বিড়াল জাতক

বিড়াল জাতক
বোধিসত্ত্ব ্রকেবার ইঁদুর হয়ে জন্মান। তবে সচারচর ইঁদুররা যত ছোট হয় দেখতে বোধিসত্ত্ব মোটেই তা ছিলেন না। বেরং বেশ বড়সড় ছিল। সব সময় শত শত ইঁদুর নিয়ে তিনি বনের মধ্যে ঘুরে বেড়াতেন।
ইঁদুরের দল একবার এক লোভী শেয়ালের নজরে পড়ে গেল। শেয়াল মনে মনে ভাবল, ‘যে করেই হোক এদের খেতে হবে।’ শেয়াল ইঁদুরের গর্তের পাশে সূর্যের দিক মুখ করে এক পায়ে দাঁড়িয়ে হাঁ করে বাতাস গিলতে লাগল।
বোধিসত্ত্ব খাবারের খোঁজে বেরিয়ে শেয়ালকে দেখে ভাবলেন, ‘মনে হচ্ছে এই শিয়াল বেশি সাত্ত্বিক।’ তিনি শিয়ালকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মশাই, আপনার নাম কি?’

‘ধার্মিক!’

‘মাটিতে চার পা না দিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’
‘আমি চার পা দিয়ে দাঁড়ালে সেই ভার পৃথিবী বইতে পারবে না।’
‘মুখটা ফাঁক করে রেখেছেন কেন?’
‘আমি ভাত খাইনা, শুধু বাতাস খাই, সে জন্য হা করে আছি।’
‘সূর্যের দিকে মুখ করে আছেন কেন?’
‘সূর্যকে নমস্কার করার জন্য।’
বোধিসত্ত্বের আর কোন সন্দেহ রইল না। ইতি নিশ্চয়ই একজন মহান ধার্মিক। তারপর থেকে বোধিসত্ত্ব ইঁদুরদের নিয়ে রোজ শিয়ালকে প্রণাম করতে যেতেন। ইঁদুররা শিয়ালকে প্রণাম করে যখন ফিরত তখন শেষের ইঁদুরটাকে খেয়ে ফেলত।
এভাবেই চলতে লাগল। ইঁদুররা একদিন দেখল গর্তটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তাদের সন্দেহ হল। আগে এই গর্তে তারা গাদাগাদি করে থাকত। আর এখন এক ফাঁকা লাগছে কেন। তারা বোধিসত্ত্বকে ব্যাপারটা জানাল। বোধিসত্ত্বের তখন ঐ শিয়ালের উপর সন্দেহ হল।
পরের দিন প্রণাম করতে যাওয়ার সময় বোধিসত্ত্ব সকলের মেষে রইলেন। তিনি সতর্ক ছিলেন। শিয়াল যেই তাঁকে ধরতে গেল তিনি এক লাফে শিয়ালের গলা কামড়ে ধরলেন। সঙ্গে সঙ্গে শিয়ালের ভবলীলা শেষ হল।
 বোধিসত্ত্ব একবার বণিক হয়ে জন্ম নেন। যথেষ্ট বিত্ত এবং প্রভাব ছিল তাঁর। সেই সময় বোধিসত্ত্বের একটি ছেলে জন্মায়। একই দিনে তাঁর চাকরেরও একটি ছেলে জন্মায়।
দুটি শিশু একসঙ্গে বড় হতে থাকে। বোধিসসেত্ত্বর ছেলে যখন পড়তে যেত, চাকরের ছেলেও তার সঙ্গে যেত। দুজনে একসঙ্গে খেলাধুলা করতো। এভাবে চাকরের ছেলে নেহাৎ মূর্খ না হয়ে বেশি কিছুটা লেখাপড়া শিখল। কালে কালে সে বেশ বলিয়ে কইয়ে হল। দেখতেও মন্দ নয়। তাকে কটাহক নামে ডাকা হত। বণিকের ভাড়ার দেখার কাজে তাকে লাগান হল।

কটাহকের মনে খুবই চিন্তা। সে কেবল ভাবে, জীবনটা ভাড়ার সামলাতেই কেটে যাবে। সারাটা জীবন তাকে চাকর হয়ে থাকতে হবে। ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। সে তখন এক ফন্দি বের করল। সীমান্তে বোধিসত্ত্বের এক বন্ধু থাকে। সে-ও বড় বণিক। তার একটি মেয়ে আছে। কটাহক ভাবল, ‘প্রভুর সই জাল করে একটা চিঠি তৈরী করতে হবে।’

সে করলও তাই। নিজের একটা চিঠি লিখল: ‘আমার ছেলে অমুক তোমার কাছে যাচ্ছে। তোমার আমার পরিবারকে এক সুতোয় বাঁধতে চাই। দুই পরিবারের মধ্যে পারিবারিক সম্বন্ধ হলেই তা সম্ভব। আমার ইচ্ছা, আমার ছেলের সঙ্গে তোমার মেয়ের বিয়ে দাও। তারপর তারা তোমার কাছে থাকুক। সব সুযোগ বুঝে আমি যাব।’
কটাহক চিঠিটার শীলমোহর নকল করে ছাপ দিল। বোধিসত্ত্বের সই জাল করল। তারপর ভাঁড়ার তেকে যত খুশি জিনিসপত্র নিয়ে একদিন রওনা দিল।
সীমান্তের গ্রামে দিয়ে কটাহক সেখানকার বণিককে প্রণাম করল। বণিক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কোথা থেকে আসছ বাছা।’
‘বারাণসী থেকে।’
‘তুমি কার ছেলে?’
বারাণসীর বণিকের।’
‘কি জন্য এসেছ বাছা?’
‘এই চিঠিটা পড়লেওই সব জানতে পারবেন।’
বণিক চিঠি পড়ে মহা খুশি। সে কটাহকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিল। কটাহকের নিজের মূর্তি কিন্তু গোপন রইল না। সে যা খায, যা পরে সব কিছুকেই বলে খারাপ। সব সময় সব কিছুরই খুঁত  ধরত সে।
ওদিকে অনেকদিন কটাহককে দেখতে না পেয়ে বোধিসত্ত্বের দুশ্চিন্তা হল। তিনি চারিদিকে কটাহকের খোঁজে লেঅক পাঠালেন। একজন সীমান্ত অঞ্চলে গিয়েছিল। সে ফিরে এসে বোধিসত্ত্বকে কটাহকের কুকীর্তি জানাল।
সব শুনে বোধিসত্ত্ব গেলেন রেগে। কটাহককে শাস্তি দেওয়ার জন্য তিনি সীমান্তের দিকে চললেন। বোধিসত্ত্বের সীমান্ত যাত্রার কথা পাঁচ কান হয়ে কটাহকের কানে এল। সে তখন বেশ ঘাবড়ে গেল।
মনে মনে সে অনেক ফন্দি আঁটল। প্রথমে দিনকতক সে শুধু বলে বেড়াতে লাগল, আজকালকার ছেলেরা বাপ-মা দেখে না। তাদের যত্ন-আত্তি করে না। হাত-মুখ ধোয়ার জল এগিয়ে দেয় না। খেতে দিয়ে বাতাস করে না। পা টিপে দেয় না ইত্যাদি। চাকররা যেসব কাজ করে সে সেগুলোই বেশি করে বলত।
একদিন সে শুনল বোধিসত্ত্ব কাছাকাছি এসে গিয়েছেন। তখন সে বণিকের অনুমতি নিয়ে নিজেই এগিয়ে গেল বোধিসত্ত্বকে সম্বর্ধনা জানিয়ে নিয়ে আসতে। আসার পথে চাকর হিসেবে তাঁর খুব খিদমত করল। আর প্রার্থনা করল, ‘প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। এখানে আমার যেটুকু মান সম্মান রয়েছে দেখবেন তা যেন থাকে।’ বোধিসত্ত্ব তখন তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না।’
বন্ধুর বাড়িতে বোধিসত্ত্ব যে কদিন ছিলেন ঘূণাক্ষরেও প্রকাশ করলেন না যে, কটাহক তাঁর ছেলে নয়। ফিরে যাওয়ার সময় বোধিসত্ত্ব বন্ধুর মেয়েকে ডেকে গোপনে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার ছেলে তোমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তো?’ এর জবাবে মেয়েটি বলে, ‘ওর সবই ভালো, কিন্তু খাবার দাবার নিয়ে বড্ড বায়নাক্কা, সব কিছুই খারাপ বলে।’ বোধিসত্ত্ব তখন তাকে একটি ছড়া শিখিয়ে দিলেন।
বোধিসত্ত্ব চলে যাবার পর কটাহকের গুমোর গেল আরো বেড়ে। এখন তার আর কোন ভয় নেই। একদিন বণিকের মেয়ে তোকে খেতে দিলে সে আবার বলতে শুরু করল, ‘কি ছিরি রান্নার, এ জিনিস মুখে দেওয়া যায়?’ বণিকের মেয়ে তখন বিড়বিড় করে সেই ছাড়াটি বলে গেলঃ
বিদেশি, গুমোর কত বোঝা যাবে
মনিব যদি আসে আবার দেখা যাবে।
কটাহক, অত দেমাক কিসের তোমার,
যা দিচ্ছি চুপ করে খাও সোনার আমার।
কটাহক বুঝতে পারল বোধিসত্ত্ব তাকে সবই বলে দিয়েছেন। সেই থেকে সে আর টুঁ শব্দটি করত না।

 বোধিসত্ত্ব একবার বণিক হয়ে জন্ম নেন। যথেষ্ট বিত্ত এবং প্রভাব ছিল তাঁর। সেই সময় বোধিসত্ত্বের একটি ছেলে জন্মায়। একই দিনে তাঁর চাকরেরও একটি ছেলে জন্মায়।

দুটি শিশু একসঙ্গে বড় হতে থাকে। বোধিসসেত্ত্বর ছেলে যখন পড়তে যেত, চাকরের ছেলেও তার সঙ্গে যেত। দুজনে একসঙ্গে খেলাধুলা করতো। এভাবে চাকরের ছেলে নেহাৎ মূর্খ না হয়ে বেশি কিছুটা লেখাপড়া শিখল। কালে কালে সে বেশ বলিয়ে কইয়ে হল। দেখতেও মন্দ নয়। তাকে কটাহক নামে ডাকা হত। বণিকের ভাড়ার দেখার কাজে তাকে লাগান হল।

কটাহকের মনে খুবই চিন্তা। সে কেবল ভাবে, জীবনটা ভাড়ার সামলাতেই কেটে যাবে। সারাটা জীবন তাকে চাকর হয়ে থাকতে হবে। ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। সে তখন এক ফন্দি বের করল। সীমান্তে বোধিসত্ত্বের এক বন্ধু থাকে। সে-ও বড় বণিক। তার একটি মেয়ে আছে। কটাহক ভাবল, ‘প্রভুর সই জাল করে একটা চিঠি তৈরী করতে হবে।’

সে করলও তাই। নিজের একটা চিঠি লিখল: ‘আমার ছেলে অমুক তোমার কাছে যাচ্ছে। তোমার আমার পরিবারকে এক সুতোয় বাঁধতে চাই। দুই পরিবারের মধ্যে পারিবারিক সম্বন্ধ হলেই তা সম্ভব। আমার ইচ্ছা, আমার ছেলের সঙ্গে তোমার মেয়ের বিয়ে দাও। তারপর তারা তোমার কাছে থাকুক। সব সুযোগ বুঝে আমি যাব।’
কটাহক চিঠিটার শীলমোহর নকল করে ছাপ দিল। বোধিসত্ত্বের সই জাল করল। তারপর ভাঁড়ার তেকে যত খুশি জিনিসপত্র নিয়ে একদিন রওনা দিল।
সীমান্তের গ্রামে দিয়ে কটাহক সেখানকার বণিককে প্রণাম করল। বণিক জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কোথা থেকে আসছ বাছা।’
‘বারাণসী থেকে।’
‘তুমি কার ছেলে?’
বারাণসীর বণিকের।’
‘কি জন্য এসেছ বাছা?’
‘এই চিঠিটা পড়লেওই সব জানতে পারবেন।’
বণিক চিঠি পড়ে মহা খুশি। সে কটাহকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিল। কটাহকের নিজের মূর্তি কিন্তু গোপন রইল না। সে যা খায, যা পরে সব কিছুকেই বলে খারাপ। সব সময় সব কিছুরই খুঁত  ধরত সে।
ওদিকে অনেকদিন কটাহককে দেখতে না পেয়ে বোধিসত্ত্বের দুশ্চিন্তা হল। তিনি চারিদিকে কটাহকের খোঁজে লেঅক পাঠালেন। একজন সীমান্ত অঞ্চলে গিয়েছিল। সে ফিরে এসে বোধিসত্ত্বকে কটাহকের কুকীর্তি জানাল।
সব শুনে বোধিসত্ত্ব গেলেন রেগে। কটাহককে শাস্তি দেওয়ার জন্য তিনি সীমান্তের দিকে চললেন। বোধিসত্ত্বের সীমান্ত যাত্রার কথা পাঁচ কান হয়ে কটাহকের কানে এল। সে তখন বেশ ঘাবড়ে গেল।
মনে মনে সে অনেক ফন্দি আঁটল। প্রথমে দিনকতক সে শুধু বলে বেড়াতে লাগল, আজকালকার ছেলেরা বাপ-মা দেখে না। তাদের যত্ন-আত্তি করে না। হাত-মুখ ধোয়ার জল এগিয়ে দেয় না। খেতে দিয়ে বাতাস করে না। পা টিপে দেয় না ইত্যাদি। চাকররা যেসব কাজ করে সে সেগুলোই বেশি করে বলত।
একদিন সে শুনল বোধিসত্ত্ব কাছাকাছি এসে গিয়েছেন। তখন সে বণিকের অনুমতি নিয়ে নিজেই এগিয়ে গেল বোধিসত্ত্বকে সম্বর্ধনা জানিয়ে নিয়ে আসতে। আসার পথে চাকর হিসেবে তাঁর খুব খিদমত করল। আর প্রার্থনা করল, ‘প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। এখানে আমার যেটুকু মান সম্মান রয়েছে দেখবেন তা যেন থাকে।’ বোধিসত্ত্ব তখন তাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না।’
বন্ধুর বাড়িতে বোধিসত্ত্ব যে কদিন ছিলেন ঘূণাক্ষরেও প্রকাশ করলেন না যে, কটাহক তাঁর ছেলে নয়। ফিরে যাওয়ার সময় বোধিসত্ত্ব বন্ধুর মেয়েকে ডেকে গোপনে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমার ছেলে তোমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তো?’ এর জবাবে মেয়েটি বলে, ‘ওর সবই ভালো, কিন্তু খাবার দাবার নিয়ে বড্ড বায়নাক্কা, সব কিছুই খারাপ বলে।’ বোধিসত্ত্ব তখন তাকে একটি ছড়া শিখিয়ে দিলেন।
বোধিসত্ত্ব চলে যাবার পর কটাহকের গুমোর গেল আরো বেড়ে। এখন তার আর কোন ভয় নেই। একদিন বণিকের মেয়ে তোকে খেতে দিলে সে আবার বলতে শুরু করল, ‘কি ছিরি রান্নার, এ জিনিস মুখে দেওয়া যায়?’ বণিকের মেয়ে তখন বিড়বিড় করে সেই ছাড়াটি বলে গেলঃ
বিদেশি, গুমোর কত বোঝা যাবে
মনিব যদি আসে আবার দেখা যাবে।
কটাহক, অত দেমাক কিসের তোমার,
যা দিচ্ছি চুপ করে খাও সোনার আমার।
কটাহক বুঝতে পারল বোধিসত্ত্ব তাকে সবই বলে দিয়েছেন। সেই থেকে সে আর টুঁ শব্দটি করত না।
 জেলেরা নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরছিল আর এক বানর এক উঁচু ডালে বসে তাই দেখছিল। কিছূক্ষন মাছ ধরার পর জালটা নদীর ধারে রেখেই জেলেরা একটু দূরে খেতে গেল। সেই ফাঁকে বানরটা গাছ থেকে এক লাফে নেমে জাল দিয়ে তাদের মাছ ধরতে গেল। জলে ফেলতে গিয়েই
জালটা তার সারা গায়ে জড়িয়ে গিয়ে এমন হল যে এই বুঝি সে জলে পড়ে ডোবে। ফ্যাসাদে পড়ে নিজের মনেই সে বলতে লাগল, ঠিক হয়েছে, জাল দিয়ে কি করে মাছ ধরে না শিখেই যেমন আমি তা ফেলতে গিয়েছিলাম, তার শাস্তি এ!
গল্পের বিষয়:
ছোট গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত