ভিনদেশী বন্ধুর উপহার

ভিনদেশী বন্ধুর উপহার

আজ অপূর্বর জন্য আরো একটা প্রত্যাশাযুক্ত ব্যাডলাকের দিন।সকালে তৈরি হয়ে জলখাবারটা নাকেমুখে গুঁজেই দৌড়ল বাস ধরবে বলে।আজ আরো একবার বুকভর্তি আশা ভরে নিয়ে সে ইন্টারভিউ নামক বাজে খরচের কাজে চলেছে।এসপ্ল্যানেডগামী চলন্ত বাসটাকে হাত দেখিয়ে অপূর্ব কোনোরকমে দৌড়ে উঠে পড়ল।ভেবেছিল আজও বাদুড়ঝোলা হয়ে একপায়ের খুঁটিতে দেহবাবাজিকে সমর্পণ করতে হবে।কিন্তু একটা সিট খালি দেখে হ্যাঁচড়প্যাঁচর করে চট করে ঢুকে বসে পড়ল।বাস চলতে শুরু করায় ঠান্ডা হওয়ায় তাও একটু স্বস্তি।ফোনটা অন করতেই কি সর্বনাশ!সকাল থেকে রোহিনীর এগারোটা মিসড কল!অপূর্ব জানে এবার বাছাই করা প্রিমিয়াম কোয়ালিটির গালাগাল আছে ওর কপালে।রোহিনীর চিলচিৎকার পাশের কারো কানে যাতে শ্রুতিমধুর না হয় সেজন্য কলব্যাক করার আগে ফোনের ভল্যুমটা কমিয়ে দিল।রোহিনী খানিকটা শব্দবাণ ছুড়ে বকাবকির পর শান্ত হয়ে একটা মিষ্টিমুখের সাথে আদুরে গলায় বলল -‘ভালোভাবে ইন্টারভিউ দেবে।একদম নার্ভাস হবে না।সাবধানে এস কেমন।’
সত্যিই তো মেয়েটা কত আশা নিয়ে বারবার বসে থাকে।অপূর্ব কি একবারও ওর স্বপ্নপূরণ করতে পারবে না!ওদের দুবছরের সম্পর্কে বেশ কয়েকবার রোহিনীর হিটলার বাবা ওনার ধীঙ্গি মেয়েকে সুপাত্রে পার করতে চেয়েছেন।অপূর্ব তো ধরেই নিয়েছিল ওর বাড়িতে নেমন্তন্নের কার্ড আসছে।শেষমেশ রোহিনীই নানা অজুহাতে কোনোভাবে কাটিয়ে দিয়েছে।রোহিনী চায়নি অপূর্বকে ছাড়া নিজের ঘর সাজাতে।অপূর্বও কি একমুহূর্তও রোহিনী বিনা জগৎ ভাবতে পারে!কিন্তু এভাবেই বা আর কাহাতক।ইকোনমিক্সে মাস্টার্সের পর চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েও একটুর জন্যে ভোকাট্টা হচ্ছে।শেষমেষ হয়তো রোহিনীর বাচ্চাকাচ্চার মামা ডাকটাই অপূর্বর কপালে আছে।

এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অপূর্বর খেয়াল হল ওর পাশের ভদ্রলোক কলকাতার পয়ত্রিশ ডিগ্রী তাপমাত্রার মধ্যেও একটা গাম্বুস জ্যাকেট গায়ে চাপিয়ে আছে।মনে ভাবল এসব উদ্ভট পাবলিক কোত্থেকে জোটে কেজানে!
‘আচ্ছা দাদা,কোথায় যাবেন?’
অপূর্বর কথা শুনে লোকটা কেমন শূন্য দৃষ্টি নিয়ে তাকাল।
অপূর্ব আবার বলল-‘না মানে,আপনি নেমে গেলে জানালার সিটটা পেতাম আর কি।’
লোকটা এবার ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল-‘জুপিটার।’
অপূর্ব মনে মনে হিসেব করল কোনো ইলেকট্রনিক্স স্টোর হবে হয়ত,তার মানে তো ওর রাস্তাতেই পড়বে।কোনো লাভ নেই।সিটে মাথা এলিয়ে চোখটা বন্ধ করল সে।লোকটা হঠাৎ অপূর্বকে খোঁচাল-‘টাইম কত হচ্ছে?’
হাত ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে উত্তর দিল-‘নটা আটান্ন’।
অপূর্বর কানে ঠিকই গেল ভদ্রলোক বিড়বিড় করছে-‘দেন ইট’স ফোর আওয়ার্স এন্ড ইলেভেন মিনিটস ইন জুপিটার।’
অপূর্বর মাথায় নিমেষে খেলে গেল আরে তাইতো জুপিটার প্ল্যানেটে তো ন’ঘন্টা পঞ্চাশ মিনিটে দিন!মানে লোকটা ঠিকই বলছে।অপূর্ব একটু আগের ভাবনার জন্য মনে মনে লজ্জিত হল,ছি ছি উনি হয়ত সায়েন্টিস্ট,সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার আছে বোধহয়।তবে জোচ্চোর হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।আজকাল সক্রিয় প্রতারক চক্রের লোকগুলো বেশ ঝানু।উল্টোপাল্টা বলে ঘোল খাইয়ে দেবে।এর আবার কি মতলব কেজানে!ব্যস,আরামে গা এলিয়ে বসার ইচ্ছেটাও চটকে গেল।পকেটের মানিপার্সটা চেক করে নিয়ে একটু সতর্ক হয়ে ভাবলো কেজানে কপালে কি আছে।

এতক্ষনে ট্রাফিক ঠেলে ঠেলে বাসটা শ্যামবাজার ফাইভ পয়েন্ট ক্রসিং এ ঢুকে গেছে দেখে একটু স্বস্তি পেল অপূর্ব।মোবাইল বের করে ইন্টারভিউর মেইলের এড্রেসটা আরো একবার চোখ বুলিয়ে নিল।খানিক বাদে বাসের চোদ্দ টাকা ভাড়া মেটাতে গিয়ে অপূর্ব কুড়ির নোট এগিয়ে দিলে কন্ডাক্টর জানাল-‘রেজগি হবেনা।খুচরো দিন।’
সেও তাড়াতাড়িতে খুচরো নিয়ে বেরোতে ভুলে গেছে।পাশের ভদ্রলোক ততক্ষণে নির্ভুল ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছে।অগত্যা ওনাকেই বলল-‘বলছি,দুটো পাঁচ হবে?আমি দশ দিচ্ছি।’
লোকটা দুটো কয়েনের সাথে অপূর্বর দশ টাকা বদল করে গেটের কাছে এগিয়ে গেল।পাঁচটাকা কন্ডাক্টরের হাতে ধরিয়ে অন্যটা পকেটে পুরতে গিয়ে খেয়াল হল আরে এটা কি?এটা তো পাঁচের কয়েন না!হাতে নেওয়ার সময় খেয়াল করেনি।একটা মোটাধরণের ধাতব কয়েনের মতই জিনিস।চট করে গেটে তাকিয়ে লোকটাকে ডাকতে যেতেই একটা ক্রসিংয়ে নেমে সে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল।অপূর্ব এবার জিনিসটাকে ভালো করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল।ধাতব গোলকটার মাঝে পাখনা মেলা সাদা ময়ূরের একটা প্রতিকৃতি খুব আকর্ষণীয়।নকশাটা উজ্জ্বল হয়ে চোখে পড়ছে।কৌতুহলবশত অপূর্ব জিনিসটাকে পকেটে পুরে ফেলল।কিন্তু ওই লোকটার স্মৃতি বারবার অপূর্বর মনকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।অপূর্বর টাকাপয়সাও তো কিছু খোয়া গেল না।

সেন্ট্রাল এভিনিউতে নেমে অপূর্ব হাঁটাপথে নির্দিষ্ট গন্তব্যে সময়ের আধঘন্টা আগেই পৌঁছে গেল।বাড়িতে আর রোহিনীকে ইন্টারভিউতে ঢোকার আগে একবার জানিয়ে দিল।ডাক পরার জন্য অপেক্ষারত পরীক্ষার্থীদের মাঝে বসে আজ কেমন অদ্ভুত ঠেকল তার।অন্যান্যদের গম্ভীর চিন্তিত মুখগুলো দেখেও কেন কেজানে অপূর্বর আজ আইনক্সে ব্লকবাস্টার শো দেখার মত ফুরফুরে মেজাজ।তেমন টেনশন তো হচ্ছে না,অথচ এই টেনশনদেবের বাণেই ঘাবড়ে গিয়ে বরাবর ভুলভাল উত্তর দিয়ে নিজের ভবিষ্যতের ঘরে লালবাতি জ্বালায়।বেশ অবাক হয়েই চুপ করে বসে রইল সে।একে একে কয়েকজনের পর একসময় তারও ডাক পড়ল।আত্মবিশ্বাসের সাথে অপূর্ব দরজায় নক করে বলল-‘মে আই গেট ইন স্যার?’
কিছু সময় বাদে অপূর্ব যখন ইন্টারভিউ শেষ করে রাস্তায় পা রাখল তখন মাথার উপর বেশ চড়া রোদ।তবু বেশ ভালো লাগছে।অন্যবারের চেয়ে ইন্টারভিউ বেশ খানিকটা ভালো হয়েছে।তবে দুটো প্রশ্ন না পারলেও বুদ্ধিমত্তার সাথে তৎক্ষণাৎ স্বীকার করেছে যে উত্তর তার জানা নেই।এখন কি হয় সেটাই দেখার।

পেটে ছুঁচোর লাফালাফি অনুভব করে একটা পছন্দসই হোটেলে ঢুকে পড়ল অপূর্ব। খাওয়াদাওয়া সেরে একটা গাছতলার ছায়ায় এসে দাঁড়াতেই চোখে পড়ল ওপারের ফুটে সকালের সেই লোকটা একটা বাঁধানো বেদিতে বসে একমনে বিড়বিড় করে যাচ্ছে।অপূর্বর পাদুটো কোন এক অমোঘ আকর্ষণে ওকে রাস্তার ওপারে নিয়ে গেল।ওনার কাছে এসেআর কিছু ভেবে না পেয়ে বলল-‘কি,জুপিটার স্টোরটা খুঁজে পাননি নাকি?এ চত্বরে ও নামে দোকান আমারও ঠিক জানা নেই।’
লোকটা বেশ কটমট চোখে তাকিয়ে বলল-‘স্টুপিড,জুপিটার একটা প্ল্যানেট।বৃহস্পতি গ্রহের জ্ঞান নেই তোমার।’
অপূর্ব বুঝল মাথার গোলমাল বেশ ভালোরকমের।খুব মায়া হল তার,বাচ্ছার মত করে অপূর্ব ওনাকে বোঝাল-‘ও আপনি জুপিটারে যাবেন।বলবেন তো।একদম বুঝতে পারিনি।’
লোকটা একটু শান্ত হয়ে বলল-‘শুধু যাবো না।ওখান থেকেই এসেছি।’
‘ও আচ্ছা,তা বেশ।কিন্তু এটা বোধহয় ভুল করে আপনি আমাকে দিয়েছেন।’বলে অপূর্ব গোল ধাতব জিনিসটা হাতের চেটোয় মেলে ধরল।
‘না,ঠিকই দিয়েছি।এটা আমার আর কোনো কাজে আসবে না।রাশিয়াতে টাইম ট্রাভেল করে পিছিয়ে গিয়ে একটা গোটা দিন বেকার গেছে।তুমি রাখো,তোমার দরকারে লাগতে পারে।’
অপূর্ব অসুস্থ মানুষটার সাথে আর কোনো তর্ক না করে চুপচাপ ওটা নিজের কাছে রেখে দিয়ে একটু সরে এলো।একটা সিগারেট ধরিয়ে সবে সুখটান দিয়েছে,অমনি সায়েন্টিস্টমশাই এসে হাত থেকে ফেলে পায়ে চেপে দিল।অপূর্ব কিছু বোঝার আগেই সে বলল-‘ইভেন দা স্মোক অফ আ সিঙ্গেল সিগারেট ইস হাৰ্মফুল টু দা এনভায়রনমেন্ট।এত গ্লোবাল ওয়ার্মিং,ওজনস্তর ক্ষয়–তাও বোধ নেই তোমাদের!শুধু পরিবেশবিদ আর সরকারী প্রজেক্টের ভরসায় থাকলে চলবে?প্রত্যেককে নিজের চারপাশের প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।তবু মানুষগুলোকে বাঁচাতে কেন যে আমাকে ইউনাইটেড সোলার সিস্টেম এসেম্বলি থেকে পাঠাল!’
সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে অপূর্বর-‘ইউনাইটেড সোলার সিস্টেম এসেম্বলি?’
‘কেন তোমাদের নেই ইউনাইটেড নেশনস এসেম্বলি?বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে,একটা মহাকাশীয় বিস্ফোরণ থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে।’
সব গুলিয়ে গিয়ে অপূর্ব বলল-‘আপনার খিদে পায়নি?কিছু খাবেন?’
‘হাঁ,ভালো কথা বলেছো।এই তো সঙ্গেই আছে।LH2,লিকুইড হাইড্রোজেন।এছাড়া তেমন কিছু মেলে না সেখানে।’বলে একটা বোতল মত জিনিস থেকে তরলটা গলায় ঢালতেই গলা থেকে পুড়তে পুড়তে সেটা নেমে গেল।অপূর্বর সামনে পৃথিবী কেমন দুলে উঠল।সে বোধহয় মুর্ছা যাবে।

পাড়ার কয়েকজন ছেলেকে অপূর্বকে ধরে নিয়ে আসতে দেখে অপূর্বর মা খুব খারাপ কিছুর আতঙ্কে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলেন।পাড়ার ছেলে জ্যোতি বলল-‘মাসিমা,তেমন কিছু না,জ্ঞান হারিয়েছিল।এখন একটু ঠিক আছে।কেন কেজানে মাসিমা ও রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে ভুল বকছিল।আমি ফেরার পথে ওকে ওভাবে দেখতে পাই।’
‘ভাগ্যিস তুমি দেখেছিলে।’-বলে অপূর্বর মা কেঁদে ফেললেন।
সবাই মিলে ধরে ওকে ঘরে শুইয়ে দিল।
অপূর্বর এখন জ্ঞান আছে,কিন্তু দুর্বল লাগছে।চোখ লাল আর মাথাটাও একটু ভার।এরপর টানা দুদিন জ্বরের ঘোরে শুয়ে রইল সে।একটু সুস্থ হয়ে জানতে পারল জ্যোতিদা সেদিন ওকে রাস্তার ধারে একা প্রলাপ বকতে দেখে ব্যাপার কি বোঝার জন্য কাছে যেতেই ও জ্ঞান হারায়।জ্যোতিদাকে অনেকবার প্রশ্ন করেও একই উত্তর পেয়েছে সে যে সেদিন আর কেউ তার সাথে ছিল না।পুরো ব্যাপারটা অপূর্বর কাছে কেমন দুঃস্বপ্নের মত।রোহিনীকেও বুঝিয়ে বলেছিল পুরোটা।রোহিনী মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছে-‘নিজের উপর এত চাপ দিওনা।ডিপ্রেশন হচ্ছে।এখন আর পরীক্ষা দেবেনা কদিন,রেস্ট নাও।’
অগত্যা সেসব ভাবনা চাপা দিয়ে এদিক ওদিক বন্ধুদের কিংবা রোহনীর সাথে সময় কাটাচ্ছে।কিন্তু আজ রাতে তারায় ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে অন্ধকার ঘরে চুপ করে বসে আছে অপূর্ব।সেদিনের ঘটনাগুলো ওর মনে মধ্যে উথাল পাথাল হচ্ছে।ওর সবচেয়ে আশ্চর্য লাগছে এটা জেনে যে সেই কয়েন মত বস্তুটা এখনো তার কাছেই আছে।আর ওটা সাথে থাকলে অদ্ভূত ঘটনাও ঘটছে।এই তো আজ সকালে ভেবেছিল রোহিনীকে বাইকে চাপিয়ে যোধপুরের দিকে যাবে।কিন্তু বেরোবার সময় মুষলধারে বৃষ্টিতে আর যাওয়া হল না।পরে শুনল সকালে ওদিকটায় একটা বড় একসিডেন্ট হয়ে গেছে।তাছাড়া অপূর্বর অনেকদিন আগে হারানো শখের একটা দামি ঘড়ি বহুদিন খুঁজেও পায়নি।আজ হঠাৎ দেখল জামাকাপড়ের ভাঁজে চোখের সামনে রয়েছে।ল্যাপটপ কোলে বসে তাড়াতাড়ি গুগলে কয়েনের সমস্ত নকশাগুলো একে একে সার্চ করলো। একসময় বেরিয়ে পড়ল কয়েনটা।ওটা নাকি অনেক পুরোনো রাশিয়ান মুদ্রা রুবেল,অতীতে একে খুব সৌভাগ্যশালী মনে করা হত।লোকটা সেদিন বলছিল নাকি টাইম ট্রাভেল করে এনেছে!এটাও বলেছিল এটা নাকি অপূর্বর কাজে আসবে।অপূর্বর আর সৌভাগ্য,আজ পর্যন্ত একটা চাকরিই জুটল না।

আজ মায়ের পূর্ণিমা পুজোর বাজারের জন্য বেরোচ্ছিল অপূর্ব। সকালবেলা কার মুখ দেখে উঠেছিল কে জানে।যে ইন্টারভিউটা দিয়েছিল সেটার কল লেটারটা হাতে পেল।দৌড়ে মা বাবাকে জানিয়েই প্রণাম ঠুকল।রোহিনীকে কিছু জানালো না।একটা কল করে বলল-‘আজ বিকেলে একবার দেখা করা যায়?গঙ্গার ধারে এস,খুব জরুরী।বোধহয় আমি আর সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে পারবো না।’
রোহিনী কিছু বোঝার আগেই ফোনটা কেটে দিল।সারাদিন রোহিনীর ফোনও ধরল না।দুপুরে খাওদাওয়ার পর বাবার সাথে বসে টিভি অন করে একজায়গায় হাতের রিমোট বাটন থমকে গেল।টিভিচ্যানেলগুলোর হেডলাইন হল-‘একটা বিশাল গ্রহাণু পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে সরে গেছে। একটুর জন্য বিরাট মহাকাশীয় বিস্ফোরণ থেকে পৃথিবী রক্ষা পেল।’অপূর্বর মুখে একটা স্বস্তির হাসি ফুটে উঠল।
বিকেলে রোহিনী যখন চোখমুখ ফুলিয়ে এলো তখন অপূর্ব খুব মার খাবে বলে মায়ের হাতের তৈরি রোহিনীর প্রিয় মুড়িঘন্টসমেত কৌটোটা ওর সামনে মেলে ধরলো।তারপর বলল-‘আরো একটা জিনিস এনেছি,দেখবে?’
কল লেটারটা দেখানোর পর অবশ্য অপূর্ব একটাও মারেরও ডিসকাউন্ট পেল না।তারপর নির্ভরতার কাঁধে মাথা রেখে দুজনে বেশ অনেকক্ষন বিকেলের অস্তরাগে আর নব আবেশে রাঙা হল।একসময় উঠে আসতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ল ওপাশের বেদিতে দুজন বয়স্ক ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলা বসে আছেন।ভদ্রলোক শরীরের ভারে বেশ ঝুঁকে আছেন।বলছেন-‘দুটো আইসক্রিম কিনে আনো।’
মহিলা ধমকে বললেন-‘না,ঠান্ডা লাগবে।ডাক্তার বকবে।’
বয়স্ক লোকটি মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলে মহিলা উঠে দুটো আইসক্রিম এনে ওনার হাতে ধরিয়ে দিলেন।দুজনে হাতের উপর হাত রেখে দুটো বাচ্ছার মত মজা করে আইসক্রিম খাচ্ছেন।অপূর্ব আর রোহিনী থমকে দাঁড়াল।এই মুহূর্তে অপূর্বর কাছে জুপিটারের চেয়ে পৃথিবী অনেক সুন্দর লাগছে।রোহিনীর হাতটা ধরে ভাবল তাদের এখনো অনেক পথ চলা বাকি।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত