এক কৃপণ অনেক টাকাকড়ি জমিয়েছিল। পাছে চোর সন্ধান পেয়ে সব চুরি করে নিয়ে পালায়– এই ভয়েই তার দিন কাটত। একদিন সে করল কি, সব টাকা খরচ করে একতাল সোনা কিনে আনল। তারপর সেটি গোপনে ঝোপের আড়ালে মাটিতে পুঁতে রাখল।
চোরের আর নিয়ে পালাবার উপায় নেই ভেবে সে নিশ্চিন্ত হল। কিন্তু প্রতিদিনই সোনার তালটি চোখে দেখতে না পেলে সে শান্তি পেত না। তাই যখনই সুযোগ পেত– চুপিচুপি ঝোপের ভেতরে গিয়ে ঢুকত। আর মাটি খুঁড়ে সোনার তাল তুলে খানিকক্ষণ হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে আবার পুঁতে রেখে আসত।
কৃপণ সোনার কালের চিন্তাতেই মগ্ন ছিল। তাই সে বুঝতেই পারল না যে তার বাড়ির চাকরটির চোখ সে ফাঁকি দিতে পারেনি।
চাকরটি রোজই কৃপণকে ঝোপের ভেতরে ঢুকতে দেখে। সে বুঝতে পারল– নিশ্চয় ওখানে গুপ্তধন লুকানো রয়েছে। একদিন চুপিচুপি আড়াল থেকে সবই সে লক্ষ্য করল। তারপর কৃপণ ঝোপের ভেতরে থেকে বেরিয়ে আসতেই মাটি খুঁড়ে সোনার তাল বের করে চম্পট দিল।
পরদিন কৃপণ সোনার তাল বের করতে গিয়েই তো মাথায হাত দিয়ে বসল । গর্ত একেবারে ফাঁকা। শোকে দুঃখে সে তখন বুক চাপড়ে কান্না শুরু করল।
কৃপণের এক প্রতিবেশী তখন ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। কান্না শুনে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল,– আহা-হা- অমন করে কাঁদছো কেন তুমি? কি হল তোমার?
কৃপণ তখন কাঁদতে কাঁদতে তার দুঃখের সবকথা খুলে বলল। প্রতিবেশীটি কৃপণকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ভাই, তুমি মিছেই শোক করছ। তোমার অত টাকা– কিছুই নিজের জন্য খরচ করলে না। পরের উপকারেও ব্যয় করলে না। সোনা রতাল বানিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখেছিলে। তা একটু চিন্তা করে দেখ না, ওই টাকা থাকা না থাকা সমান কি না? তুমি একটা কাজ কর, এক খন্ড ইট ওখানে পুঁতে রাখ। আর মনে মনে ভাব– সোনার তালই রয়েছে– তাহলে আর কোন কষ্ট হবে না।
এই বলে প্রতিবেশী চলে গেল। কৃপণ ঝোপের পাশে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলতে লাগল।
উপদেশ: যে ধন ব্যবহারে লাগে না তার কোন সার্থকতা নেই।
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প