সেদিন ক্লাসের সকলের সামনে দাঁড়িয়ে সে একটি গান গাইতেছিলঃ-
এসেই যখন পরেছো
আসো না মনটা করি লেনদেন
এতদিন,এতদিন কোথায় ছিলে
ও বন্ধু!আসো না মনটা করি লেনদেন
.
আহ!কি চমৎকার গান।যেমন তার কন্ঠে সুন্দর সুর,তেমন তার গানের সুর।
মনটা পুরো ভরে গেল।এমন একখান পরিবেশ মনে হল যেন কোন এক নাম করা শিল্পীর লাইভ কন্সার্ট দেখতেছি।
.
তার গান যখন শুনছিলাম আর বসন্তে কদম ডালে যে কোকিল ডাকা শুনেছিলাম দুটো যেন একই কন্ঠের গাওয়া ছিলো।
.
সেদিন মন থেকে কেন যেন তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলাম।শুরু হল তার দিকে সীমাহীন চেয়ে থাকা।যতই দেখি ততই যেন তার প্রতি আমি দুর্বল।
.
আমি একটা মেয়েকে অনেক পছন্দ করতাম।তার নাম ছিলো মুন্নী।
তাকে আমার মনের কথা কখনো বলতে পারিনি।
.
যার কারনে সে আমার জীবন থেকে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।অনেক খুজেছি তাকে কিন্তু কপালে মেলেনি তার সন্ধান।
.
অতঃপর এই উক্তি গুলো সারাক্ষণ মন থেকে ভেসে উঠেঃ-
—————
কত খুজেছি তোমায়,ভবগুর হয়ে
চলার পথের স্মৃতি গুলো
আজো তোমার পথে চেয়ে
অপেক্ষার দুয়ারে জ্বালাদের উকি
জীবনের প্রতি প্রান্তরের
অনুভূতি দিয়ে তোমায় দেখি…
.
তাই এবার নিয়ত করেছি যেহেতু ভালো লেগেই গেছে আর ভীতিগ্রস্ততা নয়।
হোক যায় হয়।বলেই দিবো তাকে আমি ভালোবাসি।শুধু কাঙ্ক্ষিত সময়ের অপেক্ষায় আছি।
.
একদিন এসেম্বলির শেষে ক্লাসে যাচ্ছিলাম।নিয়ম ছিলো সামনের জনের দুই কাধে পেছনের জনের দুই হাত রাখতে হবে।
মেয়েদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম।ছেলেদের লাইন এবং মেয়েদের লাইনের মাঝখানে ৩ হাত পরিমাণ দূরত্ব থাকবে।
.
সেদিন আমার বরাবর সেই মেয়েটি।আমিও তখন সেই গান টি গাইতে ছিলাম।যদিও আমার কণ্ঠ খুব বিশ্রী রকমের।তবুওঃ-
————
এসেই যখন পরেছো
আসো না মনটা করি লেনদেন
এতদিন,এতদিন কোথায় ছিলে
ও বন্ধু!আসো না মনটা করি লেনদেন..
.
মেয়েটির মনে হলো আমি তাকে ব্যঙ্গ করে গাইতেছি।
এরপর টিফিনে আমাকে তার এক বান্ধবী দিয়ে ডাকিয়ে নিয়ে গেলো একটা খালি ক্লাস রুমে।
.
-তুমি আমাকে ওই সময় ব্যঙ্গ করলে কেন?
-কই তোমাকে ব্যঙ্গ করলাম?
-সবার সামনে সেই দিনের গান গেলে কেন।আরো কতই তো গান ছিলো দুনিয়ায়।তোমার সেই টাই গাইতে হবে কেন?
-আসলে তোমার কন্ঠে গানটি শুনে আমি তোমার কন্ঠের প্রেমে পড়ে গেছি।
-সেট-আপ!ইডিয়েট।
.
যখন কাউকে রাগান্বিত করতে পারি তখন আমার অনেক ভালো লাগে।
মানে কেউ যদি অল্পতেই অনেক বেশি রেগে যায় তাকে খুব সহজেই দুর্বল করা যায়।
.
-সত্যি তোমার কন্ঠে অনেক যাদু আছে।আচ্ছা তুমি কি কন্ঠ সুন্দর রাখার জন্য কোন থেরাপি নাও কী??
-দেখ আমি অভার স্মার্ট পছন্দ করি না।
সো নরমাল থাকার চেষ্টা কর।
শুনে রাখো আবার আমার সাথে এমন আচরণ করলে আমি প্রিন্সিপ্যাল স্যার কে জানাতে বাধ্য হব যে তুমি আমাকে উত্যক্ত কর।
-ঠিক আছে করবো না।তুমি আমাকে একটা কথা বল তোমার কণ্ঠ এত সুন্দর কেন?
তুমি কি প্রতিদিন সকালে ভিক্সল দিয়ে গারগেল কর নাকি?
-ইউ ব্লাডী বোশ।
.
এই বলে চলে আসতে ছিলো।কিছু পা সামনে এগোতেই আমি পেছন থেকে ডাক দিলামঃ-
-এই যে শুনো!
-তোমার সাথে আমার কোন কথা নেই।
-কিন্তু তোমার সাথে আমার একটা কথা আছে।
-কি??
-আই লাভ ইউ।আই লাইক ইউ।
.
আর কিছু না বলে সোজা চলে গেলো।এর পর কয়েকদিন আমি ক্লাস বাদ দিয়ে শুধুই তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
স্যার ম্যাডামদের কাছে অনেক অপমান এবং নানার ধরনের কথা যদিও শুনেছি।
.
আমার একটা অভ্যাস আছে কেউ যখন অপমান করে তখন এক কান দিয়ে শুনে আর এক কান দিয়ে বের কতে দেই।
.
কয়েক দিন পর তাকে জিজ্ঞেস করেছিলামঃ-
-সেদিন যা বললাম তার উত্তর দিলে না কেন?
-তোমাকে আমার পছন্দ না।
-কেন!আমি কি দেখতে খারাপ?
-হুমম!তুমি জঘন্য কালো।অভদ্র।
-নেলসন ম্যান্ডেলা,বারক ওবামা তারাও তো কালো।যে বই পড় সেই বইয়ের লেখা গুলোও তো কালো।
তোমার মাথায় যে চুল তাও তো কালো, তোমার চোখের উপর যে ভুরু সেগুলোও তো কালো,
মাঝে মাঝে যে ড্রেস পরিধান করলে তোমায় অনেক সুন্দর দেখায় সেটাও তো কালো, সাদা খাতায় যে কালি দিয়ে লেখো সেই কালি ও তো কালো,
যে মোবাইল টা ব্যবহার কর সেটাও তো কালোই।
একটা প্রবাদ আছেঃ-নদীর পানি ঘোলা ভালো,জাতের ছেলে কালো টাই ভালো।
সব কিছুতেই কালো ভালো তাহলে সমস্যা কোথায়??
-এই প্রশ্নের উত্তর কি তোমাকে দিতে হবে?
-না দিলেও চলবে।আমি তোমাকে ভালোবাসি তার উত্তর দিলেই চলবে।
-আচ্ছা যাও কালকে তোমার উত্তর পেয়ে যাবে।
.
পরের দিন মেয়ের বাবা এসে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কাছে আমার নামে নালিশ দিল।পিয়ন এসে আমাকে ডেকে নিয়ে গেলো প্রিন্সিপ্যাল স্যারের রুমে।
-তুমি ওকে ডিস্টার্ব কর?(প্রিন্সিপ্যাল)
-আমি চুপ করে মাথা নিচের দিকে দিয়ে শুধু দাড়িয়েই আছি।
-আমি আবারো বলছি তুমি কি ওকে ডিস্টার্ব কর??চুপ করে থেকো না বলো।
-এবারো আমি নির্বাক।
.
এরপর স্যার অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করলেও আমার কোন উত্তর ছিলো না।এমন পরিস্থিতিতে কখনো মুখোমুখি হইনি।
কখনো ভাবিওনি এমন পরিস্থিতির স্বীকার হতে হবে।
.
মেয়ের বাবা আমার নিস্তব্ধতা দেখে আমার নামে স্যারের কাছে রিপোর্ট করে।মেয়ের বাবাকে স্যার শান্তনা দিলোঃ-
“ওর ব্যাপার আমি নিজে দেখবো আপনি আসতে পারেন এখন”।
মেয়েটিকেও স্যার ক্লাসে পাঠিয়ে দিলো।
.
আমি হোস্টেল এ থাকতাম স্যার খুব ভালো করেই জানতো।স্যার এ ও জানতো আমার চুপ থাকার মানে কি??
আর স্যার আমার সাথে খারাপ ব্যবহার না করে বুঝাতো অনেক।
-মোফাজ্জল তোমার বাবা যেন কি কি করেন?
-স্যার আমার বাবা পল্লীবিদ্যুৎ এর উর্ধতম একজন কর্মকর্তা।
-আর?
-জমির ব্যবসায়ী।
-আর?
-থানার একজন রাজনীতিবিদ।
-এর মানে তুমি নিশ্চয় স্বীকার করতে পারো তোমার বাবা একজন গণ্যমান্য এবং সম্মানিত মানুষ?
-হ্যা স্যার পারি।
-তাহলে তুমি এসব মেয়েদের পেছনে ছুটছো কেন বাবা? তোমার বাবার অর্জিত সম্মান চলে যেতে পারে তোমার এমন কাজে।তুমি কি তা চাও??
-স্যার ভুল হয়ে গেছে।আমি কখনোই চাই না।
-একটা কথা শুনে নাও বাবা।আগে তুমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত কর।দেখবে সব কিছুই তোমার পেছনে ছুটছে।
আর সাথে যদি তোমার ঈমান কে মজবুত করতে পারো দেখবে পুরো দুনিয়াটাই তোমাকে পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তাহলে এখন তোমার কি করা উচিৎ তুমি নিজেই চিন্তা করে দেখো।
-স্যার আপনি আমার স্যার।আপনাকে স্যালুট।আমি সব বুঝতে পেরেছি স্যার।
.
এরপর আমি স্যারের কথা অনুযায়ী চালছিলাম।চার পাচ দিন পর মেয়েটি বুঝতে পেরেছিলো আমার কথা গুলো।
আর নিজেই আমার কাছে এসেছলোঃ-
-মোফাজ্জল শোন!
-কিছু বলতে চাও?
-হ্যা,আমি দুঃখিত।সেদিনের ঘটনার জন্য।
-ইট’স ফাইন।
-আচ্ছা!তুমি তোমার উত্তর চেয়েছিলে না??
আজ আমি তোমাকে সেই উত্তর দিতে চাই।
-উপস!সরি। আমি আমার উত্তর টা পেয়েগেছি।আর তার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
-আরে তুমি সেদিন যে উত্তর টা চেয়েছিলে সেইটা দিতে চাই।
-ইউ আর সো লেইট।
-একটা বার সুযোগ দেয়া যায় না প্লিজ??
-আ’ম এক্সট্রেমলি সরি।ইউ আর সো লেইট।