পঙ্গু ফকিরের বাস্তব স্বপ্ন

পঙ্গু ফকিরের বাস্তব স্বপ্ন

করিম মিয়া নতুন বিয়ে করলো আবার। পৃর্বেও একটা বিয়ে করেছিলো। পূর্বের বউয়ের একটা বাচ্চা আছে। সব কিছু মেনে নিয়েই মেয়েটি বিয়ে করলো করিম কে। আর করিমের যে মেয়েটা আছে। তার মেয়ের নাম শান্তি। করিমের মেয়ের বয়স কেবল ৬ বছর। স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে মাত্র ।

দিনগুলো খুব ভালোই কাটছিলো করিমের নতুন পরিবার নিয়ে। আর হ্যাঁ ! তার পৃর্বের বউয়ের ব্লাড ক্যান্সার হয়ে মারা গেছে। —
সারাদিন রিকশা চালিয়ে দিন শেষে ক্লান্ত তা নিয়ে বাড়িতে আসে করিম । এসে মেয়ের মুখ দেখে আবার ক্লান্ত মন টা চঞ্চলতা পায়, পায় শান্তির পরশ। মেয়ের মুখে বাবা ডাক শুনলেই করিম মিয়ার সব দুঃখ কষ্ট গুলো হারিয়ে যায়। করিম মিয়ার অনেক স্বপ্ন তার মেয়েকে নিয়ে। তার মেয়ে একদিন অনেক বড় হবে। বড় কিছু করবে। সম্মান জনক কিছু। নতুন বিয়ে করা বউটা ও অনেক ভালো।শান্তি কে অনেক আদর করে। কোন ত্রুটি নেই যেন। তিন টি মাস তাদের খুব সুখেই কেটে গেলো। তারপর হঠাৎ একদিন করিম মিয়া রিকশা চালাতে চালাতে রাস্তায় খুব মারাত্বক এক্সিডেন্ট করে। খুব ভয়াবহ অবস্থা। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলে। করিম মিয়ার একটা পা কেটে ফেলতে হবে। অনেক টাকার দরকার। তাকে সুস্থ করতে। এদিকে পা টা কেটে ফেলতে হবে। করিম তখন ও জ্ঞানহারা। তার নতুন বউ খুব চিন্তায় পরে গেলো। এদিকে শান্তি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। খুব চিৎকার করে কাঁদছে। করিম তো গরিব মানুষ। তার তো কোন টাকা পয়সা নেই। করিমের জ্ঞান ফিরবে কবে তা ও বলতে পারছে না। অবশেষে টাকা কোথাও না পেয়ে। করিমের বাড়ির ভিটে জমি টা বিক্রি করে দিলো নতুন বউয়ের সিদ্ধান্তে । অবশেষে তিন দিন পর জ্ঞান ফিরলো করিমের। এদিকে করিম জ্ঞান হারা থাকা অবস্থায় তার পা কেটে ফেলা হয়েছে। করিমের যখন জ্ঞান ফিরে তার পায়ের দিকে তাকাতেই চিৎকার দিয়ে ওঠে। আর কান্নায় ভেঙ্গে পরে। করিম যখন একটুখানি সুস্থ হয়। তখন করিম বাড়ি যেতে চায়। কিন্তু করিমের বউ শুধু কাঁদছে। করিম ও কাঁদছে। এখন শান্তি স্কুল এ গেছে। ফিরবে কিছুক্ষন পর। করিম তার বউকে
বললো—
,
– কাইন্দা আর কি হইবো কও। আল্লাহ আমার এমন শাস্তি দিবো কহনো ভাবি নাই। কাইন্দো না।
( করিম কেদে কেদে তার হাত দিয়ে তার বউয়ের চোখের পানি মুছে দিচ্ছে আর বলছে। করিম এখন ও জানে না তার ভিটে বাড়িটা বিক্রি করা হয়েছে। তার বউ ও তাকে বলতে পারছে না যে তার বাড়ি টা বিক্রি করা হয়েছে।)
– কি হলো কথা কও না ক্যা।
– ও গো তোমার চিকিৎসা করার লাইগা অনেক টাকা লাগছে। তাই বাড়িটা বিক্রি কইরা দিছি।
( কথাগুগুলো করিমের বউ অনেক কেদে কেদে বললো। করিম এ কথা শোনার পর আরো কেদে ফেললো। অবশেষে করিম বললো)
– চলো যে লোক বাড়ি টা কিনছে। তা রে বলি কিছুদিন যদি থাকবার দেয়।
( করিম এমন টা ভেবে সেই লোকের কাছে গিয়ে অনেক অনুরোধ করে বলে। কিছু দিন থাকার জন্য । লোকটি কিছুদিন থাকার জন্য অনুমতি দেয়। করিম মিয়া তো হাটতে পারে না। মাটিতে ঘেষে ঘেষে হাত দিয়ে ঠেলা দিয়ে দিয়ে এগিয়ে যায়। কত কষ্ট তার। সেদিন বাড়িতে এসে রাতে বারান্দায় বসে ভাবছে আর অঝরে কাঁদছে । করিমের তো আর টাকা পয়সা আয়ের পথ নেই। মেয়ে বউ কে খাওয়াবে কি। একটা মেয়ে তাকে পড়ানোর স্বপ্ন কি বিলীন হয়ে যাবে। এদিকে বাড়িটাও বিক্রি করে দিয়েছে। কিছু দিন পর সেখান থেকেও বিদায় নিতে হবে। তখন যাবেই বা কোথায়। এমন অনেক চিন্তা মাথায় নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলো। সকাল হতেই করিমের বউরের বাবার বাড়ি থেকে তার বড় ভাই এসেছে। এসে করিমের এমন পা কাটা অবস্থা দেখে । করিমের সাথে কথা না বলে। তার বোন কে ডাকাডাকি শুরু করে দিলো। করিমের বউ বেড়িয়ে এলো ঘর থেকে। এসে তার ভাইকে দেখে অনেক খুশি করিমের বউ।)
,
— চল তোকে বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছি।
( করিমের বউয়ের বড় ভাই)
— কেন? ( করিমের বউ)
— এখানে এ ল্যাংড়া তোকে কি খাওয়াবে। শুনলাম বাড়িটাও নাকি বিক্রি করে দিয়েছে। থাকবি কোথায়। আর ও রাখবে কোথায়।
( অনেক নিন্দনীয় ভাষায় বকাবকি করলো করিম কে তার বউয়ের বড় ভাই। করিমের মেয়ে শান্তি এসব বকাবকি চিৎকারে ঘুম থেকে উঠে এলো। এসেই এসব দেখে তার মাকে জড়িয়ে ধরলো। এমন সময় বউয়ের বড় ভাই করিমের মেয়েকে তার বোনের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তার বোনের হাত ধরে। বলল –)
,
— চল এ বাড়িতে আর না।
— না ভাই আমি যামু না। আমার নিয়া যাই ও না। আমি করিম মিয়ার সাথেই থাকমু। (করিমের বউ কেঁদে কেঁদে বলছে)
— উম করিমের সাথেই থাকমু !!!!!! চল।
( এই বলেই টেনে হেচরে নিয়ে যেতে লাগলো!। তখন করিম বারান্দায় থেকে নেমে মাটিতে ঘেষে ঘেষে তার বউয়ের বড় ভাইয়ের কাছে আসলো। এসে –)
,
– ভাই আমি ভিক্ষা কইরা খাওয়ামু। তাও ওরে নিয়া যাইয়েন না।
— থাক তুই তোর ভিক্ষা নিয়া। এই চল তো।
( করিম মিয়াকে পা দিয়ে ঠেলে দিয়ে তার বোন কে জোর করে টেনে নিয়ে চলে গেলো। তার বউ বারবার পিছন ফিরে তাকাচ্ছিলো। আর চিৎকার করে কাদছিলো। করিম ও চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। তার মেয়ে শান্তি তার পাশে বসে কাদতে লাগলো। করিম তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছে। আর শান্তির মাথায় হাত বুলাচ্ছে। সেদিন রাতে আরো ভাবনা গুলো ঘিরে ফেললো করিম কে। সে কি করবে। তার তো এখন ভিক্ষা ছাড়া কোন উপায়। কাল সারারাত ও ঘুমহীন একটা রাত কেটে দিয়েছে কাঁদতে কাঁদতে। আজ রাত টাও এমন কাঁদছে আর ভাবছে। এদিকে মেয়েটি তার কোলে ঘুমিয়ে পরেছে। আজ ঘরে গিয়ে ঘুমায় নি। করিম মেয়েটির মুখ পানে চেয়ে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে লাগলো। তার মেয়ে কে সে পড়াশুনা করাবে । তার মেয়ে একদিন পড়াশোনা করে তার সব কষ্ট দৃর করে দেবে। । কিন্তু পড়াশোনা করাবে কিভাবে। তার তো কোন সামর্থ্য নেই। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে আর ভাবছে। অবশেষে করিম শেষ সিন্ধান্ত নিলো। সে দুরের কোন শহরে চলে যাবে। যে শহর তাকে চেনে না জানে না। সেখানে গিয়ে নতুন করে বাঁচবে তার মেয়ে শান্তি কে নিয়ে। পা কেটে গেছে বলে একে একে সব চলে গেলো। এখন শুধু তার নয়নের মনি শান্তি। তার মেয়ে আছে। এখন তার মেয়ে কে নিয়ে সে পাড়ি দিবে সেই দুঃখের সাগর। পরের দিন ভোরে কাউকে না জানিয়ে বিদায় নিলো সেই গ্রাম থেকে.। দুরের কোন শহরে পাড়ি জমালো। সেখানে ভিক্ষা করতে লাগলো। মেয়েকে একটা স্কুল এ ভর্তি ও করে দিলো। সারাদিন সেই শহরে ভিক্ষা করে!! প্রখর রোদ–বৃষ্টির মাঝে ভিজে পুড়ে মেয়ের জন্য। শান্তির মেধা খুব ভালো। সেও পড়াশোনার জন্য খুব আগ্রহি। শান্তি আর তার বাবা রাস্তার পাশে এক বস্তিতে থাকতো। এভাবে চলতে চলতে শান্তি এসএস পরীক্ষা দিলো । খুব ভালো ফলাফল করেছে শান্তি। করিম মিয়া যে যে পঙ্গু ফকিরদের সাথে ভিক্ষা করতে বের হতো। তারাও তখন শান্তির ভালো ফলাফলের কথা শুনে খুব আনন্দিত হলো। তখন সেই সব পঙ্গু ফকির গণ শান্তির পড়াশোনার দায়িত্ব নিলো। সব ফকিরের স্বপ্ন তখন একটাই করিমের মেয়ের শান্তি কে পড়াশোনা করানো। শান্তির পড়াশোনার সব খরচ ঐ সব ফকির গুলো টাকা জমিয়ে জমিয়ে দিতো। করিম মিয়া তার মেয়েকে নিয়ে বড্ড আশাবাদী। ফকির গুলো তাদের কষ্ট টাকে সুখ মনে করে শান্তির জন্য তারা আশান্বিত । শান্তি ইন্টারমিডিয়েটে ও খুব ভালো ফলাফল করলো । একসময় পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে ভর্তি হয়। তার মেধা এত টাই ভালো ছিলো!! —————-
,
ক্লাসের সব স্টুডেন্ট রা সবাই শান্তি কে দেখে তার পোশাক দেখে হাসা হাসি করতো। ইউনিভার্সিটির আরো অনেক ছেলে মেয়ে ও তার পোশাক পরিচ্ছেদ পুরোনো বলে নানা রকম কটু কথা বলতো। কিন্তু ক্লাসে সব থেকে শান্তি ই ছিলো বেশি মেধাবী। সে সেই ইউনিভার্সিটি তে প্রথম বছর — সবার থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে। ইউনিভার্সিটি তে তার সেই ভালো ফলাফল উপলক্ষে একটা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেই সংবর্ধনায় শান্তি কে দেখে একটি ছেলে তাকে পছন্দ করে ফেলে। এদিকে শান্তির পড়াশোনার খরচ দিন দিন বেড়েই চলছে। শান্তি ও চিন্তিত অনেক। তার বাবা আর ঐ ফকির দের আর কষ্ট দিতে চায় না। সে কিছু একটা করবে । যার দরুন তার পড়াশোনার খরচ টা যেন চলে কোন রকমে। এমন ভাবতে ভাবতে কয়েক দিন কেটে গেলো। হঠাৎ এক রাতে শান্তির ফোন এ একটি কল আসলো।
,
— হ্যালো কে?
– আপনি কি শান্তি ম্যাডাম?
– জ্বী হ্যাঁ?
— আপনি কি টিউশনি করতে পারবেন।
— জ্বী হ্যাঁ পারবো!! আপনি কে?
– কাল সব জানানো হবে আপনাকে! ইউনিভার্সিটি তে আসবেন ।
( পরের দিন ইউনিভার্সিটি তে দুইটি ছেলে আরও তিন টি মেয়ে তার কাছে এসে তারা বললো)
— আমাদের কোচিং এ আপনাকে নিয়োগ করবো। আপনি না কি এ বছরের সেরা মেধাবী স্টুডেন্ট। তাই আসলাম আপনার কাছে। আপনি কি করবেন?
— জ্বী হ্যাঁ করবো।
( শান্তি চোখে মুখে অনেকটা হাসির ছাপ নিয়ে কথাগুলো বললো। সেদিন বাসায় এসে তার বাবাকে ফোন করে জানালো। তার পঙ্গু বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো।)
— তোর পড়াশোনার ক্ষতি হইবো মা। কেন টাকা বেশি লাগবো। আমি আরো সারাদিন সারারাত ভিক্ষা কইরা তোকে টাকা দিমু। আর আমার সাথে যারা থাকে তারাও দিবো । ——– তোর পড়াশোনার ক্ষতি হইবো মা।
( বাবার এমন কথা শুনে শান্তি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। তারপর)
– না বাবা কিছু হবে না। দেখ তোমাদের আর এত কষ্ট করতে হবে না।
— না মা ক্ষতি হইবো।
– না বাবা কিছু হবে না। আমার পড়াশোনা ঠিক মতোই চলবে। তুমি চিন্তা করো না তো।
( শান্তির কোন বন্ধু বান্ধব ছিলো না। তার পোশাক দেখে তার সাথে কেউ মিশতে চাইতো না। শান্তি যে কোচিং এ পড়াতো। সেখান থেকে শান্তি কে অনেক টাকা বেতন দেওয়া হতো। কারন শান্তি ই সব চেয়ে ভালো পড়াতো। কোচিং এর যে প্রতিষ্ঠাতা। সে হলো সেই ছেলে। যে ছেলে শান্তি কে সংবর্ধনায় দেখে পছন্দ করেছিলো। আসলে শান্তির জীবনের পিছনের কাহিনী গুলো ছেলেটা কিভাবে যেন জানতে পারে। তারপর থেকেই ছেলেটি শান্তির ভবিষ্যৎ এর উজ্জ্বলতা ফুটিয়ে তুলতে চায়। শান্তি কোচিং এর মালিক মানে! সেই ছেলেটির সাথে একসময় পরিচিত হয় । তারপর একসময় সেই ছেলের সাথে শান্তির বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়। শান্তি তখন বন্ধু ভেবে খুব আপন করে নেয় তাকে। শান্তির আর কোন বন্ধু নেই। শান্তি তখন তার পিছনের ছোট থেকে বড় হওয়ার নির্মম কষ্টের কাহিনি গুলো ছেলেটিকে বলে দেয়। ছেলেটি তার জীবনের কাহিনী গুলো শুনে কান্না চেপে রাখতে পারে না। তখন ছেলেটি শান্তি কে বলে ওঠে!!!
– আমি যদি তোমার পঙ্গু বাবা আর সেই পঙ্গু ফকির দের কে কোন এক উপার্জনের পথ সৃষ্টি করে দেই তবে কেমন হয়।
– আপনি কেন এসব করবেন?
— নিজের দ্বায়িত্ব ভেবে করবো। কিন্তু।
( ছেলেটি কিন্তু বলাতে শান্তি ছেলেটির দিকে তাকালো। ছেলেটি ও চেয়ে আছে শান্তির দিকে । )
– কিন্তু কি?
– কিছু না।
( তারপর ছেলেটি তার পঙ্গু বাবাকে ও সেই পঙ্গু ফকির দেরকে নিয়ে একটি পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়। তাদের কে সুস্থ করে তোলে । ছেলেটি পরে শান্তি কে বললো—)
— আচ্ছা তোমার জন্য তোমার বাবা এত কষ্ট করেছে। আর ঐ পঙ্গু ফকির রাও তো অনেক কষ্ট করেছে। তুমি তাদের জন্য কি করতে চাও। ( ছেলেটি)
— আমি আমার বাবাকে ঐ ভিক্ষার জগৎ থেকে ফিরিয়ে আনতে চাই এবং তাদের ও। । আর যারা আমার জন্য এত কষ্ট করে আমাকে পড়িয়েছে। তাদের জন্য আমি একটা একটা করে কাজের সুযোগ করে দেবো। যা তে তারা ভিক্ষা না করে কোন কাজের মাধ্যমে দিন কাটাতে পারে। যেন সুখে দিন কাটা তে পারে।
( ছেলেটি শান্তির থেকে এই কথা শোনার পর। শান্তির অজানাতেই– ঐ পঙ্গু ফকির গুলোকে —কাউকে মুদি দোকান, কাউকে রুটির দোকান, আবার কাউকে অন্যান্য ছোট ছোট কাজের পদ্ধতি আর উপকরন গুলো সাজিয়ে দিয়েছে। এতে সবাই খুশিও, সুখি।
আর করিম মিয়াকে শান্তি তার বাসায় নিয়ে এসেছে। শান্তি পরে তা জানতে পারে ছেলেটির কর্মকান্ড সম্পর্কে । এবং তার বাবাকে ঐ ছেলেটির সম্পর্কে সব খুলে বলে। তার বাবা বুঝতে পারে ছেলেটি কি চায়। করিম মিয়া তখন তার মেয়েকে ডেকে বলে —-)
– মা একটা কথা বলি!!
— হুম বলো!
— ঐ ছেলেটি মনে হয় তোরে ভালোবাসে মা। । সে জন্যই তো এত কিছু করতাছে আমাদের জন্য। যার জন্য আমরা মুক্তি পাইছি সেই ভিক্ষার জগৎ থাইকা। । পাইছি সুখ শান্তি।
— বাবা কি বলো এসব!! না এমন টা হবে না। তুমি ভুল ভাবছো।
— না রে মা তুই একবার ওনার মনের কথা জানবার চেষ্টা কইরা দেখিস।
( তারপর থেকে শান্তির মনে ঐ ছেলেটির ভাবনা দোল খাচ্ছিলো। পরের দিন কোচিং এ গিয়ে পড়ালো। পড়ানো শেষ করে। ছেলেটিকে ফোন দিয়ে ডেকে আনলো। ছেলেটি চলে আসলো।)
— আপনার কি একটু সময় হবে। আমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হবেন?
( শান্তি)
— হ্যাঁ অবশ্যই। চলো কোথায় যাবে।
( ছেলেটি ভাবছে আজ শান্তি আমাকে একটু হলেও বুঝেছে। যে আমি তাকে চাই।)
— আচ্ছা চলুন।
( তারপর তারা হাটতে হাটতে একসময় নিবির এক শান্ত জায়গায় এসে গেলো। একটা সুন্দর পুকুরের ধারে বসে পড়লো। তারপর শান্তি)
– আচ্ছা আপনি আমার এত উপকার করলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমি আপনার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। আচ্ছা আপনি বিয়ে করবেন কবে।
— বিয়ে? হঠাৎ এ প্রশ্ন?
— হ্যাঁ বিয়ে?
— যেদিন মেয়ে টা রাজি হবে, আমাকে বুঝবে। সেদিন ই!
( ছেলেটি বলেই দিলো ঠিক যেন না বলা কথার মতো। শান্তি মনের অন্তরালে বুঝে নিলো ছেলেটি তাকেই ভালোবাসে ।)
–সেই মেয়েটির জন্য আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে অনেক।
— করবো অপেক্ষা করবো অনেক!!!
( এবার দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে এই কথাগুলো বলছে। )
— মেয়েটির স্বপ্ন পূরন না হওয়া পর্যন্ত। অপেক্ষা করতে হবে কিন্তু। পারবেন?
— হুম!! কিন্তু মেয়েটি কি?
— মেয়েটিও অপেক্ষা করবে।
—–
( কোন একদিন হয়তো মেয়েটির স্বপ্ন পূরন হবে। সেদিন ছেলেটি শান্তি কে পাবে আপন করে। শান্তির বাবা করিমের মনের আশা পূরণ হবে। সেই ফকির পঙ্গু দের স্বপ্ন ও পূরন হবে। )
——– ———- ——— ——— ———-
মানুষ চেষ্টা করলে সব ই পারবে। কিন্তু চেষ্টায় করতে করতে ক্লান্ত বোধ করা যাবে না। তাহলে কখনো সফলতা আসবে না। ইচ্ছা থাকতে হবে। তার সাথে থাকতে হবে সাহস। আর এই সাহসের সাথে সাথে চেষ্টা করতে হবে। তবেই না জীবনে সাফল্যে আসবে।

গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত