রুদ্রশ্বাসে আছে শুধু স্বপ্ন,
নেই কোন জীবনের রোমন্টিকতার গল্প,
আছে বাস্তবতার প্রতিবিম্ব।
.
সদ্য বিবাহিত মিতু মেয়েটি আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। কিছু বলছে না। মনে হয় কান্নার দ্বারা কথা বলছে।আমি মেয়েটিকে কোন সাত্বনা দেওয়ার চেষ্টাই করলাম নাহ্।
.
মাঝে মাঝে মনে হয় সবকিছুই যদি গল্পের মত হত। সব গল্পের মত নয় রোমান্টিক কিছু গল্পের মত। বাস্তবতার মাঝে রোমান্টিকতা স্থান করে নিতে পারে না। তাও বৃথা চেষ্টার করে যায় এই পৃথিবীর ভালোবাসা কুড়ানো মানুষগুলো।
.
অল্প আওয়াজে কথা বলি আমি।স্পষ্ট স্বরে মেয়েটি বললাম-ফ্রেস হয়ে শুয়ে পড়েন, কিছু লাগলে বলবেন।
.
গল্পটাতে আছে বাস্তব কিছু সত্য আর বাস্তবতার প্রতিফলন।
.
গল্পটা কিছুটা গুছিয়ে বলতে গেলে… বলতে হয়।
আমার গালফ্রেন্ড ছিল। আমি যাকে বিয়ে করেছি তার বয়ফ্রেন্ড ছিল।আমি আমার গার্লফ্রেন্ড বিয়ে করতে পারিনি। মিতু মেয়েটি তার বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে পারেনি।
.
শরীরের মাদকতা আর লোক দেখা ভালোবাসা ছাড়া আর কোন সখ্যতাই গড়ে ওঠেনি আমাদের।
.
বিয়ের মাসেক খানেকটা চলে যায় স্থবির আর মন্দ্রের বেড়াজালে।একটু নিজেকে সময় দিলেই রুপন্তীর সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। কত স্মৃতি,কত স্বপ্ন দেখেছিলাম,কত রোমান্টিকতা ছুঁয়ে গিয়েছিল আমাদের।
ভালোবাসার মুগ্ধতার কত কথা বলেছি_কেউ কাউকে ছেড়ে যাবো না,বাচঁলে একসাথে-মরলেও একসাথে। কত সব নেকামী কথা। আমি হেঁসে ওঠি। চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
.
মাঝে মাঝে খেয়াল করি মিতু মেয়েটি আনমনা হয়ে যায়।কাদেঁও হয়ত। আমি কিছুই বলি নাহ্। শুধু চুপচাপ দেখে যাওয়া ছাড়া।
.
চাকুরি করার ঢাকার আসতে হল। আমার কষ্ট হবে ভেবে মা-বাবা মিতুকে সাথে দিয়ে দিল।সারা রাস্তা কোন কথা হল না আমাদের। আমিই কিছুক্ষন পরপর বলছিলাম। কিছু লাগবে???
আমি জানি মিতু মেয়েটি এযুগের মেয়ে। একা একাই চলতে পারে।একা একাই জার্নি করা অভ্যাস আছে তার।
.
কেটে যায় কিছু দিন। শরীরে মাদকতা কিছুটা কমে। যেখানে মনের মাদকতা নেই সেখানে শরীরের মাদকতা কখনো গড়ে ওঠতে পারে নাহ্। আমি মিতুর সব কিছুতেই রুপন্তীকে খোঁজে বেড়াতাম।মিতুকে একদিন বলেছিলাম তাও বিয়ে আগে -আপনার বয়ফ্রেন্ডের নাম কি?
সে মিনমিনিয়ে বলেছিল-আবিদ এমনটা কিছু একটা। স্পষ্ট শুনতে পারিনি।পরে জেনে ছিলাম-ছেলেটি মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে ছিল। পরিবারের দিকে খেয়াল করে ছেলেটি পালিয়ে বা জানিয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। সময়ও দিয়ে ছিল,তাও রাজি হয়নি সে।
.
মিতু মেয়েটি তেমন কাজ করতে পারে নাহ্।একদিন বললাম-চাকুরি করবেন?
মিতু কোন কথা বলল নাহ্। একটু চুপচাপ চেয়ে থেকে চলে গেল।
.
দিন কেটে যায় স্বপ্ন ছায়ার-আবছায়ার মত করে। । একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখি বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি। নিজেকে একটু সময় দিতেই বেড়িয়ে এল রুপন্তীর সেই কথাগুলো। এমন একটি দিনেই তার বাবার কাছে বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলাম আমি। তার বাবা আমাকে অল্পকথায় বুঝিয়ে দিয়েছিল তার বংশমর্যাদার দ্বারের কাছেও আমি নই। রুপন্তীকে বলেছিলাম চলো পালিয়ে যাই। রাজি হয়নি সে।
.
শেষ একটা কথা বলেছিলাম আমি-না জানিয়ে প্রেম করা যায়। কিন্তু সেই ছেলেটির সাথে পালিয়ে বিয়ে করা যায় না। প্রেম আর সংসার করা দুটো দুটি আলাদা স্পষ্ট ছায়া।একটিকে পায়ে মাড়ানো গেলেও অন্যটিকে যায় না।
রুপন্তী কান্না ভেজা কন্ঠে বলেছিল-দূর থেকে ভালোবাসবো দুজনে, ভালো রাখবো দুজনকে।
.
অফিস গেলাম নাহ্ আজ। মিতু মনে হয় বই পড়ছিল।আমার দিকে খেয়াল করতেই মিতু বলল ওঠল-অফিসে যাবেন নাহ্।
আমি অল্পস্বরে বললাম-নাহ্।
চা খাবেন?
আমি কোন উওর না দিতেই মিতু চা বানাতে চলে গেল।
.
মিতু যে বইটি পড়তে ছিল সেই বইটি হাতে নিলাম। বইটির নাম-দ্যা ডিভিলাপিং লিডার ওইত ইন ইউ।
লেখক- ম্যাক্সওয়েল।
লেখক হতে গেলে বা বাস্তবতার আলোকে চলতে এবং সফল হতে করনীয় বিষয়সমূহ খুব ভালো ভাবে দেওয়া আছে।
.
এই যে আপনার চা। (মিতু চায়ের কাপটা কিছুটা মুখের সামনে বাড়িয়ে ধরে বলল কথাটা)
.
এইভাবেই টুকটাক কথা বলা আর নিজ নিজ কাজেই কেটে গেল দিনটা। স্থিবরতা আর মনের সখ্যতা না থাকার কারনেই দুজন দুজনের বিরক্তির কারন হয়ে ওঠি।টুকটাক কথা কটাকাটিও হয়ে যায়। দু থেকে তিন দিন কেউ কারও সাথে কথা বলা হয়ে ওঠে না।একদিন বলেই বসলাম-বাপের বাড়ি থেকে ঘুরে আসেন কিছুদিনের জন্য।আমাকে সাথে যেতে বলল। এমন একটা ভাব নিয়ে বলল- মনে হল গেলে যাবেন,না গেলে নাই। তাতে আমার কি?বলার প্রয়োজন ছিল, তাই বললাম।যদিও আমি যেতাম, পরে ইচ্ছা করেই যাইনি।
.
অফিস থেকে ফিরলাম। ঘরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কল দিলাম মিতুকে এই জানতে বাসার পৌঁছে গিয়েছে কিনা। কল রিসিভ হল নাহ্। তারপর তার বাবার কাছে কল দিয়ে জানলাম অনেক আগেই গিয়েছে বাড়িতে।
খুব রাগ হল আমার একবার ফোনও করল নাহ্। আনুষঙ্গিক কথা শেষে কলটা রেখে দিলাম।
.
মনের সাথে কেন যেন পেরে ওঠতে পাচ্ছি না।যাকে ভালোবাসলাম তাকেও পেলাম না আর যাকে বিয়ে করলাম তার আবার আমাকে ভালোলাগে না। এইসব ভাবতে ভাবতে খেয়াল করলাম আমার বাইকটা গাছের সাথে লাগল বলে।পাশ কাটিয়ে যাওয়া তেমন আর সম্ভব হল না আমার।পায়ের সাথে কিছুটা লেগেই গেল।
.
তারপর অনেক ঘটনা শেষে আমি এখন বাসার শুয়ে আছি। হুড়মুড় করে কেউ প্রবেশ করল মনে হয়।আমি তাকিয়ে দেখি মিতু মেয়েটি আমার পায়ের দিকে তাকিয়ে অঝরে কাদঁছে। কে খবর দিয়েছে তাকে বুঝতে পারলাম নাহ্। মনে এক প্রশান্তির পরশ কেউ মনে হয় ছুয়ে দিল। তারপর আর কিছু মনে নেই আমার গভীর ঘুমের মুহে তলিয়ে গেলাম।
.
তেমন ব্যাথা না পাওয়ার কারনে। কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে গেলাম।জলশিক্ত ওই চোঁখগুলোতে যে মায়া আর ভালোবাসা দেখেছিলাম। সেগুলোকে ঘিরে কেঁটে যায় কিছু দিন।
.
অফিসে যাব তাই সকালে ওঠে অনেক্ষন ধরে ডাকছি কিন্তু ওঠছে নাহ্। গায়ে হাত দিতেই বুঝতে পারলাম জ্বর এসেছে মেয়েটার। গতকাল কত করে বললাম আর ভিজবেন না বৃষ্টিতে অসুখ করবে। কে শুনে কার কথা। এখন অসুখ বাধিয়ে বসেছে,কে তার সেবা করবে? থাক অসুস্থ হয়ে। দেখুক অসুস্থ হলে কেমন কষ্ট লাগে।কিছুটা রাগ করেই অফিসে চলে আসলাম। অফিসের কাজে মন বসছে নাহ্। তাই ছুটি নিয়ে চলে আসলাম।
.
কলিং বেলের শব্দে যখন দরজা খুলল না। তাই নিজের কাছে থাকা চাবিটা দিয়েই রুমে প্রবেশ করলাম।আমি কাছে গিয়ে শব্দ করতেই মেয়েটি চোঁখ খুলে তাকাতেই তার অগোছালো কাপড় ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।তারপর কিছু একটা বলতে বলতে দাড়ানোর চেষ্টা করতেই আবার শুয়ে পড়ল বিছানার।
.
রাত প্রায় ১১টার কাছাকাছি। মেয়েটি সেই ডাক্তার এসেছিল তখন একবার তাকিয়ে ছিল আর তাকায়নি। খুব ভাবনার পড়ে গেলাম।শেষমেশ প্রায় তিনটার দিকে চোঁখ খুলে তাকাল।তারপর কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। আমি বললাম-এখন কেমন লাগছে। সে কিছুই বলল নাহ্। চুপচাপ তাকিয়ে থাকল। তারপর আবার ঘুমের মোহে তলিয়ে গেল।
.
সকাল সাতটার দিকে আমি বিছানার কাছে বসেই ঘুমাচ্ছিলাম।কোন কিছুর শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। দেখলাম মিতু বিছানা ছেড়ে, ওঠে বসার চেষ্টা করছে।কিন্তু পাচ্ছে নাহ্।
আমি অল্প আওয়াজে বললাম-উঠতে হবে না, শুয়ে থাকেন। আমি খাবার নিয়ে আসছি। সে কিছু বলতে চাচ্ছিল কিন্তু সে সুযোগ, সে পায়নি।
.
বাবা মাকে খবর দিয়েছি। বিকালের দিকে আসবে। খাবার নিয়ে তার কাছে যেতেই মিতু দরজার দিকে তাকাল। আমি বুঝতে পারলাম সে ওয়াশরুমে যাবে। খুব দূবর্ল হওয়ার কারণে আমার কাধেঁর উপর ভর করেই তাকে ওয়াশরুমে যেতে হল। আমি তাকে বললাম দরজাটা খোলাই রাখেন। আমি দূরে আছি যাতে ডাকলে শুনতে পারি।তারপর সময় কেটে যায়… আমি তাকে বলি-এখন খাবেন?
সে বলে খেতে ইচ্ছা করছে না।
আমি বললাম-না খেলেতো আরও অসুস্থ হবেন।
সে কিছুতেই খাবে নাহ্।
পরে অনেক বকা দিয়ে যখন ভাত আর তরকারি মিশিয়ে আমার হাত দিয়ে, মুখে তুলে দিলাম তখন সে খেল।
সে খাচ্ছে আর বাচ্চাদের মত চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।আমি তাকিয়ে থাকি। তার অবয়বটা আমার মনে গেথেঁ যেতে শুরু করে।
.
খাবার শেষে ওধুষ খেতেই সে ঘুমের রাজ্যে চলে গেল। আমিও কিছুটা ক্লান্ত। তাই একপাশে গিয়ে আমিও শুয়ে পড়ি। যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন খেয়াল করলাম মিতু মেয়েটি আমার বুকের উপর পরম মমতার শুয়ে আছে। আমার হৃদয়ে প্রলয়উল্লাস খেলে যায়।
.
তারপর ভাবি এই ভাবেই মানুষ মানুষকে ভুলে যায়। আস্তে আস্তে রুপন্তীর স্মৃতিগুলো ঘোলাটে হয়ে যায়। রুপন্তীর স্পষ্ট প্রতিবিম্বটা অস্পষ্ট হয়ে যায়।
.
প্রহর কেটে যায়। এখন সুযোগ পেলেই মিতু নামের মেয়েটি আমার মাঝে সুখ আর ভালোবাসা খুজে।জড়োসড়ো হয়ে আমার বুকে মুখ লুকায়। বুকের উপর চুপটি করে ঘুমিয়ে যায়।আমিও পরম মমতার আমার বাহুডুরে ঘিরে রাখি।
.
কে বলবে এখন???
এই মেয়েটিই অন্যের বুকে মাথা রেখে অনেক স্বপ্ন দেখেছিল।এই আমাকেই বা কে বলবে??অন্যের কুলে মাথা রেখে কত স্বপ্ন বুনেছিলাম,কত ভালোবাসার কথা বলেছিলাম।
.
শুনি সবাই বলে একটা মেয়েকে বিবাহের পরে এক নতুন পৃথিবীর সাথে মানিয়ে নিতে হয়।আমি বলি কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। একটা ছেলেকেও ঠিক তেমনটিই মানিয়ে নিতে হয়।
.
কষ্টের কথাগুলো প্রথমে যে পরিমান কষ্ট বা চোঁখের জল জড়াতে পারে। পরে সেই কথাগুলোতেই আর তেমন কষ্ট আর চোঁখের জল পড়ে না।আমরা কিন্তু আসলে কষ্টের কথা ভূলে যাই না।
সত্যি বলতে মানিয়ে নিতে শিখে যাই।
ঠিক তেমনি ভাবেই বিবাহের পরের নতুন পৃথিবীতে আমরা মানিয়ে নেই। আসলে আমরা মানিয়ে নিতে বাধ্য হই। আর এইভাবেই কেটে যায় বাকীদিনগুলো।
এইটাই বাস্তবতা।
আর এইটাই বাস্তবতার নতুন পৃথিবীর গল্প।।।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প