তৈরি করছে। আগে লোকে নিজের বাড়িতেই শসা, কুমড়ো, বেগুন, টম্যাটো চাষ করত। তোরা যেটাকে কিচেন গার্ডেন বলিস। সেসবের বালাই এখন অনেক কমেছে। গ্রামে নতুন যাঁরা, তাঁদের বেশিরভাগই চাকরি করে। ফলে সময় কোথায়? শিয়ালগুলোর খাবারদাবার ঠিকঠাক জোটে কিনা কে জানে।
“ভাবনার মাঝেই হঠাৎ শিয়ালটা ছুটে এল। একেবারে আমার পায়ের কাছে। বুকটা ধড়াস ধড়াস করে উঠল। মনে মনে চিন্তা করে নিলাম, জলাতঙ্ক রোখার ইঞ্জেকশন কোথায় কোথায় পাওয়া যেতে পারে? কাশী ডাক্তারখানায় পাওয়া গেলে ভাল। না হলে সেই জগৎবল্লভপুর ব্লক হাসপাতালে দৌড়তে হবে। একদিকে চিন্তা করছি আর অন্যদিকে কুলকুল করে ঘামছি। শিয়ালটা ঘুরে ঘুরে আমাকে শুঁকছে। ভয় পেলেও টর্চের আলোটা নেভাইনি। তখনই নজরে এল, শিয়ালটার পিছনের পা দুটোর তুলনায় সামনের পাগুলো ছোট! চার পায়ে চলছে না জন্তুটা। পিছনের দু’পায়ে ভর দিয়ে হাঁটছে।
“এ তো শিয়াল নয়! চোখের সামনে ভেসে উঠল স্টিভেন স্পিলবার্গের সিনেমা জুরাসিক পার্ক-পার্ট টু-এর শুরুর দৃশ্যটা। নির্জন দ্বীপে ঘুরতে গিয়েছে একটা পরিবার। তাদের বাচ্চা মেয়েটি খেলতে খেলতে একটু দূরে চলে গিয়েছে। একটা প্যাকেট থেকে কীসব যেন খাচ্ছিল। তখনই ঝোপ থেকে বেরিয়ে এল ছোট একটা প্রাণী। মেয়েটি সেটার দিকে এক টুকরো খাবার দিল। তারপরে একইরকম আরেকটা প্রাণী বেরিয়ে এল। এক এক করে এক ঝাঁক। ওগুলো সব ডাইনোসর।মেয়েটি এবার ভয়ে চিৎকার করে উঠল। দেখেছিস তো সিনেমাটা? (গল্পের ক্লাইম্যাক্সে ভাগ্নে শুধু মাথা নাড়ল)।
“বুঝলি, আমারও চিৎকার পেয়ে বসল। ভয়ে কান ফাটানো প্রবল চিৎকারে ধড়াস করে পড়ে গেলাম আলপথে।”
আমার বলা শেষ হয়েছে কী হয়নি ঝড়ের বেগে ঘরে ঢুকল দিদি। ঢুকেই আমার চুলের মুঠি খামচে ধরল। পিছন পিছন মা এসে আমার কান পাকড়াল। চুল টানতে টানতে দিদির শাসানি, “আমার ছেলেকে আবার উল্টোপাল্টা গল্প বলা! এর আগে কোকিল কেন কাকের বাসায় ডিম পাড়ে (“কাকের বাসায় কোকিল ছা” দ্রষ্টব্য) বলতে গিয়ে কীসব পুরাণের গল্পটল্প বলে গুলগাপ্পা দিয়েছিলি। বাড়ি ফিরে ঝাড়া একমাস ব্রহ্মা কে, বিশ্বকর্মা কি আইআইটি ইঞ্জিনিয়ার, নানা প্রশ্নে জ্বালিয়েছিল।”
মা আমার কানটা মুচড়ে বলে, “গল্প লিখিস বলে ভাগ্নেকে যা-তা বলবি! শিক্ষামূলক কিছু বলতে পারিস না?” বুঝলাম, দুই অভিভাবিকা আড়াল থেকে সব শুনছিলেন।
উৎপীড়ন থেকে বাঁচাতে রক্ষাকর্তা হয়ে এগিয়ে এলেন আমার ভাগ্নে, “ও মা, ও দিদু মামাকে মারছ কেন তোমরা? মামা ডাইনোসর দেখেছে! আচ্ছা মামা, ডাইনোসরটা তোমাকে কিছু করল না কেন?”
“ওটা শাকাহারী ছিল।”
“ওহ্,লাইক এ ব্রন্টোসরাস।”
ভাগ্নের কথা শেষ হতেই আমার চুল আর কান টানাটানি প্রবলভাবে বেড়ে গেল!