আজ দু-দিন ধরে আমার জীবনে নানা ভৌতিক কান্ড ঘটে যাচ্ছে যার আমি কোনো কুলকিনারা পাচ্ছি না। কেন এমন হচ্ছে ! আমি বিজ্ঞানের ছাত্র কুসংস্কার এ বিশ্বাস নেই , ভয় আমি তাড়াতাড়ি পায় না সাহসী বলেই আমার নাম আছে ।
তর্ক লাগিয়ে একা রাতের বেলায় অনেক পোড়বাড়ি থেকে ঘুড়ে এসেছি কিন্তু এখন যা হচ্ছে তা যুক্তি-তর্ক ,বিচার-বিশ্লষণ কিছুই নেই।
বিশেষ করে আজ যা ঘটল – বাড়িতে একটা সাধুবাবা এসেছিল , মা-র কথা শুনে পকেট হাতড়ে দু-টাকা বের করে দরজার কাছে গিয়ে ভিক্ষে দিতে গেলাম,সাধুবাবা তো ভিক্ষে নিলোই না উল্টে আমার হাতটা ধরে কপালে হাত রাখলো আর সঙ্গে সঙ্গে একটা ঝটকা মেরে হাতটা সরিয়ে নিল যেন কেউ ৪৪০ ভোল্ট এ ঝটকা মারলো ।আমার রাগে গোটা শরীর জ্বালা করতে লাগল ।আমি বললাম এই নাটুকেপনা ছাড়ুন কী চাই বলুন তো ?
উনি বললেন “তোর আমাকে কিছু দেবার নেই ।আমার তোকে দেবার আছে । তোর সামনে বিরাট বিপদ”।
কী সব আজেবাজে বলছেন বলুন তো ?
সাধুবাবা এক প্রকান্ড হসি হেসে বললেন দুইদিন আগে তুই কোনো কিন্নরকে মেরেছিলি ?
খানিক ভাবার পর মনে পড়ল কোনো একটা ফোন আসার কারণে আমার মেজাজটা একটু বিগড়ে ছিল । আর ঠিক তখনই ওই হিজরেটা আমার কাছে এসে পয়সা দে – পয়সা দে করে জ্বালাছিল ।তাও ঠিকছিল তারপর বিচ্ছিরি ভাবে আমার গায়ে হাত বোলাতে লাগল , তখনই মেজাজ হারিয়ে এক থাপ্পড়মেরে ছিলাম ।
হিজরেটা তখন আমার দিকে একটা লেলিহান ক্রর দৃষ্টি দিয়ে তাকাল ।ওর চাহনী এতটাই ভয়ানক ছিল যে আমার শরীরে তখন আগুন জ্বলে গেলেও অবাক হতাম না।
তার পর থেকেই আমার সাথে নানা অ-প্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে।
ওই ট্রেন থেকে নামার সময় পুরো হাতটা ছড়ে গেছে , টিটি ধরেছিল টিকিট কেটেছিলাম তা সত্বেও টিকিট খুঁজে পায়নি ।ফাইনও দিতে হয়েছিল।
কাল ফোনটা পড়েগিয়ে খারাপ হয়ে গিয়েছে । আজ সকালে অ্যাক্সিডেন্ট হতে হতে বেঁচেছি ।
এইরকম নানা কথা মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে । ঠিক তক্ষুনি অপ্রত্যাশিত ভাবে মাথায় দড়াম করে সাধুবাবা টিমটা দিয়ে মারলো।
অন্য কোনো সময় হলে আমি সাধুবাবার মুখ ভেঙে দিতাম , কিন্তু আমার সাহস হলনা আরও ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম ।
উনি বললেন তোর হাত খোল ?
আমার মুঠোকরা যে হাতটায় টাকা ধরেছিলাম সেটা খুলে দেখলাম তার জায়গায় একটা মাদুলি।
“এই মাদুলিটা সবসময় কাছে রাখবি আর বিপদ বুঝলে *হর হর মহাদেব* বলবি । সাতদিন কোথাও বেরোবিনা আর এ মাদুলি সাতদিন খুলবিনা । সাতদিন পর মহাদেবের পুজো দিয়ে আসবি ।
সত্যি বলতে আমি ভয় পায়নি তা নয় তবুও ঠিক বিশ্বাস করতে পারলাম না আর অবিশ্বাসও করতে পারলাম না । তাই মাদুলিটা পকেটে রেখেদিলাম ।
অপ্রত্যাশিত ভাবে বিপদের ঘন্টাটা বাজলো । এই ঘটনাটা ঘটার চারদিন পর যখন আমি সবটাই ভুলেগেছি প্রায় , ওই যে বলে না কথায় ,
*পালায়বি কোথায় ? যম আছে পিচ্ছে* ।
রাতুল আর সুজয় না থাকায় ওই কয়েকটা দিন আর বাড়িথেকে বেরোয়নি , তবে আজ একটু হাওয়া খাওয়ার জন্য ঝীলের ধারে বেড়াতে গেছিলাম ।
কী অপরূপ দৃশ্য -চারিদিক সবুজে ঘেড়া , ঝীলের জল সূর্যের আলোয় লাল , আকাশে পেঁজানো তুলোর মতো মেঘ কেমন যেন নেশা লাগিয়ে দেয় , কেমন যেন কাছে ডাকে , বিভোর করে দেয় মন ।
বুঝতে পারিনি কখন যেন ঝুপকরে অন্ধকার এসে চারিদিকটা অন্ধকার করে ফেলেছে । দূর থেকে একটা শেয়ালের ডাক ও গ্রামথেকে ভেসে আসা শঙ্খধ্বনির আওয়াজ শুনে হুঁশ ফেরে । তাড়াতাড়ি করে বাড়ি ফেরার জন্য পা বাড়ায় ।
কিছুদূর আসার পর বুঝতে পারি ওই শুনশান রাস্তায় আমি আর একা নেই আমার সাথে আরও অনেকেই হাঁটছে , কিন্তু তাদের দেখা যাচ্ছে না , তাদের ছোঁয়া যাচ্ছেনা তবুও তাদের উপস্থিতি খুব ভালো করেই অনুভব করতে পারছি ।
হঠাত্ ধাক্কা খেলাম , রাস্তার মাঝে গাছ !
এটা কী করে সম্ভব যাওয়ার সময় তো ছিল না । একী একটা একটা করে গাছ এসে আমার সামনে দেওয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে , যেন কোন জাদুবলে গাছগুলো কাজ করে চলেছে । আমার বুকের ভেতর হৃত্পিণ্ডটা কেমন যেন বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে , হাত- পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ।কিছু কালো কালো ছায়া আমায় ঘিরে ধরে উন্মত্তের মতো নাচতে শুরু করেছে । যেন অনেকদিন অভুক্ত থাকার পর কোনো লোভনীয় খাবার পেয়েছে তারা ।
এমন সময় আমার কানে কানে কে যেন বলে গেল *হর হর মহাদেব* বল *হর হর মহাদেব* ।আমি চিত্কার করে উঠলাম – *হর হর মহাদেব, হর হর মহাদেব, হর হর মহাদেব* । আমার জিভ নেতিয়ে আসছিল তবুও উচ্চারণ করছি *হর হর মহাদেব*। প্রাণপণে খুঁজে চলেছি সেই সাধুবাবার দেওয়া মাদুলিটা , কোনোরকমে ওটা খুঁজে পেতে হাতে নিয়ে আবার বললাম *হর হর মহাদেব* । কোন এক জাদুবলে চারিদিক নিঃস্তব্ধ হয়েগেল । প্রাণপণে দৌড় লাগালাম , একছুটে ঘর ।
পরদিন সকালে ভুতো খবর দিয়ে গেল ‘ভাই ঝীলের ধারের বড়ো বড়ো শিশু গাছগুলো কে যেন উপড়ে ফেলে দিয়েছে,
ঝড় নেই ,বৃষ্টি নেই একেবারে ভৌতিক কাণ্ড ভাই!