সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিট, রবিন বাসায় এসে কলিং বেল চাপতেছে, দরজার ওপাশ থেকে জেরিন
—- আসতেছি তো এতো অস্থির হচ্ছো কেনো??
— অস্থির কি আর সাধে হই,, এই রৌদ্রের মধ্যে প্রচণ্ড জ্যামে মাথা গরম হয় এমনিতেই
— হুম, বুঝলাম
( রবিন & জেরিন স্বামী স্ত্রী, এইতো ২ বছর হলো তাদের বিয়ে হয়েছে)
রুমে এসে মোজা না খুলেই খাটের উপড় শুয়ে পড়লো, এটা অবশ্য তার নিত্যদিনের অভ্যাস
— এই, কি হলো আজকেও তুমি মোজা,জামাকাপড় চেঞ্জ না করেই… ( রাগের ইমু)
— মোজাটা খুলে দাও না গো
—- হুহ,, জীবনেও না, আমি প্রতিদিনি কেনো দিবো নিজে করে নিতে পারোনা
— না পারিনা বলেই তো তোমাকে বলছি
— আর কোনোদিন ই দিবোনা, এবার থেকে নিজের কাজ নিজে করবা
—- আচ্ছা না দিলে আমি ওম্নেই থাকবো
— থাকো,, আমার অনেক কাজ আছে আমি চললাম
একটু পরে ফিরে এসে দেখে রবিন ওম্নেই ঘুমিয়ে পড়েছে,
— এই নবাব ওঠেন
— হুম
— হুম কি হ্যাঁ, উঠবা নাকি পানি ঢেলে দিবো, সারাদিন পর এসে হাত মুখ ধোওয়া, গোসলের কোনো নাম নেই খালি ঘুম আর ঘুম
আর তুমি রুম এরকম অগোছালো করে রেখে যাও কেন হুম???
— কৈ অগোছালো করে রেখে যাই??
— কৈ যাও যাও বুঝি??? প্রত্যেকটাদিন ই কাপড়গুলা এলোমেলো করে ওম্নেই চলে যাও পরে সেগুলা কষ্ট করে আমাকে গোছাতে হয়
—- (হাতটা ধরে টান দিয়ে) তাই বুঝি!! আহারে, আমার রাজরানী টা কত্ত কষ্ট করে
— হয়ছে আর দরদ দেখাতে হবেনা
— সামনের মাস থেকে বুয়া রেখে দিবোনি
— কেন?? বুয়া কেন হুম??? আমার কাজকর্ম, রান্না খেতে পারোনা নাকি??
— আমি কৈ এসব বললাম?? আমি তো তোমার আরামের জন্যেই বললাম
— সব কথা মুখে বলতে হয় নাকি,?? বোঝায় তো যায়
— আচ্ছা, বলতো আমার মনে কি বলছে এখন
— ভালবাসি ( লজ্জা পেয়ে)
— আচ্ছা, আমি যদি কোনোদিন মারা যাই তাহলে তুমি থাকবে কিভাবে??
— চুপ, একদম চুপ, এরকম কথা আর মুখে আনলে তোমার সাথে আর কথা বলবোনা বলে দিলুম
— ( কপালে চুমু দিয়ে) তোমাকে ছাড়া আমিও বাঁচবো না
কোনো এক বিকেল বেলা…
বারান্দায় এসে দোলনায় বসে কফি খাচ্ছে রবিন & জেরিন
—- আজকের ওয়েদার টা খুব সুন্দর তাই না??।
— হুম, ঠিক তোমার মতো
— পাম তো ভালোই মারতে পারো
— মনের কথা বললাম
— দেখো দুটো পাখি একই ডালে বসে আছে কি সুন্দর ভাবে তারাও হয়তোবা আমাদের মতো কথা বলছে
— হুম, ঠিক বলছো, সবার মাঝেই ভালবাসার বন্ধন আছে
সবাই সবার প্রিয় মানুষটার কাছে থাকতে চায়
— আচ্ছা কোনো এক ঝড়ো হাওয়া এসে যদি তাদের আলাদা করে দেয় তখন কেমন হবে?
— না, দিবেনা, আর এরকম হলে একজনে খুব অসহায় হয়ে ভেঙ্গে পরবে
— আমার পাখি খুব ভালো লাগে আমাকে দুইটা পাখি এনে দিও তো কাল পরশু
— আচ্ছা, দিবোনি ( ভালবাসার ইমু)
— কালকে কিন্তু শুক্রবার, কাল আমরা ঘুড়তে বের হবো হ্যাঁ??? ( হাসি দিয়ে )
মেয়েটার হাসি আসলেও অসম্ভব সুন্দর শুধু তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে হয় কিভাবে যে মেয়েটা আমার মতো অগোছালোর প্রেমে পড়েছিলো আল্লাহ জানেন
— কি হলো কথা বলছোনা যে
—- তোমাকে দেখছিলাম, হুম যাবো
—- আমাকে নতুন করে দেখার কিছু নাই,, ( হাসির ইমু)
পরের দিন তাড়া বেড়াতে হয়ে অনেক ঘুড়াঘুড়ি, দেখা, খাওয়া দাওয়া করলো
সন্ধ্যার সময় বাড়ি ফিরবে তখন
— এই, শুনোনা আমার জন্যে একটা আইসক্রিম নিয়ে এসোনা
— এখন আবার আইস কেনো??
— তুমি জানোনা এটা আমার প্রিয় অনেক, যাও বলছি
— আচ্ছা যাচ্ছি তুমি এক্টু রাস্তা থেকে দূরে গিয়ে দাড়াও
অনেকক্ষণ হয়ে এলো কিন্তু ফিরছে না সে তাই এগিয়ে গেলো জেরিন
কিন্তু আর সামনে এগোতে পারছেনা, নিস্তব্ধ হয়ে গেছে একদম, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা, হ্যাঁ রবিনে রক্তাক্ত দেহটা পড়ে আছে রাস্তায় আর কিছু মানুষের ভীড়
আজ ৫ বছর হয়ে গেলো, প্রতিটা বছর ই জেরিন সেখানে গিয়ে একা একা চোখের জল ফেলে আর নিজেকে অপরাধী ভাবে। প্রত্যেক দিন তাকে ভেবে কান্না করে… সত্যি ভালবাসা এমনই হয়
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প