সত্যপ্রিয়ের কাহিনী

সত্যপ্রিয়ের কাহিনী
এক ছিলেন রাজা। মহারাজাধিরাজ চক্রবর্তী ছিলেন তিনি। বহু রাজা তাকে কর দিত। সসাগরা ধরার অধীশ্বর বললেও চলে। রাজকোষ মণি-মুক্ত হীরা-জহরত সোনা-রূপায় পরিপূর্ণ, সৈন্যশালায় রাজভক্ত সুশিক্ষিত বিক্রমশালী বুদ্ধিমান বিচক্ষণ সেনাপতি,—হাতিশালায় ঐরাবতের মতো হাতি,—অশ্বশালায় উচ্চৈঃশ্রবার মতো ঘোড়া, অসংখ্য দাসদাসী নিয়ে রাজার সৌভাগ্য বর্ষার নদীর মতো কানায় কানায় পরিপূর্ণ। রাজা নিজেও খুব বিক্রমশালী পুরুষ। প্রজা থেকে, কর্মচারী থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত কেউই রাজার মুখের দিকে চাইতে সাহস করেন না। সূর্যের দিকে যেমন চাওয়া যায় না, অমিততেজী সেই রাজাধিরাজ, তার মুখের দিকেও তেমনি চাওয়া যায় না।
কিন্তু রাজার একমাত্র দোষ—রাজা ঐশ্বর্যের অহঙ্কারে মহা অহঙ্কারী। তিনি যখন চলে যান তখন পায়ের শব্দে তার দম্ভ লোকে অনুভব করে, রাজপ্রাসাদ যেন কাঁপে। রাজার পুত্রসন্তান নেই,
আছে দুটি কন্যা। বড়টির নাম মুক্তামালা, ছোটটির নাম কাজলরেখা। রাজার রানী নেই। মেয়ে দুটির শৈশবেই তিনি মারা গিয়েছেন। রাজা আর বিবাহ করেন নাই। মেয়ে দুটিকে প্রাণের চেয়ে ভালবাসেন। তারা যা চায়, তাই দেন। মেয়েদের ধাইমা মেয়েদের মানুষ করে। তারা আপন মনে নিজের নিজের খুশিমতো খেলা করে, গান গায়, হাসে, খায়-দায়। রাজপণ্ডিত আসেন, তার কাছে পাঠ নেয়। দিনে দিনে কুঁড়ি থেকে যেমন একটু একটু করে পাপড়ি মেলে ফুল ফোটে, তেমনই করে তারা বড় হয়ে ওঠে।

এক বাপ-মায়ের দুই মেয়ে,—কিন্তু আশ্চর্য, রূপে গুণে দুই মেয়ে ঠিক বিপরীত। বড় মেয়ের রূপ দেখলে চোখ যেন ঝলসে যায়। আয়নাতে রোদের ছটা পড়ে তার আভা যেমন ঝকমক করে, তেমনই রূপ তার। গুণেও ঠিক তাই। শাণিত অস্ত্রের মতো তার স্বভাব। দাসদাসী সকলে তার কাছে জোড়হাতে সশঙ্কিত হয়ে থাকে। আর ছোট রাজকুমারী কাজলরেখার রূপ শান্ত স্নিগ্ধ, দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়, স্বভাবও ঠিক তেমনই মধুভরা। ফুল যেমন মধুর ভারে নুয়ে পড়ে, মিষ্ট গন্ধে বুক ভরিয়ে দেয়, তেমনই ধারা মধুর প্রকৃতি তাঁর; ঠোঁটের ডগায় হাসি লেগেই আছে, কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদের চাঁদের মতো সে হাসিটুকু।
বড় রাজকন্যা মুক্তামালা মেয়ে হলেও অস্ত্রশিক্ষা করেছেন; তিনি ঘোড়ায় চড়েন, উড়ে বেড়ায় যে-সব পাখি, তার তীর তাদের বিঁধে মাটির দিকে নামিয়ে আনে ঝড়ে ঝরে-পড়া ফুলের মতো। কাজলরেখাও রাজকন্যা, সেই হিসাবে তিনিও অস্ত্রশিক্ষা করেছেন, কিন্তু অস্ত্রের চেয়ে শাস্ত্রে তার অনুরাগ বেশি। তিনি ঘরে বসে নানা শাস্ত্র পাঠ করেন। পড়তে-পড়তেই দিন শেষ হয়ে যায়, ঘরের আলো কমে যায়, তিনি গিয়ে বসেন জানলার ধারে। আকাশের বুকে পাখির ঝাঁক উড়ে যায় গান করে— তাদের গান শুনে তিনি মুগ্ধ হয়ে তাদের দিকে চেয়ে থাকেন। আঁচলে করে নিয়ে যান পঞ্চশস্য, ছাদের উপর অঞ্জলি ভরে ছড়িয়ে দেন, ডাকেন তাদের—আয়-আয়-আয়! ওরে পাখিরা, তোদের আমি ভালবাসি, তোরা খেয়ে যা। তারা শন শন শব্দে পাক দিয়ে নেমে আসে, কেউ বসে তার মাথায়, কেউ বসে কাঁধে, কেউ বসে হাতে—বসবার জায়গা যারা না পায় তারা পাক দিয়ে উড়তে থাকে, যেমন ভ্রমর ওড়ে ফুলের চারদিকে, মাছেরা ঘোরে জলবালির চারদিকে, তারার দল ঘোরে চাঁদের চারিদিকে, তেমনি তারাও কাজলরেখাকে প্রদক্ষিণ করে উড়তে থাকে।
এইভাবে দিন যায়। *
ক্রমে মেয়েরা বড় হয়ে উঠলেন। একদিন রাজবাড়ির বৃদ্ধ কঞ্চুরী রাজাকে বললেন,—কন্যাদের এইবার বিবাহের কাল হয়েছে। মহারাণী নাই; থাকলে তিনিই রাজাধিরাজকে একথা বলতেন। তার অভাব কর্তব্য আমার, আমিই আপনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি।
রাজা সচেতন হয়ে উঠলেন। মনে মনে হিসাব করে দেখলেন, হ্যা, তাই তো, মুক্তমালার বয়স হ’ল আঠারো। আর কাজলরেখার ষোলো।
তিনি ডাকলেন মেয়েদের। দেখলেন। চোখ জুড়িয়ে গেল। যেন সদ্য-ফোটা দুটি পদ্মফুল।
বড় মেয়ে প্রণাম করে বাপের বিছানার পাশে বসলেন। কাজলরেখা বাপকে প্রণাম করে তার পায়ের কাছে বসলেন।
রাজা ভ্ৰকুঞ্চিত করে কাজলরেখাকে বললেন,—একি, তুমি মাটিতে বসলে কেন? উঠে বস।
কাজলরেখা বললেন, বাবা শাস্ত্রে আছে পিতা দেবতা, তার সঙ্গে সমাসনে বসা উচিত নয়, তার পায়ের তলাতেই বসা কর্তব্য। আর আসন হিসাবে মৃত্তিকাই হ’ল শ্রেষ্ঠ আসন। তবে আপনি যখন আদেশ করছেন, তখন তাই বসছি।
এই উত্তরে রাজা সন্তুষ্ট হলেন। তারপর কন্যাদের পিঠে হাত বুলিয়ে সস্নেহে প্রশ্ন করলেন,—মা, তোমরা এইবার বড় হয়েছ। বিবাহের বয়স হয়েছে। বিবাহ দিতে হবে। কিন্তু পাত্র সন্ধান করবার পূর্বে আমি জানতে চাই, তোমাদের কিরূপ আকাঙক্ষা, কে কেমন স্বামী প্রার্থনা কর। —মা মুক্তামালা, তুমি বড়, তুমিই বল আগে।
মুক্তামালা বললেন—আমার আকাঙক্ষা। আমার স্বামী হবেন তিনি যিনি শৌর্যে বীর্যে তেজস্বিতায় হবেন আপনার যোগ্য জামাতা। রূপে হবেন তিনি কন্দপের মতো, বীর্যে হবেন তিনি ঝড়ের সদৃশ–পবন দেবতার মতো।
রাজা হেসে কন্যার কথায় বাধা দিয়ে রহস্য করলেন, বললেন,—তাহলে তোমার ছেলের প্রকাণ্ড লেজ থাকবে মা। কেননা পবননন্দন হলেন হনুমান। পিঠের উপর লেজ তুলে দিয়ে ‘জয় রাম বলে এক লাফে সাগর ডিঙিয়েছিলেন, জান তো?
মুক্তামালা একটু লজ্জিত হলেন। রাজা হেসে বললেন,—বল,বল। মুক্তামালা বললেন,—তিনি বীর্যে পবনের মতো হবেন এই জন্য যে শত্ৰুকুল তার বীরত্বের সম্মুখে বড় বড় গাছের মতো ভেঙে পড়বে। তেজে তিনি হবেন অগ্নির মতো,—তাঁর রক্তচক্ষুর দৃষ্টির উত্তাপে যারা দুষ্ট, যারা হবে তার প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ, তারা অগ্নির সম্মুখে তৃণের মতো ম্লান হয়ে শুকিয়ে যাবে; তাতেও যারা সংযত না হবে, তারা সেই তেজে হবে ভস্মীভূত। তাকে হতে হবে খ্যাতিমান প্রাচীন রাজবংশের সন্তান। যেহেতু সকল গুণের আকরই হ’ল বীজ,—অমৃতফলের বীজ হতে জন্মায় যে-গাছ সে-গাছের ফল কখনও বিস্বাদ অথবা বিষাক্ত হয় না। সংসারে জন্মগুণই শ্রেষ্ঠ।
রাজা মুগ্ধ হয়ে গেলেন কন্যার কথা শুনে। হ্যাঁ, তার মতো রাজাধিরাজের উপযুক্ত কন্যা! রাজকন্যার উপযুক্ত কথা বলেছে সে!
কন্যার মাথায় হাত দিয়ে বাপ আশীর্বাদ করলেন। বললেন,—তুমি ইন্দ্রাণীর মতো ভাগ্য লাভ কর। তোমাকে আমি আশীৰ্বাদ করছি। তোমার মনোমতো স্বামীই আমি অনুসন্ধান করব। পৃথিবীতে না পাই, দেবলোকে, গন্ধৰ্বলোকে পর্যন্ত অনুসন্ধান করে অবশ্যই নিয়ে আসব।
মুক্তামালার মুখে হাসি ফুটে উঠল।
তারপর রাজা ছোট মেয়ের দিকে হাসিমুখে, অত্যন্ত আদরের সঙ্গে পিঠে হাত দিয়ে বললেন, —মা, এবার তুমি বল, তোমার মনের কথা।
কাজলরেখা চুপ করে রইলেন। বাপকে নিজের বিয়ের কথা, বরের কথা বলতে লজ্জা হ’ল তার।
রাজা হেসে পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,—লজ্জা বোধ করছ? আচ্ছা, থাক। আমি বুঝেছি—তোমার দিদি যা বলেছেন, তার যেমন আকাঙক্ষা, তোমারও কল্পনা তাই, বক্তব্যও তোমার তাই। –
কঞ্চকী বিনয় করে বললেন,—আজ্ঞে হ্যাঁ মহারাজ, অন্য প্রকার বাসনা বা বক্তব্য থাকবে কেন? পৰ্বতের কন্যা হল নদী। নানা ধারায় দেশের মধ্য দিয়ে তারা স্বয়ংবরা হবার জন্য ছুটে চলে। তাদের গুণও এক—দেশকে করে উর্বর, আর তাদের লক্ষ্যও এক—মহাসাগরে মিলিত হওয়াই তাদের একমাত্র কামনা। সুতরাং মা কাজলরেখার বক্তব্যও ঐ এক।
এবার কাজলরেখা ধীরে ধীরে ঘাড় নেড়ে বললেন,—না।
রাজা বিস্মিত হলেন। বললেন,—তবে বল, শুনি তোমার কামনার কথা।

কাজলরেখা মৃদুস্বরে বললেন,—আমার স্বামী যিনি হবেন, তিনি যেন হন সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তিনি রাজপুত্র হতে পারেন, আবার অতি সাধারণ, এমন কি দীন-দরিদ্রের সন্তানও হতে পারেন। কান্তিতে তিনি কন্দর্পতুল্য হতে পারেন, আবার মহর্ষি অষ্টাবক্রের মতো

রূপহীনও হতে পারেন। তিনি গুণে হবেন মহাজ্ঞানী। যেহেতু জ্ঞানই হ’ল প্রশান্তির একমাত্র আকর এবং যেহেতু অন্তরের প্রশান্তি ভস্মীভূত সৌম্যতা, সেই হেতু তিনি রূপহীন যদি হন, তবুও হবেন সৌম্যদর্শন শান্তপ্রকৃতি। পুণ্যকৰ্মই হবে তার অস্ত্র, কর্মই হবে তার ধর্ম। মানুষকে তিনি জয় করবেন না। মানুষের সেবায় তিনি তাদের সেবক হবেন, মানুষই তাকে স্বেচ্ছায় বরণ করবে বিজয়ী বলে। সাম্রাজ্য তিনি কামনা করবেন না, রাজপ্রাসাদের ঐশ্বর্যে তিনি মোহগ্ৰস্ত হবেন না। সাম্রাজ্য উথলে উঠবে তাঁর পদক্ষেপে, রাজপ্রসাদ কাঁদবে তার পদধূলির জন্য। তার রক্ষী থাকবে না কেউ, যেহেতু জীবনই তার কাছে বড় নয়; এবং সেই হেতুই তিনি হবেন অসামান্য।
রাজা এবার অসহিষ্ণু হয়ে উঠলেন। তার কন্যা হয়ে এ কী বলছে কাজলরেখা! তার কথার মধ্যে যে বার বার রাজত্বকে তুচ্ছ করছে, রাজাকে হেয় করছে! তিনি বাধা দিয়ে বললেন—তোমার মস্তিষ্ক বোধহয় ঠিক নাই, কাজলরেখা। তাই বার বার তুমি অসম্ভব কথা বলছ। রাজপুত্রকে কামনা না করে সাধারণ মানুষকেই বরণ করবার কথা বলছ
কাজলরেখা বললেন,—কন্যার ঔদ্ধত্য মার্জনা করবেন। আমি কিন্তু মনে করি অন্যরূপ। জন্ম থেকেও কর্মকে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি। কর্ম থেকেই মানুষের প্রতিষ্ঠা, মানুষের প্রতিষ্ঠা থেকেই হয় একটি বংশের প্রতিষ্ঠা। আবার সেই বংশের বংশধরের অপকর্মে হয় সেই বংশের অধঃপতন। আপনার এই মহৎ বংশ—এই বংশের মহিমা এবং স্থায়িত্ব নির্ভর করছে পুণ্যকর্মী উত্তরাধিকারীর উপর। উদ্ধত উগ্র ক্ষমাহীন প্রেমহীন উত্তরাধিকারী আপনার দৌহিত্র—হোক না কেন মাতৃকুলের দিকে তার আপনার বংশে জন্ম, হোক না কেন পিতার দিক থেকে অন্য কোন বড় রাজবংশে জন্ম, সে কখনও আপনার বংশমহিমা কুলগরিমাকে অক্ষুন্ন অটুট রাখতে পারবে না। বিধাতার লিপিও খণ্ডিত হয় মানুষের কর্মফলে, সুতরাং আপনার ইচ্ছা এবং আশীৰ্বাদই আপনার উত্তরাধিকারীকে ভাবীকালে রক্ষা করতে পারবে না।
এই কথায় রাজা অত্যন্ত রুষ্ট হলেন কাজলরেখার উপর। কেননা, তার মনে হ’ল কাজলরেখা তাকে অপমান করেছে। রাজার পুত্রকে কামনা না করে সাধারণ মানুষকে কামনা করে সে বংশের অপমান করেছে। তার আশীর্বাদ, তার ইচ্ছা উত্তরাধিকারীকে রক্ষা করতে পারবে না বলে, সে তাকে অপমান করেছে।
একবার তার ইচ্ছা হ’ল প্রহরীকে ডেকে এখুনি এই হীনমতি কন্যাকে বন্দিনী করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

তারপর একটা কথা তার বিদুত্যের মতো মাথায় খেলে গেল। ভাল, তাই হবে। কাজলরেখা রাজত্বকে উপেক্ষা করে; সাধারণ মানুষকে বিবাহ করতে তার প্রবৃত্তি। তাই তিনি করবেন। সেই বিবাহই হবে তার উপযুক্ত শাস্তি। রাজকন্যা হয়ে সে গরীবের বউ হবে। দাস থাকবে না, দাসী থাকবে না, রাজভোগ পাবে না, মোটা কাপড় পরবে, নিজে ভাত রাঁধবে, ঘুটে দেবে, নিজের হাতে ঝাঁটা ধরবে—এই তো উপযুক্ত

শাস্তি! তিনি তাই স্থির করে দুই কন্যার পাত্র সন্ধান করতে লাগলেন। মুক্তামালার বর খুঁজতে চারিদিকে রাজ্যে রাজ্যে রাজ-ঘটক গেল; আর গরীবদের ঘটকালি করে যারা,
তাদের কয়েকজনকে ডেকে কাজলরেখার পাত্র সন্ধান করতে বললেন।
এই ঘটকের মধ্যে একজন বৃদ্ধ, তিনি বললেন,—যদি অনুমতি করেন, তবে ছোটকন্যার মুখ থেকে একবার তার কথা শুনতে চাই।
রাজা অনুমতি দিলেন। বুড়ো ঘটক রাজকন্যাকে বললেন,—মা, কয়েকটি প্রশ্ন করব। মহাদেবের বয়সের গাছ-পাথর ছিল না—জান তো ? তিনি শ্মশানে বাস করেন— জান তো? দেবতারা যখন অমৃত পান করেন তখন তিনি বিষ পান করেন—জান তো? দক্ষরাজার কন্যা তাকে বিবাহ করার ফলে দক্ষযক্ষ হয়েছিল—জান তো?.
কাজলরেখা বললেন—জানি।
বৃদ্ধ বললেন,—তবে ?
—তবে? কাজলরেখা বললেন,—বৃদ্ধ, আমি সতীকন্যা, আমার সঙ্কল্প কখনও ভঙ্গ হয় না।
—হ্যাঁ। বুঝলাম। তুমি সমস্ত কিছু সহ্য করতে প্রস্তুত।
—নিশ্চয়।
তারপর রাজ্যে এক মহা-উৎসব আরম্ভ হ’ল। মুক্তামালার বিবাহ। মহা-সমারোহ করে মুক্তামালার বিয়ে হ’ল এক রাজপুত্রের সঙ্গে। যেমন বর চেয়েছিলেন মুক্তামালা তেমনই বর।
আর কাজলরেখা ? হ্যাঁ। তারপর একদিন সেই বৃদ্ধ-ব্রাহ্মণ-ঘটক নিয়ে এল এক বর। সাধারণ একটি লোক। এক দেশের এক কবি। গরীব, কিন্তু খুব পণ্ডিত। দেখতে মোটেই সুন্দর নন, কিন্তু মুখের হাসিটি বড় শান্ত। দেখলেও মানুষ শান্তি পায়।
রাজা কন্যাদান করবার সময় ভেবেছিলেন মুখ ঘুরিয়ে থাকবেন, মুখ দেখবেন না। হঠাৎ একবার দৃষ্টি পড়ল ছেলেটির মুখের দিকে। তার মুখের হাসিটি বড় ভাল লাগল। তিনি একবার ভাল করে দেখলেন। আবার দেখলেন। কন্যাদান শেষ করে উঠে একবার ডাকলেন, তাদের ডেকে ধনরত্ন দিয়ে তাদের আদর করে নিজের কাছেই রাখবেন। কিন্তু না। নিজেকে কঠোর করে তুললেন। কর্তব্য করতেই হবে। মুখ ঘুরিয়ে বললেন,—আজই রাত্রে তোমরা আমার রাজ্য থেকে চলে যাও। প্রভাতে যেন দেখতে না পাই। কেউ যেন জানতে না পারে।

কাজলরেখার বিয়ের কথা কাউকে জানাননি তিনি। আলো জ্বলে নাই, বাজনা বাজে নাই, শুধু দু’চারবার শাঁখ বেজেছিল। দুটি প্রদীপ জ্বলেছিল, তাও ঘর বন্ধ করে। অন্ধকারের মধ্যে বর আর কনে—কবি আর কাজলরেখা হাত ধরাধরি করে, পায়ে হেঁটে, রাজ্য থেকে চলে গেলেন। যাবার সময় রাজা কিছু ধনরত্ন দিতে চাইলেন জামাইকে। জামাই বললেন,—আমাকে ওসবের বদলে কিছু চাল দিন, যা রান্না করে দশজনকে ভোজন করিয়ে অবশিষ্টাংশ আমরা ভোজন করে তৃপ্তি পাব। ধনরত্ব অলঙ্কার—এর মূল্য আমি বুঝি না।

কন্যা কাজলরেখা তাঁর গায়ের সমস্ত অলঙ্কার খুলে বাপের পায়ের কাছে নামিয়ে দিলেন।
তারপর কবি আর কাজলরেখা এলেন কবির ঘরে।
গরীবের ঘর। কাজলরেখার তাতে কোনো দুঃখ নাই, কষ্ট নাই। প্রসন্ন মনে সমস্ত করেন—ঝাট দেওয়া থেকে রান্নাবান্না, বিছানাপাতা, জল আনা, সমস্ত।
কবি কাব্য লেখেন। রাত্রে কাজলরেখাকে শোনান। কাব্যে কবি ভগবানকে স্তব করেন, প্রার্থনা করেন—হে ভগবান, তুমি মঙ্গলময়, তুমি দীন-দরিদ্রের বন্ধু, তাদের দুঃখ তুমি দূর কর। সকল বিপদে তুমি তাদের রক্ষা কর। তাদের বড় কষ্ট, তুমি তাদের দিকে তাকাও। শুনতে শুনতে কাজলরেখার চোখ জলে ভরে ওঠে।
কবি সকালে বার হন একতারা নিয়ে। গ্রামের পথে-পথে গান গেয়ে চলেন,—ধনী, অহঙ্কার কোরো না, ধন-সম্পদ হ’ল পদ্মপত্রের জল। দরিদ্র, তুমি দারিদ্র-দুঃখে পরের হিংসা কোরো না। অসৎ উপায়ে উপার্জনের চেষ্টা কোরো না; হিংসা হ’ল নিজের কাপড়ে ধরানো আগুন, তাতে তুমিই পুড়ে মরবে। অসৎ উপায়ে উপার্জন করা হল পাপ, —পাপ তোমাকে ধবংস করবে। উপরের দিকে চাও, যেখানে আছেন সকল মানুষের পরম বন্ধু এবং সকল রাজার রাজা, তিনি তোমাদের রক্ষা করবার জন্য, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করবার জন্য ব্যগ্র হয়ে বসে আছেন, সকল অবিচারের বিচার করবার জন্য ন্যায়দণ্ড নিয়ে অপেক্ষা করছেন। তার দ্বারস্থ না হলে তিনি কি করবেন! তার শরণ নাও, তার শরণ নাও, তোমরা সকলে তার শরণ নাও।
এদিকে রাজা মুক্তামালার বরকে তার প্রতিনিধি করে সিংহাসনে বসিয়ে দিলেন। মুক্তামালার বর মহা-বীর, মহা-যোদ্ধা; তিনি মৃগয়ায় যান, পশু-পক্ষী বধ করেন, সৈন্যসামন্ত নিয়ে দেশ জয় করেন, রাজাদের বন্দী করে এনে দাস করেন, রাণী আর রাজকন্যাদের এনে মুক্তামালার দাসী করে দেন।

আবার, তিনি কঠোর শাসক। সামান্য দোষও কেউ করলে তার নিষ্কৃতি নাই। চারিদিকে গুপ্তচর নিযুক্ত করেছেন। কে কোথায়

রাজার নিন্দা করছে, সন্ধান রাখে গুপ্তচরেরা, কে কোথায় রাজার বিপক্ষে ষড়যন্ত্র করছে, সে সন্ধান রাখে তারা। জামাই-রাজা কঠোর শাস্তি দেন।
প্রজারা সভয়ে সশঙ্কিত হয়ে দিন যাপন করে। কার কোনদিন কি হয়। শস্য উঠলে সর্বাগ্রে রাজার কর আদায় দেয়, শস্য যদি নাও হয় তুবও ঋণ করে অথবা কিছু বিক্রি করে, যেমন করেই হোক, রাজার কর দিয়ে আসে। ক্রমে দুটি কন্যারই দুটি ছেলে হ’ল। ছেলে দুটি আপন বাপ-মায়ের কাছে বড় হতে লাগল।
মুক্তামালার ছেলে, ভবিষ্যৎ রাজা, রাজপ্রাসাদে সোনার ভাটা নিয়ে খেলা করে। তীর ধনুক নিয়ে পোষা-পাখি বিধে লক্ষ্যভেদ শেখে।
আর কাজলরেখার ছেলে, ভোরে উঠে জোড়হাত করে বসে, কাজলরেখার সঙ্গে তার বাপের রচনা-করা ভগবানের স্তব গান করে, আঙিনায় খেলা করে পাথর-নুড়ি কুড়িয়ে এনে। যেগুলো ময়লা, মাটি লেগে থাকে, সেগুলিকে বলে, মা—এরা গরীব-দুঃখী নয়? গায়ে ময়লাটি লেগে রয়েছে।
তাদের সে স্নান করায়। বলে,—এদের সেবা করছি। সন্ধ্যায় সে শাস্ত্র পড়ে বাপের কাছে— নানা শাস্ত্র।
এমন সময়, সেবার একবার দেশে এল মহা-হাহাকার। একবারেই বৃষ্টি হ’ল না। দারুণ অনাবৃষ্টি। বর্ষা না হলে শস্য হয় না। শস্য না হলেই দেশে হয় দুর্ভিক্ষ। দেশে দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হ’ল। লোকে অন্নের অভাবে গাছের পাতা খেতে আরম্ভ করলো।
জামাই-রাজার কঠোর শাসন। রাজকর আদায়ের জন্য নায়েব-গোমস্তার সঙ্গে সৈন্য-সামন্ত দেওয়া হ’ল।
কাজলরেখার স্বামী কবি, মানুষের দুঃখ দেখে অবিরাম কাঁদেন। ভগবানকে ডাকেন,—উপায় কর প্রভু। তুমি উপায় কর। মানুষকে তুমি রক্ষা কর।
কাজলরেখা জোড়হাত করে বসে থাকেন স্বামীর পাশে। ছেলেটিও থাকে। রাত্রে কবিকে স্বপ্নাদেশ হ’ল। এক জ্যোতির্ময় দিব্যকান্তি পুরুষ এসে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন,—আমার প্রতিনিধি স্বরূপ দেশে রাজা রয়েছে। তুমি প্রজাদের সঙ্গে করে তার দরবারে যাও—জানাও তাকে তোমাদের দুঃখের কথা। তিনি যদি প্রতিকার না করেন, তখন আমার কাছে নালিশ জানালে তার প্রতিকার আমি করব।
সকালে উঠেই কবি কাজলরেখাকে সব বললেন। বলে বললেন,—দেখ, তোমার দিদি মুক্তামালার স্বামী যে প্রকৃতির কথা আমি শুনেছি, তাতে ভগবানের অভিপ্রায় যে কী তা আমি বুঝতে পারছি না। তবু আমাকে যেতে হবে। সত্যপ্রিয় (ছেলের নাম সত্যপ্রিয়) তোমার কাছে রইল। আমি যদি না ফিরি তবে তার ভার তোমার উপর রইল।
তারপর তিনি দুঃখীদের নিয়ে দরবারে গেলেন। যত যান, তত দলে দলে লোক তার পাশে জমা হয়। এমনিভাবে তারা প্রসাদের সম্মুখে গিয়ে জোড়হাত করে ডাকলে—হে মহারাজ ! আমাদের দয়া করুন, আমাদের অন্ন দিন।

মুক্তামালার স্বামী ঘুমুচ্ছিলেন। । চিৎকারে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি বেরিয়ে এলেন বারান্দায় রক্তচক্ষু হয়ে ক্রোধে কাঁপতে কাঁপতে। বিছানা থেকে তরবারি হাতে নিতেই কিন্তু চিৎকার স্তব্ধ হয়ে গেল। তিনি বুঝলেন, সম্ভবতঃ তারা তার তরবারি হাতে নেওয়া জানতে পেরেছে। কিন্তু তিনি বারান্দায় এসে দেখলেন, শক্তিপ্রিয় (তাঁর ছেলের নাম শক্তিপ্রিয়)—তারই ভয়ে প্রজাদের চিৎকার স্তব্ধ হয়ে গেছে। শক্তিপ্রিয় ধনুক হাতে দাঁড়িয়ে আছে বুক ফুলিয়ে, আর নিচে প্রজাদের সামনে, সর্বাগ্রে একটি মানুষের দেহ পড়ে আছে। তার বুকে একটা তীর বসে রয়েছে। দেখলেই ছেলেকে তিনি মহা-গৌরবের সঙ্গে বুকে তুলে নিলেন। উপযুক্ত পুত্র। উদ্ধত প্রজার বিদ্রোহ দমন করতে সে পারবে।

এদিকে খবর পেয়ে মাতাপুত্ৰ হাতজোড় করে ভগবানকে ডাকলেন। বললেন,— প্রভু, তোমার আদেশে সে গিয়েছিল; তাকে রাজা বধ করেছে। তার প্রতিহিংসা আমরা চাই না। আমরা চাই, তুমি বলেছিলে রাজা প্রতিকার না করলে তখন তোমার কাছে নালিশ জানাতে। রাজা প্রতিকার করে নাই। তুমি এইবার প্রতিকার কর, দুঃখীদের বাঁচাও, ত্রাণ কর।
এইবার ভগবানের আসন টলে উঠল। তিনি ডাকলেন ক্ষোভকে। বায়ুর মধ্যে যে ক্ষোভ থাকে, সে এল। বললে—আমার অন্তরের সকল রস যখন সূর্য হরণ করে, তখন আমি জেগে উঠি—বাতাসকে করে তুলি ঝড়। মেঘ আসে আমার সঙ্গে—সে সূর্যকে ডেকে ফেলে। জলের মধ্যে যে ক্ষোভ থাকে, সে এল। বললে—ঝড় যখন আমাকে আঘাত করে, তখন তাকে প্রতিহত করবার জন্য আমি জাগি সমুদ্রের তরঙ্গে। মাটির মধ্যে থাকে যে ক্ষোভ, সেও এল। সে বলল—মৃত্তিকাকে যখন উত্তপ্ত করে তোলে, আর যখন সহ্য হয় না, তখন আমি জাগি। আমার সঞ্চরণে মাটি তখন কাঁপে ভূমিকম্পে।

ভগবান বললেন,—তোমাদেরই আমি চাই। অন্যায়ের ঔদ্ধত্যের প্রতিকারের জন্যই তোমাদের সৃষ্টি হয়েছে। ঈর্ষার অন্যায় তোমাদের মধ্যে নাই— যাও, তোমরা গিয়ে প্রজাদের বুকের মধ্যে অধিষ্ঠিত হও, দাউ-দাউ করে জ্বলে ওঠ, তারা মৃত্যুকেও তুচ্ছ করতে পারে। এমনভাবে তাদের ক্ষুব্ধ করে তোল।

ক্ষোভ এল। অনাহারে মানুষ পাগল হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছিল পেটের জ্বালায়। অপমানবোধ ছিল না। পশুর মতো উচ্ছিষ্ট খুঁজে, অখাদ্য খুঁজে, ঘুরে বেড়াচ্ছিল ধনীর দুয়ারে। নগরের পথে-পথে, বনে-প্রান্তরে-পথে যারা মরছিল সেই সব মড়ার মাংস খাচ্ছিল অপর সকলে। তাদের অন্তরে ক্ষোভ এসে জাগল। মনের মধ্যে প্রশ্ন উদিত হ’ল,—কেন আমরা এমনভাবে না খেয়ে মরব ?
উত্তর দিলে সত্যপ্রিয়—বললে,— প্রশ্ন কর রাজাকে, যিনি প্রজাকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছেন, যিনি এর জন্য কর নিয়ে থাকেন।
দলে দলে মানুষ এসে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে এক বিরাট জনসমুদ্রের সৃষ্টি করলে। তারা দেখতে দেখতে অন্য রকম হয়ে উঠল। দক্ষযজ্ঞের সময় শিবের জটা থেকে জন্ম নিয়েছিলেন বিরূপাক্ষ, তেমনই মূর্তি হ’ল তাদের। তারা ছুটল দলে-দলে, মার—মার শব্দে। মার, ঐ রাজাকে মার! রাজার পাপেই হয় অনাবৃষ্টি, রাজার পাপেই হয় দুর্ভিক্ষ, রাজার অত্যাচারেই আমাদের এই দশা। রাজাকে মার!
সত্যপ্রিয় পেছনে পেছনে ছুটল,—না না না, এরূপ নয়, এরূপ নয়! শান্ত হও, শান্ত হও। শান্ত ধীর পদক্ষেপে চল। অশান্ত অধীর হিংস্র হয়ে উঠো না তোমরা।
কিন্তু সে-কথা তাদের কানে ঢুকল না। জনতার কোলাহলের মধ্যে তার কন্ঠস্বর হারিয়ে গেল।
তার ছুটে গিয়ে পড়ল দলে-দলে হাজারে-হাজারে লাখে লাখে রাজধানীতে, রাজপ্রাসাদের উপর। সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যরা ক্ষেপে উঠল, হাতি ক্ষেপে উঠল, ঘোড়া ক্ষেপে উঠল। আকাশে পাক দিয়ে ঘুরতে লাগল বাজপক্ষী, শকুনি, গৃধিনী; সে এক প্রলয়ের ব্যাপার, ভেঙে পড়ল রাজার সিংহদ্বার। ছিড়ে পড়ল ঝাড়-লষ্ঠন। মুক্তামালার বর কিন্তু মহা-বীর, শক্তিপ্রিয়ও বীর,—মুক্তামালাও যুদ্ধ করতে জানেন। তারা পালালেন না, যুদ্ধ করতে এলেন। কিন্তু এত মানুষের কাছে তারা কি করবেন? কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনজন লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। –
প্রজারা তাদের দেহ মাড়িয়ে এর পর ছুটল—কোথায় সে বুড়ো রাজা! এইবার তাকে আমরা বধ করব। কোথায় সে ?
অথর্ব বৃদ্ধ রাজা বসেছিলেন আপনার ঘরে। তিনি ইষ্ট স্মরণ করতে লাগলেন। কোলাহল এগিয়ে আসতে লাগল।
কিন্তু রাজা আশ্চর্য হলেন, হঠাৎ কোলাহল স্তদ্ধ হয়ে গেল। বাঁশির আওয়াজ শুনে দংশনোদ্যত অজগর যেমন থমকে দাড়িয়ে যায়, পাগলা হাতি যেমন শান্ত হয়ে দাঁড়ায়, তেমনি পাগলা লোকেরা থেমে গেল। রাজার ঘরে এসে ঢুকল ষোল-সতেরো বৎসরের একটি ছোট ছেলে, সে যেন কুমার কার্তিক। কিন্তু তার হাতে ধনুর্বাণ নাই, অঙ্গে রাজবেশ নাই। পিছনে-পিছনে এসে ঢুকলেন বিধবা কাজলরেখা।
—বাবা!
—রাজা চমকে উঠলেন। মা কাজলরেখা!
—হ্যাঁ বাবা। এই আপনার দৌহিত্র।
—জামাই?
—তাকে তো বধ করেছে শক্তিপ্রিয়।
—রাজা কাঁদতে লাগলেন।
কাজলরেখা বললেন, —বাবা, জন্ম থেকে শ্রেষ্ঠ হ’ল কর্ম, তাই সেই কৰ্ম-পুণ্যবলে মানুষের সেবার পুণ্যে উন্মত্ত মানুষও আজ সত্যপ্রিয়ের অনুগত। সেই পুণ্যে আপনাকে আজ রক্ষা করতে পেরেছি, এই মহা-ভাগ্য।
রাজা উঠলেন। নিজের মাথার মুকুট খুলে পরিয়ে দিলেন সত্যপ্রিয়ের মাথায়। প্রজারা জয়ধ্বনি করে উঠল। রাজা বললেন,—আমার রাজকোষ, রাজভাণ্ডার তোমাদের খুলে দিলাম।
সত্যপ্রিয় মাথার মুকুট খুলে প্রজাদের পায়ের তলায় রেখে দিয়ে বললে—এও তোমাদের।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত