-তাহলে তোমার ডিসিশন ফাইনাল তাইতো ?
-হ্যা ফাইনাল ডিসিসন নিয়ে নিয়েছি…
-আরেকবার ভেবে দেখ প্লিজ
-নাহ ভেবে দেখেছি।সবকিছু শেষ…
দেখলাম ডিভোর্স পেপারে সাইনটা করার জন্য হাতটা বাড়াল জান্নাত।আমার কেন জানি মনেহল এভাবেই শেষ হতে পারেনাসবকিছু।তবে কি সব শেষ?এত্ত আবেগ ভালবাসা সব সপ্ন কি শেষ হয়ে যাবে এত সহযেই ?পারছিনা কিছু ভাবতে আর মনে হচ্ছিল যেন প্রতিটি মুহুর্তেই আমি একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছি ….ধাবিত হচ্ছি মৃত্যুর দিকে।যে মানুষটা ছাড়া এক মুহুর্তো চলা কষ্টকর সেই চলে যাচ্ছে আজ।সাইন করতে যাবে ঠিক ঐ মুহুর্তেই আমি ওর হাতটা আটকে চেপে ধরলাম …চোখে কিছু দেখছিনা ।চারপাশটা কেমন যানি অচেনা অচেনা লাগছে…সময়টা যেন পাগলাটে ।হুট করেই বদলে যাচ্ছে।যেই সময়টা ছিল শুধুমাত্র জান্নাত আর আমার আজ সেই একি সময়টা আমাদের আলাদা করে দিচ্ছে।ওর হাতটা ধরে আরেকটি বার আমি জান্নাতের চোখদুটির দিকে তাকালাম অনেক আশা নিয়ে যে আশাটা দেখেছিলাম আমি সেই বিয়ের রাতে ।যেদিন দুজোড়া চোখ একে অপরের দিকে তাকিয়ে দেখেছিল অনেক সময় একসাথে চলার একেঅপরের সাথি হয়ে চলার আশাভরসা।কিন্তু আমি সেটি খুঁজছি আজ।খুঁজে চলেছি আমি আজো।জান্নাতের চোখজোড়া মলিন।তাতে নেই সেই আগের হাসি যা দেখার জন্য সবকিছু ছেড়ে চলে আসতাম আমি।আমার হাতটি ছেড়ে সে সাইনটা করে দিল।সবকিছু যেন অন্ধকার।শেষ ।এক নিমিষেই শেষ।সাইনটা করে দিয়ে গোছানো ব্যাগটি নিয়ে চলে গেল দরজা দিয়ে।জান্নাতকে আটকানোর শক্তিটা কেন যানি পাচ্ছিনা।শরীরের প্রতিটি পেশি যেন অশার হয়ে পরছে।একফোঁটা শক্তিও পাচ্ছিনা আমি নিজের মধ্যে ।একটা মিথ্যে অভিমান নিয়ে চলে গেল।দরজায় যাবার সময় বলল”ভাল থেক”
ভাল থেক
ভাল থেক
ভাল থেক
এই কথাটাই ঘুরছে মাথার মধ্যে এখন আমার মাথায় ।ভাল থেক বললেই কি ভাল বলা যায় ?নাহ যায়না।আচ্ছা আমরা এমন কেন বলতে পারেন ?আমরা একটা মানুষকে ভীষন ভালবাসি ।তার প্রতিটি কাজকে তার প্রতিটি কাজকে তার প্রতিটা ভাললাগা মন্দলাগা তার প্রতিটি জিনিষকে আমরাভালবাসি আর কল্পনা করি সেই মানুষটাকে নিয়েই পরের সারাটাজীবন কাটিয়ে দেওয়ার ।কিন্তু সেই মানুষটার করা একটি মাত্র ভুলের জন্য তাকে ছেড়ে চলে যাই আজীবনের জন্য ।আর যাবার সময় বলে যাই ভাল থেক।কতটা নিষ্ঠুর হলে আমরা এমন করতে পারি বলতে পারেন?আচ্ছা ভুলতো মানুষরাই করে তাইনা ?কিন্তু ভুল বোঝার পর আমাদের উচিত তাকে ক্ষমা করে দেওয়া।
.
আমি রাস্তায় বেরিয়ে পরছি ।রাত ঠিক তিনটে বাজে।জানিনা কি হচ্ছে আশেপাশে কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি রাস্তাটির আশেপাশে কিছু ল্যাম্পপোষ্ট আছে আর তাঁদের থেকে আলো মাটিতে এসে আলোকিত করছে ।হাঁটছি হাটছি।বুকের মধ্যে প্রচন্ড যন্ত্রণা অনুভব করছি।ক্রমশই বাড়ছে এই যন্ত্রণা।থামবার কোন নাম নেই।কিছুটা ঠান্ডা বাতাশ বুকের জালাপোড়া কমালেও তা ক্ষনিকের। জানিনা এই যন্ত্রণা কখন শেষ হবে তবে বেশ বুঝতে পারছি এই যন্ত্রণার শেষ আমি খুব তারাতারিই শেষ করতে যাচ্ছি।এখন কেন যানি মনে হচ্ছে আমার প্রতি জান্নাতের কোন ভালবাসা ছিলনা।সত্যিই ছিলনা।জানিনা তাহলে আমরা প্রতি ও একজন স্ত্রী হিসেবে কি ওগোলা অভিনয় করত তাহলে ?ছিহ! কিন্তু কেন?যদি সত্যিই ভালবাসতে না পারত তাহলে বলল না কেন আমায়?ভালবাসেনি আমায়।আর আমি পাগলের মতনি শুধু ভালবেসে গেছি সেই থেকে।
.
জান্নাতের সাথে আমার বিয়েটা হয়েছিল হয়েছিল হঠাৎ করেই।জান্নাত তখন ছিল ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আর আমি পড়াশোনা শেষ করে হন্য হয়ে চাকরি খুঁজতে থাকা একটি যুবক।নামটা আমার খালিদ।বাসায় বিয়ের জন্য চাপ দিলেও না করতাম বারবার।কিন্তু বেশি দিন করতে পারিনি।জানিনা কি থেকে কি হয়ে গেল জান্নাতের সাথে বিয়েটা আমার হয়ে গেল।কিন্তু তখনো আমি আমার হবু বৌয়ের নাম চেহারা কিছুই জানিনা দেখিনি..সেদিন হয়ত এটা বাসর রাত ।লোকেরাতো তাই বলে।জানিনা বাসর রাতকে বাসর রাতই কেন বলে।আমি আস্তে আস্তে ভিতরে ডুকে দেখলাম নাহ হয়ত আমি ভুল করে অন্য একটা রুমে চলে এসেছিলাম।সারাটা রুম আমার ফুল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে।চারপাশে কত ফুল।আমি একটু অবাকি হলাম কারন আমার মতন অগছালো একটা ছেলের রুম …যেই রুমটায় কোথায় কি আছে মাঝে মাঝে নিজেই ভুলে যাই সেই রুমটাই আজকে কেমন যেন অদ্ভুদ রকমের সুন্দর লাগছে।
.
আমার নজর গেল আমার খাটের উপর।একটি বালিকা লম্বা ঘুমটা দিয়ে বসে আছে।পরনে তার হলুদ শাড়ি ।আমার প্রিয় রঙ।আম্মু আর আমার বোন জানে তাই হয়ত মেয়ে কে হলুদ শাড়িই পরিয়েছে।কিন্তু বালিকাকে কি আমার পছন্দ হবে ?যেমনি হোক।আমার মতন অগছালো একটা ছেলের কোন পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারেনা।বরই হাস্যকর ব্যাপারে এইটা।আমি ধিরে ধিরে এগিয়ে গেলাম খাটের কাছে।বললাম
-ভালো আছেন? (আমি)
-জি ভাল আপনি ?(বালিকার কন্ঠ শুনেই ভাল লাগল)
-জি ।আচ্ছা আপনার জানতে পারি?
-আপনি নাম না জেনেই বিয়ে করেছেন ?
-আসলে হঠাৎ করে সবকিছু হয়ে গেলত তাই আসলে
-ও আচ্ছা ।আমার নাম জান্নাতুল আফরা
-সুন্দর নাম।আচ্ছা আমি কি আপনাকে দেখতে পারি ?
-এখন আমি আপনার ।তাই আপনি আমাকে দেখতেই পারেন।
আমি ধিরে ধিরে বালিকার দিকে এগিয়ে গেলাম।বসলাম বালিকার সামনে।বালিকা লম্বা ঘুমটা দিয়ে বসে আছে হয়ত অপেক্ষায় আছে কখন দেখব আমি তাকে।আমি ঘুমটা উঠিয়ে দেখেছিলাম তাকে।দেখলাম শ্যামলা গরনির মেয়ে টা আলগা কোন মুখোশ ব্যবহার করেনি শুধু দিয়ে ছে একটু লিপ্স্টিক আর হাল্কা করে কাজল।দেখেই কেমন যেন মনের ভেতরে ঠান্ডা বাতাশ বয়ে গেল।
আমি তখনো তাকিয়ে ছিলাম এক দৃষ্টিতে ।দেখলাম বালিকা ভিষন লজ্জা পেল।চোখ নামিয়ে ফেলল সে।
.
আপনি দেখতে খুব সুন্দর
-জি
-আপনি কি মন থেকে বিয়েটা করেছেন ?
-কিযে বলেন আমি বিয়ে কোথায় করলাম আমিতো আমার নতুন বাসায় আসছি আমার বাবা মার কাছে।
-ও আচ্ছা।
-জানেন আমার শাশুড়ি টা নাহ নতুন আম্মুটা খুবই ভাল।
-তা কি মন্ত্র পরল আপনার কানে একটু শুনি ?
-মন্ত্র না।একটা দায়িত্ব দিছে আমাকে
-কি দায়িত্ব?
-নাহ বলবনা
-প্লিজ ?
-উনি বলছে উনার অগছালো ছেলেটাকে মানুষ বানাতে।হিহিহি…
-কিহহ আমাকে দেখতে কি মানুষ মনে হয়না???
-তাহয় কিন্তু
-আবার কি কিন্তু
-নাহ কিছুনা।হিহি
দেখলাম মেয়ে টি ভিষন ভাবে মুখেহাত দিয়ে হাসছে।একটা মেয়ে হাসলে এতটা সুন্দর লাগে তা যানতামনা।
সেরাতে আমাদের এভাবেই কথা হল।
.
এভাবেই চলছিল আমাদের জীবন।দুজন দুজনকে ভীষন ভালবাসতাম কিন্তু তি বেশিদিন টিকেনি।নাহ জান্নাতের ঠিকি ছিল আমিই ছিলাম সেই ভাঙনের কারন।আমাদের সম্পর্কের প্রায় দুবছর ।আমি ছিলাম অগছালো।কোন জিনিসিই আমি ঠিকমত রাখতামনা।অফিসে যেতাম লেট করে অফিস থেকে এসে সব কাপরচোপর কোথায় ফেলতাম নিজেই খুঁজে পেতামনা।সবকিছু অগছালো করে রাখতাম।একটা কাজ দিলে আলসেমি করে ফেলে রাখতাম।মানে সবকিছুতেই ছিল অবহেলা।কিন্তু জান্নাত সবসময় ঠিক করে রাখত কিন্তু একটা মানুষের ধৈর্য সিমা থাকে হয়ত আমি একটু বেশিই করে ফেলতাম এতে ধিরে ধিরে আমার আর জান্নাতের মাঝে মাঝে ঝগরা বেধে যেত।তা ক্রমশই বেড়ে গিয়েছিল।আর অতিষ্ঠ হয়েই আজ জান্নাত ছেড়ে চলে গেছে।
.
হাঁটছি আমি ভীষন ভাবে হাটছি।প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার পাদুটিতে ।পাশের একটা ল্যাম্পোষ্টের নিচে বসলাম।জিবনটা যেন বৃথা লাগছে।জানিনা কি করব কিন্তু মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে ।চোখদুটির পানিভর্তি ।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখদুটি মুছে নিলাম।কতক্ষণ ছিলাম যানিনা।প্রায় কয়েক ঘন্টা পর হঠাৎ একটা গাড়ি এসে আমার সামনে দাড়াল।আমি দেখলাম গাড়ি থেকে একটা মেয়ে নামল।মেয়ে টা জান্নাত ।কিন্তু উ কিভাবে এখানে।আমি হাসব নাকি কাদব বুজে উঠতে পারছিলাম না।
-কয়েক ঘন্টা ছিলামনা তাতেই এই অবস্থা করছ নিজের আজীবন না থাকলে কি করতা কে জানে(চিল্লানি দিয়ে )
-চলেইতো গিয়েছিলে
-চুপ ।আর একটা কথাও বলবানা তুমি।আমি চলে গেছি কে বলছে
-এইযে।
-চুপ গাধা ।আমি বুঝাইতে চেয়ে ছিলাম যে তোমার ভুলগুলো ।আর এইভাবে বের হইছ কেন ।তোমারকিচ্ছু হয়ে গেলে আমার কি হত ?
-তাই বলে ডিভোর্স পেপার?আমি মরে গেলেই বা তোমার কি বল।আমিতো এখন আর কেওনা তোমার ।ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে।
-তুমি যদি একবার ডিভোর্স পেপারটা দেখতে তাহলে কথাটা আর বলতেনা।
এটা বলে আমাকে ডিভোর্স পেপারটা দেখাল ।আমি দেখলাম সাইন করার যায়গাটায় সুন্দর করে লেখা I love you…..আমি এতটাই গাধা যে দেখিইনাই লেখাটি।হাসব না কাদব বুঝে উঠতে পারছিলামনা।আমি জান্নাতের দিকে তাকালাম।হঠাৎ আমাকে জরিয়ে ধরল মেয়ে টা।বোঝাতে পারবনা কি ফিল হচ্ছে আমার।
-গাধা তোমার যদি কিছু হয়ে যেত আমিতো মরেই যেতাম বুঝছ
-তাহলে চলে গিয়ে ছিলে কেন ?গিয়েছিলেইবা কোথায়?
-আমার শাশুড়ি আম্মার কাছে এটা বলতে যে তার ছেলেটাকে মানুষ করার প্রথম ধাপটা পার করতে দিয়ে এসেছি।
-কিহহহ
আর কথা বলতে দিলনা জান্নাত।মুখটা চেপে ধরল।একজন আরেকজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি আর সেই বিশ্বাস টা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছি।যত দেখছি ততই মায়ায় পরে যাচ্ছি।
.
দৃশ্য ধালন কৃত ক্যামেরাটি এখন উপরে ল্যামপোষ্টের দিকে ফোকাস করে আছে।আর ল্যাম্পোষ্টের চারপাশে অনেক পোকা উরে বেড়াচ্ছে ।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প