“বিল্টু!”, অঘোরস্যারের গর্জনে ক্লাসটা যেন কেঁপে উঠল। ততক্ষণে অপরাধী বিল্টু কাঁচুমাচু মুখ নিয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
অঘোরস্যার যে কী ঘোরতর ডেঞ্জারাস জিনিস তা তাঁর অঙ্কের ক্লাস যারা করেছে তারাই জানে। রাগী স্যার ও ছাত্র ঠ্যাঙানোয় এ তল্লাটে তাঁর সুখ্যাতি আছে। তাঁর ক্লাসে অঙ্ক ছাড়া অন্য কিছু করেছে অথচ তিনি তার পিঠটাকে ক্যানভাস বানিয়ে বেত দিয়ে ইচ্ছেমত আঁকিবুঁকি কাটেননি, এ ঘটনা লাখেও এক কিনা সন্দেহ। স্থানীয় বিধায়ক থেকে শুরু করে পুলিশের বড়সাহেব, সবাই নাকি তাঁর প্যাঁদানি খেয়েই বড় হয়েছেন। তাই টুঁ শব্দ করার সাহস কারও হয় না।
“হাতে ওটা কী?” বিল্টু ভয়ে ভয়ে মামাদাদুর দেওয়া রুবিক্স-কিউবটা এগিয়ে দিল।
ঘটনার সুত্রপাত হয়েছিল এবারের পুজোয়। মামার বাড়ি ঘুরতে গিয়ে মামাদাদুর ঘরে অদ্ভুত জিনিসটা দেখতে পেয়েছিল বিল্টু। মামাদাদু বলেছিলেন ওটাকে নাকি রুবিক্স-কিউব বলে। রুবিক সাহেবের নাম অনুযায়ী। বলেছিলেন আরও নাকি অনেকরকমের রুবিক্স-কিউব হয়। কিভাবে রঙগুলো ম্যাচ করানো যায় তাও দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ফেরার সময় বিল্টুকে ওটা গিফট দিয়েছিলেন মামাদাদু।
স্কুল খুললে বিল্টু ওটা নিয়ে এসেছিল বন্ধুদের দেখাবে বলে। অঙ্কে চোস্ত বিল্টু অঘোরস্যারের অঙ্কগুলো অনেক আগেই করে ফেলেছিল। তাই লুকিয়ে লুকিয়ে রঙগুলো ম্যাচ করার চেষ্টা করছিল মামাদাদুর শেখানো মত।
“লুক আপ!” স্যারের চিৎকারে আরেকবার কেঁপে উঠল বিল্টু। আজ পর্যন্ত কোন স্যারের হাতে পানিশমেন্ট পায়নি বিল্টু। কিন্তু তাই বলে শেষমেশ অঘোরস্যারের হাতে!
ভয়ে ভয়ে মাথা তুলে স্যারের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল বিল্টু। স্যারের মুণ্ডুটাও যেন একটা রুবিক্স-কিউব! শুধু নাক, কান, মাথার টাক আর গলার দিকটা বাদ দিলে বাকিটুকু ইচ্ছামত এদিকওদিক ঘোরানো যায়। এটাকে কি তবে অঘোর-কিউব বলে!
অঘোরস্যারের মার ভুলে বিল্টু হতভম্ভের মতো হাঁ করে স্যারের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প