অন্নদা-মাসী বললেন, সে ছোড়ার কথা ছেড়ে দাও। সে একটা বাউণ্ডুলে লক্ষ্মীছাড়া ছেলে—নেশাখের ছিচকে চোর। এটি ভদ্রলোকের মেয়ে। চেহারা দেখে বুঝতে পারছে না, বড়ো ঘরের সন্তান। পেট-ভাতায় থাকতে রাজী করিয়ে এনেছি। তোমাকে এক পয়সাও মাইনে দিতে হবে না। দেশসুদ্ধ লোক জানে, তুমি কি রকম কঞ্জস আর কৃপণের জাসু! কিন্তু আমার বয়স বাড়ছে, বুড়ো হয়ে
ত্ৰৈলোক্যবাবু বললেন, বেশ তো। আমি কি আর নিষেধ করছি? রাখো না তুমি যত খুশি লোক। শুধু আমার সেজন্যে এক পয়সা বাড়তি খরচ না হলেই হ’ল। ফকরে ছোড়া তোমার আমার পাতের ভাত খেতো। তার জন্যে আলাদা চালের খরচ ছিল না। বছরে দুখানা ধুতিও দিতে হত না। আমার পুরোনো ছেড়া কাপড়গুলোই সেলাই করে সে পরতো। কিন্তু তুমি যে এই রাজরানীর মতো মেয়েটিকে ধরে এনেছো, এ কি ও ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হয়ে থাকতে চাইবে ?
অন্নদা-মাসী ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, সে ভাবনা তোমায় ভাবতে হবে না। ওর ভাল যখন আমি নিয়েছি, তখন ওর যা দরকার হবে সে আমি ব্যবস্থা করবো। তোমাকে এর জন্য কিছু খরচ করতে না হলেই তো হ’ল।
ব্যস, তাই চাই। লোক রাখায় খরচ না বাড়লে আমার আপত্তি নেই। বলে ত্ৰৈলোক্যবাবু বেরিয়ে গেলেন।
ইন্দিরা অন্নদা-মাসীর বাড়িই রয়ে গেল। কিন্তু মনে তার সুখ ছিল না। দু’চারদিনের মধ্যেই ইন্দিরা বুঝতে পারলো, এখানে থাকা তার পক্ষে কতো কষ্টকর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে বাড়ির সব কাজই একলা করতে হয়। রাঁধা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, ঘরদোর ধোয়া-মোছা, আলো বাতি সাজানো, বিছানা করা, বিছানা তোলা, একে একে সব কাজই অন্নদা-মাসী তা ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন। নিজে আর কড়ার কুটোটা নাড়েন না। এদিকে পেটভরে খেতে দেন না ইন্দিরাকে। নিজের পুরোনো ছেড়া কাপড় তাকে পরতে দেন। ইন্দিরা অস্থির হয়ে উঠল। সে তার দাদাকে গিয়ে সব কথা জানাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলো। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরুবার সময় পায় কই ? মন্দির তো খুব কাছেই। সেখানে তার দাদা রয়েছে। কিন্তু দাদা তো কই একদিনও এলো না তার খবর নিতে! দাদার বন্ধু সেই অৰ্জুন ছেলেটি এসেছিল বটে। বেশ ছেলেটি, খুব ভালো লেগেছিল তাকে ; কিন্তু সেও তো আর এল না।
একদিন ইন্দিরা মন্দিরে যাবার সুযোগ পেয়ে গেল। ত্ৰৈলোক্যবাবু আর অন্নদা-মাসী সেদিন তাদের কোনো আত্মীয়ের বাড়ি নিমন্ত্রণে গেলেন। সারাদিন থাকবেন, সেই একেবারে রাত্রে ফিরবেন। ইন্দিরা ঠিক করলো আজ সে দাদার খবর নিতে মন্দিরে যাবেই। তাকে সব কথা জানিয়ে আসবে। এখানে সে আর একদিনও থাকতে পারছে না। কিন্তু মন্দিরে গিয়ে ইন্দিরা পুরোহিত-ঠাকুরের কাছে শুনলো যে, তার দাদা আর দাদার বন্ধু আজ রাজবাড়িতে গেছে এক প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে। রাজা রাজ্যে ঢেঁড়া পিটিয়ে দিয়েছিলেন রাজকুমারীকে যে ঘোড়দৌড়ে, লক্ষ্যভেদে, হাতের লেখায় আর অঙ্ক কষায় হারাতে পারবে রাজকুমারী তারই গলায় জয়মাল্য দিয়ে পতিত্বে বরণ করবেন। আর দাদা সে ঘোষণা শুনে বন্ধুকে নিয়ে রাজবাড়িতে গেছে প্রতিযোগিতায় যোগ দেবার জন্য। কাল এই পরীক্ষা শুরু হবে। চারিদিকে হৈ-হৈ পড়ে গেছে। কিন্তু মা, আমার কি দুর্ভাবনা হয় জানো ?.রাজা ঘোষণায় বলেছেন, প্রতিযোগিতায় যে
হেরে যাবে, তাকে যাবজজীবন কারাগারে বন্দী রাখা হবে। এসব জেনেও তোমার দাদা প্রতিযোগিতায় গেল!
শুনে ইন্দিরা চমকে উঠলো, কাঁদো-কাঁদো হয়ে বললো, কী হবে ঠাকুর, দাদা যদি হেরে যায়! তারপর চোখ মুছে নিজেই বললো, নাঃ, দাদাই জিতবে। দাদা বীরপুরুষ।
পুরোহিত বললেন, মন্দিরে দেবতার কাছে ভয়ের জয় কামনা করে পুজো দিয়ে যাও। ভগবান যেন তার মঙ্গল করেন। –
আজ রাজকুমারী স্বয়ম্বর হবার জন্য প্রতিযোগিতায় নামবেন। রাজ্যের সবাই ভিড় করে এসে দাঁড়িয়েছে রাজপ্রসাদ-সংলগ্ন ক্রীড়া-প্রাঙ্গণে। কোন ভাগ্যবান জয়ী হয়ে কন্ঠে রাজকন্যার বরণমাল্য পাবে অথবা পরাজিত হয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ অবস্থায় যাবজীবনের জন্য কারাগারে নিক্ষিপ্ত হবে। উৎসুকচিত্তে নগর উজাড় করে যেন দর্শকরা এসে জমলো ক্রীড়া-প্রাঙ্গণে।
অৰ্জুন বললো, এমন দুঃসাহসিক প্রতিযোগিতায় তুমি যোগ দিও না। পরাজয়ের সম্ভাবনাই বেশী। নইলে রাজকুমারী সদম্ভে এমন ঘোষণা করতে সাহসী হতেন না।
রাজকুমার বললো, যদি আমি হেরেই যাই তাহলেও বর্তমান অবস্থার চেয়ে ভালো থাকবো। দেবালয়ের নাটমন্দিরের দালানে ভিক্ষুকের মতো পড়ে থেকে দিনান্তে দুটি প্রসাদ পেয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে আমি তো মনে করি রাজ-কারাগারে পরম সুখে থাকা যাবে। বন্দী-জীবন আমাদের কার নয়, বলো? সবাই যে যার সংসার-শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়ে বন্দীর জীবনই যাপন করছি ; ওই যে পুরোহিত-ঠাকুর, উনিও তো ওই মন্দিরে দেবতার পুজোর শৃঙ্খলে বন্দী হয়ে রয়েছেন। ওটাকে আমি তার সশ্রম কারাবাস বলেই মনে করি। কিন্তু এ-প্রতিযোগিতায় আমি যদি হারি যাবজীবন বন্দী হয়ে থাকবো এই মাত্র।
কয়েদীদের মতো কঠিন পরিশ্রম তো কিছু করতে হবে না। বেশ নির্জনে ভগবানের নাম ‘ করে জীবনটা কাটিয়ে দেবো। তুমি রইলে বন্ধু, আমার দুঃখিনী বোন ইন্দিরার ভার তোমার ওপর রইলো।
ঢং ঢং ঢং ঢং করে ঘণ্টা বেজে উঠলো। ঘন ঘন শঙ্খরোল শুরু হ’ল। সময় হয়েছে। তুরী, ভেরী, ঢাকঢোল বেজে উঠে সমবেত জনতাকে সচকিত করে তুললো। রাজকুমার এই সময় রাজার সামনে গিয়ে প্রণামান্তে অভিবাদন জানিয়ে দাঁড়ালো। এই দিব্যকান্তি কিশোর সুকুমার যুবকটিকে দেখে রাজার মনে কেমন একটা বাৎসল্য-ভাবের স্নেহসিক্ত মমতা জেগে উঠলো। তিনি বললেন, তুমি এ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলাফল সমস্ত জেনেশুনে প্রস্তুত হয়ে এসেছে তো? হেরে গেলে পরিণাম কি হবে সেটা বুঝেই আশা করি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ দিচ্ছ? এমন তরুণ বয়সে সারাজীবন কারাবাস যে বড় দুঃখের হবে।
রাজকুমার মহারাজকে যথাযোগ্য সম্মান জানিয়ে বললো, পরাজয়ের ভাবনা ভেবে কি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ দেওয়া যায় মহারাজ? আমি জয়ী হবো, এই বিশ্বাস নিয়েই এসেছি। আশীর্বাদ
করুন যেন আমি আপনার পণ রক্ষা করতে পারি। ভয়ই তো মানুষকে কাপুরুষ করে তোলে!
রাজকুমারের এই বীরোচিত কথা শুনে মহারাজ খুব খুশী হলেন। বললেন, বেশ। তোমাকে আমার খুব ভালো লাগলো। জগদীশ্বরের নিকট কায়মনে কামনা করি, তুমি জয়ী হও, বৎস।
দ্বিতীয় ঘণ্টা বাজলো। জনতার মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা গেল। সুসজ্জিত অশ্বপৃষ্ঠে সুবেশা সুন্দরী রাজকন্যা কদমে কদমে ঘোড়া ছুটিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ক্রীড়াক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন। সমগ্র জনতা করতালি দিয়ে হর্ষোৎফুল্ল কণ্ঠে জয়ধ্বনি করে রাজকুমারীকে সম্বর্ধনা জানালো।
মহারাজ কুমারকে বললেন, কোন ঘোড়া তুমি নিতে চাও, তোমার পছন্দমতো বেছে নিয়ে সওয়ার হও। তৃতীয় ঘণ্টা বাজলেই ছুটতে হবে। মনে রেখো।
সারি সারি ঘোড়া দাঁড়িয়ে ছিল। অশ্বরক্ষীরা ঘোড়ার মুখ ধরে অপেক্ষা করছে। রাজকুমার তার মধ্যে সবচেয়ে তেজী দেখে একটি পঞ্চকল্যাণ অশ্ব বেছে নিয়ে পলকের মধ্যে তার পিঠের উপর উঠে সওয়ার হ’ল। আরো একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী উপস্থিত ছিলেন। তারাও একে একে অশ্বপৃষ্ঠে সওয়ার হলেন।
ঢং ঢং ঢং ঢং করে তৃতীয় ঘণ্টা বেজে উঠলো। মহারাজের ইঙ্গিত মাত্র সব অশ্বারোহী তীরবেগে ছুটতে শুরু করলো। রাজকুমারীর ঘোড়া সবাইকে ছাড়িয়ে এগিয়ে চললো।
চারদিকে আনন্দ-করতালি শোনা যেতে লাগল। রাজকুমার সেটা লক্ষ্য করে ঘোড়ার পিঠে পা ঠুকে একটু ইঙ্গিত করলো। মুহুর্তের মধ্যে রাজকুমারীকে বহু পশ্চাতে ফেলে রেখে বিদ্যুদ্বেগে রাজকুমারের পঞ্চকল্যাণ ঘোড়াটি বিজয়স্তম্ভ পার হয়ে গেল।
ক্রীড়া-প্রাঙ্গণে সে কী বিপুল জয়ধ্বনি! দশ মিনিট ধরে লক্ষ লোকের আনন্দ-করতালি যেন আর থামে না, জনসমুদ্রে যেন উত্তাল তরঙ্গ উঠলো।
মহারাজ তখন বিজয়ী রাজকুমারকে কাছে ডেকে মহানন্দে তার কণ্ঠে জয়মাল্য পরিয়ে দিয়ে বললেন, জয় হোক তোমার, বিজয়ী বীর! আজ তুমি বিশ্রাম করো বৎস। কাল আবার ঠিক এই সময়ে ক্রীড়া-প্রাঙ্গণে এসো। লক্ষ্যভেদের পরীক্ষা হবে। তোমার ধনুর্বাণ আছে তো?
আমার আশৈশবের সঙ্গী। বাবা আমাকে ধনুর্ধর বলেই ডাকতেন।
সেদিনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ হ’ল। লোকমুখে চারিদিকে রটে গেল, কে এক অজ্ঞাতকুলশীল অপরিচিত সুদর্শন যুবক রাজকুমারীকে ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতায় দারুনভাবে পরাস্ত করে দিয়েছে। ফলে পরের দিন লক্ষ্যভেদের প্রতিযোগিতা দেখবার জন্য ক্রীড়া-প্রাঙ্গণে দ্বিগুণ দর্শকের প্রচণ্ড জনতা সমবেত হ’ল।
বর্মচর্ম পরিহিত রাজকুমার ধনুর্বাণ নিয়ে আজ যথাসময়ে উপস্থিত হয়েছিল সেখানে। রাজকন্যা আগের দিন ঘোড়দৌড়ের প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে বেশ একটু লজ্জিত ও কুষ্ঠিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি একটু পরে প্রবেশ করে তার ধনুকে বাণ সংযোজন করে ক্রীড়া-প্রাঙ্গণে এসে দাঁড়ালেন।
ঘণ্টা পড়লো। মহারাজ ইঙ্গিত করলেন। লক্ষ্যভেদ করতে গিয়ে রাজকন্যার হাত যেন একটু কেঁপে উঠলো। রাজকুমারের ধনুকের নিক্ষিপ্ত তীর ততক্ষণে লক্ষ্য বিদ্ধ করে সেখানে যেন থর-থর করে আনন্দে কঁপিছিল। রাজকুমারীর নিক্ষিপ্ত শর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বেশ একটু তফাতে গিয়ে বিদ্ধ হ’ল।
লক্ষ লক্ষ জনতার কণ্ঠে আবার সেই বিপুল জয়ধ্বনি। তাদের সমবেত আনন্দ-কোলাহলের মধ্যে সকলের সঘন করতালি যেন কানে তালা ধরিয়ে দিচ্ছিল। ‘জয়’ ‘জয় রবে চতুর্দিক মুখরিত হয়ে উঠলো।
রাজকন্যা আজকেও পরাজয় বরণ করে লজ্জায় মাথা হেঁট করে দাঁড়িয়ে রইলেন। পরের দিন হাতের লেখা ও গণিতের পরীক্ষা। আজ রাজকুমারের মনটা একটু ভারাক্রান্ত ছিল। কারণ, তার হস্তলিপি যে খুব ভালো নয় এটা তার জানা এবং অঙ্কের ব্যাপারেও সে যে খুব ওস্তাদ নয় এটা সে আগের রাত্রে অর্জুনের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে বেশ বুঝেছিল। তবু ভগবানকে স্মরণ করে সে এসেছে। যদি ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়ে তাকে আজো জিতিয়ে দেয় এই ভরসায়।
সবাই উৎসুক হয়ে রাজকন্যার আগমন প্রতীক্ষা করছে। রাজকন্যার তখনো দেখা নেই। সময় প্রায় হয়ে এলো। শেষ ঘণ্টা পড়লো। রাজকুমারী কই?
এমন সময় দেখা গেল নববধূর বেশে সুসজ্জিতা হয়ে রাজকন্যা ক্রীড়া-প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলেন। সঙ্গে তার সখীরা নানা মাঙ্গলিক
উপাচার হাতে নিয়ে পিছু-পিছু এলেন। পুরনারীরা হুলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি করছিলেন।
রাজকন্যা ধীরে-ধীরে রাজকুমারের নিকট এগিয়ে এসে রাজকুমারের গলায় নিজের কষ্ঠের বহুমূল্য বরণমাল্য খুলে পরিয়ে দিয়ে শ্রদ্ধাভরে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করে উঠে সমবেত সকলকে সম্বোধন করে নমস্কার জানিয়ে বললেন, এই অজ্ঞাত বীরের কাছে বার বার পরাজয় স্বীকার করে আমি লজ্জিত হইনি। আমি গর্বিত। আপনাদের সকলের সম্মুখে আমি সকল দেবতাকে আর আমার স্নেহময় পিতা মহারাজকে সাক্ষী রেখে এই বিজয়ী যুবককে আজ পতিত্বে বরণ করলাম। অন্য পরীক্ষা দুটি প্রত্যাহার করে নিলাম।
ক্রীড়া-প্রাঙ্গণের সেই বিরাট জনসমাবেশ তখন আনন্দ-কলেবরে চারিদিক যেন পূর্ণ করে তুললো। সারা প্রাসাদ যেন আনন্দ-উৎসবের হর্ষধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠলো। রাজা সিংহাসন থেকে নেমে এসে বর-বধূকে সাদরে আশীৰ্বাদ করে তাদের দু’জনকে পাশাপাশি বসিয়ে ঘোষণা করলেন, সাতদিন উৎসব হবে। আপনাদের সকলের নিমন্ত্রণ রইলো।
ইতিমধ্যে অর্জুন উর্ধ্বশ্বাসে ঘোড়া ছুটিয়ে ইন্দিরাকে নিয়ে সেখানে হাজির হল। বললো, বন্ধু, তোমার আদেশ পূর্ণ করেছি। রাজকুমার ইন্দিরা আর অর্জুনের পরিচয় করিয়ে দিলেন রাজার সঙ্গে। ইন্দিরা ও রাজকুমার সেনাপতি সংগ্রামসিংহের পুত্র-কন্যা শুনে রাজার আর আনন্দ ধরে না। বললেন, আমরা ছিলাম বাল্যবন্ধু। তোমার পিতা আমাকে সাহায্য না করলে আমি আমার হৃতরাজ্য ফিরে পেতুম না। শ্রীভগবানের অশেষ দয়ায় আজ তোমাদের আমি কাছে পেলুম। আপনজন করে পেলুম।
তারপর? বিবাহ-সভায় সে রাত্রে শুধু রাজকুমারের সঙ্গে রাজকন্যারই বিবাহ হ’ল না, ইন্দিরার সঙ্গে অর্জুনেরও বিবাহ হ’ল রাজকুমারের ইচ্ছানুসারে। মহারাজ রাজকুমারকে সে রাজ্যের যুবরাজ বলে ঘোষণা করলেন আর অর্জুনসিংহকে করে দিলেন তার প্রধান সেনাপতি। রাজ্য জুড়ে সাতদিন ধরে আনন্দ-উৎসব চলতে লাগলো।
আমার কথাটি ফুরোলো।