সবাই আমাকে কি পেয়েছে বল তো, কেউ কি আমাকে কেয়ার করে না। এই বাড়িতে কি আমার আত্মসম্মান বলে কিছু নেই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই বাড়ি ছেড়ে আমি চিরদিনের মত চলে যাব সাথে তুইও যাবি। আমার কোন জবাব না পেয়ে ছোট চাচা আবার বললেন,
-কিরে কি হল?
-তোমার ইচ্ছা হলে তুমি যাবা সাথে আমাকে নিয়ে টানাটানি করছো কেন?
-টানাটানি মানে তুই আমার হেল্প ম্যান হিসেবে যাবি, একা একা একটা মানুষ বাসা থেকে বের হয়ে যাবে এটা কেমন দেখায় না।
-দুইদিন বাদে আমার ফাইনাল এক্সাম।
-এক্সাম দিয়ে কি হবে দেশে পড়ালেখা করে চাকুরী নাই, সবাই এখন পড়ালেখা শেষ করে খেত খামার করছে। তুই তো পড়ালেখা শেষ করে চাকুরী পাবি না, তাই আগে থেকেই আমার সাথে খামারের বিজনেস শুরু করে দিবি। ৪টা গরু ৪টা মহিষ আর ১০/১২টা ছাগল দিয়ে শুরু হবে চাচা ভাতিজা ফার্ম। ইনশাআল্লাহ, চাচা ভাতিজা ফার্ম খুব দ্রুত পরিচিত হয়ে যাবে।
-আচ্ছা আমি ভেবে তোমাকে বলছি।
-অকে, আমাকে পরে জানালেও চলবে। তবে সিদ্ধান্ত যেন আমার পক্ষেই আসে।
.
ইনি হচ্ছেন আমাদের ছোট চাচা। তিনার নতুন রোগ হয়েছে তিনি দ্রুত সব কিছু ভুলে যান তবে সব সময় ভুলেন না, যখন খুব এক্সাইটেড হয়ে যান তখন ভুলেন। মাঝে মাঝে এটাও ভুলে যান যে তিনি বিয়ে করেছেন তিনার একটা বউ আছে। একবার রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠে বললেন, পানি পানি। চাচি পানি এনে দেয়ার পর বললেন,
-এই যে আপনি কে? নতুন নতুন লাগছে বাসায় কাজের ভুয়া রাখা হয়েছে নাকি অথছ আমাকে বলা হয় নি। রাখা হইছে ভাল কথা তাকে আবার আমার খাটে ঘুমাইতে দেয়া হইছে, এই মুখ আমি কারে দেখাব। আমি কাল সকালেই আত্মহত্যা করব।
-আরে এত বকবক করছো কেন? আমি তোমার বউ, আমি থাকব না তো কে থাকবে এখানে।
-বউ মানে আমি আবার বিয়ে করলাম কবে?
-ঘুমাও চুপচাপ নইলে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিব দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছো।
-আমি পাগল, আমি পাগল। কতবড় সাহস কাজের বেটি আমারে কয় আমি পাগল। আমি এখনি সুইসাইড করব।
-যাও কর গিয়া।
.
যাই হউক সেই রাতে ছোট চাচা সুইসাইড না করলেও এখন বুঝা যাচ্ছে খুব সিরিয়াস ভাবেই বাড়ি ঘর ছাড়ার প্ল্যান করছেন। আমি আমার রুমে ঢুকার পর আবার চেঁচামিচি শুরু হইছে, চাচি এসে চাচা কে বলছেন,
-তোমার না গাড়ি আনার কথা।
-বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যাব বলেছি বলে এখনি যেতে হবে এমন বলেছি নাকি যে গাড়ি আনতে হবে।
-তুমি আবার কোথায় যাবা? আমি আমার বাপের বাড়ি যাব, সেজন্যই জন্যই তো গাড়ি আনতে পাঠালাম।
-গাড়ি আনতে আবার কবে বললা।
-দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছো, আমি এখনি বাপের বাড়ি যাব যদি আর আসি তাহলে বলিও।
-যাও যাও তোমাকে আসতে কে বলছে?
-রাতে একা ঘুমাইবা সেটাও মনে রাখিও।
-সেটা নিয়ে আপনাকে না ভাবলেও চলবে, আপনি বিদায় হোন।
.
বিকালে জানতে পারলাম যে চাচি সত্যি বাপের বাড়ি চলে গেছেন এবং ফোন করে চাচা কে বলেছেন, আমি আর তোমার কাছে আসছি না। রাতে যখন সত্যি চাচি এলেন না তখন শুরু হল তোলপাড়। চাচ্চু একবার আমার রুমে আসেন, একবার বারান্দায় হাটাহাটি করেন তবে ভুলেও তিনার রুমে যান না। ওইরুমে নাকি হঠাৎ করে অদ্ভুত ধরনের শব্দ শুনতে পান। চাচার এসব কাজ কারবার দেখে আব্বু চাচ্চু কে ডেকে পাঠালেন, চাচা একা না গিয়ে আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেলেন। চাচা আব্বুর রুমে ঢুকা মাত্রই আম্মু বলে উঠলেন,
-তুমি যদি বল তাহলে লতা কে বলতে পারি যে আরিফ তোমাকে মিস করছে চলে আসো।
-না না ভাবি আমি কিসের মিস করছি।
তখন আব্বু বললেন,
-ওইসব বাদ দাও, তা আরিফ তুই এত বড় হয়ে গেছিস বিয়ে করে ফেলছিস তাও একা ঘুমাতে ভয় পাবি এটা কেমন কথা!
-কিসের ভয় আমার আজ এমনি ঘুম আসছে না।
-তুই নাকি ইদানিং সব কিছু ভুলে যাচ্ছিস, সত্যি ভুলে যাচ্ছিস নাকি ভান ধরছিস।
-ভান ধরতে যাব কেন? আমার মেমোরিতে কিঞ্চিত সমস্যা দেখা দিয়েছে সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে।
-ঠিক হলেই ভাল যা ঘুমাতে যা বেশি ভয় করলে ফাহিমের সাথে ঘুমিয়ে পর।
.
ছোট চাচা আমার রুমে এসে বললেন,
-মান ইজ্জত বলে কিছু থাকল না, সব দোষ তর বাপের সেই আমারে ওই মেয়ের সাথে জোর করে বিয়ে দিছেন।
-ছোট চাচা চাচি কে তুমি নিজে পছন্দ করে তারপর বাসায় বলেছ তারপর তোমাদের বিয়ে হয়েছে।
-তাজ্জব ব্যাপার আমি এই মেয়েকে পছন্দ করেছি। কি আছে তার মাঝে যে পছন্দ করব, নামটাও দেখেছিস লতা এর থেকে উদ্ভিদ বা পাতা রাখলে ভাল হত।
-যাই হউক ছোট চাচা আমি এখন ঘুমাব কাল সকালে প্রাইভেট আছে।
-আচ্ছা ঘুমা।
-তুমি চাইলে আমি তোমার হয়ে ছোট চাচা কে ফোন করে আসার কথা বলতে পারি। আমি শিওর তিনি এই রাতে চলে আসবেন।
-তার থেকে চল আমরা দুজন গিয়ে নিয়ে আসি।
-জানতাম এটাই বলবা।
-না মানে তাহলে থাক।
-থাকার প্রয়োজন নেই চল নিয়ে আসি, চাচিদের বাসা তো আর দূরে না পাশেই।
.
চাচিকে আনার জন্য আমরা রাত ১১টায় বের হয়েছি, ছোট চাচ্চু আবার এক্সাইটেড হয়ে সব কিছু ভুলে গেছেন। আমাকে বললেন,
-ফাহিম আমরা যেন কোথায় যাচ্ছি?
-চাচি কে উদ্ধার করতে যাচ্ছি উনার বাপের বাড়ির লোকেরা উনাকে আটকে রেখেছে।
-বলিস কি? আমি আগেই জানতাম ওর বাপের বাড়ির লোকেরা ভাল না। ওরা ওকে আটকে রাখল কেন?
-যেন তোমার সাথে দেখা না হয়, কিন্তু আমরা বীর বংশের লোক আমরা যাব উদ্ধার করে নিয়ে আসব।
-ঠিক বলেছিস প্রয়োজন হলে দরজা ভেঙ্গে উদ্ধার করব। আমার বউকে আটকে রাখবে পেয়েছে কি?
কিছুক্ষণ পরেই চাচিদের বাসার দরজায় ধুমধাম শব্দ পরতে লাগল। ছোট চাচা চিৎকার করে বলতে লাগলেন,
-হারামজাদা দরজা খোল নয়ত ভেঙ্গে ফেলব।
-তোমার শ্বশুর বাড়ি ইজ্জত দিয়ে কথা বল।
-কিসের ইজ্জত আমার বউ আটকে রেখেছে, আমি পুলিশ আনব পেয়েছে কি ওরা।
দরজা খুলে চাচিই বের হলেন। তিনি অবশ্য আশা করেছিলেন আমরা আসব তাই তিনি না চমকে স্বাভাবিক ভাবেই বললেন, ভিতরে আসো। ছোট চাচার চেঁচামিচি বন্ধ হয়ে গেল। আমরা চাচিকে নিয়ে বাসায় আসতে আসতে রাত বারোটা ত্রিশ বেজে গেছে। বাসায় ঢুকার পর ছোট চাচা আমার কানে ফিসফিস করে বললেন,
-এরে আনা ঠিক হয় নি?
-তুমিই তো পাগল হয়ে আনলা।
-বিরাট ভুল হয়েছে, এসেই দেখ আমারে খুঁচানো শুরু করে দিছে।
-তাহলে এক কাজ করি আবার রেখে দিয়ে আসি।
-আমার সাথে ফাজলামি করছ এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব। সে কি পুতুল নাকি নিয়ে আসব আবার রেখে আসব।
-তাহলে কি করব?
-সহ্য করতে হবে, তুই তর রুমে যা।
.
অতঃপর আমি আমার রুমে চলে আসলাম। বেচারা ছোট চাচা মেমোরির সমস্যায় দারুন ভুগতে হচ্ছে।
.
গল্পটি ছোট চাচা সিরিজের প্রথম গল্প, পাঠকদের ভাল লাগলে এই সিরিজের আরো গল্প লিখার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।