গোধূলি বিকেল, আকাশ লাল হয়ে আছে। প্রকৃতি শান্ত। ফুরফুরে হাওয়া বইছে।
বারান্দার রেলিং ধরে বাইরের আমগাছটার দিকে তাকিয়ে আছে পলিনা। আম গাছটাতে বসে একটা কোকিল মনের সুখে গান গেয়ে যাচ্ছে অথচ ওর মনে সুখ নেই। কয়েকফোঁটা অশ্রুবিন্দু গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে।ভাবনায় ডুবে আছে ও…….
আজ থেকে সাত বছর আগে,
অন্ধকার রাত, তার মাঝে মনে খুশির ঝলকানি অধীর আগ্রহে বসে আছে ও। শুভ্র বাসায় ফিরলেই সারপ্রাইজ হিসেবে খুঁশির খবরটা দেবে। শুভ্র, ওর বর। ২ বছর আগেই ওদের বিয়ে হয়েছে। প্রেম করে বিয়ে……বসেবসে অঅতীতের কথা ভাবছে পলিনা। (ভার্সিটির নবীনবরণের দিনই দেখা হয় ওদের। প্রথম দেখাতেই ভালোলাগা আর সেখান থেকেই প্রেম। আর এখন বিয়ে করে দুজন বেশ সুখেই আছে। শুভ্র এখন একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে।।)
আজকেই রিপোর্ট টা হাতে এলো পলিনার।ও মা হতে চলেছে।খুশির খবরটা শুভ্রকে দেয়ার জন্যই বসে আছে এখন।চাইলে ফোনেই বলে দিতে পারতো কিন্তু বলবেনা। খবরটা শুনার পর শুভ্রর মুখের অবস্থাটা দেখতে চায় ও। ফোনে শুভ্রকে বলে দিয়েছে একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে।
১ ঘন্টা আগেও কল করেছিল, শুভ্র বলল এইতো আধঘন্টার মধ্যেই বের হচ্ছি।
এতক্ষণে চলে আসার কথা ওর।
পলিনা ভাবছে, আরেকবার কি কল করবে শুভ্রকে। অস্বস্তি বাড়তে থাকে। এত দেরি কেন হচ্ছে,
ভাবনায় ছেদ করে ফোনটা বেজে উঠলো।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো,
শুভ্রর ফোন।।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা ভারী কণ্ঠ ভেসে আসলো।নাহ্, এটাতো শুভ্রর কণ্ঠ
না। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে কথা বলল ও।
ওপাশ থেকে লোকটা ওকে তাড়াতাড়ি এনাম ক্লিনিকে যেতে বলল। বুকটা ধক করে উঠলো ওর। বলল, শুভ্র কোথায়?
জবাব এল,’ আপনার স্বামী এক্সিডেন্ট করেছে, অবস্থা খুব খারাপ। তাড়াতাড়ি হসপিটালে চলে আসেন।’
চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে ওর।দ্রুত হসপিটালে গেলো ও। ডাক্তার বলল, হাতে বেশি সময় নেই।চাইলে রোগীর সাথে দেখা করতে পারেন।
দুরুদুরু বুকে শুভ্রকে যে কেবিনে রাখা হয়েছে সেখানে গেলো ও। আস্তে করে ডাকলো,
শুভ্র।
চোখ মেলে তাকাল শুভ্র, পরক্ষণেই বন্ধ হয়ে গেলো।। সেদিকে তাকিয়ে শিউরে উঠলো ও।শুভ্র আর নেই….বাবা হওয়ার খবরটাও জানতে পারলোনা
জ্ঞান হারিয়ে ফেলল পলিনা……..
ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে এলো পলিনা।
টুশিকে স্কুল থেকে আনার সময় হয়ে গেছে।টুশি, ওর মেয়ে।(শুভ্র একদিন বলেছিল মেয়ে হলে তার নাম টুশি রাখবে, খুব হেসেছিলো সেদিন পলিনা।কিন্তু মেয়ের নাম ও টুশিই রেখেছে।অন্তত শুভ্রর একটা ইচ্ছা তো পূরণ করতে পেরেছে)
কোকিলটা এখনো ডেকে যাচ্ছে। বসন্ত এসে গেছে কিন্তু ওর মনের মাঝে ঘোর গ্রীষ্ম………
খুব বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ও….
কে জানে কষ্টের এই প্রহর কখন শেষ হবে?
হয়তোবা যখন শেষ হবে তখন থাকবে ওর জীবনের শেষ প্রহর……
——-সমাপ্ত———